আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রথমত মই, অতঃপর কোটা...ফলটা খাইয়ে দিলেও হত...

জানি কেউ লেখাটা পড়বেন না...তবুও দায়িত্বের ঠেলে দেওয়া তাগিদে লিখছি... আমার অনেক কাছের একটা বন্ধু...ঢাবিতে এডমিশনের সময় বেশ পড়ে সিরিয়াল আসে...ঐ সিরিয়ালে কারো সাবজেক্ট পাওয়ারই কথা না...অথচ সে প্রথম সারির একটা সাবজেক্ট পেয়ে বসে... কারণ একটাই...তার বাবা দেশের ক্রান্তিকালে একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন... একজন মুক্তিযোদ্ধা দেশের জন্য অনেক বড় কিছু...একটি জাতির জন্য তিনি পিতৃত্বের দাবীদার...তার ঋণ কোনদিন কোনভাবেই শোধ করা তো দূরের কথা, কিয়দাংশ পূরণের চেষ্টা করাও বৃথা... সেই মুক্তিযোদ্ধার জীবনকে আরেকটু নিশ্চিন্ত করার জন্য কোটা ব্যবস্থার প্রবর্তন... প্রথমত, স্বাধীন দেশে সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যারা যুদ্ধ করলেন তাদের জন্যই কি তাহলে এখন বৈষম্যের জালে ঘিরে ফেলতে হবে দেশকে ?? একজন মুক্তিযোদ্ধা কি এসব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার জন্যই যুদ্ধে গিয়েছিলেন...এমন স্বার্থপরের মত আর দশজনকে ঠেলে ফেলে প্রলম্বিত জিহ্বা প্রদর্শন করে সুবিধা গ্রহণ করাটাও কি তার জন্য, তার অবদানের জন্য, তার মর্যাদার জন্য হানিকর না ?? আবার কোটার বিভিন্ন স্তর আছে...কোটার শুরু হচ্ছে বিভিন্ন উচ্চশিক্ষায় অগ্রাধিকার পাবার বেলা থেকে...যেখানে মেধা নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে...একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নিশ্চিন্ত থাকতে পারে সে না চাইলেও একটা ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়তে পারবে...অথচ যার বাবা মুক্তিযুদ্ধও দেখেনি...সারাটা দিন মাঠে খেটে অনেক কষ্ট করে কোচিঙের তাকা জোগাড় করিয়ে পড়িয়েছেন...তার সন্তানের ভবিষ্যৎ কী কে জানে !! আবার এসব প্রতিষ্ঠানে কোটা প্রবর্তনের সময় আসন সংখ্যা বাড়ানো হয়নি...অর্থাৎ একটি সাবজেক্টে পাঁচটি আসন বরাদ্দ হলে সেখান থেকে ঠাণ্ডা মাথায় পাঁচজন অপেক্ষাকৃত মেধাবী ছাত্রকে বঞ্চিত করা হচ্ছে...এই বঞ্চিত পাঁচজন যখন আরেকটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হচ্ছে তখন সেখান থেকে আরও পাঁচজন বিতাড়িত হচ্ছে...এভাবে অসংখ্য পাঁচজন ছাত্র তাদের যোগ্যতা অনুসারে ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারছে না...এবং দিন শেষে এমন অসংখ্য পাঁচজন ছাত্র কোটার পাটা-নোড়ায় নিষ্পেষিত হয়ে কোথাও ভর্তিই হতে পারছে না... আবার যে ছেলেটি ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পেলো মানে সে নিজেকে গড়তে যোগ্যতার চেয়ে আরেকটু বেশিই সুযোগ পেল...ভালো...মানে, হয়ত তার বাবা মুক্তিযুদ্ধ করতে গিয়ে আর্থিকভাবে দুর্বল হওয়ার দরুন তার পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটেছিল তা পূরণ করা হল...এখন সে নিজের মতন মানুষ হতে পারবে... যে ছেলেটি ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পেল, সে কিন্তু নিশ্চিতরূপে নিজের পায়ে দাঁড়াবারও সুযোগ পেল...যে নিজেগে গড়ে তুলবার সুযোগ পেলই তাকে আবার চাকুরীক্ষেত্রে ঘটা করে অগ্রাধিকার দেওয়ার হেতু কী ?? পড়ার সময় মইও দিলেন...চাকুরীর সময় আবার কোটা দিবেন...তাহলে এটুকু বাকী রাখবেন কেন...ফলটাও পেড়ে দিতেন...আজীবন মজা করে খেত... কথা এখানেই শেষ না...কোটা প্রথা শুধু সন্তানেই না...নাতি-নাতনী পর্যন্ত পৌঁছেছে... আমার নানা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন...তার চৌদ্দ সন্তান...তাদের আবার মোট সন্তান এখন পর্যন্ত ছাব্বিশ জন...তাও এখনও আমার দুই খালাম্মা আর দুই মামার বিয়ে বাকী...তাহলে মোট পঞ্চাশের কাছাকাছি সংখ্যাটা যারা এক মুক্তিযোদ্ধার মই বেয়ে উঠে কোটার ভাগীদার হবে...তাহলে অবস্থাটা কী দাঁড়াচ্ছে...দেশে আমাগোর থাকোনের দরকার কী...মুক্তিগো নিয়াই সংসার করুক সরকার... সরকারকে একটু বলি...এই কোটা সিস্টেমের আসল হেতু কী আমরা বুঝি...ভাবতেছেন চেতনা জিইয়ে রাখা...আদৌ সম্ভব না... আমার এলাকার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক একজন মুক্তিযোদ্ধা...কিন্তু তার পরানে পাক-জামাত প্রীতির অভাব নেই...আপনাদের কি মনে হয় তার সন্তানের মাঝে এই বীজ রোপণ করা সম্ভব ?? আমি নিজে চেষ্টা করেও আজ তের বছরে ব্যর্থ... আমাদের থানার জামাতের আমিরও একজন 'বীর' মুক্তিযোদ্ধা...তার ব্যাপারে আর কী বলব !! যেখানে প্রথম প্রজন্মই আজ দিক হারা, তখন এদের পরের প্রজন্মের চেতনা যে বডি স্প্রের মত ক্ষণস্থায়ী হবে না তা নিশ্চিত হবেন কীভাবে... শোনেন, মুক্তিযোদ্ধাদের কৃত কর্মের উপর যথেষ্ট শ্রদ্ধাবোধ রেখেই আযাদ স্যারের থেকে বলছি...সকল মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা না... আর যাদের পায়ে ভর করে একাত্তরে দেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে...তারা যদি তাঁদের সন্তান্দের মাঝে চেতনার প্রবাহ নিশ্চিত করতে পারে তবে অবশ্যই তারা দেশকে ভালবেসে, দেশের সকল সীমাবদ্ধতাকে মেনে নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে... এই কোটা সিস্টেমের বদলে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এমন কিছু করেন যেন তাদের ঔরসদের এভাবে কোটার দিকে তাকিয়ে না থেকে নিজেরাই নিজেদের যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে আত্মনির্ভরশীল হতে পারে... শুধু শুধু কিছু মেধাবী ছাত্রদের মেধাকে বৃক্ষের শাখাস্খলিত করে পথের ধারে ফেলে রাখবেন না...এতে পদদলিত হয়ে মেধার অপমৃত্যুর সমূহ সম্ভাবনাই শুধু না...ব্যাপক আশংকাও রয়েছে... আর হ্যাঁ, আমার সেই বন্ধুটি ঢাবিতে ভর্তি হয়নি...অপেক্ষাকৃত নিম্ন একটা ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে নিজের নিরেট যোগ্যতায়...তার ভাষ্যঃ দোস্ত, শুধু শুধু এই কোটার সুবিধা নিয়ে কেন আমার বাবার মুক্তিযুদ্ধের অবদানকে খাটো করব...তিনি যা দিয়েছেন নিজের জন্য কিছু না পাবার আশাতেই দিয়েছেন... জানি না এমন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কতজন আছেন...তবে ওকে আমার বন্ধুত্বের নিবিড়ে পেয়ে সত্যিই ভাগ্যবান... মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সম্মান চাই...কোনরূপ করুণা নয়...মাইন্ড ইট... ফেসবুক লিংকঃ Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।