আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইরানে মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত, হোয়াইট হাউজ বিস্মিত

রেডিও তেহরান : ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সেনাবাহিনীর ইলেক্ট্রনিক যুদ্ধ ইউনিট মার্কিন অত্যাধুনিক পাইলটবিহীন বিমান বা ড্রোন ইরানের মাটিতে নামিয়ে আনতে সক্ষম হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা হতভম্ভ ও বিস্মিত হয়েছেন। মার্কিন কর্মকর্তারা গত কয়েক দিন ধরে ড্রোন ভূপাতিত হওয়ার ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালিয়েছে। প্রথমে তারা মার্কিন ড্রোন ইরানের হস্তগত হওয়ার ব্যাপারে নানা সন্দেহ ও সম্ভাবনার কথা বললেও ইরান বিষয়টিকে গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরার পর মার্কিন কর্মকর্তাদের কথাবার্তায়ও পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। মার্কিন কর্মকর্তারা গতকাল দাবি করেছেন, দূর নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের কারিগরি ত্রুটির কারণে ওই ড্রোনটি ভূপাতিত হয়েছে। ইসরাইলের তথ্য ও নিরাপত্তা বিভাগও স্বীকার করেছে, কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই ইরানের সেনাবাহিনী অত্যাধুনিক মার্কিন ড্রোন নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।

যদি সত্যিই যান্ত্রিক কোনো সমস্যা থাকতো সংশ্লিষ্ট খবর তাহলে ড্রোনটি অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হতো-কিন্তু তা হয়নি। ইরানের তথ্য ও নিরাপত্তা বিভাগের ওই সূত্র আরো জানিয়েছে, মার্কিন 'Š--১৭০' পাইলটবিহীন বিমানে স্বয়ংক্রিয় বিস্ফোরণের ব্যবস্থা ছিল অর্থাৎ শত্রুর হাতে পড়লেই তা বিস্ফোরিত হবে যাতে কোনো তথ্য কেউ পেতে না পারে। কিন্তু ইরানের বিশেষজ্ঞরা অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রনিক্স পদ্ধতি ব্যবহার করে মার্কিন ড্রোন নামিয়ে আনলেও সেটির স্বয়ংক্রিয় বিস্ফোরণ ব্যবস্থা কোনো কাজ করেনি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ঘটনার পর এখন মার্কিন কর্মকর্তারা ইলেক্ট্রনিক যুদ্ধে ইরানীদের দক্ষতার কথা স্বীকার না করে পারবে না। তাছাড়া তারা এটাও স্বীকার করতে বাধ্য যে, যেকেনো আগ্রাসন মোকাবেলায় বিমান প্রতিরক্ষাসহ অন্যান্য সামরিক ক্ষেত্রে ইরান শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছে গেছে এবং এখন এটা অনস্বীকার্য বাস্তবতা।

ইরান মার্কিন 'Š--১৭০' ড্রোন নামিয়ে আনায় একদিকে যেমন ইলেক্ট্রনিক যুদ্ধে তাদের দক্ষতার প্রমাণ মিলেছে অন্যদিকে রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম বলে পরিচিত অত্যাধুনিক এ ড্রোন এখন ইরানী বিশেষজ্ঞদের নাগালে চলে এসেছে। এটি ইসরাইল ও মার্কিনীদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাকর একটি ঘটনা। মার্কিন দৈনিক ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল এর আগে খবর দিয়েছিল, 'Š--১৭০' ড্রোন ইরানীদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়ার অথবা তা ধ্বংস করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে সামরিক অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু ইরানি সেনাবাহিনী পাল্টা আঘাত হানতে পারে এ আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র তাদের সে চিন্তা থেকে সরে আসে। প্রকৃতপক্ষে ড্রোন আটকের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন ও ইসরাইল হতবিহবল হয়ে পড়েছে।

ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হোসেন সালামি ইরানের দুই নম্বর টিভি চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেছেন, একটি স্থল কেন্দ্র থেকে বিমানটি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছিল এবং এর সাহায্যে ছবিসহ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছিল। তিনি আরো বলেছেন, বিমানটি যদি অকার্যকর হয়ে পড়তো কিংবা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেত তাহলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিস্ফোরিত হত যাতে এ প্রযুক্তি কারো হাতে না পড়ে। তিনি বলেন, পাইলটবিহীন এ বিমানটি আফগানিস্তানের সিনদান্দ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছিল। কিন্তু ইরানের বিশেষজ্ঞরা কেন্দ্র থেকে বিমানটির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে এর নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে নেয় এবং এর স্বয়ংক্রিয় বিস্ফোরণ ব্যবস্থাও অচল করে দিতে সক্ষম হয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করার ঘটনায় ইরানের প্রতিরক্ষা ক্ষমতার প্রমাণ পাওয়া যায়।

কিন্তু তারপরও পশ্চিমাদের ইরান বিদ্বেষী মনোভাবে পরিবর্তনের কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বৃটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানসহ কয়েকটি গণমাধ্যম দাবি করেছে- এটা ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিনিদের গোপন যুদ্ধের সূচনা মাত্র। অথচ মার্কিন পাইলটবিহীন বিমানের ইরানের আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনা মারাত্মক অপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার ইরানের রয়েছে। জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত ইরানের প্রতিনিধি মোহাম্মদ খাজায়ী এ ব্যাপারে প্রতিবাদ জানিয়ে এ সংস্থার মহাসচিবের কাছে একটি চিঠি দিয়েছেন। এছাড়া, ইরানের আকাশসীমা লংঘনের ঘটনায় তেহরানে নিযুক্ত আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে ইরান।

আফগানিস্তানের ভূমি থেকে ওই ড্রোনটি ইরানের ওপর গুপ্তরচরবৃত্তি চালানোর জন্য কাজ শুরু করেছিল। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.