আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নোয়াখালী আবিস্কার এবং একটি জোক্স

শেষ বারের মতো সতর্ক করছি... নোয়াখালী আবিস্কার এবং একটি জোক্স একটা ঘরকোনো মানুষ । তাই আমার দৌড় ঝাপ বৃহত্তর ঢাকার ভেতরেই ছিল। কিন্তু এই আমাকেই বদলী করা হলো সুদূর নোয়াখালী। সুদূর হলেও ব্যপারটা আমার কাছে ভীতিপ্রদ ছিলনা। মনে একটা আনন্দই ছিল।

আনন্দ নিয়েই কেনাকাটা করছি। একটা ঢাউস সাইজের ব্যাগ কিনলাম। যদিও এটা ভর্তি করার মতো সরঞ্জাম ছিলনা। আমাকে বিদায় জানাতে আমার এক বন্ধু আসলো টঙ্গি থেকে। আমাকে বাসে তুলে দিয়ে সে চলে গেল।

বিদায় বেলা আমরা কেউ কারো চুখের দিকে তাকাই নি। বিদায়ের শেষ দৃশ্যটা সুখকরই রাখতে চেয়েছি। আমি যেই পরিমান ভীতু , এই বিদায় প্রবাসীর জন্য বিমানে তোলে দেয়ার মতোও হতে পারতো। নোয়াখালীর ব্যপারে আমার কৌতুহল ছিল। আমার কোন আত্মীয় স্বজন নোয়াখালীতে নাই।

নোয়াখালীর খুব ঘনিষ্ট বন্ধু বান্ধবও নেই। তবু নোয়াখালীর ব্যপারে কৌতুহলি হয়েছিলাম আমাদের কলেজের এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে। তিনি খাঁটি নোয়াখাইল্লা। তার মুখ থেকে সারাদিনই নোয়াখালীর প্রসংসা বাক্য ঝড়ে পড়তো। এতই বেশি কথা শুনেছি যে নোয়াখালী আমাদের কাছে চেনাই মনে হতো।

আমরা সেই বড় ভাইয়ের কথায় মোটামোটি নোয়াখালীর প্রেমে পরে যাই। ঐ সময় আমাকে যদি দুটি অপশান দিত তবে হয়তো স্বর্গে না গিয়ে নোয়াখালীতেই যেতাম। শুধু তাই নয়। কোন চমৎকার ব্যপার বর্ণনা করার সময় বতাম" এটা ঠিক নোয়াখালীর মতো সুন্দর"। তবে নোয়াখালী আমাকে নিরাশ করেনি।

রওনা হওয়ার আগের দিন, অফিস থেকেও আমাকে অনেক টিপস দিয়ে দেয়া হলো। অফিসের একজন নোয়াখাইল্লা আমাকে বুঝিয়ে দিল কোন বাসে যাওয়া ভাল, কোন রাস্তায় সময় কম লাগবে। কোন বাসস্টেন্ডে নামতে হবে ইত্যাদি। সায়দাবাদ থেকে বাস যাবে সরাসরি মাইজদী । আমি জানতে চাইলাম, মাইজদী থেকে নোয়াখালী কি ভাবে যেতে হয়? তিনি একটি চতুর হাসি দিয়ে বললেন, ওখানে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেই বলে দিবে।

জীবনে প্রথম দীর্ঘ জার্নি, বিষ্ময় হয়ে দেখি চারদিক কখনো ঘুমঘুম চোখ। হঠাৎ সুপারভাইজার জানতে চাইল আমি কোথায় নামবো। আমি বললাম মাইজদী। মাইজদী তো বুঝলাম। মাইজদী বাজারে নাকি মাইজদী টাউনে? আমি চিন্তা করে বললাম টাউনে।

আমাকে টাউনে নামিয়ে দেয়া হলো। ঢাউস সাইজের ব্যাগটা সাথে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। রিক্সাওয়ালারা ভীড় করছে, কোথায় যাব। আমি বললাম নোয়াখালী। এই কথা শুনে ওরা চলে যাচ্ছে।

তাদের চলে যাওয়া দেখে মনে হলো, নোয়াখালী মনে হয় অনেক দূরে, রিক্সায় যাবার নয়। দোকানে ঢুকে একবোতল পানি কিনে জানতে চাইলাম। ভাই নোয়াখালী কি ভাবে যেতে হয়? দোকানদার হাসি মুখে জানতে চাইল আপনি কি নতুন এসেছেন? আমি মাথা দোলিয়ে সম্মতি দিলাম। মুখে বললাম জ্বি। আপনি নোয়াখালী কোথায় যাবেন? আমি বললাম সার্কিট হাউস।

তিনি হাসতে হাসতে বলল দাঁড়ান ব্যবস্থা করছি। একটা রিক্সা ভাড়া করে আমাকে আবার আসার নিমন্ত্রন করলেন। আসলে নোয়াখালী নামে কোন উপজেলা, ইউনিয়ন, কিছুই নেই। নোয়াখালী সদর হলো সুধারাম থানা। সুধারাম নামটা আমার খুবই আকর্ষণ করে।

তার পর থেকে সুধারাম থানার সামনে দিয়ে আসার সময় এই লেখাটা দেখলেই কেন যেন ভাল লাগতো। শহরের সবচেয়ে জনবহুল অংশটার নাম মাইজদী। তার পর পৌনে দুই বছর নোয়াখালী থাকার সময় ঐ দোকান দারের সাথে ভাল একটা সম্পর্ক গড়ে উঠে। সারা দেশজুড়ে একটা নোয়াখালী ভীতি আছে। আমার আগেও ছিলনা এবং অনেক দিন থাকার পরেও নেই।

এই পৌনে দুই বছরে যেখানেই হাত বাড়িয়েছি, পেয়েছি বন্ধুত্বপূর্ন সহযোগিতা, পেয়েছি আন্তরিকতা, অনেক ভালবাসাও। শত্রুর তুলনায় বন্ধুই পেয়েছি বেশি। আমার মনে হয় আত্মবিশ্বাসি হাত কখনোই খালি হাতে ফিরে আসেনা। নোয়াখালীর কয়েক জন মানুষকে কখনো ভুলার নয়। নুরুল আলম মাসুদ(নির্বাহী পরিচালক,প্রান),দলিলুর রহমান দুলাল( রাজনৈতিক কর্মি),প্রণব আচার্য্য( কবি ও সংগঠক),সুমন সওদাগর( ব্লগার সবাক,একজন স্বাপ্নিক মানুষ) এবার এক নোয়াখাইল্লার জোকস বলি: একজন আমার কাছে আসলো একটা ইমেইল করে দিতে।

মানে হলো একটা ইমেইল আইডি খুলে দিতে হবে। তার একটা ভিজিটিং কার্ড করা লাগবে তাতে দিতে হয়। এই ভদ্রলোক, ইন্টানেটতো দূরের কথা কম্পিউটারটাই ভাল করে চেনেন না। তবু কেন তার ইমেইল আইডি লাগবে বুঝতে পারলামনা। অল্প সময়ে তার নাম দিয়ে একটা আইডি করে দিলাম।

এবং সহজ একটা পাসওয়ার্ড দিলাম। তিনি অনেকক্ষন বসে দেখলেন নানা প্রশ্ন করলেন এবং শেষে আমাকে একটা কাগজে লিখে দিতে বললেন। তার আইডি এবং পাসওয়ার্ডটি লিখে দিলাম। প্রায় মাস খানেক পরে তার তিনি আমাকে একটি ভিজিটিং কার্ড দিলেন। খুবই সুন্দর একটা ভিজিটিং কার্ড নিচে তার ইমেইল এড্রেস এবং তার পাশেই লেখা: পাসওয়ার্ড:12345678 ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.