আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রতিশোধ

লিখতে ভাল লাগে, লিখে আনন্দ পাই, তাই লিখি। নতুন কিছু তৈরির আনন্দ পাই। কল্পনার আনন্দ। প্রতিশোধ মোহাম্মদ ইসহাক খান এই, ধর ওকে। পালিয়ে যাচ্ছে।

সাবধান, একজনও যেন পালাতে না পারে। দুর্বল মানুষটি ভয়ার্ত দৃষ্টিতে পেছনে তাকিয়েই প্রাণভয়ে আবার দৌড়তে লাগলো। কিন্তু বেশিদূর যেতে পারলো না। কিছুক্ষণের মধ্যেই খুনেরার দল তাকে ধরে ফেললো। চারদিক থেকে চারজন ধরে এক কোপে শরীর থেকে আলাদা করে ফেললো ডান হাত।

মরণ আর্তনাদে কেঁপে উঠলো শহরের অন্ধকার গলি, কিন্তু হন্তারকদের অট্টহাসিতে চাপা পড়ে গেল সে চিৎকার। কাটা হাতটি তখন মাটিতে পড়ে আছে, যেন একটা কিলবিলে জীবন্ত প্রাণী। দ্বিতীয় আঘাতে মানুষটির অন্য হাতটিও কেটে নিলো আরেকজন। আবার চিৎকার, আবার বুনো হাসির শব্দ। তৃতীয় আঘাতে ধড় থেকে মুণ্ডু উড়ে গিয়ে পড়লো মাটিতে।

ধুলোয় মাখামাখি হয়ে গেল রক্তমাখা কাটা মাথা। ততক্ষণে খুনিদের উল্লাস বাঁধ ভেঙেছে। পাগলের মতো একটার পর আরেকটা ধারালো অস্ত্রের কোপে মানুষটিকে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেললো তারা, চাক চাক লাল মাংস ছড়িয়ে দিলো মাটিতে। তারপর নরদেহের সেই টুকরোগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিলো, আগুনের ওপরই থু থু ফেলে বেরুলো পরের শিকারটি ধরার জন্য। তাদের চোখগুলো আগুনের ভাটার মতো জ্বলছে, সারা শরীর দিয়ে টগবগ করে ফুটে বেরুচ্ছে ঘৃণা আর জিঘাংসা।

রক্তের নেশায়, প্রতিশোধের নেশায় উন্মাদ হয়ে গেছে তারা। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে ভয়ংকর ঘাতকের দল, কাজের সুবিধের জন্য ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে গিয়েছে। এখন এক একজনকে ধরা হবে আর খতম করা হবে। কাউকে বাঁচতে দেয়া হবে না। শিশু, নারী, বৃদ্ধ, যুবক - কেউ বাদ যাবে না।

একজন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে স'মিলে, কাঠ চেরাইয়ের কারখানা। পোড়া কপাল তার, খুনিদের চোখ এড়াতে পারে নি। হা হা করে হেসে তার পিছু নিলো ওরা। ধরে ফেললো নিমেষেই, কাঠের গুঁড়ির পেছনে নিজেকে আড়াল করার বৃথা চেষ্টা করলো মানুষটি। লোকটিকে পাঁজাকোলা করে তুলে এনে একজন ঘাতক আরেকজনকে হাসিমুখে বলল, এই বোকা মানুষটি আর জায়গা পায় নি, স'মিলে আশ্রয় নিয়েছে।

ভালোই হয়েছে, কী বল? আমাদের সুবিধে হয়ে গেল। দ্বিতীয় ঘাতক কম কথার মানুষ, সে সুইচ টিপে চালু করে দেয় ইলেকট্রিক করাত। বিকট গর্জনে মানুষটির গলা বরাবর নেমে আসে করাতের ধারালো ফলা। করাতের রূপোলী ব্লেড গাঢ় লাল রঙয়ে রাঙিয়ে যায়। বিকট যান্ত্রিক শব্দের কারণে তার চিৎকার শোনা যায় না।

মানুষটি অবশ্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বাঁচতে চাইছিল, প্রাণের ভয়ে কাঁদছিল, ক্ষমা চাইছিল, মাত্র একটা সুযোগ চাইছিল, নিজের সবকিছু দিয়ে দিতে চাইছিল, কিন্তু কিছুতেই খুনিরা তাকে রেহাই দিলো না। বীভৎসতার এখানেই শেষ নয়। মানুষটির শরীরটা কাঠ চেরাইয়ের করাত দিয়ে ফেঁড়ে ফেঁড়ে লম্বা লম্বা টুকরো করা হল, র্যাঁ দা দিয়ে ঘষে ঘষে তুলে ফেলা হল শরীরের চামড়া। এখন একটা সাদাটে মাংসপিণ্ড মনে হচ্ছে দেহটাকে, চামড়া নেই, আবরণ ছাড়া দেহের টুকরোগুলো খুব ভয়ংকর দেখাছে। শুধু খুন করলেই চলবে কেন, হত্যাটিকে একটা ভীষণ ভৌতিক রূপ দিতে হবে, যাতে পরবর্তীকালে এই ঘটনার কথা মনে করতেও সবার আত্মা কেঁপে ওঠে, যেন মুখের কথা মুখেই আটকে যায়।

একজন মানুষও শহর ছেড়ে পালাতে পারলো না, কেউ ঘরে বসেই নিহত হল, কেউ পালাতে গিয়ে, কেউ লুকোনো অবস্থা থেকে ধরা পড়ে। একটু পর পর শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভেসে আসছিল অসহায় মানুষের আর্তনাদ, বাঁচার আকুতি আর হত্যাকারীদের হর্ষধ্বনির আওয়াজ। রাত পোহাবার আগেই জনশূন্য হয়ে গেল শহরটি, ঢেকে গেল মানুষের লাশে। নারকীয় তাণ্ডবের পর আর একজন জীবিত মানুষও এখন এখানে নেই। মৃত একটি শহর।

***** রাত এখন শেষের দিকে। পুরো শহরটিকে রক্ত আর লাশে ঢেকে দিয়ে আততায়ীরা এখন সবাই মিলে শহরের মাঝখানে জড়ো হয়েছে। গোল হয়ে বসে আছে। সবাই চুপচাপ, কেউ কোন কথা বলে নীরবতা ভঙ্গ করছে না। একটু দূরে দেখা যাচ্ছে তাদের রক্তমাখা অস্ত্রগুলো, মশালের আলোয় চকচক করছে।

এখনো রক্তের ফোঁটা গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে অস্ত্রগুলো থেকে, এখনো শুকোয় নি। তাদের প্রত্যেকের মুখেই গভীর প্রশান্তির ছাপ, যেন একটা বিশাল দায়িত্ব পূরণ হয়েছে, অব্যাহতি মিলেছে। পূর্বপুরুষদের নির্মম হত্যার চরম প্রতিশোধ নিয়েছে তারা। চালিয়েছে ভয়ংকর তাণ্ডব। এই হন্তারকেরা আর কেউ নয়, তারা গাছ।

বৃক্ষ। মানুষ এতকাল ধরে তাদের সাথে যা করে এসেছে, তারা হুবহু সেভাবে এর জবাব দিয়েছে। (১৮ ডিসেম্বর, ২০১২) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।