আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সূয্যি মামার রাগ

স্বপ্নবাজ। একটা রাতের রংধনুর স্বপ্ন দেখি...। -কিঙ্কর আহ্সান সূয্যি মামার রাগ কিঙ্কর আহ্সান সূয্যি মামাটা তখন অনেক দুরের দেশে থাকে। অনেক অনেক দুর। সে দুরত্ব ঠাওর করার সাধ্যি আমাদের নেই।

সূর্যের আকারটা ছিল তখন চৌকো। মস্ত চারকোনা এক বাক্সের মতন। নিজ দেশ থেকে গুটি গুটি পায়ে রওনা দিত সে পৃথিবীর দিকে। কতই না কষ্ট হত তখন। আসতেও লেগে যেত অনেকটা সময়।

দিন রাত তাই দীর্ঘ হয়ে যেত খুব। তাই বলে মানুষের সূর্যের ওপর রাগ ছিলনা একটুও। সূর্যটা যে লক্ষী অনেক। কত দুরের পথ পাড়ি দিয়ে আসে। আহারে কতই না কষ্ট সূর্যটার।

তারপরও বিরক্ত হয়না কারও ওপর। দিনভর মিষ্টি রোদ দিয়ে ভরিয়ে রাখে চারপাশটা। তাপ যেমন বাড়েনা তেমনি কমেও না। সূর্যের কষ্ট হলেও মানুষ কিন্তু থাকে খুব শান্তিতে। কোন চিন্তা ভাবনা নেই।

পড়াশোনা আর চাকরির মতন ঝুটঝামেলা নেই। সারাদিন কাটে গানবাজনা করে। কেউ কেউ পাখি দেখে সময় কাটায়। বুলবুলি,মোহনা,হালতী আরও নানান জাতের পাখি। সাতার কাটে পুকুরের স্বচ্ছ জলে।

কখনও এমনি এমনি মন খারাপ হয় মানুষদের। তখন সবাই মিলে চলে যায় মেঘেদের কাছে। ছোট বড় অসংখ্য মেঘ নেমে আসে মাটিতে। বৃষ্টি হয়ে ঝরে মন ভালো করে দেয় সবার। খিদে পেলে সকলে মিলে করা হয় শিকার।

সেদিন হয়ত হরিন কিংবা কিছু খরগোশ মারা পড়ে। ধরা হয় মাছ। সে সময় আগুন জ্বালাতে জানত না তখন কেউ। তাইতো শিকারের জিনিষগুলো নিয়ে যাওয়া হত সূর্যের কাছে। সূর্যই পুড়িয়ে সেদ্ধ করে দিত।

মানুষ সামান্য পেয়াজ মরিচ দিয়ে খেয়ে নিত পুরোটা। এ সুখের জীবন একঘেয়ে হয়ে উঠছিল দিনকে দিন। আচমকা তাই মানুষেরা পায় একটা দুঃসংবাদ। ভয়াবহ দুঃসংবাদ। ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সূর্য।

সে আর কষ্ট করে আসতে পারবেনা পৃথিবীতে। রাগ করেছে মানুষের ওপর। সূর্যটাই শুধু কষ্ট করে আর তারা থাকে শান্তিতে। এমনটা আর হতে দেয়া যায়না। রোজ রোজ একা এতটা পথ আসার মানে হয়না কোনো।

মানুষেরা এমন বিপদে পরেনি আগে কখনও। সূর্য নেই তাই চাঁদেও আলো হয়না। ঘুটঘুটে অন্ধকারে শিকার করারও উপায় নেই। কতক্ষনই বা সহ্য করা যায় আধার কালো। সবাই মিলে ঠিক করল অনুনয় বিনয় করে মান ভাঙাবে সূর্যের।

কিন্তু অতটা পথ যাওয়ার যে কোন উপায় নেই। যে যাবে সেই’ই তো মারা পড়বে। ইশ শাবল আর গাইতি দিয়ে সূর্যের শরীর কেটে কেটে যদি গোলাকার করে দেওয়া যেত। মন্দ হতনা তবে। সূর্যটা গড়িয়ে গড়িয়ে দ্রুত চলে আসত পৃথিবীতে।

রাগ থাকতনা আর কারও ওপর। সূর্যের এমন কান্ড দেখে খেপেছে অন্য গ্রহগুলো। কি দরকার এমন পাগলামীর। নিরীহ ছোট মানুষগুলো না জানি কত কষ্টেই আছে। সবাই মিলে তখন বের করল দারুন একটা বুদ্ধি।

সূর্যটা যখন থাকবে গভীর ঘুমে তখন চুপি চুপি সব বড় গ্রহগুলো গিয়ে সূর্যের পেছন থেকে দেবে একটা ধাক্কা। সে ধাক্কায় গড়াতে গড়াতে পৃথিবীতে চলে আসবে সূর্যটা। যেই কথা সেই কাজ। পরেরদিনই ঘুমের মাঝে জোরসে একটা ধাক্কা দেয়া হল সূর্যকে। ধাক্কাটা একটু জোরে হওয়াতে সূর্যটা নিয়ন্ত্রন হারাল।

গড়াতে গড়াতে থেতলে যেতে লাগল শরীর। তারপর যখন পৃথিবীতে এসে পৌছাল চৌকো শরীর থেতলে গিয়ে ততক্ষনে হয়ে গেছে গোলাকার। সূর্যের আনন্দ আর দেখে কে। ধিনতা ধিনতা বলে শুরু করল নাচ। সূর্যের আনন্দে মানুষও খুশি।

রক্ষে হল বিপদ থেকে। এরপর থেকে অবশ্য ঝামেলা হয়নি আর কোন। সূর্যও আসা বন্ধ করেনি আর। তবে গ্রহগুলোর ওপর একটু রেগে গিয়েছিল সূর্যটা। কত্ত বড় সাহস তাকে ধাক্কা মারে।

তাপ দিতে দিতে হঠাৎ এ কথা মনে পড়লেই রেগে নিজের তাপ বাড়িয়ে দেয় সূর্যটা। মানুষের তখন কষ্ট হয় অনেক। মানুষের কষ্ট কমানোর জন্যে আবার কমিয়ে ফেলে তাপ। সূর্যের এই পাগলামিতে মানুষের কোনো অভিযোগ নেই। কতই না কষ্ট করে বেচারা।

এতটুকু পাগলামি না হয় করুক। সবসময়ের মিষ্টি রোদটা পাওয়া যায়না এখন আর। এতেই যা একটু মন খারাপ হয়...। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।