আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রোজার আগেই যানজটে অতিষ্ঠ নগরবাসী

রমজান মাস আসেনি। তাতেই দিনের বেশির ভাগ সময় রাজধানীর রাস্তাগুলো যানজটে স্থবির হয়ে থাকছে। যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে তিন ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দুপুরে ওই এলাকায় গিয়ে সাত দিনের মধ্যে সড়কগুলো মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দেন।
এর আগে একই দাবিতে গত বছরের ১৩ জুলাই যাত্রাবাড়ীতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়ক অবরোধ করেছিলেন শিক্ষার্থীরা।

তখনো আশ্বাস মিলেছিল। তবে যানজট দূর হয়নি।
শিক্ষার্থীরা জানান, গতকাল রাস্তা মেরামত ও যানজট নিরসনের দাবিতে যাত্রাবাড়ী মোড় অবরোধ করেন তাঁরা। পরে যানজটে আটকে থাকা মানুষ ও স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। যোগাযোগমন্ত্রী আসার খবরে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন।

পুলিশ বলছে, যাত্রাবাড়ীর তিন ঘণ্টা অবরোধের কারণে শহরজুড়ে প্রায় দিনভর ছিল তীব্র যানজট।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঈশা খাঁ বাস কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন বলেন, মেঘনা থেকে ছেড়ে আসা ঈশা খাঁ বাসটি শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতিদিনই যানজটে পড়ে। সোজা পথে এলে যাত্রাবাড়ীতেই দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় বাড়তি লেগে যায়। ক্লাস ধরতে প্রায়ই বাসচালককে উল্টো পথে যেতে বলেন শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, প্রতিদিনের যানজটে ত্যক্তবিরক্ত হয়ে গতকাল সকালে তাঁরা ‘কিছু একটা’ করার সিদ্ধান্ত নেন।

সকাল সোয়া নয়টার দিকে ঈশা খাঁর একটি বাস ও মৈত্রীর দুটি দোতলা বাসের শিক্ষার্থীরা নেমে অবরোধ শুরু করেন। পরে ঈশা খাঁর আরেকটি বাস, নরসিংদী থেকে ক্যাম্পাসে চলাচলকারী বাস ‘উয়ারী-বটেশ্বর’ ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাসের শিক্ষার্থীরা অবরোধে যোগ দেন। কিছুক্ষণের মধ্যে যানজটে আটকে থাকা অন্যান্য বাসের যাত্রীরাও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অংশ নেন। কর্মসূচিতে যোগ দেন স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ী ও দোকানকর্মী।
শিক্ষার্থীরা যানজট নিরসনের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।

এ সময় যাত্রাবাড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) অবনি কর এসে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন। শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কথা বলেন পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার ইলিয়াস শরীফ। সিটি করপোরেশন (দক্ষিণ) ও ফ্লাইওভার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন পুলিশের কর্মকর্তারা।
বেলা পৌনে দুইটার দিকে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের যাত্রাবাড়ীতে যান। যানজট নিরসনের জন্য ছয় দফা দাবিসহ একটি স্মারকলিপি মন্ত্রীকে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

এই দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে যাত্রাবাড়ী থেকে ভাঙ্গা প্রেস পর্যন্ত রাস্তায় ১০০ মিটার পর পর পুলিশ অথবা যানজট নিরসনকর্মী নিয়োগ, লেগুনাগুলোর চলাচল ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনা, ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করা, রাস্তার দখলকৃত অংশগুলো উদ্ধার করে চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া ইত্যাদি।
শিক্ষার্থীরা জানান, মন্ত্রী পরিদর্শন শেষে সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী সড়কের এক পাশে স্তূপ করে রাখা পাইপ সরানো, শহীদ ফারুক সড়ক ও ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়ক দুটি পুরোপুরি যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রাখার নির্দেশ দেন। ডেমরা সড়কটির এক অংশের কাজ এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী।
ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ: ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, গত রোববার বিকেলে ফার্মগেট এলাকায় দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনার কারণে ওই এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রভাব পড়ে পুরো ঢাকা শহরে।

বিশেষ করে শহর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে। এরপর গতকাল আবার যাত্রাবাড়ীতে রাস্তা আটকে রাখেন শিক্ষার্থীরা।
যুগ্ম কমিশনার বলেন, যাত্রাবাড়ীতে পুলিশ যানজট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। কিন্তু ফ্লাইওভার মেরামত শেষ না হলে এবং রাস্তা মেরামত না করলে অবস্থার উন্নতি হবে না। ট্রাফিকব্যবস্থা কাজ করছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ট্রাফিক সিস্টেম কাজ না করলে তো সব থেমে যেত।


রাস্তায় ইফতারির দোকান নয়: রমজান মাসের ট্রাফিকব্যবস্থা নিয়ে রেজাউল করিম বলেন, রমজান মাসে বিপণিবিতানগুলোর সামনে তীব্র যানজট হয়। ইতিমধ্যেই দোকানমালিকদের সঙ্গে পুলিশের সভা হয়েছে। মালিক সমিতি কমিউনিটি পুলিশ নিয়োগ দেবে, পুলিশ নির্দেশনা দেবে। তিনি বলেন, ‘এবারের রোজায় পুলিশ রাস্তায় কাউকে বসতে দেবে না। বিকেলের দিকে রাস্তায় কোনো ইফতারির দোকান বসতে দেওয়া হবে না।

এ বিষয়টি শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এ ছাড়া ভাসমান ব্যবসায়ীরা যেন রাস্তায় যান চলাচলে বাধার সৃষ্টি করতে না পারেন, সে বিষয়টিও দেখা হবে। ’
রেজাউল করিম বলেন, ঢাকা শহরের সবচেয়ে বড় সমস্যা রাস্তার তুলনায় গাড়ি বেশি। আর ব্যস্ত রাস্তাগুলোতে প্রচুর মানুষ যান চলাচল বাধাগ্রস্ত করে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে। মাথার ওপর ফুটওভারব্রিজ থাকলেও সেগুলো ফাঁকা পড়ে থাকছে।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।