আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈদুল আযহা ও কুরবানীর তাৎপর্য এবং কুরবানীর মাসায়েল। ৩য় কিস্তি {যিলহজ্জ মাসের করনীয় কাজ}।

_________অসৎ লোকের কর্মকান্ডে সমাজ ধ্বংস হয় না, ___________সমাজ ধ্বংস হয় ভালো মানুষের নিস্ক্রিয়তা। بسم الله الرحمن الرحيم اَلْحَمْدُ لِلّهِ رَبِّ الْعاَلَمِيْنَ وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِيْنَ والصَّلوةُ و السَّلاَمُ عَلى اَشْرَفِ الْاَنْبِياءِ وَالْمُرْسَلِيْنَ وَعَلى اَلِه وَاَصْحَابِه اَجْمَعِيْنَ ঈদুল আয্হা ও কুরবানীর ফাযায়িল ও মাসায়িল যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের ফযীলত হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণীত, নবী করীম সা. ইরশাদ করেন : مَا مِنْ اَيَّامٍ اَحَبُّ اِلَى اللهِ اَنْ يُّتَعَبَّدَلَه فِيْهَا مِنْ عَشْرِذِى الْحَجَّةِ يَعْدِلُ صِيَامُ كُلِّ يَوْمٍ مِّنْهَا بِصِيَامِ سَنَةٍ وَقِيَامُ كُلِّ لَيْلَةٍ مِّنْهَا بِقِيَامِ لَيْلَةِ الْقَدْرِ “আল্লাহর ইবাদতের জন্য যিলহজ্জের প্রথম দশ দিনের চেয়ে অধিক উত্তম আর কোন দিন নেই। উহার প্রতি দিনের রোযা এক বছরের রোযার সমান আর এতে প্রতি রাতের ইবাদত শবে কদরের ইবাদতের সমতুল্য ছওয়াব রাখে”। { সুনানে আত তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত-১২৮ পৃ} হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন : مَا مِنْ اَ يَّامٍ الْعَمَلُ الصَّالِـحُ فِيْهِنَّ اَحَبُّ اِلَى اللهِ مِنْ هذِهِ الْاَيَّامِ الْعَشْرَةِ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ للهِ وَلَا الْجِهَادُ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ؟ قَالَ وَلَا الْجِهَادُ فِىْ سَبِيْلِ للهِ- اِلَّا رَجُلٌ خَرَجَ بِنَـفْسِه وَمَالِه فَلَمْ يَرْجِعْ مِنْ ذالِكَ بِشَىْءٍ “এমন কোন দিন নেই যে দিনের কৃত নেক আমল এসব দিন অর্থাৎ যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের নেক আমলের মত আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয়। ছাহাবাগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে জিহাদের নেক আমলও কি নয়? তিনি বললেন না, আল্লাহর পথে জিহাদের মত নেক আমল ও নয়।

তবে যে ব্যক্তি তার জান ও মাল নিয়ে আল্লাহর পথে বের হন এবং এর কোনটা নিয়েই ফিরে আসলো না। অর্থাৎ ঐ ব্যক্তির এ আমল আল্লাহর কাছে অনুরূপ প্রিয়”। { সহীহ আল বুখারী। } উল্লেখ্য যে, আল কুরআনে সূরায়ে আল ফজরের মধ্যে মহান আল্লাহ তায়ালা দশটি রাতের শপথ করেছেন, অধিকাংশ তাফসীর কারকদের মতে যিল হজ্জের প্রথম দশ রাতকেই উদ্দেশ্য করা হয়েছে। { তাফসীরে মাযহারী, মাআরেফুল কুরআন।

} যিল হজ্জ মাসের নবম দিবস তথা আরফার দিনের ফযীলত হযরত আবু কাতাদাহ্ রা. বলেন রাসূলুল্লাহ সা. কে আরফার দিনের রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো । তিনি জবাবে বললেন صِيَامُ يَوْمِ عَرفَةَ اَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ اَنْ يُّكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِىْ قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِىْ بَعْدَه “আমি আল্লাহর সত্তা থেকে এ আশা রাখি যে, এতে বিগত বছরের ও আগামী বছরের গুনাহর কাফফারা হয়ে যাবে”। { সহীহ আল মুসলিম, সুনানে তিরমিযী, মিশকাত -১৭৯পৃ} হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, আরফার দিনের রোযার ছওয়াব এক হাজার দিনের রোযার সমান। { আত তারগীব। } একটি জিজ্ঞাসা - রমজানের শেষ দশক অধিক ফযীলতপূর্ণ নাকি যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশদিন বেশী ফযীলতপূর্ণ ? জবাব: আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রহ. এক্ষেত্রে সুন্দর একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন, রমজানের শেষ দশকের রাতগুলো সবচেয়ে ফযীলতপূর্ণ।

কারণ, তাতে লাইলাতুল কদর রয়েছে। অপর দিকে, যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের দিবস সমূহ অধিকতর ফযীলতপূর্ণ। কারণ, এদিনগুলোতে হজ্জের তালবীয়াহ এর দিন, কুরবানীর দিন রয়েছে। { যাদুল মাআদ - ইবনে কায়্যিম রহ.। } যিলহজ্জ এর চাঁদ দেখার পর বিশেষ মুস্তাহাব আমল যিলহজ্জ মাসের চাঁদ উঠার পর থেকে চুল, মোঁচ, নখ, বগল ও অন্যান্য স্থান সমূহের লোম না কাটা মুস্তাহাব।

হযরত উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত। নবী করীম সা. বলেছেন : مَنْ رَئ هِلَالَ ذِى الْحَجَّةِ وَاَرَادَ اَنْ يُّضَحِّىَ فَلَا يَأْخُذْ مِنْ شَعْرِه وَلَا مِنْ اَظْفَارِه “যে ব্যক্তি যিলহজ্জের চাঁদ দেখে এবং কোরবানীর ইচ্ছা করে সে যতক্ষণ না কুরবানী করেছে, ততোক্ষণ চুল ও নখ না কাটে”। { সহীহ আল মুসলিম, মিশকাত-১২৭পৃ। } এ আমল মাসনূন, ওয়াজিব নয়। ইসলামের ফিকাহ বিশারদগণ বলেছেন ঃ কুরবানী দাতার নখ, চুল, গোফ ইত্যাদি না কাটার পিছনে হিকমত হচ্ছে, হাজীদের সাদৃশ্য ধারণ করা।

বলা বহুল্য যে, হাজী সাহেবানদের ইহরাম-বাঁধা অবস্থায় নখ, চুল, গোফ কর্তন না করা এবং এলোমেলো চুল, গোফ ইত্যাদি অপরিমার্জিত আল্লাহর প্রেমে পাগলপাড়া অবস্থাটি আল্লাহর নিকট অত্যাধিক প্রিয়। তাই উক্ত হাদীসে কুরবানী দাতাগণকে আল্লাহর সেই প্রেমিক দেওয়ানাদের সাদৃশ্য অবলম্বনে অনুপ্রাণিত করা হয়েছে। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রাহ. বলেন, পশু কুরবানীর সাথে সাথে নিজের কিছু অংশ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কুরবানী (ত্যাগ) করায় অভ্যস্ত হতে পারেন, এ জন্য এ নির্র্দেশ দেয়া হয়েছে। যার কুরবানীর করার সামর্থ নেই, তার জন্যও এটা ভালো যে, সে কুরবানীর পরিবর্তে তার চুল কাটবে, নখ কাটবে এবং নাভীর নীচের চুল সাফ করবে। একাজ তার কুরবানীর স্থালাভীষিক্ত হবে।

{ সুনানে আবু দাউদ নাসায়ী। } যেমন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে আছে- জনৈক ছাহাবী রাসূলুল্লাহ সা. কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার তো একটি দুধালু উষ্ট্রি বা ছাগী ছাড়া আর অন্য কিছু নেই। আমি কি উহা দ্বারা কুরবানী করব? দয়ার নবী সা. বললেন না, অতঃপর ইরশাদ করলেন, خُذْ مِنْ شَعْرِكَ وَ اَظْفَارِكَ وَ تَحْلُقْ عَانِتَكَ فَذلِكَ تَمَامُ اُضْحِيَّتِكَ “ বরং তুমি কুরবানীর দিন স্বীয় নখ, চুল, গোফ ও তলদেশের চুল সাফ কর। এটি তোমার কুরবানী বলে গণ্য হবে”। { সুনানে আবু দাউদ, নাসায়ী, মিশকাত।

} তাকবীরে তাশরীকের মাসআলা যিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখ ফজরের নামায থেকে ১৩ তারিখের আসরের নামায পর্যন্ত (মোট ২৩ ওয়াক্ত) তাকবীরে তাশরীক পড়া ওয়াজিব। এটা ফরয নামাযের পর প্রত্যেক বালিগ পুরুষ মহিলা, মুকীম, মুসাফির, গ্রামবাসী, শহরবাসী, জামায়াতের সাথে নামায পড়ুক বা একাকী পড়–ক প্রত্যেকের উপর একবার করে তাকবীরে তাশরীক পাঠ করতে হবে। { ফাতাওয়ায়ে শামী, বাহরুর রায়িক। } একবারের অধিক তাকবীর বলবে না কারণ, একের অধিক বলার কথা শরীয়তে নেই। { তাহতাবী. পৃষ্ঠা-২৯৪।

} তাবকীরে তাশরীক হচ্ছে اللهُ اَكْبَرُ – اللهُ اَكْبَرُ، لَا اِلَهَ اِلَّااللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ – اللهُ اَكْبَرُ وَللهِ الْحَمْدُ - উচ্চারণ: আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, ওয়ালিল্লাহিল হামদ্। যিল হজ্জ মাসের ৯ তারিখকে আরাফার দিন বলে, দশ তারিখকে ইয়াওমুন নাহার বা কুরবানীর দিন বলা হয়। তাকবীরে তাশরীকের গোড়ার কথা সহীহ্ আল বুখারীর ব্যাখ্যাকার আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী রহ. মবসুত ও কাজীখান কিতাবদ্বয় থেকে ‘হেদায়া ’ কিতাবের ব্যাখ্যা গ্রন্থে নকল করেছেন যে, হযরত ইবরাহীম আ. আপন পুত্র ইসমাঈল আ. কে যখন কুরবানী করতে শুরু কররেন, তখন হযরত জিবরাইল আ. আল্লাহর নির্দেশে বেহেশ্ত থেকে একটি দুম্বা নিয়ে রওয়ানা হলেন। তাঁর সংশয় হচ্ছিল পৃথিবীতে পদার্পন করার পূর্বেই হযরত ইবরাহীম আ. যবেহ কার্য সম্পন্ন করে ফেলবেন। তাই হযরত জিবরাইল আ. আকাশ থেকেই উচ্চস্বরে ধ্বনী দিতে থাকেন - الله اكبر- الله اكبر ।

হযরত ইবরাহীম আ. তাঁর আওয়াজ শুনে আকাশ পানে দৃষ্টি করে দেখতে পেলেন যে, উপস্থিত কুরবানীর বস্তু ইসমাঈল আ.-এর পরিবর্তে তিনি একটি দুম্বা নিয়ে আসছেন। তাই তিনি স্বতস্ফুর্তভাবে বলে উঠলেন -لا اله الاالله والله اكبر পিতার মুখে তাওহীদের এ অমূল্যবাণী শুনতে পেয়ে হযরত ইসমাঈল আ. আল্লাহর মহাত্ম, মর্যাদা ও শান শওকতের উপর হামদ পেশ করে বললেন : الله اكبر ولله الحمد একজন মহান আল্লাহর ফেরেশতা, একজন নবী ও একজন ভাবী নবী এ তিন মহান ব্যক্তিত্বের খুশীর আবেগে উচ্চারিত এ আমলটুকু ও পবিত্র কালামগুলো আল্লাহর দরবারে এত বেশী কবুল হল যে, কিয়ামত পর্যন্ত ঈদুল আয্হায় বিশ্ব মুসলিমের কন্ঠে কন্ঠে উচ্চারিত হতে থাকবে। তাকবীর সম্পর্কে আরো কতিপয় মাসায়েল ১. ইমাম তাকবীর বলতে ভুলে গেলে ও মুক্তাদীর তাকবীর বলা ওয়াজিব। { ফাতওয়ায়ে শামী ১ম খন্ড ৭৭৭ পৃষ্ঠা। } ২. পুরুষেরা তাকবীর উচ্চ-মধ্যম স্বরে আর মহিলাগণ অনুচ্চস্বরে বলবে।

পুরুষ উচ্চ স্বরে না পড়ে আস্তে আস্তে পড়লে ওয়াজিব আদায় হবে না। ৩. মাসবুক তার নামায আদায় করে তাকবীর বলবে। { ফাতাওয়ায়ে শামী ১ম খন্ড-৭৮৬পৃষ্ঠা। } ৪. যদি মুসল্লী ফরয নামাযের পর তাকবীর বলতে ভুলে যায়। এবং কিছু কাজ করে ফেলে যার দ্বারা নামায নষ্ট হয়ে যায় (যেমন মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া, অথবা ভূলে বা ইচ্ছায় কথা বলা অথবা ইচ্ছা করে অজু ভঙ্গ করা) তবে তার উপর থেকে তাকবীর বলা রহিত হয়ে যাবে।

{ ফাতাওয়া শামী ১ম খন্ড, ৭৮৬পৃ। } ঈদুল আয্হার নামাযের বর্ণনা ১. ঈদের নামায দু’রাকায়াত। ইমাম আবু হানিফার (র.) মতে, এ নামায ওয়াজিব। { বুখারী ও মুসলিম। } ২. নামাযান্তে মিম্বরে ঊঠে ইমাম সাহেব দু’টি খুৎবাহ প্রদান করবেন।

এ খুৎবাহ সুন্নাত। আর মুক্তাদীদের জন্য শ্রবণ করা ওয়াজিব। { সহীহ আল বুখারী ও সহীহ আল মুসলিম। } ৩. ঈদের নামাযে আযান ও ইকামত নেই। { সহীহ্ আল মুসলীম।

} ৪. মহিলাদের জন্য ঈদের নামায নেই। { সহীহ আল বুখারী ও সহীহ আল মুসলিম। } ৫. ঈদের নামায মাঠে আদায় করা সুন্নাত। কেবল বৃষ্টি বা অন্য কোন শরয়ী ওযর থাকলে মসজিদে আদায় করা যায়। { সুনানে আবু দাউদ, সুনানে ইবনে মাজাহ।

} ৬. সূর্যোদয়ের পর থেকে দুপুর পর্যন্ত ঈদের নামাযের সময়। কিন্তু ঈদুল আয্হার নামায ঈদুল ফিতরের নামায হতে অধিক সকালে আদায় করা সুন্নাত। যাতে মুসলমানগণ কুরবানী করে কুরবানীর গোশত দিয়ে সেদিনের খানা শুরু করতে পারে। { মিশকাতুল মাসাবীহ। } ৭. ঈদের নামাযে হানাফী মাযহাব মতে অতিরিক্ত ছয় তাকবীর দেয়া ওয়াজিব।

ঈদের নামায আদায় করার নিয়ম “আমি ঈদুল আযহার দু’রাকায়াত ওয়াজিব নামায ছয় তাকবীর সহকারে এই ইমামের পিছনে কিবলামূখী হয়ে আল্লাহ্র ওয়াস্তে আদায় করছি। ” এ নিয়ত মনে মনে স্থির করবে অথবা মুখে বলবে। তারপর তাকবীরে তাহরীমা বলে হাত বাধঁবে এবং ছানা পাঠ করবে। ছানা পাঠ করার পর অতিরিক্ত ৩টি তাকবীর দিবে এভাবে যে, তিনটি তাকবীরের সময়ই কান পর্যন্ত হাত উঠাবে এবং প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবীরের পরে হাত ছেড়ে দিবে আর ৩য় তাকবীর বলে হাত বেঁধে ফেলবে। এর পর ঈমাম সূরা ফাতিহা ও কিরাআত সমাপ্ত করে যথারীতি রুকু সিজদা করে প্রথম রাকাআত শেষ করে পুনরায় দাঁড়িয়ে ২য় রাকাআতের কিরাত শেষ করবে।

অতঃপর রুকুতে যাবার পূর্বে আবার অতিরিক্ত ৩টি তাকবীর দিবে এভাবে যে, কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে তাকবীর বলে হাত ছেড়ে দিবে। অতঃপর চতুর্থ তাকবীর তথা রুকুর তাকবীর বলে রুকুতে চলে যাবে। এর পর অবশিষ্ট নামায যথারীতি আদায় করে ছালাম ফিরাবে। তারপর ঈমাম সাহেব মিম্বরে উঠে দুটি খুৎবাহ পড়বেন। মাসআলা : ঈদের নামাযের পূর্বে ঘরে বা মাঠে কোথাও নফল নামায পড়া মাকরূহ।

এমনকি মহিলা সহ ঐ সমস্ত লোক যারা কোন ওজরের কারণে ঈদের নামাযে শরীক হতে পারেনি, তাদের জন্যও ঈদের নামাযের আগে নফল নামায পড়া মাকরূহ, হ্যাঁ নামাযের পর ঘরে নফল নামায আদায় করতে পারবে। { ফাতওয়ায়ে শামী। } মাসআলা : কেউ ঈদের নামায পড়তে পারলনা বা পড়ার পর কোন কারণে বাতিল হল, তখন আর ক্বাজা পড়া যাবে না। { মারাকিউল ফালাহ। } মাসআলা : যদি ঈদের নামাযের জামায়াত বড় হয় আর কোন কারণ বশত: যদি সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়, তাহলে সাহু সিজদা দেয়া জরুরী নয়।

ঈদুল আয্হার দিনের করণীয় ও সুন্নাত আমল সমূহ : ১. সাধ্য ও সামর্থ অনুযায়ী শারীয়ত সম্মত ভাবে সাজ পোশাকের ব্যবস্থা করা এবং খুশী ও আনন্দ প্রকাশ করা। ২. খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠা। ৩. মিসওয়াক করা। ৪. ফজরের নামাযের পর ঈদের নামাযের জন্য গোসল করা। ৫. যথা সম্ভব উত্তম ও পরিচ্ছন্ন কাপড়-চোপড় পরিধান করা।

৬. সুগন্ধি ব্যবহার করা। ৭. সকাল সকাল ঈদগাহে যাওয়া। ৮. ঈদগাহে কিছু না খেয়ে যাওয়া এবং কুরবানীর গোশত দ্বারা সে দিনের খানা শুরু করা মুস্তাহাব। ৯. ঈদের নামায ঈদগাহে পড়া। ১০. কোন ওজর না থাকলে, পায়ে ঁেহটে ঈদগাহে যাওয়া, ১১. ঈদগাহে এক পথ দিয়ে যাওয়া, অন্যপথে ফেরা।

১২. ঈদগাহে যাবার সময় তাকবীরে তাশরীক উচ্চস্বরে পড়া সুন্নাত। ১৩. ঈদুল আয্হার নামায ঈদুল ফিতর হতে অধিক সকালে পড়া। ১৪. ঈদের নামায আদায়ের পর সাহিবে নিসাবের উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। ১৫. ঈদের নামাযের আগে ঘরে বা ঈদগাহে নফল নামাজ না পড়া। ১৬. ঈদের নামাযের পর ঈদগাহে নফল নামায না পড়া।

১৭. আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ-খবর নেয়া ও তাদের বাড়ীতে বেড়াতে যাওয়া। ঈদে শুভেচ্ছা বিনিময়ের ভাষা : ক. আল্লাহর রাসূলের সাহাবীগণ ঈদের দিন সাক্ষাত কালে একে অপরকে বলতেন تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا و مِنْكَ - আল্লাহ তায়ালা আমার ও আপনার ভাল কাজ গুলো কবুল করুন। খ.عِيْدٌ مُبَارَكٌ - ঈদ মোবারক বলেও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। গ. كُلَّ عَامٍ وَاَنْتُمْ بِخَيْرٍ - প্রতি বছরই আপনারা ভাল থাকুন। কুরবানীর অর্থ ও পরিচয় : কুরবানী শব্দের আভিধানিক অর্থ উৎসর্গ করা, রক্ত প্রবাহিত করা, যবেহ করা, আত্মত্যাগ, অপরের জন্য ত্যাগ ও কষ্ট স্বীকার করা।

ইসলামের পরিভাষায়, আল্লাহ তায়ালাকে নিজের জীবন ও ধন-সম্পদের প্রকৃত মালিক স্বীকার করে সেই মহান মালিকের ইচ্ছানুযায়ী তাঁরই সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এগুলোকে তাঁরই পথে ত্যাগ করার নিদর্শন স্বরূপ নির্দিষ্ট পন্থায়, নির্দিষ্ট দিনে পশু যবেহ করার নামই হচ্ছে কুরবানী। কুরবানীর শরয়ী মর্যাদা : সামর্থবান মুসলমানদের জন্য কুরবানী করা ওয়াজিব। মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ এবং রাসূলে কারীম সা. এর দায়েমী আমলী সুন্নাত। নবী করীম সা. মদীনায় দশ বছর অবস্থান কালে প্রতি বছর কুরবানী করেছেন। এবং সাহাবীদের কে কুরবানী করার জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন।

কুরবানীর ফযীলত ও মহাত্ম্য : ১. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন : اَقَامَ رَسُوْلُ اللهِ صلعم بِالْمَدِيْنَةِ عَشْرَ سِنِيْنَ يُضَحِّىْ- “রাসূলে কারীম সা. মদীনায় দশ বৎসর জীবন যাপন করেছেন সেখানে প্রত্যেক বৎসরই তিনি কুরবানী করেছেন”। { সুনানে আত তিরমিয়ী। } ২. রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন : مَنْ كَانَ لَه سَعَةٌ وَلَمْ يُضَحِّ فَلَا يَقْرُبَنَّ مُصَلَّانَا- “যে ব্যক্তি কুরবানী করার সামর্র্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করলনা, সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারে কাছে ও না আসে”। { সুনানে ইবনে মাজাহ (কিতাবুল আদ্বাহী)। } ৩. হযরত জায়িদ ইবনে আরকাম রা. হতে বর্ণিত ।

তিনি বলেন : قَالَ اَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! مَا هذِهِ الْاَ ضَاحِىْ؟ قَالَ سُنَّةُ اَبِيْكُمْ اِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِ الـسَّلاَمُ- قَالُوْا فَمَا لَنَـا فِيْهَا يَا رَسُوْلَ اللهِ؟ قَالَ بِكُلِّ شَعْرَةٍ حَسَنَةٌ- قَالُوْا فَالصُّوْفُ يَا رَسُوْلَ اللهِ؟ قَالَ بِكُلِّ شَعْرَةٍ مِّنَ الصُّوْفِ حَسَنَةٌ- “রাসূলুল্লাহর সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন: হে আল্লাহর রাসূল! এই কুরবানীটা কি? রাসূলুল্লাহ সা. জবাব দিলেন, এটা তোমাদের পিতা হযরত ইবরাহীম আ. এর সুন্নাত বা আদর্শ। অতঃপর তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন, এতে আমাদের জন্য কি ফায়দা বা, সাওয়াব রয়েছে হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন কুরবানীর পশুর প্রতিটি পশমের পরিবর্তে একটি করে নেকী রয়েছে। সাহাবীগণ আবার জানতে চাইলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ভেড়া, দুম্বার পশমের ব্যপারে কি কথা? তিনি বললেন, এর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে ও একটি করে নেকী পাওয়া যাবে”। { সুনানে ইবনে মাজাহ, মিশকাত শরীফ-১২৯পৃষ্ঠা। } ৪. হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন : مَا عَمِلَ ابْنُ ادَمَ مِنْ عَمَلٍ يَوْمَ النَّحْرِ اَحَبَّ اِلَى اللهِ مِنْ اِهْراقِ الدَّمِ وَاِنَّه لَيَأْتِىْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِقُرُوْنِهاَ وَاَشْعَارِهَا وَاَظْلاَ فِهَا- وَاِنَّ الدَّمَ لَيَقَعُ مِنَ اللهِ بِـمَكَانٍ قَبْلَ اَنْ يَّقَعَ فِى الْاَرْضِ- فَطِيْبُوْابِهَا نَفْسَهاَ- “মানুষের আমল সমূহ হতে কোন আমলেই আল্লাহর নিকট কুরবানীর দিন কুরবানী হতে অধিক পছন্দনীয় নয়, অবশ্যই কিয়ামতের দিন কুরবানীর জানোয়ার শিং, লোম ও খুর নিয়ে উপস্থিত হবে।

যে কুরবানী শুধু আল্লাহর জন্য করা হয়, নিশ্চয়ই সেই কুরবানীর রক্ত জমিনে পতিত হওয়ার পূর্বেই আল্লাহর দরবারে উহা কবুল হয়ে যায়। অতএব, তোমরা ভক্তি ও আন্তরিক আগ্রহ নিয়ে কুরবানী কর”। { সুনানে আত তিরমিযী। } ৫. হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন নবী করীম সা. হযরত ফাতেমা যোহরা রা. কে বললেন,ফাতেমা! এসো তোমার কুরবানীর পশুর কাছে দাঁড়িয়ে থাক। এ জন্য যে, তার যে রক্ত কণা মাটিতে পড়বে তার বদলায় আল্লাহ তোমার পূর্বের গুনাহগুলো মাফ করে দেবেন।

হযরত ফাতেমা রা. বলেন, এ সুসংবাদ কি আহলে বায়তের জন্য নির্দিষ্ট, না সকল উম্মতের জন্যে? নবী বললেন, আমাদের আহলে বায়তের জন্যেও এবং সকল উম্মতের জন্যেও। { জামেউল ফাওয়ায়েদ, আসান ফিকাহ। } ২য় কিস্তি পড়ুর কুরবানীর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং শিক্ষনীয় বিষয় Click This Link ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.