আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পবিত্র ঈদুল আজহা কাল

বাঙ্গালী জাতির গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংস্কৃতির জন্য অপমানজনক কোনকিছু এই ব্লগে লেখা যাবে না।

পবিত্র ঈদুল আজহা আগামীকাল সোমবার। বিশ্বব্যাপী মুসলমান সমপ্রদায়ের প্রধান দুটি ধমর্ীয় উৎসবের একটি হলো এই ঈদুল আজহা। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত পরম আনন্দের একটি দিন। সারা বিশ্বের মুসলমানরা ঈদুল আজহায় মহান আল্লাহর সন'ষ্টি ও কর"ণা লাভের জন্য কুরবানি দিয়ে থাকেন।

পবিত্র ঈদের দিনে ধনী-গরিব নির্বিশেষে ধর্মপ্রাণ সব মুসলমান ঈদগাহ বা মসজিদে সমবেত হয়ে ঈদের নামাজ আদায় করবেন। এরপর সামর্থ্যবানরা পশু কুরবানি করবেন। কুরবানির পশুর মাংস নিজে খাবেন এবং আত্মীয়স্বজন ও দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেবেন। এভাবেই ত্যাগের মহিমা প্রকাশের মধ্য দিয়ে সব মুসলমান চেষ্টা করে থাকেন আল্লাহর পরম সন'ষ্টি অর্জনের। মুসলমানদের এই ধমর্ীয় উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে আল্লাহর পথে প্রিয়তমকে উৎসর্গের চরম পরীক্ষার ইতিহাস।

ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী, হযরত ইব্রাহিম (আঃ) প্রায় বৃদ্ধ বয়সে এক পুত্রসনত্দান লাভ করেন। পুত্র ইসমাইল ছিলেন তার প্রাণের চেয়েও প্রিয়। কিন' স্বপ্নে আল্লাহর কাছ থেকে সবচেয়ে প্রিয় বস'কে কুরবানি করার আদেশ পেয়ে কয়েকবার বহু পশু কুরবানির পর শেষ পর্যনত্দ প্রিয়তম পুত্রকেই তিনি কুরবানি করার উদ্যোগ নেন। হযরত ইব্রাহিমের এই উদ্যোগে সন'ষ্ট হয়ে মহান আল্লাহ এবার তাকে একটি দুম্বা কুরবানির মাধ্যমে আদেশ প্রতিপালনের নির্দেশ দেন। এভাবেই আল্লাহর সন'ষ্টির জন্য পশু কুরবানির মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয় ত্যাগের এক মহান আদর্শ।

এ ত্যাগ ও আনুগত্যের দৃষ্টানত্দ অনুসরণ করতে প্রতি বছর হিজরি সনের জিলহজ মাসের 10 তারিখে উদযাপিত হয় পবিত্র ঈদুল আজহা। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে গত কয়েকদিন ধরেই আমাদের দেশে উৎসবের পরিবেশ বিরাজ করছে। মুসলমানরা কুরবানির পশু এবং আনন্দের অন্যতম অনুষঙ্গ পোশাকসহ অন্যান্য কেনাকাটার মাধ্যমে ঈদ উৎসব উদযাপনের সব প্রস'তি সম্পন্ন করে রেখেছেন। অনেকে ঈদে প্রিয়জনকে উপহার প্রদান এবং আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবকে নিমন্ত্রণ করছেন। আগামীকাল সোমবার সকালে দুই রাকাত ওয়াজেব নামাজ জামাতে আদায়ের মধ্য দিয়ে ঈদের দিন শুর" হবে।

এরপর যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী হালাল চতুষ্পদ প্রাণী কুরবানি করবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। কুরবানির পশুর মাংস 3 ভাগ করে 1 ভাগ নিজে খাওয়া, 1 ভাগ প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের মধ্যে বিতরণ এবং আরেক ভাগ গরিবদের মধ্যে বিতরণ করার রেওয়াজ রয়েছে। বাড়ি বাড়ি থেকে মাংস সংগ্রহের মাধ্যমে সমাজের গরিব-দুঃখীদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের আমেজ। ঈদ মানেই আনন্দ। এবারের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপট এবারের ঈদে নিয়ে এসেছে ভিন্ন মাত্রা।

নির্বাচন সামনে রেখে গ্রামে-গঞ্জে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ যা ঈদের আনন্দকে আরো বাড়িয়ে দেবে। তবে রাজনৈতিক টানাপড়েনের কারণে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হওয়ায় জনমনে এক ধরনের অস্থিরতা এবং অস্বসত্দিও বিরাজ করছে। এই অস্থিরতা ঈদের পবিত্রতা ও আল্লাহর কৃপালাভের সুযোগকে ক্ষুণ্ন না করলেও সামাজিক আনন্দের আবহকে অনেকাংশেই ক্ষুণ্ন করবে বলে ধারণা করছেন অনেকেই। ভোগ্যপণ্যসহ যাবতীয় জিনিসপত্রের অগি্নমূল্যের কারণেও দেশের মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগের সম্মুখীন। শত অভাব-অনটনের মধ্যে দ্রব্যমূল্যের এই ঊধর্্বগতি সাধারণ মানুষের জন্য এক অনিশ্চিত পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।

ফলে অধিকাংশ মানুষের জন্য ঈদের আনন্দ সীমিত হয়ে পড়বে। পবিত্র ঈদুল আজহা যখন আমাদের দোরগোড়ায়, ঠিক তখনই দেশজুড়ে জেঁকে নেমেছে শীত। দারিদ্র্যপীড়িত সমাজে অসংখ্য মানুষের পক্ষে শীতবস্ত্র সংগ্রহ করা কঠিন। বিশেষত দেশের উত্তরাঞ্চলে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা এবং ঠাণ্ডাজনিত অসুখ-বিসুখ ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে ইতিমধ্যেই। যেসব শীতার্ত মানুষের কাছে এক টুকরো গরম কাপড় ঈদের আনন্দকেও ছাড়িয়ে যায়, ঈদ কি তাদের জীবনে নতুন কোনো আনন্দের বারতা নিয়ে আসছে? এতোসব দুর্ভোগ দুঃসময়ের ভেতর দিয়েই আমরা অবগাহন করতে যাচ্ছি ঈদের আনন্দে।

মানুষের জীবনে শানত্দি, স্বসত্দি আর নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক, অবসান হোক অন্ধকার অমানিশার। ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়-ক এ দেশের প্রতিটি ঘরে, হৃদয়ে হৃদয়ে এই প্রত্যাশা সবার। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। পৃথক পৃথক এসব বাণীতে তারা দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং দেশের সব মানুষের সুখ, শানত্দি ও সমৃদ্ধি কামনা করেছেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ, বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বদর"দ্দোজা চৌধুরীও দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

11 দিনের ছুটির ফাঁদ পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে 3 দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। আজ থেকে এ ছুটি শুর" হয়ে শেষ হবে মঙ্গলবার। কিন' এর আগে গত শুক্র ও শনিবার দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় ঈদের ছুটি প্রলম্বিত হয়েছে 5 দিনে। ফলে সরকারি অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকছে টানা 5 দিন। এ ছাড়া, বুধবার থেকে অফিস খোলা থাকলেও বুধ ও বৃহস্পতিবার দুদিন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেই ঐচ্ছিক নিয়েছেন, অনেকেই অভ্যাস অনুযায়ী কামাই দেবেন।

আর শুক্র ও শনিবার ফের দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি। এরপর আবার রবি ও সোমবার দুদিন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের দেশব্যাপি অবরোধ কর্মসূচির কারণে অফিস আদালত কার্যত বন্ধই থাকবে। ফলে সব মিলিয়ে দীর্ঘ 11 দিনের ছুটির ফাঁদে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ঈদ উপলক্ষে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা ও ঈদ মোবারক খচিত পতাকা দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভিসহ বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল পরিবেশন করবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।

সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। কারাগার, হাসপাতাল ও এতিমখানায় পরিবেশন করা হবে উন্নতমানের খাবার।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.