আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কলকাতা (চলচ্চিত্র উৎসবে) মুগ্ধ চিত্তে দেখল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অসামান্য দলিল নাসিরুদ্দিন ইউসুফ এর ''গেরিলা'' ছবিটি

চারিদিকে দেখো চাহি হৃদয় প্রসারি ছবিটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার চল্লিশ বছরে এক অনবদ্য উপহার। পরিচালক ইউসুফ বা বাচ্চুভাই নিজেও সেইসময় ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, একজন তরুণ মুক্তিযোদ্ধা। ছবির ঘটনা ও চরিত্ররা ইতিহাসের সত্য চেহারাটাকে ধারণ করেই অনবদ্য শিল্প হয়ে উঠেছে। আমাদের মুগ্ধ করেছে। ছবি দেখতে দেখতে আমরা মাঝে মাঝেই ভুলে যাই সাদা পর্দার সামনে এক অন্ধকার ঘরে বসে আছি।

আমরা ঘর ছেড়ে চলে যাই সবুজ মাঠ চিরে যেখানে বুকে হেঁটে মুক্তিযোদ্ধা গেরিলারা এগিয়ে চলেছেন বা দাঁতে দাঁত চিপে সহ্য করছেন নির্মমতম সব অত্যাচার। আসলে বিশ শতকের ইতিহাসেই শুধু নয়, গোটা মানব সভ্যতার ইতিহাসেই এই মুক্তিযুদ্ধ এক অসামান্য ঘটনা। নাটকীয়তা আদর্শবাদ আত্মত্যাগ বা দ্বন্দ্বর কি বিপুল উপাদানই না ছিল এর মধ্যে। দীর্ঘ লড়াই এর পর অবশেষে দু দশক আগে নিজেদের অস্মিতামাখা ভূখণ্ড পেয়েছে তারা। আবার নতুন এক অস্মিতা আর নতুন এক ভূখণ্ডর জন্য লড়াই সংগ্রামে স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের দুর্বল করার বহুবিধ আয়োজন হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস একদিকে ধারণ করে আছে পুলিশ মিলিটারির নৃশংস অত্যাচারের নারকীয় সব ঘটনা, যা আক্ষরিক অর্থেই আমাদের হাড় হিম করে দেয়। আমরা মুক দৃষ্টিতে দেখতে থাকি ‘প্রথম দেখা তরুণ লাশ চলছে ভেসে ভেসে/ দিন বদল করতে গিয়ে শহীদ হল শেষে’। দেখতে থাকি তরবারির অবিরত আস্ফালন, পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক শুটিং, পশুর মত ঝুলিয়ে রাখা দগদগে সব শরীর। এই দৈহিক নির্যাতনের পাশাপাশিই থাকে মানসিকভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের গুঁড়িয়ে দেবার চেষ্টা। মুক্তিযোদ্ধাদের কখনো ইসলামের কাছে অনুগত থাকার কথা বলে, সেই ইসলাম আর পাকিস্থানকে সমীকৃত করে দিয়ে, কখনো হিন্দু কখনো ভারতের দালাল আখ্যা দিয়ে দুর্বল করার চেষ্টা হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই ছিল এ সবেরই বিরুদ্ধে। ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র বিলকিস চরম বিপদের মুহূর্তেও যখন বিপদের সম্ভাবনায় নেওয়া বোরখার আবরণ ছুঁড়ে ফেলে দেয় ইসলামের নামে পোষাকের ওপর ফতোয়া জারীর বিরুদ্ধে- তখন তা নানা অর্থেই এক প্রতীকী লড়াই হয়ে ওঠে। যে লড়াই হয়ত এখনো অনেককেই নিয়মিত লড়তে হচ্ছে। কিন্তু যে অদম্য আবেগ, প্রাণশক্তি আর হার না মানা দেশপ্রেম নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধের ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছিল, কোন কিছুই তাকে আটকাতে পারে নি। এমনকী মৃত্যুর মধ্যেও আমরা শুনতে পেয়েছি তাদের অপরাজেয় কন্ঠস্বর।

সেই কন্ঠস্বরকে শিল্পিত চেহারায় হাজির করে ইউসুফ বাচ্চুভাই আমাদের আর একবার সুযোগ করে দিলেন সেদিনের সেই মুক্তিযোদ্ধাদের পায়ের ধুলো নেবার। আলাদা করে বলতে হবে এই ছবিতে নজরুলের বিখ্যাত বিদ্রোহী কবিতার অংশকে গান হিসেবে ব্যবহারের কথা। ছবির কয়েকটি তুঙ্গ মুহূর্তে এটি 'মার্চিং সং' এর মতো লড়াইয়ের হাতিয়ার আর প্রেরণা হয়ে উঠেছে, ধারণ করেছে যে কোন পরিস্থিতিতে মাথা তুলে দাঁড়ানোর সাহসকে। সব অত্যাচার, চোখ রাঙানি আর শোষণকে উপেক্ষা করার প্রতিজ্ঞাকে। এই ছবি প্রতিদিনের জীবন সংগ্রামে সেই প্রতিজ্ঞাগুলিকে যেন নতুনভাবে প্রজ্জ্বলিত করে দেয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।