আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সানির অন্তর্ধান

আগের দিন যিনি নেটে দিব্যি বোলিং করে গেলেন, সন্ধ্যার পর টিম মিটিংয়েও ছিলেন, হঠাৎ কী এমন হলো যে, একাদশের বাইরেই চলে গেলেন চট্টগ্রাম টেস্টের নায়ক ইলিয়াস সানি। 'পেটের পীড়ায় শরীর ভালো নেই এই স্পিনারের। ' টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে হঠাৎ দেওয়া এ যুক্তি শুরু থেকেই ছিল বড্ড নড়বড়ে। সে কারণেই অনুসন্ধানে বেরিয়ে এলো সানির অন্তর্ধানের নেপথ্যের কারণ। পেটের পীড়া নয়, বৃহস্পতিবার রাতে পারিবারিক বিবাদে জড়িয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন সানি, শুক্রবারও আরেক দফা হোটেল থেকে বাড়িতে গিয়ে ভুল করেন তিনি।

শনিবার সকালে দেখা বিধ্বস্ত সানিকে তাই আর শেষ মুহূর্তে ঢাকা টেস্টের একাদশে রাখেননি কোচ স্টুয়ার্ট ল। শুক্রবার রাতে বাড়ি থেকে একটি জরুরি ফোন আসে সনির মোবাইলে। ছেলে এখন বড় ক্রিকেটার হয়েছে, পাওনা টাকা দিয়ে দাও_ এ দাবিতে সানির এক নিকটাত্মীয় রাতে সানিদের বাড়িতে সদলবলে চড়ও হয়। ঘটনাটা এতটাই বাজে মোড় নিয়েছিল যে, সানিকে বাধ্য হয়েই হোটেল থেকে তার লালবাগের বাড়িতে ছুটে যেতে হয়। গভীর রাত পর্যন্ত সেখানেই পাওনাদারদের সঙ্গে দেনদরবার করতে হয়।

এলাকার মুরবি্বদের নিয়েও সালিশি বৈঠকেও সমঝোতা হয়নি। আমার ম্যাচ আছে, আমাকে ছেড়ে দিন_ পাওনাদারদের কাছে সানির এ আর্তি কোনো প্রভাব ফেলেনি। সুত্র জানায়, এক পর্যায়ে স্থানীয় সাংসদ ডা. মোস্তাফা জালাল মহিউদ্দিনের হস্তক্ষেপে ইলিয়াস সানি টিম হোটেলে ফিরে যান। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সাংসদ সমকালকে বলেন, গতকাল রাতে বিষয়টি নিয়ে একবার কথা হয়েছে। আজ (শনিবার) রাতে দু'পক্ষের বসার কথা রয়েছে।

চেষ্টা করব বিষয়টি আজই সমাধান করে দিতে। সকালে দলের সঙ্গে মাঠে এলেও সানির মুখ দেখে কোচ ল' ঝুঁকি নিতে চাননি। আগের রাতে পারিবারিক ঝামেলায় জড়ানো বিধ্বস্ত সানিকে ঢাকা টেস্টের জন্য উপযুক্ত মনে হয়নি কোচের। হোটেলে ফিরে গিয়ে ফোন বন্ধ করে সানিকে বিশ্রাম নিতে বলা হয়। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, 'সানি গতকাল থেকেই মানসিকভাবে বিধ্বস্ত ছিল।

চট্টগ্রাম টেস্টে অমন একটা পারফরম্যান্স করার পরও বাড়ির ঝামেলা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারেননি। একসময় এমন অবস্থা হয়ে যায় যে, দেশের হয়ে খেলার চেয়ে তার পরিবারকে বাঁচানোটাই সানির কাছে বড় দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়। নিরুপায় হয়ে সানিকে রাতেই বাড়িতে যেতে হয়। ' বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের একজন সানির ওই রাতের অন্তর্ধানের রহস্য উদ্ঘাটন করেন। যদিও দলের ম্যানেজার জাহিদ রাজ্জাক মাসুম ঘটনাটি জানেন না বলে এড়িয়ে যান।

'সত্যি বলছি, এ ধরনের কোনো খবর আমার জানা নেই। তবে এটুকু বলতে পারি, রাতে সানি হোটেলে ফিরে এসেছিল। ' এমন ব্যক্তিগত কারণে একজন সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার অনুপস্থিত থাকায় বিসিবি থেকে অসুস্থতার যুক্তি দাঁড় করানো হয়। দলের ম্যানেজার জাহিদ রাজ্জাক মাসুম জানান, দুপুর থেকেই পেট খারাপ হয় সানির। অথচ বিসিবির ডাক্তার আমিন সমকালকে জানান, তিনি ফিজিওর কাছ থেকে সন্ধ্যার পর সানির পেট খারাপের খবর শোনেন।

যদিও ওই রাতে সানির বাড়িতে যাওয়ার ব্যাপারটি নিশ্চিত করেন বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন সিরাজ। 'সানি টিম ম্যানেজমেন্টের অনুমতি নিয়েই রাতে বাড়ি গিয়েছিল। সকালে সে দলের সঙ্গে মাঠেও এসেছিল। হয়তো রাতে বাড়িতে গিয়ে কিছু খেয়ে থাকতে পারে, যে কারণে অসুস্থ হতে পারে সে। ' বিসিবি কর্মকর্তার 'পেটের পীড়া'র যুক্তি যদিও মেনে নেওয়া হয়, তাহলেও প্রশ্ন থাকে এমন গুরুত্বপূর্ণ টেস্টের আগে ক্রিকেটারদের কেন বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়? 'আগেও অনেক ক্রিকেটার বাড়িতে গেছেন।

অনেক সময় জরুরি কারণ দেখিয়ে কেউ কেউ বাড়িতে যান। ' যদি বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি এত সহজেই পাওয়া যায়, তাহলে কেন সবাই মিলে সিরিজের সময় হোটেলে থাকা হয়? বিদেশে সফরে যদি সানি তার বাড়ি থেকে এমন ফোন পেতেন, তাহলে কি বাড়ি যেতে পারতেন? সানির কাছেও জানতে চাওয়া যেতে পারে, তার পরিবার হুমকির মুখে এমন ঝামেলার বিষয়টি কি বোর্ড কর্তাদের জানিয়েছিলেন? টিম ম্যানেজমেন্টের একটি সূত্র জানান, সানি তার সমস্যার কথা কর্মকর্তাদের জানিয়েছিলেন; কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। একটা ছোট্ট পারিবারিক কারণে চট্টগ্রাম টেস্টের নায়কের ঢাকা টেস্টে না থাকাটা সত্যিই দুঃখজনক। টিম ম্যানেজমেন্ট সক্রিয় না থাকায় এমনটি হয়েছে, তা বলা যায় নিঃসন্দেহে। শুধু তাই নয়, ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরও তা গোপন রাখার কৌশলেও ব্যর্থ তারা।

পেট খারাপের মতো অজুহাত দেখিয়ে সানির অন্তর্ধান রহস্য ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। এমন মিথ্যাকে সত্য বানাতে দাঁড় করিয়েছিলেন নানা সব সস্তা যুক্তি। শেষ পর্যন্ত সেসবও ব্যর্থ। সত্য জানতে অপেক্ষায় থাকতে হয়নি বেশিক্ষণ। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এইরকম একজন গুরুত্বপূর্ণ প্লেয়ারের উপর দিয়ে একটা ঝড় গেল, বিসিবি কর্তারা বসে বসে কার বিচি টিপছিলেন।

সেখানে গিয়ে তারা কি কিছু করতে পারতেন না। পারতেন না সানীকে সাপোর্ট দিতে। লিনকু হলো-- Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।