আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পঁচা শামুকে পা কাটবেন না....

পঁচা মানুষ আমি একজন বাঙ্গালী। বাংলাদেশ আমার মাতৃভূমি। মুক্তিযুদ্ধ আমার অহংকার। আমি রাজনীতি বিপক্ষ কোন লোক নই। বরং আমি মনে করি বর্তমান নেতৃবৃন্দের শত দোষ ত্রুটি থাকার পরও জাতিকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য, দেশ পরিচালনার জন্য রাজনৈতিক দলের কোন বিকল্প নেই।

আমাদের বুদ্ধিজীবীরা রাজনীতিবিদদের সমালোচনা করেন, তাদের যুক্তিও আছে। গঠনমূলক সমালোচনা অবশ্যই দরকার। কিন্তু এই তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে। সে যাই হোক, আমি রাজনীতি সচেতন মানুষ, কিন্তু কোন দলকে সাপোর্ট করিনা, করতে পারিনা। সব দলেরই দোষ ত্রুটি আছে।

ভাল কাজকে ভাল, খারাপকে খারাপ বলতে চাই। বাংলাদেশের রাজনীতি মূলত দুই দল কেন্দ্রিক। আমরা জনগণ এদেরকেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ক্ষমতার মসনদে বসাই। একদল ক্ষমতায় থাকলে অন্য দল শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে কাজ করে। গণতন্ত্রের অগ্রগতির জন্য যা খুবই দরকার।

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অঙ্গীকার করে ক্ষমতায় এসেছিল। খুব ধীর গতীতে হলেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ চলছে। এ সরকারের কর্তাব্যক্তিরা বার বার এই মেয়াদেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করার ঘোষণা দিচ্ছেন। যদি কোন কারণে সেটা না হয় তাহলে কি হবে? আমরা আশা করছিলাম যে দলই (যুদ্ধাপরাধীদের দল ছাড়া) পরবর্তীতে ক্ষমতায় আসুক একবার যেহেতু শুরু হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এই বাংলার মাটিতে শেষ হবেই। কারণ বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার স্বামী এবং এই দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান নিজেই মুক্তিযুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডার ছিলেন।

কিন্তু গত কিছুদিন ধরে বিশেষ করে সিলেট অভিমূখে বিএনপি'র রোড মার্চের সময় থেকে এই নেত্রীর বক্ত্যব্য আমিসহ সচেতন সকল মহলকে হতাশ করেছে। উনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গঠিত ট্রাইবুনালের সচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। সে অধিকার বাংলাদেশের যে কোন নাগরিকের আছে। কিন্তু উনি যেভাবে সিলেট ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদী, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি চাইলেন তাতে আর বোঝার অপেক্ষা রাখেনা যে উনি কি উদ্দেশ্য নিয়ে ট্রাইবুনালের সচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন? বিএনপি জামায়াত সহ অন্য তিনটি দলের সাথে জোট গঠন করে ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য রাজনীতিতে অনেক খেলা হতে পারে।

জামায়াতের সাথে জোট গঠন সেই খেলারই একটা অংশ হতে পারে। তাই বলে এই জোট রক্ষার জন্য তার মতো একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী এভাবে কুখ্যাত রাজাকারদের পক্ষ নিয়ে ট্রাইবুনালকে বিতর্কিত করবেন এটা মেনে নেয়া যায় না। বিএনপির অঙ্গসংগঠন ছাত্রদলের কয়েকজন বন্ধু, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে, তারাও খালেদা জিয়ার ওই বক্তব্যে খুবই মর্মাহত হয়েছিল, মনে পড়ে। সর্বশেষ গত রবিবার উনি বিবিসি বাংলায় যে সাক্ষাতকার দিলেন সেখানে তিনি বলেছেন ''যুদ্ধাপরাধী কারা ছিল । যুদ্ধাপরাধী ছিল ১৯৫ জন।

তাদেরকে তো তারা ছেড়ে দিয়েছেন । তাদের সাথে আন্ডারস্ট্যান্ডিং করেছেন। তারা (যুদ্ধাপরাধী) যদি আজ জেলখানায় থাকতো, তাহলে তারা বলতে পারতো যে অমুকে অমুকে আমাদের সাথে ছিল । অমুক দলের তমুক দলের অমুক নেতা তমুক নেতা আমাদের সহযোগিতা করেছে। " তার মতো একজন নেত্রী যিনি তিন তিনবার (৯৬ এর ফেব্রুয়ারী সহ) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তার কাছ থেকে এরকম কান্ডজ্ঞানহীন বক্তব্য জাতি কোনভাবেই আশা করেনা।

নাকি উনি ইতিহাস জানেননা। যারা মুক্তিযুদ্ধ এবং তার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে একটু খোজ খবর নেন তারাই জানেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সেই ১৯৫ জন যুদ্ধবন্দীর বিনিময়ে তখন পাকিস্তানে বন্দী বাঙ্গালি সেনা অফিসার-জওয়ান সহ আটকে পড়া প্রায় ৪ লক্ষ বাঙ্গালিকে দেশে ফেরত আনা হয়েছিল। পাকিস্তান থেকে বাঙ্গালীদের ফিরিয়ে আনা কি তখন ভুল ছিল? এটা কি তার কথিত আন্ডারস্ট্যান্ডিং ছিল? আর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে, পথে-প্রান্তরে যারা লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষকে নৃশংস ভাবে হত্যা করেছে, হাজার হাজার মা-বোনদের ধর্ষণ করেছে, পাকিস্তানীদের হাতে তুলে দিয়েছে, গ্রামের পর গ্রাম আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছে, লুট করেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি-গ্রামের রাস্তা ঘাট হানাদারদের ছিনিয়ে দিয়েছে তাদেরকে সনাক্ত করতে, তাদের অপকর্মের বয়ান দিতে সেই পাকিস্তানীদের কাছেই যেতে হবে? হায়রে পাকিস্তান প্রেম! ভাবলেও লজ্জা লাগে। আমি খালেদা জিয়ার কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, ম্যাডাম বাঙ্গালীদের উপর আপনার এতটুকু ভরসা নাই? তারা সাক্ষী দিতে পারবে না? যে মানুষটি নির্যাতনের শিকার সে নির্যাতনের বর্ননা দিতে পারবে না? বাঙ্গালির উপর এই ভরসা নিয়ে আপনি এই দেশের এত বড় নেত্রী হলেন কিভাবে? আর আপনি কিভাবে ভাবলেন, পাকিস্তানীরা তাদের সহযোগীদের কুকর্মের কথা আপনাকে বলে যাবে? তাদের উপর এত ভরসা? আপনি বক্তৃতা বিবৃতিতে বলেন, আপনিও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চান! এই কি তার নমূনা? এটা ২০১১ সাল, ২০০১ নয়। আপনাকে মনে রাখতে হবে এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ঘোষণা দিয়েই বিশাল জনপ্রিয়তা নিয়ে আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে নির্বাচনী বৈতরনী পার হয়েছিল।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখন কোন গোষ্ঠীর দাবী না, গণ দাবী, বাংলার মানুষ আজ সোচ্চার। এখনো সময় আছে যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গ ছাড়ুন। ২০০১ থিওরী কাজে লাগিয়ে এই দেশে আর কেউ ক্ষমতায় যেতে পারবে না। জামায়াতীরাও বুঝে তাদের মুখোশ আজ জাতির কাছে উম্মোচিত। তাই জামায়াতের মূরব্বীরাও এখন নতুন করে ভাবছেন।

শুনেছি যুদ্ধাপরাধীদের বাদ দিয়ে তারা নতুনদের নিয়ে দল গোছাবেন! আপনি কাদের উপর ভরসা করছেন? নিজের দল গোছান, যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গ ছাড়ুন। নইলে নতুন প্রজন্ম আপনাকে, আপনার পরিবারকে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করবে। পঁচা শামুকে পা কাটবেন না, আশা করি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.