আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্টার্ট আপ নেশন‌-২ : ব্যাটলশীপ এন্টারপ্রিনিয়র

অলসদের দিয়ে কী আর হয়। আলসেমি ছাড়া! প্রথম পর্ব "একজন ইসরাইলি যখন কোন মেয়েটে ডেটিং-এর প্রস্তাব দেয় সেটি সে সেদিনই দেয়! আর একজন ইসরাইলি উদ্যোক্তা যখন কোন নতুন উদ্যোগের কথা ভাবে, তখন সে এক সপ্তাহের মধ্যে মাঠে নেমে পড়ে। যে সকল উদ্যোক্তা কেবল ভাল মন্দের হিসাব করে আর ক্রেডেনশিয়াল যোগাড় করে তাদের উদ্যোগ কখনোই মাঠে নামে না!!!" তা ইসরাইলিদের এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষমতা আসে কোথা থেকে? কেন তারা সহজে সেটা করতে পারে। একটি কারণ হল তাদের সারাক্ষণই সিদ্ধান্ত নিতে হয়-যুদ্ধের মধ্যে থাকলে তার কোন গত্যন্তর নাই। আর একটা কারণ সম্ভবত সকল ইসরাইলিকে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে হয়, রিজার্ভ আর্মিতে থাকতে হয়।

৬ থেকে ৯ বছর সামরিক বাহিনীকে সেবা দিতে হয়। তবে, ইসরাইলই কিন্তু একমাত্র দেশ নয় যেখানে বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ রয়েছে। ১৮ মাসের বেশি বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে হয় নাগরিকদের এমন দেশের সংখ্যা ৩০টির বেশি। এগুলোর বেশিরভাগই পিছিয়ে পড়া দেশ বা সামরিক জান্তা শাসিত! কিন্ত উন্নত দেশগুলোর মধ্যে যে তিনটি দেশের এই ধরণের সামরিক ব্যাপার আছে সেগুলোর দিকে তাকালে কয়েকটি বিষয় পরিস্কার হয়ে যায়। দেশ তিনটি হল সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইসরাইল! তিনটি দেশেরই নিকট অতীতে যুদ্ধের অভিজ্ঞতা আছে।

ইসরাইলের সামরিকবাহিনীর ব্যাপারটা একটু ভিন্নতর। ওদের প্রায় সবাইকে রিজার্ভ আমির্তে থাকতে হয়, নিয়মিত সার্ভিসের পর। মজার বিষয় হলো চাকরিদাতারা যখন ইন্টারভিউ নেন, তখন তারা জানতে চায়, সামরিক বাহিনীতে তাদের কর্মকাণ্ড কী ছিল। বেশিরভাগ সময় এই অভিজ্ঞতাটি তার একাডেমিক ডিগ্রী থেকে বেশি গুরুত্ব পায়। স্টার্টআপ নেশনস বইতে একটি চ্যাপ্টারের নামই হল যুদ্ধক্ষেত্রের উদ্যোক্তা।

যুদ্ধক্ষেত্রে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয় তাৎক্ষণাৎ। এবং কারো সঙ্গে আলাপ করারও সময় থাকে না। মাত্র ৭১ লক্ষ লোকের দেশ আর চারদিকে শত্রু পরিবেষ্টিত বলে তাদেরকে নানান ভাবে তৈরি করানো হয়। একটি বিষয় থাকে যাতে সবাই খুবই চটপটে আর সিদ্ধন্ত গ্রহণে সিদ্ধহস্ত হতে পারে। তাদের কালচারের আর একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো শেয়ারিং।

বলিভিয়ার এক পাহাড়ের চূড়ায় একটি হোটেল আছে, এক ইসরাইলি দম্পতি সেটা চালায়। আশির দশকে একদিন চার ইসরাইলি এসে দোকানে একটি বাধানো খাতা দিয়ে যায়। উদ্ধেশ্য পরিব্রাজকরা তাদের অভিজ্ঞতা এবং পরবর্তী পরিব্রাজকদের জন্য নির্দেশনা ঐ খাতায় লিখে রাখবে। কারণ তাতে পরের জেনারেশনের সুবিধা হবে!!! এটিকে বলা যায় এখনকার ব্লগের আদিরুপ। এখন সেটি কয়েকটি মোটা খাতা হয়েছে এবং ইসরাইলিরা পাহাড়ে যাওয়ার আগে সেটা পড়ে যাতে ঠিক তথ্যগুলো পায়! এই শেয়ারিং এটিচিউট তাদের প্রায় সব কর্মকাণ্ডে দেখা যায়।

পুরো দেশের সংস্কৃতির একটি বড়ো অংশ হলো ভবিষ্যৎমুখীনতা! সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ব্যাচের গ্র্যাজুয়েটদের এলামনাই আছে এবং নিয়মিত ভাবে এলামনি সভা হয়। আমাদের দেশের এলামনি গুলোর মতো তারা মোটেই স্মৃতিকাতরতায় আক্রান্ত থাকে না বা নিজেদের মধ্যে মঞ্চে বসার জন্য দলাদলি করে না। (আমি শুনেছি বুয়েটের নাকি দুইটি অফিসিয়াল এলামনি আছে। কুষ্টিয়া স্কুলে নাকি শতবর্ষের অনুষ্ঠানে মঞ্চে বসা নিয়ে মারামারি হয়েছে। আমাদের স্কুলের শতবর্ষী অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারনই ছিল মুখ্য।

)তাহলে তারা এলামনিতে করে কী? সাকসেসফুল এলামনিরা তাদের সাকসেস স্টোরি বলে, জীবনের চ্যালেঞ্জগুলো বলে, কীভাবে তারা সেটি অতিক্রম করেছে সেটা বলে। আবার যারা ঝামেলায় আছে তারা তাদের ঝামেলা উপস্থাপন করে যাতে অন্যরা তাকে সহায়তা করতে পারে। ফাকে ফাকে খাইদাই এসবতো হয়ে থাকে! সেনাবাহিনীর এলামনিতো আরো অন্যরকম। সেখানে তারা ২-৪ সপ্তাহের জন্য সীমান্তে চলে যায় এবং নিয়মিত বাহিনীর সঙ্গে গার্ডিং, পেট্রোলিং এসব করে। উদ্দ্যেশ্য হলো নেটওয়ার্কিংটাকে মজবুত করা।

ইসরাইলিরা বিশ্বাস করে ব্যবসা হচ্ছে নেটওয়ার্কিং এবং দূরদৃষ্টির সমন্বয়। শৃংখলার সঙ্গে আগাতে পারলেই ব্যবসা উদ্যোগে সফল না হওয়ার কোন কারণ নেই। ইসরাইলি আর্মির একটি এলিট ফোর্স আছে যার নাম হলো তালপিয়ট। হাই স্কুল পরীক্ষার টপ ২%কে পদার্থ আর গণিতের পরীক্ষার মাধ্যমে একদফা সিলেক্ট করা হয়। তারপর হয় নেতৃত্বের পরীক্ষা।

তারপর ৪১ মাসের ট্রেনিং এবং ৯ বছরের বাধ্যতামূলক সামরিক বাহিনীতে চাকরি। ৪১ মাসের ট্রেনিং-এ টেকনোলজি এবং সামরিক বাহিনীর নানা দিক। উদ্দেশ্য হলো কারিগরি মানে উন্নত সামরিক কর্মকর্তা তৈরি করা। এদের অনেকেই সামরিকবাহিনীর জীবন শেষে কারিগরি উদ্যোক্তা হচ্ছে। নাসডাকে যতো ইসরাইলী কোম্পানি এখন আছে তার ৭৫% এর সঙ্গে তালপিয়নরা আছে!!! ইসরাইলের সামরিক বাহিনী সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয় আমাদের সেরকম কিছু নেওয়ার নাই।

কিন্তু একটি জবাবদিহীমূলক এবং শেয়ারিং সোসাইটি হয়তোবা স্টার্ট আপ নেশনের পূর্বশর্ত। ইসরাইলীদের ভবিষ্যৎমুখীনতাও হয়তো তাদের এগিয়ে থাকার একটা কারণ। যখন বিশ্বের দেশগুলো চীনের দিকে নজর দেয় নাই তখন ইসরাইলিরা দলে দলে চীন গিয়ে নিজেদের ঘাটি গড়েছে। এখন অনেকগুলো ভেঞ্জার ক্যাপিটাল কোম্টানিই আছে যারা কীনা চীন দেশে ইসরাইলী স্টার্ট আপকে নিয়ে আসে! ভৌগলিককারণে ইসরাইলিদের নলেজ প্রোডাক্টে নজর দেওয়া ভিন্ন কী বা করার ছিল। কারণ, তাদের দেশ থেকে কোন কিছু শিপমেন্ট করার খবর আছে! তার পরিবর্তে যদি জ্ঞানকে শিপমেন্ট করা যায় তাহলে তা হয় সোজা!!! এখানে আমাদের সঙ্গে একটা মিল পাওয়া যেতে পারে যদি আমরা পেতে চাই।

আমাদের গড় আয় ৩০০ ডলার করে বাড়াতে হলে আমাদের অবশ্য নলেজ প্রোডাক্টের কোন বিকল্প নেই। এবং সেখানেই আমাদের দরকার নলেজ ওয়ার্কার। নলেজ ওয়ার্কার পেতে হলে দরকার নলেজ বিশ্ববিদ্যালয়, কমিউনিটি কলেজ নয়। আমাদের সব বিশ্ববিদ্যালয় আসলে এক ধরণের কমিউনিটি কলেজ কারণ সেখানে গবেষনা হয় না। জাফর ইকবাল স্যারের একটি লেখায় জানা গেল খালি আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যতো পিএইচডি গবেষক আছে আমাদের পুরো দেশে ততো গবেষক নাই।

এই শৃংখলা থেকে মুক্তি পাওয়াটা মনে হয় জরুরী। স্টার্ট আপ নেশন এর মাঝপথেও আসতে পারি নাই। ইংরেজীটা আমার জন্য একটু কঠিন। আর বিজনেসের লোক না হওয়ায় অনেক কষ্ট হচ্ছে। তবুও কষ্ট করে পড়ে যেতে চাই।

বাকী আল্লাহর মর্জি। সবার সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.