আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু : তারপরও চাই স্বপ্নের বাংলাদেশ - ইলিয়াছ রিপন

সাংবাদিক ইলিয়াছ রিপন এক লোকের নাকি বড় সখ ছিল সে ব্যবসা বাণিজ্য করে বড় হবে। তার মূলধন এবং যোগ্যতা ইত্যাদি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিল, ডিমের ব্যবসা করবে। যেমন চিন্তা তেমন কাজ। অনতি বিলম্বেই শুরু করল ডিমের ব্যবসা। টুকরিতে ভরে মাথায় নিয়ে ডিম ফেরি করতে করতে স্বপ্ন দেখতে লাগলো- ডিমের ব্যবসায় করে সে অনেক টাকার মালিক হয়েছে।

বিয়ে করেছে এক রূপসী ললনা। সুন্দর ফুট ফুটে একটি বাচ্চা হয়েছে। বাচ্চাটি এখন হাটতে পারে, দৌঁড়তে পারে, আব্বু ডাকতে পারে। বাচ্চাটি আব্বু বলে ডাক দিয়ে দৌঁড়ে তার কোলে লাফিয়ে উঠছে, সে দুহাতে বাচ্চাকে তুলে নিতেই মাথার উপর থেকে ডিমের টুকরী পড়ে গিয়ে তার স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেল। বাংলাদেশের অধিকাংশ স্বপ্নপ্রিয় মানুষের মতো আমিও স্বপ্ন দেখেছিলাম অবৈধ উদ্দিনদের তান্ডব সাঙ্গ হলে এক এগার নামের উত্তপ্ত কড়াইয়ে সিদ্ধ হওয়া আমাদের রাজনীতিবিদগণ তাঁদের সেকেলে চিন্তা-চেতনা এবং অভ্যাস থেকে সম্পূর্ণরুপে বের হয়ে আসবেন এবং শুরু করবেন এক নতুন জীবন।

আমরা পাব একটি স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ, যেখানে থাকবেনা কোন হিংসা-বিদ্ধেষ, থাকবেনা হানাহানি আর লাঠা লাঠি, থাকবে না অপমান আর লাঞ্চনা গঞ্জনা। সুদৃঢ় ঐক্য এবং সঠিক গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার আসবে সরকার যাবে। দেশ ও জনগণের কল্যাণ সাধন এবং কল্যাণ কামনাই হবে সরকারের মূল লক্ষ্য। আর আমরাও উজ্জীবিত হবো তাঁদের পরশে। হায়রে স্বপ্ন! আমরা এক এগার'র উত্তপ্ত কড়াই থেকে গণতন্ত্রের (!) জলন্ত আগুনে পতিত হলাম।

আমাদের স্বপ্ন ডিমওয়ালার মতো ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। ডিমওয়ালা তার স্বপ্ন পূরণের জন্য আবারও চেষ্টা চালাতে পারে। আমরা আমাদের এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের কোন পথ আপাতত দেখছি না। জানিনা আমাদের এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন সাহায্য পাব কি না। জুলুম থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর সাহায্য চাওয়া ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই।

নির্বাচনে জিততে পারবেনা বুঝতে পেরে যে দলটি মহা তান্ডব সৃষ্টি করে এক এগার আনয়ন করেছিল, সেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০০৮ এর নির্বাচনে যাবে কি যাবে না গড়িমসি করতে করতে একসময় দেখা গেল নির্বাচনে যাওয়া শুধু নয়, নির্বাচন পরবর্তী যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তারা কোন হরতাল না করারও অগ্রীম ঘোষণা দিয়ে দিলেন। 'সমজদার কি লিয়ে ইশারাহি ক্বাফি হ্যায়', রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক এবং সচেতন জনগণ বুঝে নিলেন পর্দান্তরালে কিছু একটা ঘটেছে নিশ্চয়ই। তা না হলে হরতালের রেকর্ড সৃষ্টিকারী এই দলটি ক্ষমতা না পেয়ে বিরোধী দলে গিয়ে হরতাল করবে না, এমন ঘোষণা দিতে পারে না। পর্দার অন্তরালে সাক্ষরিত হলো 'ক্ষমতা'র বদলে 'ক্ষমা' করার গোপন চুক্তি। হাজারো অবৈধ অপকর্মের হোতা, উদ্দিনরা এই পয়েন্টে বেগম খালেদা জিয়ার সাথেও দেন দরবার কম করেনি।

তাঁর এবং চার দলীয় জোটের সমর্থকরা পরিস্কার দেখতে পাচ্ছিল জনগণ তাদের সাথেই আছে। তারপরও তাদের মনের দাবী ছিল, উদ্দিনদের ক্ষমা করার ঘোষণা দিয়ে হলেও গোপন আঘাত থেকে বাঁচা হোক। নির্বাচনে জয়ী হলে দেখা যাবে ক্ষমা কতটুকু করা যায়। কিন্ত না, আপোষহীন নেত্রী বলে কথা! চার দলীয় জোট সমর্থকদের হতাশ করে দিয়ে ক্ষমতায় গেলে উদ্দিনদের প্রতিটি অপকর্মের বিচার করার অগ্রীম ঘোষণা দিয়ে দিলেন তিনি। হয়ত ভেবেছিলেন ২০০১ এর মত প্রশাসন নিরপেক্ষ করা হবে।

নির্বাচন কমিশন এবং আরো কিছু প্রতিষ্ঠানের চরম পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণের কারণে ধারণা করা হচ্ছিল, এসব নিরপেক্ষ করা হবে। কিন্তু প্রশাসন যখন নিরপেক্ষ করার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল না, তখন বেগম জিয়ার টনক নড়ল। তিনি পক্ষপাতদুষ্ট প্রশাসনের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার পরিকল্পনা শুরু করলেন। অপরদিকে চার দলীয় জোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরীক দল জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে যাওয়ার জন্য এক পায়ে খাড়া। তারা বিএনপিকে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য প্রেসার দিতে লাগলেন।

তাদের যুক্তি ছিল, ক্ষমতায় যারাই আসুক না কেন, অন্ততপক্ষে গণতন্ত্র তো প্রতিষ্ঠিত হবে। তাছাড়া সমস্ত জরীপ এবং জনজোয়ার চার দলীয় জোটের পক্ষে ছিল তা অত্যন্ত পরিস্কার দেখা যাচ্ছিল। প্রশাসন যে এত কিছু করতে পারে তা তাদের জানা ছিল না। জানা না থাকারই কথা, তাদেরতো ক্ষমতার মূলে গিয়ে দেখার সুযোগ হয়নি যে, সেখানে বসে কি কি করা যায় তা জানবেন। তাদের সখের গণতন্ত্র তাদের জন্য সেই অবৈধ উদ্দিনদের আমলের চাইতেও খারাপ পরিণতি নিয়ে আসল, সাথে অন্যদের জন্যও।

যাই হোক, শেষ পর্যন্ত অনিচ্ছা এবং দলের শুভাকাঙ্খিদের পরামর্শ এড়িয়ে ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বে চার দলীয় জোট অংশ নিল গণতন্ত্রের স্বার্থে। নির্বাচনের ঘোষণা থেকে শুরু করে ফল প্রকাশ পর্যন্ত চারদলীয় জোট এবং প্রার্থীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা (?) জাতি অবাক বিষ্ময়ে লক্ষ্য করেছে। এই পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে চার দলীয় জোটকে চরমভাবে পরাজিত করা হলো। দেশ এবং গণতন্ত্রের বৃহত্তর সার্থে চার দলীয় জোটের পক্ষ থেকে ফলাফল মেনে নিয়ে পরবর্তী পাঁচ বছর মহাজোটকে সহযোগীতা করার ঘোষণা দেয়া হলো। নির্বাচন পরবর্তী গণতান্ত্রিক সরকারের বিভিন্ন অন্যায় পদক্ষেপের পরেও জামায়াতের পক্ষ থেকে বড় ধরণের ছাড় দেয়া লক্ষ্য করা গেল।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ চট্টগ্রাম কর্তৃক অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক তাফসীরুল কুরআন মাহফিলে তাদের সমর্থন থাকে বরাবর। ২০০৯ এর তাফসীর মাহফিলের অনুমতি দেয়ার পর ছাত্রলীগের একই স্থানে প্রোগ্রাম ডাকার অযুহাতে মাহফিলের অনুমতি বাতিল করা হলো। সরকারের এই অন্যায় সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জামায়াতের পক্ষ থেকে কোন প্রতিরোধ বা হরতাল করা হলো না। নাম মাত্র বিবৃতি দিয়েই মেনে নিল সরকারের অন্যায় সিদ্ধান্ত। চট্টগ্রামের ইসলাম প্রিয় জনগণ প্রতিবাদে ফেটে পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

এমতাবস্থায় জামায়াত শিবির এবং সমাজকল্যাণ পরিষদের প্রতিটি ইউনিট থেকে জনগণকে শান্ত থাকার এবং ধৈর্য্য ধারণ করার সবক দিয়ে শান্ত রাখতে সমর্থ হয়েছে। নতুবা সরকারের প্রাথমিক অবস্থায় এটা হতো মারাত্মক এক ধাক্কা। কয়েকদিন বয়সের শিশু সরকারকে আঘাত করা থেকে বিরত থেকেছিলেন তারা। অথচ ১৯৮৯ সালে এরশাদ সরকার ১৪৪ ধারা দিয়েও এই মাহফিল বন্ধ করতে পারেননি। জনতার চাপে ১৪৪ ধারা তুলে নিয়ে মাহফিলের অনুমতি দিতে বাধ্য হয়েছিলেন তৎকালিন প্রশাসন।

কিন্তু বিশ বছর পর পূর্বের তুলনায় দ্বিগুন জনশক্তি নিয়েও কোন প্রকার সংঘর্ষে না গিয়ে সরকারের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছিল জামায়াত। নামমাত্র ঘটনার জের ধরে রাজশাহী এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের সর্বত্র শিবির নির্মূলে লেগে গেল সরকার। পক্ষান্তরে ছাত্রলীগের মহা তান্ডবকে প্রশ্রয় দিয়ে মাথায় তুলেছিল মহাজোট সরকার। ছাত্রলীগের এহেন অপকর্মের কারণে নানা মুখী চাপের মুখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়ে জনগণের আই ওয়াশ করলেন মাত্র। এসব ঘটনার কারণে শিবিরের নেতা কর্মীরা প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করতে চেয়েও কেন্দ্রীয় 'না' এর কারণে চুপ থেকেছেন অদ্যাবধি।

বিএনপির পক্ষ থেকেও সরকারকে যথেষ্ট ছাড় দেয়া হয়েছিল। সরকারের জুলুম নির্যাতন এবং অপশাসননের বিরুদ্ধে দেড় বছরের মাথায় বিএনপি একটি মাত্র হরতাল ডেকেছিল তাও দেড়মাস সময় দিয়ে। অর্থাৎ দেড় মাসের মধ্যে সরকার দাবী মেনে নিলে হরতাল প্রত্যাহারের সুযোগ রেখেই হরতালের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, যা আওয়ামী বুদ্ধিজীবিদের মতে মহা ভারত অশুদ্ধ হয়ে গেল এবং সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিল এই হরতালের বিপক্ষে। অথচ জোট সরকারের মাত্র ১ মাস ২২ দিনের মাথায় আওয়ামী লীগ হরতাল দেয়া শুরু করেছিল এবং সরকারের দেড় বছরে ১৬টি হরতাল ডেকেছিল আওয়ামী লীগ। প্রধান বিরোধী দল ও জোটের পক্ষ থেকে এত এত ছাড় দেয়ার পরও আওয়ামী লীগ সন্তুষ্ট হতে পারেনি।

সন্তুষ্ট হবেই বা কি করে? তারাতো চায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিরোধী দলের উপর চলাচ্ছেন দমন পীড়ন। তাই একান্ত বাধ্য হয়েই বলতে হচ্ছে- আমাদের গণতন্ত্রের একটি বড় আপদ হচ্ছে আওয়ামী লীগ। এই দলটি একবার ক্ষমতা পেলেই তা চিরস্থায়ী করার যত কলকব্জা আছে তার সবটা কাজে লাগিয়ে মরিয়া হয়ে উঠে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত পাওয়ার জন্য। দুঃখিত যে আমার অন্যতম প্রিয় ব্যক্তিত্ব জাতির মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দিয়ে শুরু করতে হচ্ছে।

চাটুকাররা দেশের সম্পদ লুটে পুটে খাওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুকে 'এক নেতা এক দেশ, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ' শ্লোগান শুনিয়ে মিস গাইড করতে সক্ষম হয়েছিল এবং তাঁর মাধ্যমে বাকশাল কায়েম করে জনগণের এই প্রিয় নেতাকে জন-বিচ্ছিন্ন করে ছেড়েছিল। ফলশ্রুতিতে যা হলো- যে মহান নেতাটি জনগণের হৃদয়ের মনিকোঠায় ঠাঁই পাওয়ার কথা ছিল আজ ৪০ বছর পর এসে তাঁকে জাতির পিতা ডাকার আইন করতে হচ্ছে এবং তাঁর ছবি টাঙ্গানো বাধ্যতামূলক করে আইন করতে হচ্ছে। ১৯৯৬ সনে বিএনপির সাথে জামায়াতের দুরত্বকে কাজে লাগিয়ে এবং জামায়াতের সাথে ভাল সম্পর্ক তৈরী করে ক্ষমতা পেয়েছিল আওয়ামী লীগ। পরে যখন দেখল জামায়াত বিএনপি তাদের ভুল বুঝতে পেরে আবার কাছাকাছি আসতে শুরু করেছে, তারপর থেকে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার অর্থাৎ এর পরেরবারও যাতে ক্ষমতায় আসতে পারে সেজন্য জননেত্রী শেখ হাসিনাকে দেয়া হলো এক মারাত্মক কুবুদ্ধি। কোন দুষ্টু নেতার মাথায় এসেছিল সেই কুবুদ্ধি কি জানি।

সেই মজার কুবুদ্ধিটা হচ্ছে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় এক বা একাধিক জাঁদরেল সন্ত্রাসী প্রতিষ্ঠিত করা। সন্ত্রাসীদের কাঁধে ভর করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার স্বপ্ন! আপনাদের স্মরণ থাকার কথা, জননেত্রী শেখ হাসিনা গর্ব করে বলেছিলেন, 'জয়নাল হাজারীর মত লোক প্রতিটি এলাকায় চাই। ' ১৯৯৬ পরবর্তী আওয়ামী লীগ সৃষ্ট কয়েক জাঁদরেল সন্ত্রাসীর নাম এখানে উল্লেখ করছি, যাদের ঘটনা সমস্ত মিডিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে প্রচারিত হয়েছিল- ১. ফেনীর জয়নাল হাজারী, ২. নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমান, ৩. বরিশালের আবুল হাসনাত আব্দুল্লা, ৪. লক্ষ্মীপুরের আবু তাহের, ৫. ঢাকার ডা: এইচ বি এম ইকবাল, ৬. ঢাকার হাজী মকবুল, ৭. ঢাকার হাজী সেলিম, ৮. ময়মনসিংহের আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ, ৯. সিলেটের মহিবুর রহমান ওরফে বোমা মানিক প্রমুখ। কিন্তু বিধি বাম, ২০০১ এর নির্বাচন প্রাক্কালে তাদেরই তৈরী তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রায় সব কয়টি সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ফলে শান্ত পরিবেশে নির্বাচন হলো এবং চার দলীয় জোট জয় পেল। এবারের (২০০৮ পরবর্তী) কৌশল দুইটি: (১) এটি খুবই সুক্ষ্ম, এই সুক্ষ্ম প্রচারণায় সুকৌশলে কাজে লাগানো হচ্ছে বাহ্যত নিরপেক্ষ টাইপের আওয়ামী বুদ্ধিজীবীদের।

লক্ষ্য করে থাকবেন, তাঁরা টিভি টকশো গুলোতে কথার ফাঁকে ফাঁকে বলার চেষ্টা করছেন, সরকার স্থায়ী না হলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়, এক সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ অন্য সরকার এসে স্টপ করে দেয়। তাই সরকারকে কমপক্ষে দুই টার্ম দেয়া দরকার। কথায় কথায় আমেরিকার উদাহরণও দিচ্ছেন তারা। বলা হচ্ছে ওখানে দুইটার্ম থাকার সুযোগ আছে। উচ্চ শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীদের জন্য 'গাঁজাখোরী' শব্দটি ব্যবহার না করেই বলছি- আমেরিকায় একজন ব্যক্তি দুই টার্মের বেশী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে পারেন না।

কিন্তু বাংলাদেশে যতটার্ম ইচ্ছা তত টার্ম প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার সুযোগ আছে। সুতরাং এক্ষেত্রে বাংলাদেশ আমেরিকার জন্য উদাহরণ হতে পারে, আমেরিকা বাংলাদেশের জন্য উদাহরণ নয়। বাংলাদেশের মানুষকে এভাবে বোকা বানিয়ে সুকৌশলে অগ্রীম ভোট চাওয়াতে তেমন কাজ দেবে না। বাংলাদেশের মানুষকে যতটা বোকা ভাবা হচ্ছে ততটা বোকা কিন্তু তারা নন। (২) বাকশাল বিরোধীর গন্ধ পেলেই অকথ্য ভাষায় গালাগালি এবং স্বাধীনতা বিরোধী, নরঘাতক, মৌলবাদী, তারেক চোরের সহযোগী ইত্যাদি বলে নাজেহাল এবং জন সমক্ষে হেয় করার কৌশল।

প্রতিবাদ করলেই জেল জুলুম আর পুলিশের ভয়। এখানে ব্যবহার করা হচ্ছে দলের উঠতি কিশোর-যুবকদের। তারা থানা থেকে পুলিশ নিয়ে গিয়েও ধমক দিতে দেখা গেছে বিভিন্ন যায়গায়। এভাবে বিরোধী দলকে সাংগঠনিক ভাবে দুর্বল করে বাকশালের পথ সুগম করার পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীর বিচারের নামে জামায়াত-বিএনপির কয়েকজন নেতাকে জেল বন্দী করে নির্যাতন করা হচ্ছে, অথচ সেই আমলের ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা অধিকাংশ মুসলিম লীগ নেতা যারা প্রকৃত রাজাকার ছিল এবং পরে মুসলিম বাদ দিয়ে আওয়ামী হয়ে লীগের মধ্যে ঘাপটি মেরে নিজেদেরকে মুক্তিযোদ্ধা দাবী করছে তাদেকে বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে না।

মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মতো বিশ্বখ্যাত আলেমকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। যিনি ১৯৭৫ এর পূর্বে কোন রাজনৈতিক দলেই ছিলেন না। তাঁর কোন দোষ পাওয়া না গেলেও অত্যন্ত হাস্যকরভাবে বলা হচ্ছে, তাঁকে ছাড়া যাবে না। কারণ উল্লেখ করেছেন তিনি নাকি তাঁর যাদুকরী বক্তব্যের মাধ্যমে যুদ্ধপরাধ মামলার বিঘ্ন ঘটাতে পারেন। মাহমুদুর রহমানের মতো একজন প্রতিবাদী লেখক সাংবাদিককে বন্দী রেখে বুঝানো হচ্ছে- হে সাংবাদিক সম্প্রদায়, দেখলে তো? তোমরাও সাবধান! ডক্টর ইউনুস, বাংলাদেশের জন্য নোবেল বিজয়ের মতো একটি সম্মান এনে দিলেন।

তাঁর এবং গ্রামীণ ব্যাংকের সাথে একমত না হওয়া সত্ত্বেও এই নোবেল প্রাপ্তিকে বাংলাদেশের জন্য বিরাট অর্জন হিসাবে ধরে নিয়েছেন দেশের মানুষ। তাঁকেও কলংকিত করতে বাকী রাখেনি এই সরকার। শেয়ার বাজার থেকে সুকৌশলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাখ লাখ বিনিয়োগকারীকে পথে বসিয়ে দিয়ে পরে বলা হচ্ছে- তারা ভুল করেছেন। কাজ করে দিয়ে ভুল স্বীকারে ক্ষতিগ্রস্তদের কী কাজে আসবে? মন্ত্রী কথা বললেই দ্রব্যমূল্য লাফ দিয়ে উঠে। আর ন্ত্রী মহোদয় বলেন বাজার দর খুব ভাল অবস্থায় আছে।

আজ আর কথা বাড়াব না, শেষ করব সেই অতি চালাক আর সহজ সরল ভাইদের গল্প দিয়ে। বাবার মৃত্যুর পর দুই ভাইয়ের অতি বুদ্ধিমানটি সহজ সরল ভাইটিকে নানাভাবে ঠকিয়ে চলেছে। গাইয়ের ভাগ করেছে সামনের অংশ ছোট ভাইয়ের আর পেছনের অংশ চালাকের। ছোট ভাই ঘাস খাওয়ায় আর সে দুধ খায়। গাছগাছালির গোঁড়ার অংশ ছোট ভাইয়ের আর আগা তার।

সে খায় ফল ফলাদি আর ছোট ভাই গাছের পরিচর্যা করে। এমনটি দেখে প্রতিবেশীরা মজুলুম ছোট ভাইয়ের পক্ষে এসে যায় এবং তাকে পরামর্শ দেয়- গাইয়ের সামনের দিক তোমার, সুতরাং তুমি সামনের দিকটা কেটে বিক্রয় করে দাও। গাছ গাছালির গোঁড়ার অংশ তোমার তুমি সব গাছের গোড়া কাটা শুরু করে দাও। অবস্থা বেগতিক দেখে চালাক ভাইটি ছোট ভাইয়ের পাওনা বরাবর দেয়া শুর করলো এবং একলা খাওয়ার স্বপ্ন ভঙ্গ হলো তার। অতি চালাক দাবীদার আওয়ামী লীগ যে হারে বিরোধী দল এবং দেশের সম্মানীত নাগরিকদের প্রতি জুলুম এবং অধিকার বঞ্চিত করে চলেছেন, সেদিন খুব দুরে নয়, যখন দেশের জনগণ বিরোধী দলের পক্ষে অবস্থান নিয়ে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেবে জুলুমকারীর হাত থেকে।

লেখক ঃ ইলিয়াছ রিপন, সাংবাদিক, মোবাইল ঃ ০১৮১৫৪৭৬৪৭৩ ই-মেইল ঃ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.