আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শ্রমিকনেতা কল্পনা ও বাবুলের মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত

শ্রমিকনেতা কল্পনা আক্তার ও বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে দায়ের করা আটটি মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে আমিনুল হত্যা মামলার তদন্ত দ্রুত করতে পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মামলা প্রত্যাহারের আদেশসংক্রান্ত নথিতে সই করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বাজারসুবিধা (জিএসপি) ফিরে পেতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের শ্রমিকদের নিরাপত্তা, কর্মপরিবেশ ও সংগঠিত হওয়ার অধিকারের ক্ষেত্রে অগ্রগতি না হওয়ায় জিএসপি স্থগিত করে।


জানতে চাইলে শ্রমিকনেতা কল্পনা আক্তার গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘শ্রমিক অসন্তোষে ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ এনে আমাদের বিরুদ্ধে এসব মামলা করা হয়েছিল। সরকারকে ধন্যবাদ যে শেষ পর্যন্ত আমাদের অনুরোধে না হোক, বিদেশিদের সুপারিশে এসব মামলা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। তবে আমরা চাই সরকার দেশবাসীকে অবহিত করুক যে আমরা নির্দোষ। ’
মামলাগুলোর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে কল্পনা আক্তার বলেন, ‘দ্রুত বিচার আইনে তিনটি মামলায় ইতিমধ্যে আদালত থেকে অব্যাহতি পেয়েছি। আরও পাঁচটি মামলা তদন্তাধীন ও বিচারাধীন আছে।


যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম অধিকার সংস্থা আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার অ্যান্ড কংগ্রেস অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্গানাইজেশন (এএফএল-সিআইও) অভিযোগ করে আসছিল, আলোচিত মামলাগুলো রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত এবং ভিত্তিহীন অপরাধের মামলা। কিন্তু এসব মামলা প্রত্যাহারে সরকার কোনো ধরনের ভূমিকা রাখছে না।
শ্রমিক নেতা আমিনুল হত্যার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম অধিকার সংস্থাটির অভিযোগ, ২০১২ সালের এপ্রিলে এই হত্যাকাণ্ডের পর এখন পর্যন্ত সরকার একজন অপরাধীকেও শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আমিনুল হত্যা মামলার তদন্তের গতি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন মোস্তাফিজুর রহমানের সন্ধানদাতার জন্য পুরস্কার ঘোষণাও করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘আশা রাখি, জিএসপি সুবিধা ফেরত পেতে মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৪ ধারায় এসব মামলা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়ে এ-সংক্রান্ত চিঠি ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ও মহানগর পিপির কাছে পাঠানো হচ্ছে। আজকালের মধ্যে পিপিরা বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করবেন।
এর আগে গত ১২ জুন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা ধরে রাখতে তিন মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যাপারে তাগাদা দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব সি কিউ কে মুসতাক আহমদের কাছে চিঠি পাঠান বাণিজ্যসচিব মাহবুব আহমেদ। জিএসপির শুনানির আগে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তরে (ইউএসটিআর) এ বিষয়ে অগ্রগতি-সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন পাঠাতেই তাগাদা দেওয়া হয়েছিল।


শ্রম ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২৮ মার্চ ওয়াশিংটনে জিএসপি-সংক্রান্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে শ্রম পরিস্থিতি আরও উন্নত করার জন্য বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম সংস্থাটির অভিযোগের বিষয়টি উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে পাঠানো চিঠিতে বাণিজ্যসচিব জানান, ‘এএফএল-সিআইও উল্লিখিত তিন মামলার ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। তাদের অভিযোগ, মামলাগুলোর কার্যক্রমে কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। মামলাগুলো আপনার (স্বরাষ্ট্র) মন্ত্রণালয়ের কাজের সঙ্গে জড়িত।

দেশের শ্রম পরিস্থিতি উন্নয়নে সরকারের আন্তরিকতা সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জনের জন্য মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি প্রয়োজন। ’
চিঠিতে আরও বলা হয়, সাভারের রানা প্লাজায় দুর্ঘটনার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা পরিস্থিতি উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দিয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশকে দেওয়া জিএসপি সুবিধা পর্যালোচনার কথা ভাবছে। এই পরিস্থিতিতে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগের মাধ্যমে শ্রম পরিস্থিতির উন্নয়ন করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জন সম্ভব বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।


কিন্তু এখন জিএসপি স্থগিত হওয়ার পর সরকার এই মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিল। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।