আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রোজার হকিকত

এসো মোরা মাওলাইয়াত কে গড়ে তুলি। রোজার হকিকত হযরত খাজা মুঈনুদ্দিন চিশতী (রহঃ) তিনি তার প্রধান খলিফা হযরত কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকিকে উদ্দেশ্য করে লিখে পাঠিয়ে ছিলেন। [রাসুল (সঃ) বললেন] হে উমর, রোজা হকিকির অর্থ হচ্ছে মানুষ তার অন্তর বা দেল থেকে সর্বপ্রকার দ্বিন ও দুনিয়ার আশা আকাঙ্খা ধূরীভূত করবে। কারণ দ্বিনের খাহেশ, যেমন – বেহেশতের আরাম-আয়েশ, সুখ-শান্তি ও হুরের আকাঙ্খা – আবেদ ও মাবুদের মাঝে পর্দার অন্তরাল সৃষ্টি করে। এ রকম আকাঙ্খা বিদ্যমান থাকাবস্থায় বান্দা কখনো তার মাবুদরে হকিকতের নৈকঠ্য লাভ করতে পারে না।

অপরদিকে দুনিয়ার খাহেশ হলো – ধন-দৌলত,শান-শওকত, ক্ষমতার দম্ভ,নফসের খাহেশ ইত্যাদি জাগতিক বিষয়াদির আকাঙ্খা মানুষকে আল্লহর থেকে দুরে সরিয়ে নেয় এবং এগুলো একেবারে শেরেক। গায়রুল্লাহর প্রতি খেয়াল ও ফেকের করা – কেযামতের ভয়, বেহেশতের আশা ও আখেরাত সম্পর্কে ফেকের করা- এ সবগুলোই রোজা হকিকি নষ্ট করে। রোজা হকিকি তখনই সঠিক হবে যখন মানুষ আল্লাহর ব্যতীত অন্য সবকিছু দেল থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেয় যাতে গায়রুল্লার এলম পর্যন্ত থাকে না এবং সব রকমের উমিদ (আশা) ও ডর দেল থেকে দূরীভূত করে। হে উমর, আল্লাহর দিদার ব্যতীত অন্যকোন কিছুর জন্য আমি আকাঙ্খিত নই। রোজা হকিকির ইফতার শুধু এলাহি এবং রোজা হকিকির আরম্ভ ও শেষ দিদারে এলাহি।

দিদারে এলাহি দ্বারা রোজা রাখো এবং দিদারে এলাহি ইফতার কর। হে উমর, রোজা হকিকির আরম্ভ ও শেষ সম্পর্কে বেশ ভালো ভাবে খেয়াল রেখো। এটা অবগত হওয়া অবশ্য কর্তব্য যে, রোজা হকিকি কোন বস্তুর ওপর রাখা প্রয়োজন এবং কোন বস্তুর ওপর ইফতার করা প্রয়োজন। স্মরণ রেখো, রোজা হকিকির আরম্ভ হচ্ছে আল্লাহর মারেফাত অর্জন থেকে এবং শেষ বা ইফতার হচ্ছে কেয়ামতে আল্লহর দিদার লাভ করায়। রোজাদরদের জন্য দুটি সুখবর রয়েছে-প্রথমত ইফতারের সময় এবং দিতীয়টি আল্লাহর দিদার লাভের সময়।

হে উমর, সাধারণত মানুষ প্রথমে রোজা রাখে এবং রোজা শেষে ইফতার করে। কিন্তু হকিকি রোজার প্রথমে ইফতার এবং তারপর রোজা আরম্ভ হয়। মজ্জুব, সালেক ও যারা খোদার পথে পথিক তারা সদা-সর্বদা রোজা অবস্থায় কালাতিপাত করে; ক্ষণেকের জন্যও তারা ইফতার গ্রহন করে না। কারণ রোজা হকিকির জন্য ইফতার করা শর্ত নয়, বরং ইফতারের জন্য রোজা রাখা শর্ত। ওয়াসেলানে এলাহির(আল্লাহর সাথে মিলনকারীগন) অবস্থা এমন নয় যে, তারা কখনো কখনো রোজা রাখবে আবার কখনো কখনো ইফতার করবে।

কারণ তারা সর্দা সর্বদা রোজা অবস্থায় থাকে। হে উমর, সাধরণ মানুষ যে রোজা রাখে (যাতে শুধু পানাহার ও জেমাহ থেকে পরহেজ থাকে) তা হকিকি রোজা নয়- বরং সেটা মেজাজি রোজা। এরুপ রোজা দ্বারা আসরারে এলাহি (আল্লাহর রহস্য জ্ঞান) হাসিল হয় না। এরুপ রোজা শুধু মাত্র জাহেরী সুরাতে সীমাবদ্ধ এবং হকিকত সম্বন্ধে এ রোজা সম্পূর্ণ অন্ধকারে থেকে যায়। এ রকম রোজা দ্বারা গায়রুল্লাহ পরিত্যাগ সম্ভব হয় না; বরং এতে সর্বপ্রকার নফসানি ও ইনসানি কলুষতা থেকে যায়।

এরুপ রোজাদারের যাবতীয় বাক্য ও কার্যাবলী গায়রুল্লাতে পরিপূর্ন থাকে। এরুপ জাহেরি ও মেজাজি রোজা দ্বারা এতটুকু লাভ হতে পারে যে, গরীব,দুঃখী ও মিসকিনগণের দুঃখ-ব্যাথা সম্যকভাবে উপলব্ধি করা যায় এবং তাতে তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে তাদের অভাব কথঞ্চিত লাঘব করা যায়। মনে রেখো, যে ব্যক্তির শায়েখ,মুরর্শিদ বা পথ প্রদর্শক নেই তার দ্বিন নেই। যার দ্বিন নেই তার মারেফাতে এলাহি নেই। যার মারেফাতে এলাহি নেই সত্য পথের পথিকদের সাথে তার সম্পর্ক নেই।

সত্য পথের পথিকদের সাথে যার সম্পর্ক নেই তার কোন শুভাকাঙ্খী নেই। যার শুভাকাঙ্খী নেই তার কোন বন্ধু বা মাওলা নেই। আমার আউলিয়াগণ আমার ক্বাবার (হাটু) নিচে; তাদের মর্তবা শুধু আমিই অবগত আছি- আর কে্উ তাদের সম্বন্ধে পূর্ণ অবগত নয়। হে উমর, সালেকানে গায়ের মজ্জুব কামেল ব্যক্তির সংসর্গ রাভ করা ছাড়া আল্লাহর মারেফাত অর্জন করা যায় না। প্রকৃত কামেল ব্যক্তির বাতেনি তাওয়াজ্জু ব্যতীত কউ আলমে জাবরুতে পৌছতে পারে না এবং এরা আলমে নাসুত ও আলমে মালাকুতে ঘুরে বেড়াবে।

এ রকম মানুষ শাওয়াত শহরতের তলবগার ও তাবেদার (কাম প্রবৃত্তি ও খ্যাতি অন্বেষণকারী) হে উমর, যে সব আলেম, ফকিহ ও সালেক গায়েব মজ্জুব অবস্থায় আছে এবং কোন কামেল ব্যক্তির সংসর্গে থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নি তারা আসরারে এলাহির জলোয়া সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। এ রকম ব্যক্তি দুনিয়াদারির রওনক ও নফসের খাহেশের পিছনে কুকুরের মতো ঘুরে। যদিও এরা জুব্বা, দেস্তার ও সুফিদের পোষাক পরিচ্ছদ পরিধান করে থাকে তাদের বাতেন হেরেস, হওয়া (লোভ ও লালসা) এবং নফসানি খাহেশে পরিপূর্ণ। ফকিরি লেবাস পরিধান করার পিছনে এদের উদ্দেশ্য খোদাভক্ত হওয়া নয়-বরং দুনিয়ার ধন-দৌলত ও রওনক বৃদ্ধি করাই এদের উদ্দেশ্য। এদের কলেমা, নামাজ ও রোজার কোন হকিকত নেই।

যে ব্যক্তি মোহাক্বেক সালেকের দলভুক্ত হয়ে মারেফাতে এলাহির কামাল দরজায় পৌছতে চায় তার জন্য ফরজ হলো হাস্তী বা আমিত্বকে একে বারে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। যে আমিত্বকে নিসত বা ধ্বংস করতে সমর্থ হয় নি সে শতবার সুফির লেবাস পরলেও মঞ্জিলে এরফানে অগ্রসর হতে পারবে না। মানুষ তখনই মারেফাতে এলাহির মঞ্জিলে পৌছতে পারে যখন সে স্বীয় হাস্তী বা আমিত্বকে বিনাশ করে সর্বদা জাতে এলাহির মাতলূব (অভিলাসী) হয়। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।