আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মীরসরাই এর সবচেয়ে বড় ও আশ্চায্য জনক ঝর্না।( জল পাথুরে ঝর্না ).আমার জীবনের প্রহেলা পোস্ট.।.।আপনারা যদি পরতেন.।.।.।আমি একটু অনুপ্রেরনা পেতাম।।

মীরসরাই এর সবচেয়ে বড় ও আশ্চায্য জনক ঝর্না। লেখকঃ মোঃআব্দুল কাইয়ুম মেহেদী (শেয়ানা পোলা ) ঘুরতে কার না ভালো লাগে! সবাইর ঘুরতে ভালো লাগে আর যদি নতুন নতুন জায়গা ঘুরে দেখার সু্যোগ হয় তাহলে তো কনো কথায় নেই। আমরা ও সে ঘুরার পাগল। বলতে গেলে এইটা আমাদের নেশা। তবে আমাদের ঘুরাটা অন্যরকম।

আমরা জে,বি স্কুল এর ২০০৮ ব্যাচ এর ছাত্র। আমাদের সবাই এখন ও পড়া লিখায় ব্যস্ত। তাই বলে কি আমরা এক সাথে আনন্দ করবো না!তা কিন্তু নয়। আমরা যখনিয় সুযোগ পাই ঠিক তখনিই সবাই মিলে দিন খন ঠিক করে বেরিয়ে পরি নতুন ও অজানা কিছু দেখতে আর সবার থেকে একটু আলাদা কিছু জানতে । আমাদের পুরো ব্যাচ টার নাম “Invincible Batch of 2008” (J,B)।

আমরা ১৭ জন(তানভীর,বাবলু,ইকবাল,নাজমুল,রিয়াদ,সাকি,শহিদুল,হ্রিদয়,জিয়া,জয়দীপ,তানিন, আনোয়ার,ফারুখ,হাবিব,মোস্তাফিজ,সহোরাব ও আমি{কাইয়ুম})মিলে ঠিক করেছি আমাদের এই বারের অভিযান টা হবে আগের গুলা থেকে আলাদা। তাই আমরা অনেক অনেক চিন্তা করতে লাগলাম। এর মাঝে আমাদের এক বন্ধু(তানভীর)বললো ওর জানা মতে মীরসরাই এর ভিতরে একটা ঝর্না আছে। কিন্তু এই ঝর্না অনেকের অজানা আর ওই খানে যাওয়া ও নাকি অনেক কস্টকর। আর এই ঝর্না টা মীরসরাই এর ঠিক পূরবো দিকে।

আর ওই ঝর্নার কাছে নাকি স্থানিয় মানুষ ও যেতে ভয় পায়। যাই হোক আমাদের ও অনেক ভয় লেগেছে তাই বলে এমন ঝর্না না দেখে থাকা যায় না। আমরা সবাই এক মত হলাম যে আমাদের ওই ঝর্না দেখতে হবেই। বরাবরের মত এইবার ও অভিযান চলবে । আমাদের অভিযান গুলার একটা নাম হয়ে থাকে “দূরে কোথাও” ।

.আমরা দূরে কোথাও না গেলে ও আমাদের অনেক দূরের পথ পাড়ি দিতে হয়। কেননা আমরা অজানা কে জয় করতে এগিয়ে যাই। আর সব অজানা পথ কিন্তু অনেক দূরের হয়। এর পর থেকে কিন্তু পথ অনেক কাছের হয়ে যায়। আমরা (০৩/০৯/২০১১) তারিখ এ সবাই মাইক্রোবাসে করে মোট ১৭ জন রওয়না দিলাম বারিয়ারহাট থেকে।

তার পর মীরসরাই এর কলেজ রোড় দিয়ে আরো পূরব দিকে রেইল লাইন পার হয়ে প্রায় ৩ -৪ কিলোমিটার গিয়ে “আমবাইয়া”গ্রামে গেলাম। আর ওই খানে কয়েকটা ছোট দোকান আছে। তখন সময় ১২ টা। আমরা সবাই জানতাম আমরা মীরসরাই এর সবচেয়ে বড় ঝর্না দেখতে যাচ্ছি। তবে আমাদের ইচ্ছা ছিলোনা যে ঝর্না তে গোসল করার।

তবুও আমাদের ৩ বন্ধু আলাদা কাপড় নিয়ে আসছিলো। আমরা সবাই মাইক্রোবাস থেকে নেমে সোজা যেতে শুরু করলাম পাহাডের দিকে। সরু পথ ধরে এগিয়ে যেতে লাগলাম সামনের দিখে। আমাদের যাওয়ার পথে অনেক জঙ্গল পার হতে হয়েছে। অনেক ভয় ও লেগেছিলো।

কিছু দূর গিয়ে দেখি একটা চরা(পাহাডী নদী)। .তার পর ওই নদীর ধরে আরো সামনের দেকে এগিয়ে যেতে লাগলাম। সামনে এক জন মানুষ এর দেখা পাই আর ঊনার কাছে জানতে ছাইলাম ঝর্নাটা কোন দিকে। ঊনি বললেন ঝর্না চিনেন না। আসলে না চেনার ও কথা।

কারন আমি আগেই বলেছিলাম ওই ঝর্নাটা অনেক স্থানিও মানুষ ও চিনেনা। না চিনার ও কথা কারন ওই খানে কেউ সাহস করে যায় না। আর পুরো এলাকা টা ভুতোডে জায়গার মত। তবুও আমরা সামনের দেকে এগিয়ে যেতে লাগলাম। পরে আরো সামনে গেলে আরো এক জন মানুষের দেখা পাই।

ঊনার কাছে জানতে চাইলে ঊনি বলেন ওই ঝর্নার কাছে কেউ যায়না। আর ঝর্না টা সামনের দিকে। তাই আমরা সামনের দিকে চললাম। তার পর আবার নদী থেকে উটে সরু পাহাডী রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আবার ও আমরা আরেক টা ছোট নদীকে লক্ষ করে ওই নদী দিযে সামনের দিকে যাচ্ছি।

যেতে যেতে হঠাত করে দেখতে পেলাম সামনে অনেক ভর ভর পাথর। আর ওই পাথর গুলা দেখে বুঝতে পারছি যে ঝর্নাটা এই খানে। আমরা আরো সামনের দিকে গেলাম ঠিক পাথর গুলার সামনে। আর শুনতে পেলাম সে ভয়ানক ঝর্নাটার গর্জন। . আমরা অবাক হলাম শব্দ শুনে।

কারন শব্দ ছিলো অনেক বেশি। আমরা কেউ ঝর্নাটা দেখতে পারছিনা। আমাদের আনন্দের সীমা ছিলোনা। সবাই অনেক খুশি। তবে আমরা আরো বেশি খুশি হতাম যদি ঝর্নাটা দেখতে পেতাম।

ঝর্নাতে ঢুকার একটাই রাস্তা আছে। যে রাস্তা দিয়ে ঝর্নার পানি বের হয়ে আসছে ওই জায়গা দিয়ে আমাদের ঢুকতে হবে। তবে ঢুকা কি এতো সহজ!! আমরা অনেক চিন্তা করতে লাগলাম, যে করে হোক আমরা ঝর্না দেখবো। তাই আমরা অনেক বুদ্ধি খাটাতে লাগলাম। আমরা ৩ টা বড় বড় প্রায় ১৫ ফুট এর লাঠি ঝোগাড করলাম।

আমাদের ১৭ জনের মরধে ১৩ জন ভিতরে ঢুকবো আর বাকিরা ঝর্নার বাহিরে থাকবে। এই সময় দেখতে পেলাম ছোট ছোট ২ টা ছেলে আমাদের দিকে আসতেছে। ঝর্নার পানি যে জায়গায় পরে ওই জায়গার চারপাশে পাহাড়। তাই ঝর্না টা বাহির থেকে দেখা যায় না। ওই ছেলে ২ টা আমাদের ঢুকতে নিষেধ করেছে,কারন ওদের মা বাবারা ও নাকি ওদের ঢুকতে নিষেধ করেছে।

আমরা আবার ও ভয় পেয়ে গেলাম। তবুও আমরা ঢুকবো। যে পথ দিয়ে আমাদের ঢুকতে হবে সে পথ বেশি না। প্রায় ২০ ফুট। তবে ওই ২০ ফুট এ অনেক পানি।

আমরা আমাদের ওই বড় লাঠি গুলা দিয়ে দেখলাম যে আমরা পানির নিচে কনো মাটি খুঁজে পাচ্ছিনা। তাই আমরা নিশ্চত হলাম আমাদের কে সাঁতার কেটে এই ২০ ফুট পথ অতিক্রম করতে হবে, তা না হলে আমরা ডুবে মরবো। আর ওই পথটির চার পাশে ঘনো জঙ্গল এবং দেখতে পাহাডের সুডঙ্গের মতো। আমাদের সবাই সাঁতার জানে। তাই আমাদের ভয়টা কমে গেলো।

আমরা ১৩ জন সাঁতার কেটে ভিতরে যেতে লাগলাম অনেক ভয় পেয়ে পেয়ে। গিয়ে দেখি অনেক বড় বড় পাথর। আর সব পাথর অনেক বেশি পিচ্ছল। পা রাখার সাথে সাথে পরে যাওয়ার ঝুকিটা অনেক বেশি ছিলো। তবুও আমরা অনেক সতর্ক হয়ে পাথর গুলার উপর উটতে পেরেছি।

আমরা সবাই ওবাক হলাম এত বড় ঝর্না দেখে। আর ঝর্নার সৌন্দয্য দেখে। সত্যিই অবাক করা সে ঝর্না। চার পাশে বড় বড় পাহাড় আর মাঝ খানে ঝর্না। ওই খানে ঢুকার কিছু সময় পর দেখতে পাই আমাদের সামনে একটা রংধনু।

আমরা সবাই তো ওবাক হলাম ওইটা দেখহে। সামনা সামনি রংধনু দেখার সে কি মজা!ওই খানে ঢুকার পর থেকে আমাদের মনে হয়ে ছিল আমরা সে গহিন অরন্যে আদিম মানুষের মতো প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করছি। আমাদের কাছে ভরসা ছিলো সে ৩ টা লাঠি। আর আমরা ১৩ জন ছিলাম। তাই আমাদের মাঝে ভয়টা কমে গেছে।

আমরা অনেক আনন্দিত ছিলাম যে আমরা দেখতে পেরেছি সে রহস্য ময় আর কুসংস্কার এ ভরা ভয়াবহ আজগবি বড় ঝর্নাটা। আর এই ঝর্নাটা মীরসরাই এর ৯০% মানুষের কাছে এখন ও অজানা। অপর দিকে আমাদের বাকি বন্ধুরা আবিস্কার করতে লাগলো এই ঝর্নাটার উৎস কথায়!ওরা উপরে গিয়ে দেখতে পেলো উপরে আরো ৬ টা ঝর্না আছে। আর ওই গুলা দেখতে কম সন্দর না!ওই ৬ টা ঝর্নার মিলন স্থল হলো আমরা যে ঝর্না তে ছিলাম ওই ঝর্নাটা। আর ওই ঝর্না গুলার ছবি তুলে আনলো ওরা।

এই দিকে আমাদের ঝর্নাটার ছবি তুলা ছিল খুব ঝুকি পূর্ন। তবুও আমরা অনেক ঝুকি নিয়ে ২ টা ক্যামেরা আনলাম। আর অনেক কস্ট করে অনেক গুলা ছবি তুলে নিলাম। আমরা ঝর্নার ভিতরে ছিলাম ২ টা পরযন্ত। আমরা দেখতে পেলাম ঝর্নার ভিতরে আস্তে আস্তে আলো কমে যাচ্ছে।

তার কারন হলো সূরযের আলো এতো ভিতরে প্রবেশ করতে পারেনা। তাই তাড়াতাড়ি অন্ধকার নেমে আসে ওই জায়গায়। আমরা আর দেরি না করে ঝর্না থেকে বের হয়ে যেতে লাগলাম। আমরা বের হয়ে ওই পাথর গুলাতে অনেক ছবি তুলতে লাগলাম। প্রায় ২০ মিনিট পর আমরা ফিরে আসার প্রস্তুতি নিই।

আসতে আসতে আমরা চলে আসলাম ওই দোকান গুলার সামনে। তখন আমাদের সাথে দেখা হয় ওই এলাকার কয়েক জন বয়স্ক লোকের সাথে। তার সাথে আরো অনেক লোকের দেখা পেলাম। আমরা সবাই এই ঝর্না সম্পর্কে স্থানিয় মানুষ গুলার সাথে আলাপ করতে লাগলাম। জানতে চাইলাম এই ঝর্নার নাম কি?সবাই কি এই ঝর্না ছিনে?উনারা বলল।

এই ঝর্নার কনো নাম নাই। তবে অনেকে অনেক নামে এইটিকে ছিনে। তবে অনেকে বলে “বয়াইল্লা ঝর্না”। .এই নাম বলার কারন হলো এইটা হচ্ছে মীরসরাই এর সব চেয়ে বড় ঝর্না তাই “বয়াইল্লা ঝর্না” বলা হয়। এ ছাডা আরো কারন আছে।

আমরা যে বলে ছিলাম উপরে আরো ৬ টা ঝর্না আছে . আর ওই ঝর্না গুলা মিলে ১ টা বড় ঝর্না হয়েছে। (যে ঝর্নাতে আমরা ১৩ জন ছিলাম ওই টা) উনারা আরো বলেছেন,এই ঝর্নার কাছে স্থানিয় মানুষ যেতে ভয় পায়। আর এই ঝর্না এখন ও প্রায় ৯০% মানুষের কাছে অজানা। আমরা উনাদের সামনে একটা প্রস্তাব দি। আমরা বলছি যে এই ঝর্না যেহেতু মীরসরাই এর মধ্যে সবছেয়ে বড় ঝর্না তাহলে অব্যশই এইটার প্রচার করা দরকার।

আর এই দায়িত্য আমরা নিলাম। আমরা আমাদের মতো করে প্রচার করবো। আর আমরা আরো বলি যে এই ঝর্নার একটা সন্দর নাম দিতে হবে। উনারা আমাদের কথায় অনেক খুশি হলেন। আমরা সাথে সাথে একটা নাম ও ঠিক করে পেললাম।

আর এখন থেকে ওই ঝর্নার নাম “” জল পাথুরে ঝর্না ”” সবাই আমাদের নাম টা গ্রহন করলো। তার পর আমরা আমাদের দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলাম। আমরা কিন্তু খাবার আসার সময় সাথে করে নিয়ে এসে ছিলাম। তাই আমাদের কস্ট করতে হয় নাই। আমরা আমাদের খাবার শেষ করলাম।

আর এর পরেই আমরা আমাদের মাইক্রোবাসে উটে গেলাম। এর পর আমাদের অভিযান হবে নিজাম পুর এর “শাহের খালি” তাই আমরা ওই দিকে ছুটে ছললাম। আমার পরের লিখা হবে “শাহের খালি” এর প্রাকৃতিক সৌন্দয্য নিয়ে আর বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে। সত্যিই এক অন্য রকম সৌন্দয্য আমরা উপভোগ করলাম। চার দিকে সবুজ পাহাডের সারি,পাহাড থেকে নেমে আসা সে ছোট ছোট নদী,আকা বাকা সরু পাহাডী পথ,ঘন ঘন জংগল,বড় বড় পাথর, আর ৬ টা সৌন্দয্য পুর্ন ঝর্না মিলে ১ টা বড় ঝর্না।

সতর্কতাঃ ১। অবশ্যই আপনাকে কয়েক জনের (৪ জনের) গ্রপ করে যেতে হবে। তা না হলে ভয় পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ২। .যাওয়ার সময় আলাদা কিছু কাপড নিয়ে যাবেন।

৩। .খাওয়ার পানি নিয়ে যাবেন। ৪। . ঝর্নাতে ঢুকার আগে অবশ্যই ২-৩ টা বড় লাঠি নিয়ে যাবেন। ৫।

. ঝর্নাতে ঢুকার সময় যে ২০ ফুট এর মতো পথ আছে ওই খান দিয়ে অবশ্যই সাঁতার কেটে যেতে হবে তা না হলে ডুবে যাবেন। তাই সবাই কে সাঁতার জানতে হবে। ৬। . ঝর্নার ভিতর ঢুকলে দেখবেন বড় বড় পাথর। সাবধান ওই পাথর গুলা অনেক পিচ্ছিল।

তাই সাবধানে পা পেলবেন। ৭। .বিকাল ৩ টার পর থেকে ওই খানে সন্ধা হতে শুরু করে তাই ঝর্না থেকে ৩ টার মধ্যে বের হয়ে যাবেন। ৮.। .উপর থেকে পানি গুলা প্রবল বেগে নিচের দিকে পডে,তাই ঝর্নাতে গসল করতে সাবধান,যেন ঝর্নার পানির বেগ কারো ক্ষতি করতে না পারে।

৯। .বর্ষাকালে পানির পরিমান অনেক বেশি থাকে,তাই বর্ষাকালে না যাওয়াই ভালো। ১০। .যদি দুপুর এর সময় কাটান তাহলে সাথে করে কিছু খাবার নিয়ে যেতে পারেন। না নিলে ও সমস্যা নাই কারন ওই খানে কিছু দোকান আছে।

[ বাংলা টাইপ এ আমি তেমন অভিজ্ঞ না। তাই কিছু কমন বানান ভুল হয়েছে। এইটা বুঝার চেস্টা করবেন। ] লেখকঃ মোঃআব্দুল কাইয়ুম মেহেদী ( শেয়ানা পোলা )  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।