আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জাতিকে দায়মুক্ত করতে এর বিকল্প নেই

পঁচা মানুষ যুদ্ধাপরাধীরা মানবতার শত্রু। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিল। এ ছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নিরপেক্ষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ইতিহাসের অনেক কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন হয়েছে। মাত্র কয়েক বছর আগে বসনিয়ায় গণহত্যার দায়ে সার্বিয়ান সমরনায়কের বিচার হয়েছে ও তাকে কঠোর শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। একই পদ্ধতিতে বাংলাদেশে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়।

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৭ যুদ্ধাপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের অন্যতম জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে করা মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়েছে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম সাক্ষ্য দেন মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুবুল আলম হাওলাদার। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদারদের সহযোগী এই যুদ্ধাপরাধীরা হত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগসহ মানবতার বিরুদ্ধে নানা অপরাধের জন্য দায়ী। গত অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর গত বুধবার একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হল।

৪১ বছর পর সাঈদীর বিচার প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে নিঃসন্দেহে এক নতুন যুগের সূচনা হল। উল্লেখ্য, প্রসিকিউশন বিভাগ জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে ৩১টি অভিযোগ উত্থাপন করেছিল; ট্রাইব্যুনাল এর মধ্যে ২০টি গ্রহণ করে তার ভিত্তিতে অভিযোগ গঠন করে। এর মধ্যে আছে খুন, ধর্ষণ, গণহত্যা, লুটপাট, ভাংচুর ও জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করাসহ নানা ধরনের অপরাধ। ১৯৭৫ সালে স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সপরিবারে শহীদ হওয়ার পর একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীরা ভেবেছিল, আর কোনোদিন হয়তো তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে না। সে সময় মুক্তিযোদ্ধা ও দেশপ্রেমিকরাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন।

অন্যদিকে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর দালাল ও যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল; তারা সমাজ ও রাজনীতির নানা স্তরে পুনর্বাসিত হয়েছিল। একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত অনেক ব্যক্তি সে সময় সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিল; তারা অনেকেই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করেছিল। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনামলে যুদ্ধাপরাধীরা কেউ কেউ সরকারের মন্ত্রী পর্যন্ত হয়েছিল। এরা দেশের উন্নয়ন ও রাজনীতিকে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধের বিরোধী এসব রাজনীতিক দেশ ও জাতির শত্রু।

তবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অন্যতম নির্বাচনী ওয়াদা ছিল একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করা। আমরা চাই ’৭১-এ সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের শাস্তি হোক। জাতিকে দায়মুক্ত করতে হলে এর বিকল্পও নেই। শুরু হওয়া এই বিচারিক কার্যক্রমকে সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে নিতে হবে সমাপ্তির দিকে। বিচারের রায় ঘোষণা ও তা কার্যকরের অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশের জনগণ।

Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.