চারপাশটাতে ছড়িয়ে আছে অসাধারন সব কিছু আর এই সব কিছুর মাঝে আমি খুবই সাধারন একজন... আমি এক খুব সাধারণ মানুষ। আট দশটা মানুষের মত আমারও অনেক স্বপ্ন ছিল। সেই ছোটবেলায় মা বলতো ছেলে আমার বড় হয়ে ব্যারিষ্টার হবে, বাবা বলতো বি সি এস ক্যাডার। আমি ও ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলাম। যেহেতু বাবা সরকারী কর্মকর্তা, অনেক জায়গায় ঘুরতে হত তাই আমার বন্ধুরাও কিছুদিন পর পর বদলাতো।
অনেক খারাপ লাগত তখন কিছুদিন যোগাযোগ থাকত তারপর বন্ধ। বদলানোকে অনেক ঘৃনা করা শিখলাম যখন দেখলাম আমি সবার সাথে মিশতে পারছিনা। এর মধ্যে বয়ঃসন্ধিকাল আসল। নতুন নতুন স্বপ্নগুলো বাঁধা শুরু করল বুকের ভিতরে আর মস্তিস্কের ভিতরে। স্বপ্ন দেখতাম আর চিন্তা করতাম।
চিন্তাতেই আমার স্কুল জীবন পার হল তেমন কোনো বিরাট অর্জন ছাড়াই ।
এই অর্জনেই আমার স্বপ্নের কিছুটা অংশ মরে গেল। শেষ পর্যন্ত কোনো মতে ভর্তি হলাম চট্টগ্রাম সিটি কলেজে, তাও আবার গ্রুপ পরিবর্তন করে। যাক এখনো স্বপ্নের মধ্যেই রইলাম। তবে কিছুটা পরিবর্তন পরিমার্জন করে।
(যেহেতু কলেজ জীবন বুজতেই পারছেন কি স্বপ্ন!!! )
বন্ধুরা অনেকে প্রেমে মজে শাহজাহান হয়ে মমতাজের জন্য তাজমহল্ বানাতে না পারলেও ইতিহাস রচনা করতে কার্পন্য করল না। কেউ কেউ আবার ছ্যাঁকা খেয়ে মজনু হয়ে গেল। আমি এইসব দেখে আর অই পথে এগুলাম না। স্বপ্নগুলো আরোও ভালো করে বাধঁতে লাগল--তার সাথেই প্রেম করব যাকে অনেক ভালবাসতে পারব এবং তাকেই বিয়ে করব --(ইসঃ তখন যদি জানতাম ...)। যাই হোক আবারও স্বপ্ন দেখতে দেখতে কলেজ জীবন পার করলাম।
মোটামুটি একটা রেজাল্ট নিয়ে বৈতরণী পার করলাম।
কিছুদিন পরে জানতে পারলাম আমার আসল বৈতরণীটাই রয়ে গেছে। আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। কিন্তু মার স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে ভর্তি হলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানেও শাটল আর গ্রুপিং নিয়ে স্বপ্নের শিকড় গজিয়ে দিলাম।
তবে বেশিদিন পারলাম না। বন্ধুদের মায়া ত্যাগ করে গেলাম আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানে আসার পর আমার স্বপ্নের খোঁজ পেলাম । হায় রে আমার স্বপ্ন এবার না হয় তোকে আমি ধরবই। শুরুটা চলছিল ভালোই।
মাঝপথে এসে স্বপ্ন আরো জ়েঁকে বসল। কত বিকেলে অপেক্ষা তার জন্যে। কতবিকেলে হেঁটেছি তার হাত ধরে। কত প্রানবন্ত হয়ে গিয়েছিলাম। কত স্বপ্ন একেঁছিলো সে আমার চোখে।
পাগলামিতো কম করিনি। (একবার ক্লাস শেষে খাতা আর ছাতা নিয়েই তার সাথে ঢাকা আসলাম তাও আবার সাথে ছিল মাত্র ৬৮৫ টাকা) এবার আর স্বপ্ন দেখেই দিন পার করিনি। স্বপ্নটাকে ধরার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগলাম। কি জানি সে হয়ত আমার জন্য ছিলনা......। ।
খুব সহজেই সরে গেল জীবন থেকে। কিন্তু আমাকে রেখে গেল স্বপ্নগুলোর কবরের পাশে। সে বলেছিলো একটি নাম ---- বিয়ের পর আমাদের মেয়ে হলে নাম হবে "সচ্ছতা"। আজ তাকেই জসিম উদ্দিনের কবরের মতন স্বপ্নেই পরিচয় করিয়ে দেই একেকটা কবর স্বপ্নের ভিতর।
এইখানে তোর দাদির(স্বপ্নের) কবর আইন অনুষদের নিচে,
ছোট থেকেই রেখেছি তাকে বুকের মধ্যে আগলে।
অতঃপর
এইখানে তোর বাপের স্বপ্নের কবর এইখানে তোর মার,
কি করি বল? ভুলিতে চাই তারে তবুও যে পরান মানে না।
এক ফাল্গুনে সে আমারে ফোন করিয়া ডাকি
বুঝনা তুমি কি চাই আমি তোমার কাছে আজি।
কত সন্ধে হাটতাম পথে মোরা হাতে রাখিয়া হাত
কেমনে সে চলিয়া গেল ধরে শিক্ষকের হাত।
অতঃপর
এইখানা তোর দাদার স্বপ্নের কবর রেখেছি আজও খালি
আজ হোক কাল হোক পরবে হেতায় স্বপ্নপুরের মাটি
অতঃপর
জোর হাত তুলি আজ মা সৃষ্টিকর্তার কাছে কর প্রার্থনা
আর কারো স্বপ্ন যেন তুমি কবর দিও না...।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।