আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আনোয়ার আল-আওলাকীঃ যুক্তরাষ্ট্র যাকে ড্রোনের মিসাইল দিয়ে শহীদ করেছে ।

আল্লাহ ছাড়া আর কোন সৃষ্টিকর্তা নেই । হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল । যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াতে বিশাল এক মসজিদ। এটি আমেরিকার বড় বড় মসজিদ সমূহের মধ্য থেকে একটি। জুমুআর দিন মসজিদের মিম্বারে দাঁড়িয়ে খুতবা দিচ্ছেন এক খতীব।

হালকা পাতলা শ্মশ্রু মন্ডিত এক তরুণ। শ্রোতারা তন্ময় হয়ে ...তাঁর কথা শুনছে। ইংরেজি সাহিত্যে অপূর্ব দক্ষতা এই তরুণের। শুধু সাহিত্য মানই নয় বরং যেভাবে তাঁর কথার মাঝে পাওয়া যায় সুগভীর জ্ঞানের নির্দশন, ঠিক তেমনি ভাবে তথ্য ও যুক্তি প্রমাণে মেশানো এক অভিনব উপস্থাপনা। তিনি হলেন এই একবিংশ শতাব্দীর মহান দায়ী, মুজাহিদ, শহীদুদ দাওয়াহ শাইখ আনোয়ার বিন নাসীর আল-আওলাকী (রহঃ)।

তিনি জন্ম গ্রহণ করেছিলেন নিউ মেক্সিকোতে, তাঁর পিতা-মাতা ছিলেন ইয়েমেনী। ইয়েমেনে তাঁর শৈশব ও কৈশোর অতিবাহিত হয়। তিনি ইসলামের প্রাথমিক জ্ঞান সেখানেই অর্জন করেন। অতঃপর চলে আসেন আমেরিকায়, ইমাম ও খতীব হিসাবে দায়িত্ব নেন মসজিদুল আনসারে। সাথে সাথে কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ বিএসসি ডিগ্রি এবং সানডিয়েগো ইউনিভার্সিটি থেকে এডুকেশন লিডারশীপে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।

কিন্তু তিনি এটা সুপষ্টভাবে বুঝতে পারেন যে, মূলতঃ বাস্তব জ্ঞানের মূল উৎস হলো কোরআন ও সুন্নাহ, সে কারণে তিনি গভীরভাবে কোরআন অধ্যয়নে লিপ্ত হন। আর তাঁর কোরআন তিলাওয়াতও ছিল সুমধুর। তিলাওয়াতের উপর তিনি স্বীকৃতি সনদও লাভ করেছিলেন। তাফসীরের বিষয়ে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় তাফসীর ছিল ইবনে কাসীর ও সাইয়্যেদ কুতুব (রহঃ) এর তাফসীর ফি যিলালিল করুআন। হাদীসের প্রতিও ছিল তাঁর অত্যধিক আগ্রহ।

তিনি সহীহ বুখারীর দরস নেওয়ার জন্যে ইয়েমেন সহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় সফর করেন এবং হাদীসের উপর উচ্চতর সনদ লাভ করেন। ইলমে ফিকহে তাঁর ডক্টরেট ছিল ফিকহে শাফেয়ীর উপর। তিনি পড়তে ভালোবাসতেন। ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) এর আত্মশুদ্ধিমূলক কিতাব মাদারিজুছ ছালেকীন তিনি অধ্যয়ন করতেন এবং গভীর চিন্তায় হারিয়ে যেতেন । এছাড়া তিনি আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, তারিখে ইবনে আছাকীর, তারীখুল ইসলামী ও খৃষ্ট ইতিহাসের অন্যান্য গ্রন্থ থেকে ইতিহাসের ইলম অর্জন করতেন।

ইলম অর্জন যেন তাঁর নেশায় পরিণত হয়েছিল। তিনি নামাজ আদায় ও জরুরী প্রয়োজন ব্যতীত গ্রন্থাগার থেকে বের হতেন না। আর তিনি ইলম অর্জন করতেন আমলের জন্যেই। একারণেই আল্লাহ তাআলা তাঁকে অনেক অনেক মর্যাদা দান করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, “তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে ইলম দান করা হয়েছে আল্লাহ তাআলা তাদের মর্যাদাকে অনেক উন্নীত করেছেন।

” (সূরা মুজাদালাহ, ৫৮: ১১) তাঁর জীবনের একটি অন্যতম অধ্যায় হলো - দাওয়াহ তথা আল্লাহর দিকে আহবান। তিনি ইংরেজি ও আরবী উভয় ভাষায় খুতবা দিতেন। তাঁর ভাষা ছিল হৃদয়স্পর্শী। বয়ানের প্রভাব ছিল অত্যন্ত ব্যাপক। পশ্চিমা বিশ্বের শত শত যুবক তার বয়ানে প্রভাবিত হয়ে নিজেদের জীবন বদলে ফেলেছে।

যাদের রাত কাটতো নারী ও মদ নিয়ে, গভীর রাতে আজ তাদের ঘর থেকে ভেসে আসে তিলওয়াতের সুর। দুনিয়াপ্রেমী এই যুবকগুলো আজ শাহাদাত পিয়াসী। তারা বদলে ফেলেছে নিজেদেরকে এবং বদলাতে চায় সারা পৃথিবীকে। এই হাজারো যুবকের একজন ছিলেন নিদাল হাসান। তিনি ছিলেন মার্কিন সেনা বাহিনীতে কর্মরত এক মডারেট মুসলিম যুবক।

শাইখের ভাষণ তাঁর চেতনা ফিরিয়ে আনে। তাঁর মাঝে চলে আসে আমূল পরিবর্তন। তিনি দ্বীন ইসলামকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরেন। শাইখের কথা কাফেরদের এত অমূল্য ক্ষতি সাধন করে যা হয়তো কাফেররা কখনোই ভুলবে না। কেননা আজ আমেরিকা, বৃটেন ও অন্যান্য পশ্চিমা রাষ্ট্রে মুসলিম তরুণদের মধ্যে যে জাগরণ, তার একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো শাইখ আওলাকীর ইংরেজি খুতবা।

কেননা ইংরেজি ভাষায় বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর শত শত বয়ান সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে, যা আজও যুবকদের অন্তরে আন্দোলন সৃষ্টি করছে। হারানো চেতনা ফিরিয়ে আনছে, নিভু নিভু ঈমানকে শানিত করছে। 'the Saudi news station Al Arabiya described him as the "bin Laden of the Internet. After a request from the U.S. Congress, in November 2010 YouTube removed many of Awlaki's videos.' ৯/১১ এর পর যখন বিশ্বব্যাপী কাফেররা মুসলমানদের ভূমি দখল ও বিভিন ্নভাবে মুসলমানদের উপরে জুলুম নির্যাতন করতে থাকে, তখন শাইখ মাতৃভূমি ইয়েমেনে চলে যান, যেখানে তাঁর দাওয়াহ পূর্বেই পৌঁছেছিল এবং বিভিন্ন জিহাদী কার্যক্রম চলছিল। তিনি ইয়েমেনে দাওয়াত, এ’দাদ ও জিহাদের কাজে সময় ব্যয় করতে থাকেন। এতে অবিশ্বাস্য রকমের সাড়া পড়ে যায় সারা দেশে।

বিপ্লব ও বিদ্রোহের ঢেউ খেলে যায় যুবকদের মাঝে। বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদ তা সইতে পারে না। ইয়েমেন সরকারকে চাপ দেয় তাঁকে গ্রেফতারের জন্য। অবশেষে শাইখের উপর নেমে আসে সেই পরীক্ষা, যে পরীক্ষা দিতে হয়েছে যুগে যুগে সত্যের দিকে আহবানকারীদেরকে। গ্রেফতার হলেন শাইখ।

বন্দী হলেন জালিমের কারাগারে। কারাগারে তিনি নীরবে তিলাওয়াত, নামাজ, কিতাব অধ্যয়নে সময় কাটাতে লাগলেন, তাই এই বন্দী দশা তাঁর ইলম ও ফিকহকে আরও বৃদ্ধি করে। শাইখ আনোয়ারের পরিবার ছিল অনেক প্রভাবশালী। তারা সরকারকে তারঁ মুক্তির জন্য চাপ দিতে থাকে। অপরদিকে আল্লাহর অশেষ রহমতে ইয়েমেনী পশ্রাসন ও মার্কিন তদন্তকারীরা তাঁর বিরুদ্ধে গুরুতর কোন অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়।

তাই তারা তাঁকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। কারাগার থেকে বের হবার পর শাইখের উদ্দীপনায় সামান্যতম ভাটা পড়েনি। বরং তা আরও বেড়ে যায়। তিনি পূর্ণভাবে কিত্বালের ময়দানে মনোনিবেশ করেন এবং মুজাহিদীনরা ইয়েমেনের অনেক এলাকায় ইসলামী হুকুমাত প্রিতষ্ঠা করতে সক্ষম হন। যাতে শুধু একমাত্র আল্লাহরই বিধান পরিচালিত হচ্ছিল।

এভাবেই জয়, পরাজয়, আনন্দ, বেদনা, আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণের মধ্য দিয়ে সময় কেটে যাচ্ছিল তাঁর। কিন্তু মার্কিনীদের নেতৃতা্বধীন ন্যাটো বাহিনী তা সহ্য করতে পারছিল না। তাই তারা সেখানে ড্রোন আক্রমণ শুরু করে, যাতে অনেক মুজাহিদ শাহাদাতের সুধা পান করেন। একদিন রাত্রিবেলা মুজাহিদীনগণ সী্বয় ক্যাম্পে ছিলেন, হঠাৎ শুনতে পেলেন কানফাটা আওয়াজ, জমিন থরথর করে কেঁপে উঠল, যেন পুরো শহরে ভূমিকম্প হলো। সবাই চিন্তিত হয়ে পড়লেন, কেননা তখন শাইখ ক্যামেপর বাহিরে সফরে ছিলেন।

ফজরের নামাজের পর মুজাহিদীনগণ সকলেই চিন্তিত ছিলেন। হঠাৎ শাইখ সেখানে উপস্থিত হলেন, তাঁর চেহারায় মুচকি হাসি। মুজাহিদীনগণ তারঁ হাসি দেখে বুঝতে পারলেন যে, এই আক্রমণের লক্ষ্য তিনিই ছিলেন। কিন্তু শত্রুরা ব্যর্থ হয়। ঘটনাটি ছিল- শাইখসহ কয়েকজন মুজাহিদ গাড়িতে করে সড়ক দিয়ে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ করে তাঁরা ভীষণ বিষ্ফোরণের আওয়াজ শুনতে পেলেন, যাতে শাইখের গাড়ির কাঁচ ভেঙ্গে গেলো।

শাইখ ভাবতে লাগলেন হয়তো তারঁ গাড়ির উপরই এ্যাটাক হয়েছে। তিনি রাহবারকে আদেশ দিলেন গাড়ি দ্রুত চালাতে যাতে বিপদসংকুল স্থান তাড়াতাড়ি পার হওয়া যায়। সকলেই গাড়ি দ্রুত চালানোর কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। শাইখ তাঁর ড্রাইভারকে আদেশ দেন জনপদ থেকে দূরে ফাঁকা স্থান দিয়ে গাড়ি চালানোর জন্য, যাতে মুসলমানদের জান-মালের কোন ক্ষতি না হয়। অতঃপর তাঁরা একটি উপত্যকার দিকে রওনা করেন যেখানে ঘন গাছপালা ছিল।

ড্রাইভার গাড়ি থামায়। সকলে গাড়ি থেকে বের হয়ে বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। মার্কিন ড্রোন গাড়ির উপর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। গাড়িটি ধ্বংস হয়ে যায়। শাইখ এবং তাঁর সাথীগণ একটি পাহাড়ী ঢালে অবস্থান নেন।

সবচেয়ে আশ্চযের্র বিষয় হলো এই ভয়ানক লোমহর্ষক পরিস্থিতিতে তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েন এবং ফজর পর্যন্ত ঘুমান। এটা আল্লাহর আয়াতেরই বাস্তব প্রমাণ। আল্লাহ বলেনঃ “তারপর তিনি তোমাদের উপর দুশ্চিন্তার পর নাযিল করলেন প্রশান্ত তন্দ্রা” (সূরা আলে ইমরান, ০৩: ১৫৪) শাইখকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, “আপনি কিভাবে ঘুমালেন অথচ ডো্রন আপনার মাথার উপর ছিল?” শাইখ বলেন, “জানি না কিভাবে, তবে তন্দ্রা অনুভব করছিলাম, ফলে ঘুমিয়ে পড়ি। ” শাইখকে জিজ্ঞাসা করা হলো, “কয়টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছিল?” শাইখ বললেন, “প্রায় ১০ থেকে ১১টি। ” শাইখকে তাঁর এক প্রিয় ব্যক্তি গোপনে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “শাইখ! এই আক্রমণের সময় আপনার অনুভূতি কেমন ছিল?” শাইখ জবাব দিলেন, “আমি আমার ধারণার চেয়ে অনেক সহজ অনুভব করেছি।

তোমার হয়তো প্রথমে কিছুটা ভয় লাগবে, অতঃপর আল্লাহ তাআলা তোমার উপর সাকিনা (প্রশান্তি) নাযিল করবেন। ” এরপর তিনি বললেন, “এবার ১১টি ক্ষেপনাস্ত্র লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে, কিন্তু এরপর হয়তো প্রথমটিই তার লক্ষ্যস্থির করে ফেলবে। ” আসলেই তার কথা সত্যি হলো। এর কিছুদিন পর শাইখের উপর ড্রোন আক্রমণ হয়,ড্রোন তার প্রথম চেষ্টাতেই লক্ষ্যস্থির করে ফেলে। শাইখ শাহাদাতের কোলে ঢলে পড়েন।

পরিসমাপ্তি ঘটে ইলম, দাওয়াত, জিহাদ, বিপ্লব ও বিদ্রোহে মিশ্রিত একটি জীবনের। আল্লাহ তাআলা তাঁকে জান্নাতের সুউচ্চ মাকাম দান করুন। আমীন। আল-আনসার বাংলা ম্যাগাজিন থেকে নেয়া। Youtube anwar al-awlaki সার্চ দিয়ে উনার অনেক চমকপ্রদ বয়ান পাবেন ।

আমি পাঠকদের অনুরোধ করব - সময় করে তার কয়েকটি বয়ান শুনার জন্য । ধন্যবাদ  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.