আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলা ব্যান্ড সংগীতের এ্যালবাম কাভার (স্মৃতি সংরক্ষণমূলক পোষ্ট)

সব হৃদয়ের গল্প বলি, রংধনুটাকে রং করি, নির্ঘুম চোখের কথা নিয়ে বৃষ্টির মত ঝরে পড়ি অনেকদিন থেকেই পোষ্টটা লিখে ড্রাফট করে রেখেছিলাম... আজ / কাল করতে করতে আর পাবলিশ করা হচ্ছিল না। আজ ভাবলাম পাবলিশ করেই দেই একটু ভূমিকা দেই > আমি ছোট থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত কাটিয়েছি নড়াইলের কোন এক অজো পাড়া গাঁয়ে। যেখানে তখন ছিল না কোন বিদ্যুৎ, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, বর্ষার সময় এক হাটু কাদা মাড়িয়ে স্কুলে যেতাম। তো এমন একটি গ্রামে বিনোদনের মাধ্যম ছিল আমার বাবার টু-ইন-ওয়ান রেডিও কাম ক্যাসেট প্লেয়ার। যা কিনা পাঁচটা অলিম্পিক ড্রাইসেল ব্যাটারি দিয়ে চলত।

বেশির ভাগ সময় রেডিও-ই শোনা হত। ক্যাসেট এর ফিতা (এ্যালবাম) যে কয়েকটা ছিল তা বেশি চালাতে পারতাম না আব্বুর ভয়ে > কারণ তাতে ব্যাটারি বেশি দ্রুত ফুরাতো। আব্বু নিয়মিত বিবিসি , ভয়েস অব আমেরিকা শুনতেন। তারপরও আব্বুর যখন অফিসে চলে যেত আমি লুকিয়ে লুকিয়ে ক্যাসেট প্লেয়ার চালু করতাম তখন বন্ধুর সহায়তায় কয়েকটা ব্যান্ড সংগীত এর এ্যালবাম শুনি। দেখতে দেখতে ব্যান্ডের ভক্ত হয়ে গেলাম।

তখন বিটিভিতে বহুরূপী নামক একটা বিনোদনমূলক ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান হত তাতে প্রতি পর্বে ২/৩ টা নতুন ব্যান্ড এ্যালবামের গান থাকতো। আর প্রিয় ব্যান্ড শিল্পীর নতুন কোন গান শুনলে সেটা কোন এ্যালবামের তা জানার জন্য পাগল হয়ে যেতাম। শুকনো মৌসুমে স্কুলে যেতে একটা হিরো সাইকেল ছিল আমার। সেই সাইকেল নিয়ে স্কুলের টিফিন পিরিয়ডে চলে যেতাম ৫ কি.মি. দুরের থানা সদরে । সেখানে ৩/৪ টা ক্যাসেটের (ফিতা) দোকান ছিল।

সেখানে গিয়ে গানের কলি বলতাম আর উনি সেটা মিলিয়ে এ্যালবাম দিত। কত কষ্ট করে এই এ্যালবামগুলো কিনেছি তা আমি-ই জানি। অনেক সময় টিফিনের পয়সা বাচিয়ে, ঈদের সালামি দিয়ে এসব এ্যালবাম কিনেছি। মাঝে মাঝে সব এ্যালবাম কেনার সামর্থ্য ছিল না, তাই বেশ কয়েকটা এ্যালবামের গান মিলিয়ে ব্লাংক ক্যাসেটে রেকডিং করে নিয়ে আসতাম। এতে খরচ কম হত আর সব প্রিয় শিল্পীর গান এক ক্যাসেটে পেতাম তো এভাবে ১৫০-২০০টি এ্যালবাম সংগ্রহ করেছিলাম ...... তারপর এল সিডি / এম.পি.থ্রি'র যুগ।

এই যুগের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে অযত্নে পড়ে থাকলো আমার এতদিনের জমানো সেই এ্যালবামগুলি সব সময় প্রিয় ছিল আছে থাকবে.. গুরু জেমসের গান এই এ্যালবামের লিখতে পারিনা... এখনো শুনি অনেক ভাললাগা একটা এ্যালবাম বেষ্ট অব জেমস্ এটা রি-রেকোডের্ড এ্যালবাম এই এ্যালবামে জেমসের "আদালতে দেখা হবে" গান খুব প্রিয় এই এ্যালবামের বেশকিছু গান খুব প্রিয় গুরু জেমস এর এ্যালবাম.... ব্যাফক ভাল লাগে আমি বরাবর-ই গুরুর ভক্ত কাভারের ভিররের লেখাগুলোও ভাল লাগতো আইয়ুব বাচ্চুর গানও তখন সমান জনপ্রিয় এটা খুব বেশি পুরোনো নয়। হাসানের একক এ্যালবাম। এটা সাউন্ডটেক থেকে বেষ্ট গান নির্বাচন করে এ্যালবাম বের করা হয় অসাধারণ সব গান উপহার দিয়েছেন প্রিন্স মাহমুদ.... বাংলা ব্যান্ডের এ্যালবাম কি এই একটি-ই ?? (গানগুলো নেশা ধরায়) দাতভাংগা নাম (ভিতরের পাশ) জেমস পার্থর ডুয়েট এ্যালবাম.... কয়েকটা গান ভাল লেগেছিল লেইস ফিতা লেইস..( এই গান শুনে আব্বা তো আমায় মারতে এসেছিল, কিন্তু তখন তাকে বুঝাতে পারি নাই এইটা আমার কত্ত ভালা লাগে ) মিক্সড এ্যালবাম... প্রতিটি গান-ই মনে রাখার মত। এল.আর,বি'র হিট এ্যালবাম -এর অনেকগুলো গান আমার প্রিয়। মন চাইলে মন পাবে-এর বাণী এর প্রতিটি গান অসাধারণ।

এই এ্যালবামটা না শুনলে অনেক কিছু মিস করবেন। অসাধারণ। এটাও অসাধারণ... হাসানের গানটাও জট্টিল..অপরিচিতা.. জেমস আইয়ুব বাচ্চুর ডুয়েট। প্রিন্স মাহমুদের সুরে। বেসম্ভব ভাল গানগুলি।

শওকাত এর সুরে.. চাচা ঢাকা কত দুর " গানটা মার্কেট পাইছিলো। প্রয়োজন এর ভিত্রের পাশ জুয়েল বাবু'র সুরে ব্যান্ড মিক্সড এ্যালবাম। বেশিরভাগ গান অসাধারণ। এটা বেশি পুরনো না। গুরু আর হাসানের গানগুলো ভাল-ই লেগেছে।

বেশ কিছু মনে রাখার মত গান আছে এই এ্যালবামে ভিত্রের একাংশ । এটা আমার কেনা শেষ অডিও ক্যাসেট প্রিন্স মাহমুদের ... আর এক অনবদ্য সৃষ্টি। সুরকারের কথাগুলি-ই ছিল তখন তার সাথে একতরফা যোগাযোগের মাধ্যম। এই এ্যালবামে ব্যান্ড এবং আধুনিক গানের সংমিশ্রনে অসাধারণ একটা এ্যালবামে রূপ নিয়েছিল। তুমি যদি বলে পম্মা-মেঘনা একদিনে দেব পাড়ি... এই এ্যালবামের গান।

বিপ্লব (প্রমিথিউস)ও কম শ্রোতা মাত করেনি। চমৎকার কিছু গান আছে এতে। বাচ্চু, জেমস ও হাসান এর এ্যালবাম এটি... জেমসের গানগুলি সবচেয়ে বেশি ভাল লেগেছিল। এটা সম্ভবত হাসানের প্রথম সলো এ্যালবাম। প্রিন্স মাহমুদ এখানেও তার প্রতিভার চমৎকার স্বাক্ষর রেখেছেন।

তাল -এর বার্তা আর্কের চমৎকার কিছু গান নিয়ে এই এ্যালবামটি। এটা হাসানের খুব বেশি পুরনো কোন এ্যালবাম নয়। গানগুলি মোটামুটি। >>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>> এখনো মাঝে মাঝে মনে পড়ে আগে একটা গান শুনতে কত-ই না কষ্ট করতাম। একটা এ্যালবাম ক্যাসেট প্লেয়ারে চলত আর আরেকটা এ্যালবামের মধ্যে কলম / পাটকাঠি / ব্রাশ ইত্যাদি দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে গানের শুরুতে আনতাম যাতে প্লেয়ারে টেনে সময় নষ্ট না হয়।

আর এখন হার্ডডিস্কে ৩৫,০০০+ গান, ক্লিক করলেই বেজে ওঠে, আগে পিছে করার জন্য আর কলম ঢুকাতে হয় না। তবুও সেই ৩৫/৪০টাকা দিয়ে কেনা ক্যাসেটের মত মজা পাই না। হয়তবা সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে সেই শ্রোতার মৃত্যু হয়েছে ক্যাসেটগুলি একটা বস্তার ভিতরে রেখেছিলাম... অনেকদিন বাদে বস্তাটা খুলে দেখি সেখানে নানা রকম পোকা-মাকড় তাদের স্থায়ী ঘর বানিয়েছে আমি তাই দেখে দ্রুত সেগুলো রোদে দিলাম... সেখান থেকে যেগুলো কিছুটা অক্ষতভাবে উদ্ধার করতে পেরেছি সেগুলো স্মৃতি হিসাবে ডিজিটাল ফরম্যাটে রাখতে স্ক্যান করলাম এবং এই ব্লগে রাখলাম। আমি এখানে শুধু বাংলা ব্যান্ডের এ্যালবামগুলির কয়েকটা দিয়েছি। বাকীগুলোর মধ্যে ছিল ইংরেজি , হিন্দি, নাটক, বাংলা সিনেমা (তখন বাংলা সিনেমা অডিও আকারেও রিলিজ হত) , যাত্রাপালা আরো কত কি।

এখন শুধু মনে হয় চিকনমিয়া ঠিক-ই বলেছেন.... স্মৃতি তুমি বেদনা  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.