আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উত্তাল জাবিতে ৩৬ ঘণ্টা অবরুদ্ধ ভিসি আনোয়ার

টানা ৬৫ দিন ধরে শিক্ষকদের উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। উপাচার্য অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেনের অপসারণ দাবিতে চলছে 'সাধারণ শিক্ষক ফোরাম'-এর ব্যানারে শিক্ষকদের আন্দোলন। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে উপাচার্যকে তার নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা। গতকাল রাত সাড়ে এগরাটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত টানা ৩৬ ঘণ্টা অবরুদ্ধ হয়ে আছেন তিনি। এদিকে গতকাল এই আন্দোলনকে অযৌক্তিক এবং ভিত্তিহীন দাবি করে পৃথক সংবাদ সম্মেলন করেছেন 'শিক্ষক মঞ্চ'-এর ব্যানারে বাম এবং 'সাধারণ শিক্ষক পর্ষদ'-এর ব্যানারে উপাচার্যপন্থি শিক্ষকরা।

অন্যদিকে, উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন থেকে পিছপা হবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন সাধারণ শিক্ষক ফোরামের শিক্ষকরা। এমন পরিস্থিতি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঁচাতে উপাচার্য ও আন্দোলনকারী শিক্ষক_ উভয় পক্ষই রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ কামনা করছে। জানা যায়, ১৯ জুন থেকে ১২টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচিত উপাচার্য অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে প্রশাসনিক ভবন অবরুদ্ধের মাধ্যমে আন্দোলন চালিয়ে আসে শিক্ষক সমিতি। পরে হাইকোর্টের রুলের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনিক ভবন অবরোধমুক্ত রেখে শিক্ষক সমিতির নাম পরিবর্তন করে সাধারণ শিক্ষক ফোরাম নামে আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষকরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার সাধারণ শিক্ষক ফোরামরে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সর্বাত্দক ধর্মঘট চলার সময় তা উপেক্ষা করে উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বেলা ১১টায় প্রশাসনিক ভবনে প্রবেশ করেন।

এতে আন্দোলনরত শিক্ষকরা অপমানিত বোধ করেন। এরপর উপাচার্যকে ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন তারা। এ সময় উপাচার্যের কক্ষে দুই উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও ট্রেজারার প্রবেশ করতে চাইলে আন্দোলনকারীরা তাদের বাধা দেন। ওই দিন রাতে অবরুদ্ধ উপাচার্য তার নিজ কক্ষেই বাড়ি থেকে আনা খাবার খেয়েছেন এবং এই অবস্থায় সেখানে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। তবে দুই উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার ও রেজিস্ট্রার প্রশাসনিক ভবনে অন্য দুটি কক্ষে অবস্থান করে রাত কাটিয়েছেন বলে জানা গেছে।

গতকাল সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভিসি অবরুদ্ধ ছিলেন।

এদিকে, শিক্ষক ফোরামের চলমান আন্দোলন অযৌক্তিক ও নৈতিক ভিত্তি দুর্বল এবং আন্দোলনটি গোষ্ঠীস্বার্থ ও ক্ষমতা পাওয়ার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষক মঞ্চ নামে অন্য একটি সংগঠনের শিক্ষকরা। গতকাল সমাজবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষক লাউঞ্জে বেলা ১টায় এই সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে চলমান সংকট নিরসনে মাননীয় আচার্যের কার্যকর উদ্যোগ কামনা করেন তারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন, রাইহান রাইন, স্বাধীন সেন, পারভীন জলি প্রমুখ। বিকাল সাড়ে ৩টায় অন্য একটি সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ শিক্ষক পর্ষদ ব্যানারে উপাচার্যপন্থি শিক্ষকরা বলেন, উপাচার্যের পদত্যাগই শিক্ষকদের আনীত ১২টি অভিযোগের বিচার সুনিশ্চিত করে না, বরং আড়াল করে।

সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ওই অভিযোগগুলো আচার্যের কাছে প্রেরণ করার আহ্বান জানিয়ে তারা এই বিশ্ববিদ্যালয় রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আহমেদ রেজা, অধ্যাপক সোহেল আহমেদসহ ১৪ জন শিক্ষক। অন্যদিকে, বিকাল সাড়ে ৪টায় এক সংবাদ সম্মেলনে আচার্যের হস্তক্ষেপ কামনা করে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষক ফোরামের আহ্বায়ক অধ্যাপক হানিফ আলী বলেন, উপাচার্য, ট্রেজারার ও প্রো-ভিসি আমাদের লাঞ্ছিত করে ধর্মঘট উপেক্ষা করে প্রশাসনিক ভবনে প্রবেশ করেন। আমরা নিজেদের অপমানিত বোধ করি এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে এই অবাঞ্ছিত উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। তিনি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা এখানে অবস্থান করব।

এ সময় পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেন ফোরামের সদস্যসচিব অধ্যাপক কামরুল আহসান। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত অফিসে অবস্থান, ২৪, ২৫ ও ১৬ আগস্ট সর্বাত্দক ধর্মঘট। তবে পূর্ব ঘোষিত পরীক্ষা, পরিবহন ও অন্যান্য জরুরি সেবা এই ধর্মঘটের আওতামুক্ত থাকবে। পদত্যাগ করতে নারাজ অবরুদ্ধ উপাচার্য অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, পদত্যাগই সব সমস্যার সমাধান নয়। আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের সত্যতা নির্ণয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট, ১৯৭৩-এর ৫১ ধারা অনুযায়ী আমি মহামান্য আচার্যকে জরুরি ভিত্তিতে একটি তদন্ত কমিশন গঠনের অনুরোধ জানিয়েছি।

অত্যন্ত সংকটকালীন মুহূর্তে নির্বাচিত হয়ে আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের হাল ধরেছি। প্রায় ৬০০ শিক্ষকের মধ্যে আন্দোলনকারী শিক্ষকের সংখ্যা সর্বোচ্চ ৫০ জন। অথচ এদের পেছনে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমর্থন নেই। শিক্ষকদের উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে চলমান সংকটে স্থবির হয়ে পড়েছে গোটা ক্যাম্পাস। শিক্ষাজীবন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী।

এদিকে, গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নেতারা শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শিক্ষাজীবন সচল করতে আচার্যের দায়িত্বশীল ও গণতান্ত্রিক হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। অন্যথায় আগামী শনিবার থেকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আন্দোলনে নামবেন বলে তারা জানিয়েছেন। সর্বশেষ : গতকাল সন্ধ্যায় পরিবারের সদস্যরা অবরুদ্ধ উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করেন। তাদের সঙ্গে আনা খাবার উপাচার্যকে দেন তারা।

 

 



সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।