আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জোড়া কবর

যারা অন্যের সাথে প্রতারণা করে তারা প্রথমে নীজের সাথে প্রতারণা করে,কিন্তু নির্বোধ বলে তারা তা বুঝে না। আর প্রতরণার মধ্য দিয়ে প্রতারক মানুষরুপী শয়তান ও প্রেতে পরিনত হয়। কিন্তু অজ্ঞনতার ধরুন বিবেক তাদের ধ্বংশন করে না। ফলস্বরুপ,তারা পাপাচারে সুখ ভোগ করে। বর্ষাকাল।

আকাশে ঘন মেঘ,দিগন্ত বৃষ্টিতে ঝাপসা। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে ঘন-ঘন। বৃষ্টি ঝরে চলেছে সারারাত। কি সুমিষ্টি শব্দ করে না বৃষ্টি ঝরছে কবিতাদের ঘরের টিনে। ঐ বৃষ্টির শব্দে সকাল না হতেই ঘুম ভাঙ্গে কবিতার।

মুহুর্তেই অবুজ শিশুর মত ওর মন্টা বিষাদে ভরে ওঠে। তখন ওর ইচ্ছা করে উচ্চ স্বরে কাঁন্না করতে। বাইরের বৃষ্টি বইতে শুরু করে ওর আঁখিদ্বয়ে,নীজের চোখের পানিতে নীজে ভেসে চলেছে সেদিকে খেয়াল নেই ওর। ভেজা কাপড়ের ঠান্ডা বোধ করে বুঝতে পারে সে নীজের অজান্তে অনেক কাঁন্না করেছে । মাঝে-মাঝে এমনটা হয় ওর।

তখন নীজেকে স্বস্হি রাখে কাঁন্না করে। মনে হলো কবিতার,যাকে ভেবে আমি এত চোখের জল ফেলি,সে কি এমনটি করে আমাকে নিয়ে ভাবে,সে কি আমাকে ভেবে এমনটি করে কখনো একফোটা চোখের জল ফেলেছে। নীজে-নীজেই বলে,অবশ্যই কালাম ও আমাকে ভালবাসে,খুব ভালবাসে,ওর প্রাণের চেয়ে ভালবাসে। তাই যদি না হবে তবে এক মুহুর্ত না দেখতে পেয়ে আমাকে দেখতে বাসায় ছুটে আসবে কেন। মোবালেইতু সে কথাগুলো বলা যেত।

তখন কবিতার মোবাইলের রিং বেজে ওঠে। ততক্ষণ যাকে নিয়ে সে ভাবছে সেই কালামের ফোন। কবিতা রিসিব করে বলে,এতক্ষণ তুমাকে নিয়েই মনে-মনে কথা বলছিলাম। সত্যি বলছ?হ্যা-সত্যি বলছি। কি কথা বলছিলে?বলছিলাম,আমি তোমাকে কত miss করি,কত ভালবাসি,সারাক্ষণ এই মন-প্রাণ তোমার নামের জিকির করে,তোমাকে চাই,আরও কত কি ভাবছিলাম।

তবে,কি জান,কি?। যদি আমার মন,প্রাণ তোমার নামের পরিবর্তে আল্লাহ নামের জিকির করতঃতবে,বিশ্ব্যের শ্রেষ্ঠ সাধিকা রাবেয়া বশ্রীর মত আমিও একজন খ্যাতীমান সাধীকা হতে পারতাম। তবে রাবেয়া বশ্রী আল্লাহ নাম জপে যত না আত্ব তৃপ্তি পেয়েছে,বুঝি তার চেয়ে বেশী পাচ্ছে তৃপ্তি প্রেমিকা তার প্রেমিকের নাম লয়ে। আর আমার শেষ নিঃশ্বাস তোমার নাম জপতে-জপতে আমি যেন ত্যাগ করতে পারি,সেই দোয়াটুকু তোমি আমার জন্য করো। কালাম বলে,এসব কথা সাক্ষাতে বলা যাবে।

এখন বল এই বৃষ্টি ক্ষণে কখন আমি তোমার সাক্ষাত পাচ্ছি। এই মুহুর্তে তোমাকে কাছে পাইতে মনের ভিতর আমার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সে ঝড় বুকের পাজরগুলো ভেঙ্গে আমার একাকার করছে। কিছুতেই মনকে স্হির রাখতে পারছি না। সারাক্ষণ শুধু তোমাকেই ভাবছি।

ভাবছি তোমি পাশে থাকলে এইক্ষণে কত সুখই না ভোগ করতাম। কবিতা বলে,তোমার সাথে সাক্ষাত করতে আমার ভয় হয়। সে ভয়ে শরীর আমার থর-থর কাঁপে। এই মন-প্রাণ ঝড় তোলে আরো তোমাকে কাছে পাইতে। খুব কাছে পাইতে।

দুজনে মিলে একাকার হইতে। কালাম বলে,আমিও তু সেই চাই। কিন্তু আমি তোমার কাছে বসতেই তোমি দুরে সরে বস। কবিতা বলে,বোকা ছেলে। নারীর চরিত্র মাত্রই এমন,তার শ্বামী বা প্রেমীক তাকে আদর, সোহাগ,ভালবাসবে,চুমু খাবে সে নারী তখন নীজেকে একটু স্হীর রাখে এই জন্য যে,সে নারী চায় তার শ্বামী বা প্রেমীক তাকে আরো সোহাগ করে ভালবাসেন।

কালাম বলে,বেশ ইহা জেনে আমার ভালই হলো,নারীর গোপন খবর জানলাম। আর আমি মনে-মনে পণ করলাম,আজ থেকে তোমাকে একটুও ছাড় দিব না। মন-প্রাণ উজার করে ভালবাসব,খুব ভালবাসব,তোমার আপাত-মস্তক জবান দ্বারা লেহণ করব,ভালবাসতে-বাসতে তোমায় আমি নিঃশ্ব হব। কবিতা বলে,আচ্ছা দেখা যাবেনি কে-কাকে কত আদর করতে পারি,ভালবাসতে পারি,চুমু খাইতে পারি। আর বৃষ্টি থামলেই তার প্রমান হচ্ছে।

কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি থামে,কবিতা কলেজে যাওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছে। তার মা দেখে বলে,ঝড়ের দিন। যে কোন সময় ঝড় উঠে আসতে পারে। আকাশে এখনো মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। বাইরে গুড়ি-গুড়ি বৃষ্টি ঝরে চলছে।

এই অবস্হায় বাসার বাইরে না যাওয়ায় ভাল। যাত্রার মুখে ঐ রকম বাধাকে কুলক্ষণা বলে জানলেও একালে কবিতা লক্ষণ-অলক্ষণ বলে কিছু মানে না। তার দেহে কাচা রক্ত,তাজা প্রেম টগ-বগ করছে। সে মায়ের কথা রদ করেই কালামের সাক্ষাতে বের হয়। আবার, তার মা পেছন দিক থেকে ডেকে বলে,কবিতা মা আমার বাসায় ফিরে এস,আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে,মেঘ গর্জণ করছে,লক্ষী মা আমার বাসায় ফিরে আস।

প্রেমের শক্তির কাছে সব শক্তিই পরাজিত হয়। মায়ের ভালবাসাকে তুচ্ছ করে,নীজের ভালবাসাকে প্রাধান্য দিয়ে,আর পিছনের দিকে না তাকিয়ে কবিতা হণ-হণ করে চলে যায়। আর তার মা কবিতা যতক্ষণ না দৃষ্টির বাইরে চলে যায় তার দিকে তাকাইয়ে রইলেন। ওদিকে কলেজে প্রাণ প্রিয়া কবিতার জন্য অপেক্ষা করছে কালাম। তার কাছে অপেক্ষার মুহুর্ত সময় মনে হচ্ছে শত বছরের সময়।

মনে হচ্ছে তার প্রেমিকাকে সে হাজার বছর ধরে দেখে না। মনের অনুরাগে বলে সে,আজ যদি ওকে পাই মন-প্রাণ তৃপ্তি করে ওকে ভালবাসব। খুব ভালবাসব। ওর আঙ্গুরের রসে ভরা ঠুট দুটি সম্পুর্ণ মুখের ভিতর তুলে নেব,চুষে-চুষে খাব। কালাম অমন ভাবতে-ভাবতে কলেজ থেকে গেটে আসে,আবার গেট থেকে কলেজে আসে।

ওর অমন আসা-যাওয়া দেখে অনেকে বলে,কালামের কি হয়েছে?পাগলের মত অমন আসা যাওয়া করছে কেন?। কেউ-কেউ বলে,হয়তু কারোর প্রেমে পড়েছে তার জন্য অপেক্ষা করছে। অপেক্ষাও এক যন্ত্রণা,তা মন-প্রাণ উভয়কে স্পর্শ করে। আহুত পাখির মত কালাম ছট-ফট করছে। সে কোন কিছুতেই স্বস্হি বোধ করছে না।

যে দিকে চোখ ফিরায় সে শুধু কবিতাকে দেখতে পায়। একমুহুর্ত কোথাও স্হির থাকতে পারছে না। সে এবার কলেজ গেটে দেখে যে,কোন বেহেস্তীয় হুর-পরি দাড়িয়ে আছে। তার পড়নে লাল সেলোয়ার-কামিজ,মাথার পড়নে ওড়নাটিও লাল। তাকে একমুহুর্ত দেখতে কালাম ভাল করে মেয়েটির দিকে তাকায়ে অভাক হয়।

এ-তু দেখছি আমারই কবিতা। তোমি কখন আসলে?মাত্রই বাস থেকে নামলাম। ভাবছি তোমাকে কল দিব,এসে তোমি উপস্হিত। সুমিষ্টি হাসি দিয়ে কবিতা-কালামের বামহাতটি তার ডানহাতের মুঠোই লয়ে বলে,চল নির্জনে কোথাও বসি। কোথায় বসব?আকাশে মেঘ ভেসে বেরাচ্ছে।

কণা-কণা বৃষ্টি ঝরেই চলেছে নিরত্তর। মাঝে-মাঝে বিদ্যুৎও চমকাচ্ছে। এই ক্ষণে তোমিই মন স্হির করে বল কোথায় বসা যায় বলে কালাম। কবিতা,চারিধারে চোখ ফিরিয়ে কলেজের মাঠে দৈত্যের মত দাড়ানো শিশু গাছটির নীচে কালামের পাশে বসে। কোন মানুষের সারা-শব্দ নেই।

কোন পাখির কুজন নেই। সুশীতল স্নিগ্ধ বাতাস বয়ছে। সেই বাতাসে কালাম ও কবিতা মনে সুস্হির হয়ে উঠে। নিবিড় মিলনের মাঝে দুটি মন যদি এক,হয় তবে তার মাঝে কখনোই কোন বাধা স্বীকার করা হীন মনেরই প্রকাশ করে। প্রেম-প্রেমই।

তাকে সারাক্ষণ আদর,সোহাগ,ভালবাসা দিয়ে পূর্ণ রাখা চাই। দুটি মনের চাওয়া এক হয়ে যায়। কালাম-কবিতার চোখে,মুখে,কপালে,গালে,ঘাড়ে চুমু দেয়। কবিতাও কালামের চোখে,মুখে,কপালে,গালে,ঘাড়ে চুমু দেয়। একে-অপরের আঙ্গুরের রসা ভরা ঠুট তুলে নেয় একে-অপরের মুখের ভিতর।

বৃষ্টির বেগ,বাতাসের গতি ভারী হচ্ছে সেদিকে খেয়াল নেই ওদের। চারিধীক আধারে আচ্ছাদন করছে। ঝড় উঠে আসছে। এখন চল কলেজে ফিরে যাই বলে কবিতা। কালাম বলে,বাইরে তোমি যে ঝড় দেখছ,তার চেয়ে দিগুন ঝড় এই বুকের ভিতর বয়ছে।

সেই ঝড় আমার বুকের পাজর,হার গুলো হিলাচ্ছে। আমার মন-প্রাণকে ধুমরে-মুচরে একাকার করছে। সেই ঝড়ে আমি বড়-বড় শ্বাস ত্যাগ করছি। কিছুতেই স্বস্হির শ্বাস গ্রহন করতে পারছি না। আজ এই ক্ষণে আমার আত্বা-মনকে প্রশান্ত করব।

আমার প্রেমকে পূর্ণ করব। তোমার আপাত-মস্তক আমি জ্ববান দ্বারা লেহন করব। বুঝাব আমার ভালবাসা কত গভীর। কবিতা বলে,বুঝেছি ভালবাসার গভীরতা সীমাহীন। আর,ভালবেস,চিরকালই ভালবেস,যতক্ষণ বেঁচে আছি প্রতিক্ষণ ভালবেস।

ভালবাসতে-বাসতে তোমি আমাকে মৃত্যু কুলে ঠেলে দিও। তবু এখন একটু শ্বান্ত হও। ওদিকে একটু দেখ। ঝড়ে গাছগুলো মাটিতে নূয়ে পরছে। আমাদের মাথায় গাছের শাখা ভেঙ্গে পরতে পাড়ে।

কালাম বলে,ভেঙ্গে পড়ুক। এই ক্ষণে তোমায় ভালবাসতে-বাসতে আমার মৃত্যু হউক। ঝড়ে নূয়ে পড়া গাছগুলোর চেয়ে অধিক আমি তোমার প্রেমে নূয়ে পরেছি। তখন ওদের মাথায় ঝড়ে বৃক্ষের একটি বিশাল শাখা আঘাত হানে। কিছুক্ষণ পর ঝড় থেমে যায়।

কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা দেখে ঝড়ের আঘাতে দৈত্যের মত দাড়ানো শিশু গাছটি ভেঙ্গে-ধুমরে-মুচড়ে পড়ে আছে। তারা ওখানে গিয়ে দেখে বৃক্ষের বিশাল শাখার নীচে কবিতা আর কালাম। তারা সকলে মিলে ওদের দু-জনকে বৃক্ষের শাখাটির নীচ থেকে বের করে মৃত অবস্হায়। সকল ছাত্র-ছাত্রী কলেজ কতৃপক্ষের নিকট কবিতা-কালামের লাশ কলেজ প্রাঙ্গনে দাফন করার অনুরোধ করেন। কলেজ কতৃপক্ষ ছাত্র-ছাত্রীর আবদার মেনে নেয়।

কলেজ প্রাঙ্গনেই কবিতা আর কালামের লাশ পাশা-পাশি কবরে দাফন করা হয়। (কাল্পনিক গল্প) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।