আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছিটমহল সম্পর্কে জানুন ! !

আমি একজন আম জনতা শুরুর কথা: ছিটমহল মানে ভৌগলিক সীমানা থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু ভূখন্ড। বিচ্ছিন্ন কিছু জনপদ। বাংলাদেশ ও ভারতের মূল ভূখন্ড থেকে এমন বিচ্ছিন্ন জনপদ আছে দেড় শতাধিক। বাংলাদেশ ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, উত্তরাঞ্চলের লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম এবং কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী ও ভুরুঙ্গামারী থানার কিছু জমি ভারতীয় সীমান্তবর্তী জেলা কুচবিহারের অন্তর্গত। জমিগুলো বাংলাদেশের মূল ভূখন্ড থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন, একইভাবে কুচবিহার জেলার কিছু জমি বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলার বোদা ও দেবীগঞ্জ, নীলফামারীর ডিমলা, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম এবং কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলার অন্তর্গত।

এসব জমিও ভারতের মূল ভূখন্ড থেকেও আলাদা। এভাবে বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের এবং ভারতের ভেতরে বাংলাদেশের যেসব ছোট ছোট ভূখন্ড রয়েছে সেগুলোকেই বলা হয় ছিটমহল। যেভাবে সৃষ্টি: ১৯৪৭ সালে যখন বৃটিশদের দ্বারা প্রণীত এক আইনে বলা হয়, উপমহাদেশের স্বাধীন অঞ্চলগুলো তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী ভারত বা পাকিস্তানে যোগ দিতে পারবে অথবা তারা স্বাধীন সত্তা নিয়েও থাকতে পারবে। এ আইন অনুযায়ী রাঙামাটির রামগড় ও বান্দরবান পূর্ব পাকিস্তানে যোগ দেয়। আর পূর্ব সীমান্তের পার্বত্য ত্রিপুরা ও উত্তরের কুচবিহার যোগ দেয় ভারতে।

অন্য কোনো রাজ্য নিয়ে সমস্যা না হলেও সমস্যা হয় কুচবিহার নিয়ে। কারণ সে সময় কুচবিহারের রাজা ছিলেন জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণ। যার কিছু জমিদারি স্বত্ব ছিল বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুর জেলার মধ্যে। অপরদিকে রংপুর ও দিনাজপুরের জমিদারের কিছু তালুক ছিল কুচবিহার সীমানার মধ্যে। জমিদারদ্বয় এ নিয়ে সমঝোতায় আসতে ব্যর্থ হন।

ফলে ভারতের অভ্যন্তরে পড়ে পূর্ব পাকিস্তানের কিছু ভূখন্ড আর পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যন্তরে পড়ে ভারতের কিছু ভূখন্ড যা পরে ছিটমহল হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর উভয় দেশই এসব ভূমির দফারফা করার দিকে অগ্রসর হয়। গঠন করা হয় রেডক্লিফ মিশন। শেষ পর্যন্ত এ মিশনও চূড়ান্ত মীমাংসায় আসতে ব্যর্থ হয়। তাই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সৃষ্টির পর এ সমস্যা দেখা দেয় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে।

সমস্যার সমাধানে: ছিটমহল সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেয়া হয় ১৯৫৮ সালে, যা পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ফিরোজ খান নূন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু একটি চুক্তির মাধ্যমে চেষ্টা করে। তবে সমস্যার সমাধান করা যায়নি। দেশ স্বাধীনের পর ছিটমহল সমস্যা সমাধানকল্পে শেখ মুজিবুর রহমান ও ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে ১৯৭৪ সালে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা মূলত ইন্দিরা মুক্তির চুক্তি নামেই পরিচিত। চুক্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে ভারতীয় ছিটমহল এবং ভারতে বাংলাদেশের ছিটমহলগুলো অতি সত্বর বিনিময় করতে হবে। ’ বাংলাদেশের পানবাড়ী মৌজার সঙ্গে দহগ্রামকে সংযুক্ত করার জন্য ভারত বাংলাদেশকে ‘তিন বিঘা’ নামে (১৭৮.৮৫) মি. এলাকা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দেবে।

’ এ চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ বেরুবাড়ী দিয়ে দিলেও ভারত আজও চুক্তির নিয়ম অনুযায়ী কথা রাখেনি। কথা ছিল উভয় দেশই দেশীয় পার্লামেন্টে চুক্তিটি অনুমোদন করে নেবে। বাংলাদেশ অনুমোদন করলেও ভারত তা করেনি। ১৯৯০ সালে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট তিন বিঘা বাংলাদেশকে ব্যবহারের অনুমতি দেয়, যার ফলে ১৯৯২ সালের ২৫ মার্চ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরসীমা রাও আবার একটি চুক্তি করেন। এ চুক্তির মাধ্যমে দহগ্রাম আঙ্গরপোতা ছিটমহল সমস্যার একটি সাময়িক সমাধান হয়।

১৯৯২ সালের ২৬ জুন থেকে তিন বিঘা করিডোর ২৪ ঘণ্টায় ৬ ঘণ্টা খোলা রাখা হয়। পরে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জিইয়ে থাকা ছিটমহল সমস্যায় উদ্যোগী হয়। এ উদ্যোগের ফলে উভয় দেশ বৈঠকে বসলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ফলে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ এটাকে ভারতীয় হঠকারিতা এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এটাকে আইনি জটিলতা বলে ব্যক্ত করেন ছিটমহলের সংখ্যা সরকারি তালিকা অনুযায়ী বাংলাদেশ ও ভারতের মোট ছিটমহলের আয়তন দাঁড়ায় ২৪ হাজার ২৬৮ দশমিক ০৭ একর। তালিকা অনুযায়ী বাংলাদেশের মধ্যে ভারতের ছিটমহলগুলো লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার অন্তর্গত হলেও এগুলো অবস্থান করছে ভারতের কুচবিহার জেলায়।

বেসরকারি তথ্য মতে, এসব ছিটমহলের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। বাংলাদেশের চতুর্থ আদমশুমারি ২০০১ সালের প্রতিবেদনে ছিটমহলের জনসংখ্যার কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি। টেবিল- ১ এক নজরে বাংলাদেশ ও ভারতের ছিটমহল দেশ ছিটমহলের সংখ্যা আয়তন (একর) জনসংখ্যা বাংলাদেশ ৫১ ৭,১১০.০২ প্রায় ৭০,০০০ ভারত ১১১ ১৭,১৫৮.০৫ প্রায় ১,০০,০০০ মোট ১৬২ ২৪,২৬৮.০৭ প্রায় ১,৭০,০০০ টেবিল- ২ ছিটমহলের জেলাভিত্তিক অবস্থান জেলা বাংলাদেশী ছিটমহলের সংখ্যা ভারতীয় ছিটমহলের সংখ্যা লালমনিরহাট ৩৩ ৫৯ পঞ্চগড় - ৩৬ নীলফামারী - ৪ কুড়িগ্রাম ১৮ ১২ মোট ৫১ ১১১ বাংলাদেশে ভারতের ছিটমহল বাংলাদেশে ভারতের যে সব ছিটমহলের জমির পরিমাণ ১৭৫২.৪৪ একর। এখানকার অধিকাংশ জনগণই মুসলিম। ভূখন্ড ভারতের হলেও সবকিছু কেনাবেচা চলে বাংলাদেশি টাকায়।

বাংলাদেশের ভেতর ভারতীয় ভূখন্ডের সংখ্যা ১১১টি, যাতে প্রায় এক লাখ লোকের আবাস। বালাপাড়া খাগড়াবাড়ি নীলফামারী জেলায় আছে ৪টি ভারতীয় ছিটমহল। এর একটি বালাপাড়া খাগড়াছড়ি। এর জমির পরিমাণ ১৭৫২.৪৪ একর। এখানকার অধিকাংশ জনগণই মুসলিম।

বেহুলাডাঙ্গা পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলায় ভারতীয় যে ২৫টি ছিটমহল রয়েছে তার মধ্যে বেহুলাডাঙ্গা একটি। এর আয়তন ৮৬২.৪৬ একর। দাশিয়ারছড়া কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী থানায় রয়েছে ভারতীয় ছিটমহল দাশিয়ারছড়া। সীমান্ত থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার ভেতরে এর অবস্থান। আয়তন ১৭৪৩ একর।

লোকসংখ্যা প্রায় ৯ হাজার। ভারতীয় ভূখন্ডে বাংলাদেশের ছিটমহল ভারতে বাংলাদেশের ছিটমহলের সংখ্যা ৫১টি। যাতে প্রায় ৭০ হাজার জনগণের বসবাস। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে উন্নয়ন হলেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি ছিটমহলবাসীর গায়ে। তাদের দিন কাটে বিএসএফের কড়া নজরদারিতে।

বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ছিটমহলের অবস্থা এরূপ- দহগ্রাম আঙ্গরপোতা লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানা সদর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ ছিটমহলটি। ভারতীয় ভূখন্ডে এটি একটি বাংলাদেশি ইউনিয়নও বটে। দেশের সবচেয়ে বড় ছিটমহল এটি। বেসরকারি হিসাব মতে এখানের মোট জনসংখ্যা ১৫ হাজারের মতো। যাদের মধ্যে দুই থেকে আড়াইশ পরিবার একেবারেই ভূমিহীন।

ছিটকরলা ছিটকরলা দেশের মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন একটি বাংলাদেশি গ্রাম। কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলায় এ অবস্থান। প্রায় তিন কিলোমিটার ভারতীয় ভূখন্ড বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে এটিকে মূল ভূখন্ড থেকে। ভারতীয় ভূখন্ড না পেরিয়ে ছিটকরলা যাওয়ার কোনো উপায় নেই। ছিটকরলার আয়তন প্রায় ২৭০ একর।

এখানে প্রায় ৪,৫০০ লোকের আবাস, নেই কোনো স্কুল কিংবা হাসপাতাল। তাদের জীবন চলে ধরলায় মাছ ধরে আর দিনমজুরি করে। বত্রিশগাছ ও কিসমত বত্রিশগাছ লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী থানার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দুটি ছিটমহল হলো বত্রিশগাছ ও কিসমত বত্রিশগাছ। ছিটমহল দুটির আয়তন যথাক্রমে ৫৭৭ একর ও ২১০ একর। বেসরকারি হিসাব মতে এখানে ছয় হাজার লোকের বসবাস।

প্রায় ২০০ গজ ভারতীয় ভূখন্ড পার হয়ে যেতে হয় ছিটমহল দুটিতে। ছিটতিলাই কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী থানার ১০ কিলোমিটার দূরে একটি বাংলাদেশি গ্রাম ভারতীয় ভূখন্ডে। নাম ছিটতিলাই, এর আয়তন ৮৭ একর। এখানে রয়েছে ২৫টি বাংলাদেশি পরিবার। লোকসংখ্যা ২৫৬ জন।

যাদের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম উপায় মাছ ধরা ও দিনমজুরি করা। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.