আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাশাপাশি- ৬

অকর্মা, ভীতু, কাপুরুষ ১৩ রাত তখন ঠিক ২টা। বাবু কলম হাতে টেবিলের সামনে বসে আছে। যা হোক একটা কিছু তাকে লিখতেই হবে। কিন্তু কি লিখবে কিছুই সে বুঝতে পারছে না। সবকিছু যেন গুলিয়ে যাচ্ছে।

প্যাডের প্রায় ১০/১২ টি পাতা ইতিমধ্যেই বাষ্কেট থেকে উকি দিচ্ছে। বাড়ি ফেরার পথে নিলুকে লিখার জন্যই প্যাডটি কিনেছিল। অনেক চিনতা ভাবনা করে রাত তিনটার দিকে কোন রকমে একটি চিঠি দাড় করালো। বেশ কয়েকবার চিঠিটা পড়ে নিজ মনে বলল যাক একেবারে ফেলনা হয়নি। প্রেম পত্র লেখার অভিজ্ঞতা তার অনেক আছে।

তবে সবই বন্ধুদের জন্য। বন্ধুরা বলে প্রেমের চিঠিতে বাবুর জুড়ি মেলা ভার। সে যা লিখল- আমার নীল, ঐ নীল আকাশ, চোখ মেলে দেখ, আমাকে দেখতে পাচ্ছ ? সাদা মেঘ, আমাকে দেখতে পাও ? আমি তোমাকে দেখতে পাই, ঐযে চাঁদ, ঐ খানটায়। অমবশ্যার আঁধারে অথবা পূর্ণিমার আলোয়, আমি তোমাকে দেখতে পাই। তোমাকে দেখতে পাই ব্যাস্ত মহাসড়কে অথবা শুনশান নিরবতাই।

বর্ষার বৃস্টিতে অথবা চৈত্রের খরায়, আমি তোমাকে দেখতে পাই। তোমাকে দেখতে পাই ঐ...ই দূরে আবার হাত বাড়ালেই অনুভব করি তোমার ষ্পর্শ । প্রিয় নীল, তুমি কি বুঝতে পারছ, এটাই ভালোবাসা ? আসলে, শয়নে স্বপনে জাগরনে এই নয়নে তুমি শুধূ তুমি। তোমার জন্য মরতে পারি এমনটি কখনও বলবনা কারন তোমার জন্যই বাঁচতে চাই। তোমাকে ভালোবাসার জন্য বাঁচতে চাই।

দুজনে যদি অমর হয়ে যেতাম ! অহর্নিশ ভালোবাসতাম। পাগলের প্রলাপ মনে হচ্ছে না ? আসলে তোমাকে ভালোবেসে আমি যে পাগলই হয়ে যাচ্ছি। জানো, তোমাকে নিয়ে একটা প্লান করেছি, এসএসসি পাশ করে আমরা আমাদের পরিবারের কাছে জানাবো আমাদের ভালোবাসার কথা, এইচএসসি পাশ করে আমাদের এনগেজমেন্ট হবে আর পড়া শেষ করে বিয়ে.....। প্লানটা কেমন হলো জানাবে, আর একটি কথা, আমি আশা করব তুমি রক্ত নিয়ে আর ছেলে খেলামী করবে না। যদি কর আমার শরীরের কোন ধমনী ও শিরা আস্ত রাখব না।

ভালো থেক প্রতিটা ক্ষন । চিঠি দিবে। ইতি তোমার পাগল। চিঠিটি শেষ বারের মত পড়ে একটি নিল খামের ভিতর ঢোকাল বাবু । এরপর নীলুর কথা ভাবতে ভাবতে হারিয়ে গেল এক গভীর ঘুমের রাজ্যে।

১৪ নিলু এক নিঃশ্বাসে শেষ করল চিঠিটি। পরপর পাঁচবার পড়ল। কোন মানুষ এত সুন্দর করে চিঠি লিখতে পারে এটা তার জানা ছিলনা। চিঠির মধ্যে সে ষ্পষ্ট বাবুর মুখ দেখতে পেল। নিলুর ঘরে অত্যাধুনিক প্লেট খাটটিতে বসে আছে নিপা।

আজ সে একাই এসেছে। করণ রুপা তার নানার বাড়ি গিয়েছে দিনাজপুর । নিপার পাশে আধাসোয়া অবস্থায় নিলু, তার চোখে পানি। সিডিতে মৃদুসুরে বাজছে সোলসেরআজ তোমাকে প্রয়োজন গানটি। গানটি নিলুর ভিষন প্রিয়।

কিন্তু সেদিকে কোন খেয়াল নেই। কাঁদছিস কেন? আনন্দে। আনন্দে কেউ কোনদিন কাঁদে? হাসতো । নিলু একটু হাসার চেষ্টা করল। জানিস নিলু , বাবু খুব ভাল ছেলে।

তার সাথে আমার পরিচয় খুব বেশি দিনের না। অথচ এর মধ্যে আমাদের কত আপন করে নিয়েছে। তুই চিনতা করতে পারবিনা । এখন তুই দয়া করে কিছু একঠা লিখে দে আমি যায়। আর দয়া করে চা- টা কিছু দিতে বল।

খিদেই পেটটা চোঁ চোঁ করছে। নিলু চিঠিটি ভাজ করে তার ড্রয়ারে রাখল। কি খাবি বল? হালকা কিছু একটা হলেই চলবে। নিলু ভিতরে গিয়ে খাবার কথা বলে এল। কিছুক্ষন পর নিলুদের কাজের মেয়ে খাবার পৌঁছে দিয়ে গেল।

আরে এত খাবার রাতে তো ভাত খেতে দিবিনা মনে হচ্ছে। নিপার সাথে মিষ্টি, পায়েস, কাবাব, চানাচুর ইত্যাদি খাবার পর চা খাবার সময় নিলু মুখ পুড়িয়ে ফেলল, নিপা হাসতে হাসতে প্রায় শেষ। এত হাসছিস কেন? একটা ব্যাপার আছে। কি ব্যাপার বলবিত ? নিপা বাবুর মুখ পুড়ার ঘটনা নিলুর সামনে ব্যক্ত করল। কিন্তু নিলু খুশি হতে পারলনা।

সে বলল এখন চিঠি লেখা যাবেনা। আমি পরে লিখে তোর কাছে পাঠিয়ে দিব। ঠিক আছে । আচ্ছা বাবু ছাত্র কেমনরে? খুব ভাল তবে কাজ লাগায় না । সারাক্ষন সাইকেল নেয়ে ঘুরে বেড়াই।

স্বাধীনচেতায় ওকে খেল। তুই ওকে একটু বকে দিস। যেন এগুলি করে সময় নষ্ট না করে ঠিক আছে বলে দেব। নীলু আজ আমি আসি। ঠিক আছে আয়।

নীলু নিপার হাতের তালুতে একটি চুমু বসিয়ে দিয়ে বলল পৌছে দিস। ১৫ নিলুর দেওয়া চুমু পৌঁছে দিতে এসে নিপা দেখল বাবুর প্রচন্ড জ্বর। তার মাথায় পানি ঢালছেন তার মা। আসস্লামালাইকুম খালাম্মা। ওয়ালাইকুম আসসালাম, বস মা।

বাবুর জ্বর নাকি? হ্যাঁ মা । কখন থেকে ? কাল রাত থেকে । জ্বর কি খুব বেশি? ১০৩° পর্যন্ত উঠেছিল, এখন পানি ঢলার ফলে কিছুটা ভাল আছে। বাবু নিপার গলা পেয়ে চোখ মেলে তাকায়। আম্মা এক গ্লাস পানি দাওতো।

বাবুর মা পানি আনতে বাইরে গেলেন। কিরে, কি খবর ? খবর ভালই, দেখি তোর ডান হাতটা। বাবু তার ডান হাতটি নিপার দিকে এগিয়ে দেয়। নিপা তার আঙ্গুল কটি ধরে মধ্যখানে একটি চুমু বসিয়ে দেয়। কিরে তুই ও কি আমার প্রেমে পড়ে গেলি নাকি ? কি যাতা বসছিস।

তোর সাথে প্রেম করব আমি ? এটি নীলু পৌঁছে দিতে বলেছে। ও তাই বল, নিপা মুখটি একটু কাছে আনতো। কেন ? কথা আছে। নিপা ভাবে হয়ত কানে কানে কিছু বলবে, তাই মুখটি বাবুর দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতেই বাবু তার ঠোটে বিশাল এক চুমু বসিয়ে দেয়। নিপা বাবুর এমন আচরনে অবাক হয়ে যায়।

কোন পুরুষের এই প্রথম চুম্মন তাকে শিহরিত করে তোলে। এটা তোর না নীলুর কাছে পৌছে দিবি। নিপা এতক্ষনে বুঝতে পারে রহস্য হঠাৎ বাবু খুক খুক করে কেশে উঠে। কিরে কাশিও হচ্ছে নাকি ? হ্যারে কাশির জন্যই অস্থির হচ্ছি বেশি। ডাক্তারের কাছে গিয়ে ছিলি ? না এখন যাবো।

বাবুর মা পানি হাতে প্রবেশ করেন, বাবু নিপাকে সাথে করে ডাক্তারের কাছে যা। আমি একাই যেতে পারব মা। তোর এঅবস্থায় একা যাওয়া ঠিক হবে না। ঠিক আছে চল বাবু পানি খেয়ে নিপার সাথে রওনা হয় ডাক্তার একরাম সাহেবের জেম্বারের উদ্দেশ্যে। ডাক্তার সাহেব বাবুকে নানাভাবে পরিক্ষা করেন।

কিন্তু কোন অসুবিধা পেলেন না। কয়েকটি ওষধ লিখে দিয়ে দুই দিন পর আবার দেখা করতে বললেন। নিপা বাবুকে বাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিল। নিপা তুই আমার অসুকের কথা নিলুকে বলিস না ও খামোকা টেনশন করবে। ঠিক আছে।

আমি আজকে আসি, কালকে আবার আসব। ১৬ আজ প্রায় একমাস হয়ে যাচ্ছে। তবুও বাবুর অসুখ ভাল হয়নি। কাশি চলছে অনবরত সেই সাথে থেমে থেমে জ্বর। ডাক্তার চেষ্টা করেও রোগ নির্নয় করতে পারছেন না।

করিম সাহেব তার একমাত্র ছেলের জন্য কম করছেন না। এরমধ্যে ডাক্তারও বদল করা হয়েছে। তবুও কিছু হচ্ছে না। বাবুকে নিয়ে তিনি দারুন চিন্তিত। রাহেলা আক্তারও ছেলের জন্য অনবরত কেদে যাচ্ছেন।

একবার করিম সাহেব কষে ধমক লাগালেন, তোমার কাদার জন্য তোমার ছেলে ভাল হয়ে যাবে ? বিকেলে করিম সাহেব বাবুকে নিয়ে শহরের সবচেয়ে বড় ডাক্তারের কাছে গেলেন। ডাক্তার আজহার চৌধুরী খুর রসিক মানুষ। সব সময় পান চিবান। এই শহরে উনার আসা বেশ কয়েক বছর হয়ে গেল। রাজশাহীতে ডাক্তারী করে ভাত হচ্ছিল না বলে প্রথমে সপ্তাহে দু’দিন এখানে আনতেন।

কিন্তু যখন দেখলেন তিনিই একাই রাজা এই রাজ্যের তখন পরিবারের সবাইকে নিয়ে উড়ে এসে জুড়ে বসলেন। এখন বেশ আছেন তারা। বাড়ি করেছেন, গাড়ি কিনেছেন। বয়স ? সতের বছর পাঁচ মাস এক দিন। বাবুর এই রসিকতায় রসিক ডাক্তার হেসে উঠলেন।

সাবাস বেটা তোমার কোন অসুখ হয়নি। কোন চিন্তা করবে না। চিন্তাই সব নষ্টের মূল। চিন্তা না করলে দেখবে তুমি সম্পূর্ন ভালো হয়ে গেছ। তা জ্বর কত দিন থেকে।

প্রায় মাস খানেক। করিম সাহেব আগের ডাক্তারের প্রেসক্রিপসান গুলো দেখি। করিম সাহেব সিনথেটিকের ব্যাগ থেকে বেশ কিছু কাগজ বের করে ডাক্তারের কাছে দিলেন। ডাক্তার সাহেব একাগ্রতার সাথে সেগুলোকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলেন। দেখা হলে কাগজগুলি ভাঁজ করে একঝলক হেসে বললেন এরমধ্যেই এত ঔষধ দিয়ে ফেলেছে কোন কিছুই পরীক্ষাা ছাড়াই ব্যাটা ডাক্তার নাকি ? বাবু মনে মনে হাসল, এক ডাক্তারের সবচেয়ে বড় শত্রুু আর এক ডাক্তার তারা এক অপরকে গালি দেবেই।

করিম সাহেব আমি লিখে দিচ্ছি আপনি ওকে নিয়ে গিয়ে অনন্য নাসিং হোমে ব্লাড দিয়ে আসুন। কাল বিকেল পাঁচটায় আমাকে রির্পোট দেখিয় যাবেন। ডাক্তার সাহেবের ডিস্পেন্সারী থেকে বের হয়ে করিম সাহেব ও বাবু গেলেন ব্লাড দিতে। আকবর সাহেব বাবুকে দেখেই চিনে ফেললেন, কি ব্যাপার, আবারও কোন কিছু টেষ্ট করাতে হবে বুঝি ? জ্বি। করিম সাহেব বাবুকে প্রশ্ন করে তুই ওনাকে চিনিস নাকি ? জ্বি বাবা।

কেমন করে ? একবার এক বন্ধূকে নিয়ে এসেছিলাম ব্লাড টেষ্ট করাতে। বাবু আকবর সাহেবের দিকে চেয়ে চোখ টেপে। আকবর সাহেব যেন আর কিছুতেই হাসি চেক দিতে পারেন না। করিম সাহেব ডাক্তারের দেওয়া স্লিপটা আকবর সাহেবের দিকে এগিয়ে দেয়। তিনি এক নজর স্লিপটি দেখলেন, তোমার অসুখ ? জ্বি।

এই চেয়ারটাই বস। রক্ত নেওয়ার যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করলেন তিনি , রক্ত নেওয়ার পর করিম সাহেবকে চায়ের আমন্ত্রন জানালেন। করিম সাহেব তা প্রত্যাক্ষান করতে পারলেন না। তা বাবা, রির্পোট পেতে কতক্ষন দেরী হবে ? এই তো কিছুক্ষন আকবর সাহেব উঠে গিয়ে মাইক্রোস্কোপের সামনে বসলেন। কিছুক্ন পর হাতি মুখে উঠে এলেন, চিন্তার কোন কারন নেই, খারাপ কিছু না।

রির্পোট পেপারটা তিনি করিম সাহেবের দিকে এগিয়ে দিলেন। করিম সাহেব ডাক্তার আকবর সাহেবকে ধন্যবাদ জানিয়ে বেড়িয়ে আসলেন। পরের দিন বিকাল ঠিক পাঁচটার সময় করিম সাহেব বাবুকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলেন। ডাক্তার সাহেব রির্পোট দেখে বললেন, আমি যা ভেবে ছিলাম তা না। আপনি কি ভেবেছিলেন ডাক্তার সাহেব ? আমি মনে করেছিলাম ম্যালেরিয়া অথবা টাইফয়েড কিছু একটা হবে।

যাহোক ওষধ লিখে দিচ্ছি, চিন্তার কোন কারন নেই, সব ঠিক হয়ে যাবে। ডাক্তার সাহেব প্রেসক্রিপশান করে দিলেন ও কেমন থাকে না নাথাকে জানাবেন। জ্বি আচ্ছা করিম সাহেব ও বাবু ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। বাবা তুমি খামোখা এসব কিছু করছ আমি বোধহয় আর বাচবো না। ছেলের মুখে এসব কথা শুনে করিম সাহেবের বুকটা হাহাকার করে উঠল।

চলবে_______________________________ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.