আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অপূর্ণ স্বপ্ন...

কিছুটা আমার কিছুটা তোমার.. মেলেনা তো কিছু এখন আর! হাতের কাজ গুলো শেষ করার দ্রুত চেষ্টা সেই কখন থেকেই করে যাচ্ছে মিনা,কিন্তু শেষ হয়েও হচ্ছে না। এদিকে ঘড়িতে বাজে প্রায় ২টা,সন্ধায় বান্ধবী সোমার গায়ে হলুদে যাবার প্রোগ্রাম আছে,শ্বাশুড়ীর কাছ থেকে পারমিশন নিতে হবে,তারপর রেডী হতে হবে কিন্তু এখনো পর্যন্ত কিচেনের কাজই শেষ করতে পারছেনা সে...! মোবাইলটা বেজে চলছে সেই কখন থেকে কিন্তু মিনা সেদিকে খেয়াল করেও করছেনা,কে ফোন দিচ্ছে কে জানে! আবারো বাজছে মোবাইলটা,ডাইনিং এ এসে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখল সেতু কল দিয়েছে,রিসিভ করে বলল, --সেতু দোস্ত শোন,আমি এখন খুবই বিজি,কথা বলার একদমই চান্স নাই,সন্ধায় দেখা হচ্ছে তখন যত খুশী কথা হবে ঠিক আছে? --আরে ট্রেনের মত স্পিডে কি বলে যাচ্ছিস?একটু দম নে...তোকে একটা খারাপ খবর দেয়ার জন্য ফোন দিয়েছি... একটু অবাক হলো মিনা!খারাপ খবর মানে?? --কি ব্যাপার?কি হয়েছে? --মিনা,সোমার বিয়েটা হচ্ছেনা,আজকে গায়ে হলুদের প্রোগ্রামে আর আমাদের যাওয়া লাগবেনা... চুলায় তরকারী নাড়তে থাকা হাতটা থেমে গেল মিনার,কিছুক্ষন কথা বলতে পারল না,ওকে চুপ থাকতে দেখে সেতু বলল, --খুব অবাক হয়েছিসনা?আমিও শুনে খুব অবাক হয়েছিলাম,ওদের বাসার সবার অবস্থা খুব খারাপ,আর সোমার কথা কি বলব... --কিন্তু এমনটা হলো কেন?কাল পর্যন্ত তো সবই ঠিক ছিল... --সোমার যেই ছেলেটার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল তার অন্য মেয়ের সাথে তিন বছরের সম্পর্ক ছিল,কিন্তু ছেলের বাবা কোনভাবেই সেটা মানবে না,সবার চাপে পড়ে ছেলেকে বিয়েতে রাজী করানো হয়েছিলে এটা সোমাদের বাড়ির কেউই জানত না,গত কাল সকালে সেই ছেলে সোমাকে ফোন দিয়ে বলেছে তার পক্ষে সোমাকে মন থেকে বউ হিসেবে মেনে নেয়া সম্ভব না,সে যে মেয়েকে ভালোবাসত তার সাথে নাকি ছেলেটার ফিজিক্যাল রিলেশন ও হয়েছে!সব জানার পরেও যদি সোমা তাকে বিয়ে করতে চায় তাহলে করতে পারে। এসব শোনার পর সোমা নিজেই বিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছে... কোন রকমে ফোনটা রেখে দেয় মিনা... মিনা কেন জানি মুখে কিছুই বলতে পারছে না,কিছুই বলতে ইচ্ছে করছেনা ওর...কিন্তু অসম্ভব খারাপ লাগছে ওর...খুব... দুপুরে কিছুই খেল না মিনা,সবাইকে খাইয়ে চুপচাপ নিজের ঘরে এসে বসে রইল। আসরের নামায পড়ে সবাইকে চা দিয়ে সেই একই ভাবে নিজের ঘরে বসে রইল মিনা। কিছুই ভালো লাগছেনা ওর...সোমাকে ফোন দিবে ভাবল কিন্তু দিল না,পারলে একবার কাল দেখা করে আসবে ভাবল...এলোমেলো হাজারো চিন্তা ঘুরতে লাগল মিনার মাথায়...সোমাদের বাসায় কিভাবে যাবে ও?সেসব দৃশ্য কি সহ্য করতে পারবে?কত শত আয়োজন,কত স্বপ্ন,কত আনন্দের মৃত্যু হয়েছে সেখানে...সোমার জন্য কেনা গিফট টার কি করবে মিনা?...অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগল... তিন বছর...অনেক সময়...কিন্তু মিনার মনে হয় এই সেদিনের কথা।

বড় ভাইয়ার বন্ধু রাশেদ ভাইয়ের সাথে ওর বিয়ে ঠিক হল। রাশেদ ভাইয়ের মা ওকে খুব পছন্দ করতেন,নিজে এসে আংটি পড়িয়ে দিয়ে মিনার মাকে বলেছিলেন,''মিনার মা,তোমার মেয়েকে বউ করে না আমার মেয়ে বানিয়ে নিয়ে যাচ্ছি,দেখো তোমার মেয়ে আমার ঘরে যেয়ে এতো সুখ পাবে যে তোমাদের কথা ভুলেই যাবে...'' অপরিসীম আনন্দে ভরে গিয়েছিল সেদিন সবার মন। আর মিনা... কত শত স্বপ্নই না ভীড় করেছিল সেদিন ওর চোখে... কিন্তু স্বপ্ন গুলো অপূর্ণই রয়ে গেল মিনার। বিয়ের দু'দিন আগে কাউকে কিছু না বলে ঢাকা চলে যান রাশেদ ভাই,মিনার জন্য একটা চিঠি রেখে যান,কিছু অর্থহীন কথা দিয়ে লেখা সেই চিঠি মিনার চোখের জল থামাতে পারেনি। খুব সহজ ভাষায় লেখা ''আমাকে ক্ষমা করে দিও মিনা''এই কথাটি মিনার বাবার হার্ট এটাক কে আটকাতে পারেনি।

থামাতে পারেনি মানুষের নানান কথা বলাকে... তারপর পেরিয়ে গেছে কতগুলো দিন,কত কিছু বদলে গেছে মিনার জীবনে। কিন্তু সময় আজ এতগুলো দিন পর আবার সেই অতীতকে বর্তমান করে ওর সামনে এনে দাড় করিয়েছে। মাগরিবের আজান হচ্ছে,চোখ মুছে উঠে দাঁড়ায় মিনা,কেমন আছে এখন সোমা?সেও কি ওর মতো করে এখন গায়ে হলুদের জন্য সাজানো স্টেজটার পাশে বসে কাঁদছে?নাকি বসে বসে বিয়ের কার্ডগুলো ছিড়ছে...জানেনা মিনা... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।