আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কলকাতা ভ্রমণ

মন তুমি কৃষিকাজ জানো না, এমন মানবজমিন রইলো পতিত; ফলালে ফলতো সোনা

অনেকদিন ধরেই কলকাতা যাওয়ার একটা প্ল্যান করছিলাম। মৈত্রী এক্সপ্রেস চালু হওয়ার পর থেকেই আব্বা বলছিলেন ট্রেনে একবার কলকাতা যাওয়া উচিত। দীর্ঘদিন ব্যর্থ চেষ্টার পরে এইবার ভাবলাম যেভাবেই হোক ঘুরে আসি। অফিস থেকে অনেক জোর জবরদস্তি করে ছুটিও নিলাম। ভিসার ঝামেলা সব সামলানোর পরে দেখি আমার মা যাওয়ার তেমন একটা আগ্রহ পাচ্ছেনা ।

বাবা ও না গেলেও চলে এই টাইপ কথা বার্তা বলা শুরু করছে। আমি পড়লাম ফ্যাসাদে, ছুটিও নিছি। বহূত কষ্টে উনাদের রাজী করানোর পরে দেখি সবাই ট্রেনে যাওয়ার অপকারীতা বুঝানো শুরু করছে। কথাবার্তা শুনে মনে হলো ট্রেনে যাওয়া আর পাহাড় বেয়ে উঠা সমান ঝামেলার। বাবার যাওয়ার শখ এই কারণে যা থাকে কপালে ভেবে কমলাপুরে গিয়ে ট্রেনের টিকেট কেটে ফেললাম।

সকাল ৭:৪৫ এর দিকে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার পরে বুঝলাম লোকজনের ধারনা কত ভুল। যথেষ্ট আরামের জার্নি, খাওয়াদাওয়া ও ভালো। বাস জার্নি থেকে যে কোন বিচারে এই ট্রেন জার্নি ভালো। [ট্রেন থেকে যমুনা ব্রীজের আশেপাশের ছবি] যাওয়ার পথে যমুনা ব্রীজ, হার্ডিন্জ ব্রীজ পার হয়ে চারপাশ দেখতে দেখতে আব্বুর উচ্ছলিত হওয়া দেখে বুঝলাম, ট্রেনে যাওয়াটা স্বার্থক। বর্ডারেও কোন ধরনের ফালতু ঝামেলা নেই।

শুধু অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়, যেটা বাংলাদেশ এবং ভারতে যাত্রী ফোরকাস্টের ভুলের কারণে। যে পরিমাণ যাত্রীর ইমিগ্রেশনের জন্য সময় রাখা হয়েছিলো যাত্রীসংখ্যা তার ধারেকাছেও হয়নি। ট্রেনের ১/৩ ভাগ ও মনে হয় ভর্তি হয়না। কেন হয়না সেটাও একটা রহস্য । ইন্ডিয়ান বর্ডারে গেদে স্টেশনটাও বেশ সুন্দর করে বানানো।

ওখান থেকে কলকাতার চিৎপুর স্টেশনে পৌছতে সময় লাগে প্রায় আড়াই ঘন্টা। যেতে যেতে ওদের আশেপাশের জেলার সাথে কলকাতার লোকাল ট্রেনের বহর দেখে খারাপ লাগলো। আমাদের দেশে রেল ব্যবস্হা কি আরো উন্নত করা যেতনা? কলকাতা পৌছলাম সন্ধ্যা ৭টার দিকে। স্টেশনের ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ৬:৩০ বাজে। আমাদের পাশের কেবিনের এক বান্গালী পরিবারের সাথে আলাপ হয়েছিলো, স্বামী কলকাতার আর স্ত্রী ঢাকার।

উনাদের থেকে অনেক টিপস নিয়ে টেক্সী চড়ে রওনা দিলাম মার্কুইস স্ট্রীট। এটা নিউ মার্কেট থেকে কাছে এবং মুসলিম প্রধান এলাকা। আশেপাশে খাওয়া দাওয়ার জন্য সব মুসলিম হোটেল। প্রচুর মানি এক্সচেন্জ ও আছে এইখানে, টাকা ভান্গানোও ব্যাপারনা। একটা ইন্ডিয়ান মোবাইল সিম ও নিলাম।

কিন্তু দেখি অ্যাক্টিভেট হয়না! ওদের নাকি ম্যানুয়ালী অ্যাক্টিভেট করতে হয় এবং ঐদিন ছুটি দেখে কাউকে পাওয়া যাচ্ছেনা!!! আমাদের টেলিকমিনিকিউশন ইন্ডাস্ট্রী অনেক ভালো এগিয়ে যা বুঝলাম। হিসাব করে দেখলাম ওদের কলচার্জ এবং অন্যান্য চার্জ ও আমাদের থেকে বেশী। রাত্রে খেয়েদেয়ে আশেপাশে একটু ঘুরঘুর করে ঘুম দিলাম। পরেরদিন থেকে আসল ঘুরাঘুরি করতে হবে। কলকাতায় প্রচুর টেক্সী পাওয়া যায়।

আমাদের দেশের মতো রাস্তায় বের হয়েই বিপদে পড়তে হয়না কিভাবে যাবো ভেবে। ওদের মানুষজন প্রচুর হাটে; সবাই ২ মাইল দুরের কোন জায়গাকেও এইতো সামনেই বলে। এবং কোন জায়গা না চিনলেও ঐদিকে টাইপের একটা উত্তর দিয়ে দেয়। পরে কয়েক মাইল ঘুরাঘুরি করে হয়তো জানতে পারলেন পুরা উল্টা দিকে ঘুরে এসেছেন । সো ওদের সাদা পোশাকের পুলিশকে জিগ্যেস করাই ভালো।

ওদের মধ্যে সাহায্য করার প্রবণতা ভালো। আপনার ভাগ্য ভালো হলে এমন লোকজনও পেতে পারেন যারা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন শুনে অনেক উচ্ছ্বসিত ও ইমোশনাল হয়ে যায়। মুলত যাদের পূর্ব পুরুষ বাংলাদেশের তাদের এদেশের প্রতি ভালোবাসা দেখে আসলেই অনেক ভালো লাগে। রাতবিরাতেও মহিলা বাসে, ট্রামে ঘুরে বেড়ান। মনে হলো সিকিউরিটি অনেক ভালো।

ওখানে টেক্সীতে মিটারে যত উঠে তার দ্বিগুণের সাথে ২ টাকা যোগ করে ভাড়া দিতে হয়। টেক্সী ছাড়াও ঘুরাঘুরি করার জন্য প্রচুর বাস, ট্রাম, রেল, পাতাল রেল আছে। যোগাযোগের অবস্হা আমাদের থেকে অনেক ভালো। মোড়ে মোড়ে ট্রফিক এবং সবাই মোটামুটি এদেরকে মান্য করে। যতই দেখছি ততই আমাদের দেশের যোগাযোগ ব্যবস্হার কথা চিন্তা করে আফসোস হয়েছে।

আমাদের ঢাকা শহর দিনে দিনে বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে আর ঐদিকে ওরা পুরনো কলকাতা শহরকে আরো বসবাসের উপযোগী, উপভোগ্য করে তুলছে! (চলবে..)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।