আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঝুলে থাকা নেতারা, আমার 'গিবসন' হেডফোন ও মটরসাইকেল আরহী

মানুষ আর মানুষের তামশা দেখি,দুটোই আমার প্রিয় ! কানে হেডফোন গুজে হাটা আমার ইদানিং অভ্যাস হয়ে গেছে । সবাই কি ভাবছেন আমি বুঝি খুব গান-পাগল ? আচ্ছা পাগলে কি গান শুনে ? ওরা কি বুঝতে পারে কোনটা ভাল গান, কোনটা মন্দ গান ? গান সংক্রান্ত কারণে আমি কানে হেডফোন গুজে হাটি না । শুধু লাগিয়ে রাখি । তাতে গান বাজে না । ঢাকা'র শব্দদূষণ যে হারে বাড়ছে ।

তাতে ' গিবসন ' নামের হেডফোন টা আমাকে দু' দন্ড শান্তি দেয় । জীবনান্দকে যেমন দিয়েছিল নাটরের বনলতা সেন । মাথায় রাবার লাগানো এই হেডফোন, শব্দ পুরোপুরি আটকে রাখে না । তবে শব্দের মাত্রা বেশ কমিয়ে দেয় । জ্যামের মাঝে গাড়ি গুলো কেন যে খামাখা প্যা-পু করে আমি বুঝি না ।

যথারীতি কানে হেডফোন ঘুজে কাকরাইল মোড় থেকে সিটি সেন্টারের দিকে যাচ্ছিলাম । চিটাগাং থেকে একটা ওষুধ আসবে । সেটা আবার কালকে ইতালী পাঠাতে হবে । খালাত ভাই এর জন্য । রাস্তা ধরে হাটছিলাম ।

একটু আয়েসি ভাব । বিএনপির পার্টি অফিসের একটু সামনে । এই খানে এলে আমার মনটা কেমন যেন হয়ে যায় । বিএনপি'র সকল জাদরেল নেতাদের এখানে ঝুলিয়ে রাখা হয় । পোষ্টার গুলো'র দিকে তাকিয়ে আমি বাংলাদেশ দেখতে পাই ।

এরাই আগামী'তে দেশের হাল ধরবে । একই অবস্থা গুলিস্তান আওয়ামী কার্যালায়ের সামনে । যারা এখন দেশটাকে ঝুলিয়ে দিচ্ছে । ঝুলতে ঝুলতে এমপি, মন্ত্রী । যে বড় নেতা, তাকে বড় করে ঝুলিয়ে রাখা হয় ।

তার নিচে থাকে কিছু পাতি নেতা বা উঠতি নেতা । তারা বড় নেতার নিচে ঝুলতে থাকে । নরসিংদী'র এক বড় নেতা হাঁসিমুখ করে ঝুলছে । আমি তার পোষ্টারের দিকে তাকিয়ে হাঁসিমুখের জবাব হাঁসি দিয়ে দিলাম । পাশে একজন দাড়িয়ে আমার মত বড় নেতার হাঁসি দেখছে ।

মনে হল সে এই নেতার পক্ষের লোক । আমার পাশে দাড়িয়ে একা একা বলছে - " পারল আটকে রাখতে । লোকমান কে রাজনীতিতে আনছে খাইরুল সাহেব । সরকার খেল দেখাইছে । খেইলের দিন শেষ ।

লোকমান নিজেও কি ভালা লোক আছিল নাকি । হ্যায় নিজেও তো খুন করছে । ওহন নিজে খুন হইছে । এইডা সব মন্ত্রী'র চাল । নরসিংদী'র মানুষ সামনের ইলেকশনে এর বিচার করবে ।

" আমি চাচামিয়া'র দিকে তাকিয়ে আবার হাঁসি দিলাম । যে লোকটি'র জন্য অপেক্ষা করছি । সে এখনো আসেনি । সায়েদাবাদ থেকে রিকশায় করে আসছে । হঠাৎ আমার পিছনে বিকট একটা শব্দ হল ।

আমি ঘুরে তাকিয়ে দেখি, একটা লোক রোড ডিভাইডারের সাথে উড়ে গিয়ে মাথার পিছনে বাড়ি খেল । মুহুর্তে লোকটা নিস্তেজ হয়ে পড়ে রইল । একটু দুরে একটা মটরসাইকেল আরো দুজন লোক পড়ে আছে । তিনজনই মটর সাইকেল আরোহী । কিছু বুঝে উঠার আগেই যায়গাটা রক্তে ভেসে গেল ।

লোকজন সবাই দৌড়াদৌড়ি করে একটা লোকটাকে কোলে করে রাস্তা'র পাশে নিয়ে এল । কোথা থেকে কে যেন একটা সাদা কাপড় নিয়ে এসে মাথা'টা বেধে দিল । একটা রিকশা এগিয়ে এল । দু'জন লোক মিলে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের দিকে নিয়ে গেল । আমি দৌড়ে পড়ে থাকা দুজনের কাছে গেলাম ।

তাড়া উঠে দাড়িয়েছে । কিছু লোকজন যে মটর সাইকেল চালাচ্ছিল তাকে ধমকাচ্ছিল । মটর সাইকেল আরোহী দু'জন উঠে মটর সাইকেল পাশে নেওয়ার নাম করে সাই করে চলে গেল । আমরা সব মানুষ হা করে রইলাম কিছুক্ষণ । রাস্তাটা ফাকা ছিল ।

ওদের পিছনে দু'টা ছেলে কিছুক্ষণ দৌড় দিয়ে গিয়ে ওরা থেমে গেছে । ওদের এই আচরণে চারপাশে লোকজন সবাই - হতভম্ভ । *********** প্রাণ ভরে দোয়া করি, আল্লাহ পিছনে বসা এই লোকটাকে তুমি বাঁচিয়ে দাও । যখন রিকশায় করে লোকটাকে - হাসপাতালের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল । ভিড়ের মধ্য দু'জন বৃদ্ধ লোক এসে, লোকটির গাড়ে এমন ভাবে হাত রাখল ।

যেন সব ঠিক হয়ে যাবে । তাকিয়ে দেখি দু'জন লোকের চোখেই জল । আহারে । চিনিনা জানিনা । তারপরও মানুষ এমন করে মানুষের জন্য কাঁদে ।

কিছুক্ষণের জন্য আমারও কান্না পাচ্ছিল । হয়ত লোকটি'র বাসার ছোট ছেলে-মেয়ে আজকে কোন বায়না নিয়ে বসে আছে । ফেরার সময়, আজ বাবা নিয়ে আসবে । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।