আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাশাপাশি- ২

অকর্মা, ভীতু, কাপুরুষ ২ তাইফুর রহমান সাহেব বাসায় ফিরলেন দুপুর দেড়টায়। স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কোয়ার্টারে থাকেন তিনি। স্কুলে প্রচন্ড বদরাগী একরোখা মনে হলেও স্কুলের বাইরে তিনি তা নন। বাইরে সর্বদা একজন হাসি খুশি প্রান খোলা মানুষ। দরজা খুলে দিলেন রাহেলা বেগম।

কি ব্যাপার মুখটা এরকম করে রেখেছ কেন ? তা কেমন করে রাখবো, তোমার মনের মতো ? স্বামীর কথায় রাহেলা বেগম খুব আশ্চর্য হলেন। ২০ বছর ধরে তিনি তার সাথে ঘর করছেন। এতদিন হয়ে গেল তবু তাকে বুঝতে পারলেন না। দরজা লাগিয়ে তিনি ভাত বাড়তে গেলেন। তাইফুর রহমান সাহেব গত ২০ বছরে যা করেন নি আজ তিনি তা করে বসলেন।

একা একা কাপড় ছেড়ে খাবার টেবিলে এলেন। তার কাপড় ছাড়ার সময় রাহেলা বেগম ঘরে থাকবেন এবং তিনি স্কুলে আজ কি হল তা শোনাবেন, এটাই ছিল তার অলিখিত নিয়ম। রাহেল বেগম যখন দেখলেন কাপড় ছেড়ে তিনি ডাইনিং এ বসে আছেন তখন তিনি প্রচন্ড ধাক্কা খেলেন। কি হয়েছে বলোতো ? কিছু হয়নি। তবে এরকম ভাবে বসে আছো কেন ? তাইফুর সাহেব কোন উত্তর দিলেন না।

কিছুক্ষন পর জিজ্ঞেস করলেন আচ্ছা রাহেলা, দুই দুই পাঁচ হয় কিভাবে? কি যা তা বলছো , মাথা টাথা টিক আছে তো ? তাইফুর সাহেব কোন কথা বললেন না। রাহেলা বেগম বুঝতে পারলেন তার স্বামীর মানষিক দুরবস্থার কারন এটাই। তিনি মনে মনে প্রচন্ড রেগে গেলেন। তুমি কি পাগল হয়ে গেলে নাকি ? এখন খাওয়া শুরু করোতো। তাইফুর সাহেব বিশেষ কিছু খেতে পারলেন না।

হাত ধুয়ে একা উঠে পড়লেন। তার বড় মেয়ে ময়না খেতে এসে দেখলো, বাবা হাত ধুয়ে উঠে পড়েছে। সে কিছুটা অবাক হলো। বাবাতো এরকম করে না। খেয়ে দেয়ে বাবার ঘরে গিয়ে দেখলো তিনি বালিশে হেলান দিয়ে ছাদের দিকে চেয়ে আছেন।

কি হয়েছে বাবা ? তাইফুর সাহেব একবার তার দিকে চেয়ে দেখলেন। কোন কখা বললেন না। ময়না দ্রুত রান্না ঘরে গেল। দেখলো তার মাও গম্ভীর হয়ে আছেন। তোমরা ঝগড়া করেছো নাকি মা ? না, রাহেল বেগমের সংক্ষিপ্ত উত্তর।

দেখে তো মনে হচ্ছে খুব ঝগড়া হয়েছে। বকবক করিস না, যা এখান থেকে। বাবার কাছে ও মার কাছে অপমানিত হয়ে ময়না কিছুটা লজ্জা পেল। রাতে তাইফুর সাহেব টেবিলে আসলেন না। রাহেলা বেগম স্বামীকে রেখে একা খেতে বসলেন না।

ময়না পড়েছে বিপদে, বাবা কেমন যেন চিন্তিত আর মার দিকেতো তাকানই যাচ্ছে না রাগে উনার সারা শরীর দিয়ে আগুন বের হচ্ছে। সকালে ময়না একা খাবার টেবিলে এলো। দেখলো মা একা বসে আছেন, বাবা এখনো আসেন নি। এবার ময়না বেশ চিন্তায় পড়লো, নিশ্চয় কিছু একটা হয়েছে। একটু পরে তাইফুর সাহেব খাবার টেবিলে আসলেন, সামান্য কিছু মুখে দিয়েই উঠে পড়লেন।

নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লেন। ময়না বাবার কাছে গেল। কি হয়েছে বাবা, স্কুলে গেলে না কেন ? আচ্ছা ময়না, বলতে পারিস দুই আর দুই পাঁচ হয় কখন? যখন যোগে ভুল হয়। তাইফুর সাহেবের মন আনন্দে ভরে উঠলো। তুই ঠিক বলছিসতো? হ্যাঁ বাবা।

এটা তো কোন অংক না এটা একটা ধাঁধা। তাইতো এ ভাবেতো ভাবিনি তোর মা কোথায় ? শিগ্গির ডাক। রাহেলা বেগম গরে ঢুকতেই তিনি খুশি গলায় বললেন, দুই আর দুই পাঁচ হয় কখন জান রাহেলা ? রাহেলা তার স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়েই বুঝলেন সমস্যার সমাধান হয়েছে,অনেক কষ্টে তিনি হাসি থামিয়ে আশ্চর্য হবার ভান করে বললেন কখন? তাইফুর সাহেব খুব উচ্ছাসিত ভাবে বললেন, যখন যোগে ভুল হয়। ৩ করিম সাহেব বাবুর বাবা। অত্যান্ত গম্ভীর প্রকিতির লোক তিনি তারপরও ছেলের সাথে তার সম্পর্ক বন্ধু শুলভ।

ড্রইংরুমে বসে তিনি খবরের কাগজ পড়ছিলেন। বাবু এসে বললো বাবা কিছু টাকা দাওতো। টাকা কি হবে বাবা ? খেলা দেখতে যাব। কি খেলা ? ফুটবল লীগ শুরু হচ্ছে, আজ ন্যাশনাল ও দিগন্ত প্রসারীর খেলা। চল বাপ বেটা যায় খেলাটা দেখেই আসি।

গেলে তুমি একাই যাও আমি বন্ধুদের সাথে যাব। ও ঠিক আছে এই নে টাকা আর দেরী করবি না। ঠিক আছে। বাবুরা পাঁচ বন্ধু মিলে খেলা দেখতে গেল। চার টাকার বাদাম কিনে সবাই মিলে খাওয়া শুরু করলো।

সকলে দেখলো বাবু চোকা না খসিয়ে সমানে খেয়ে চলেছে। কিরে তুই দেখছি ছাগল হয়ে যাচ্ছিস ! বললো মিতুল। বেটা গাধা ছাগলেরা বুঝি বাদামের চোকা খায়? আসলে আমি বুঝি একটু বেশি খেয়ে ফেলেছি। জ্বী দয়া করে আর মুখে দিবেন না। ফুটবল খেলা শুরু হল।

খুব জঘন্য খেলা । বাবুর অবশ্য সেদিকে কোন মন নেই। সে নিজ মনে হেসে যাচ্ছে। কিরে হাসছিস যে? বলল কামাল । খেলা দেখে একটা কৌতুক মনে পড়ে গেল, তাই হাসছি।

শুনবি ? বল আমরাও একটু হাসি। বলল ইকবাল তিন বেঁটে চাপাবাজ সমানে চাপা মারছে, প্রথমজন বলল, জানিস আমার বাবা এতো লম্বা যে কোনদিন ষ্টেডিয়ামের ভেতরে ঢুকে খেলা দেখেননি ষ্টেডিয়ামের বাইরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে খেলা দেখে দ্বিতীয়জন বলল, আরে তোর বাবাতো বাইরে থেকে খেলা দেখে, আমার বাবা এত বেশী লম্বা যে বাড়ি থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খেলা দেখে। তৃতীয়জন সাথে সাথে প্রশ্ন করলো, তোর বাবার মাথায় নরম নরম কিছু কি বেধেছিল, বাধতেও তো পারে। তাতে কি ? ঐ নরম নরম জিনিসটা আমার বাবার বিচি। চিন্তা কর আমার বাবা কত লম্বা ! কৌতুক শুনে বাবুর বন্ধুরা হাসিতে বিষম খেল।

আর এ হাসি শুধু তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলো না। বাবু দেখলো তাদের আশেপাশের কিছু কিছু দর্শকও ওর কৌতুক শুনে হাসছে। একজন দর্শক বাবুকে উদ্দেশ্য করে বলল, ছোট ভাই কষ্ট করে এ ফালতু খেলা দেখে তো মন খারাপ, তোমার কৌতুক শুনে টিকিটের দাম কিছুটা উসুল হলো। বাবু বন্ধুদের কানে কানে বলল, মজা দেখবি ? দেখা। বাবুর উপর তাদের বিশ্বাস আছে ও যখন বলেছে তখন একটা কিছু মজা নিশ্চয় দেখাবে।

বাবু ওদের কাছ থেকে উঠে ন্যাশনাল টিমের কর্মকর্তারা যেখানে বসে আছে সেখানে গেল ভাই আপনাদের দলের কোচ কে? লম্বা মত এক লোক তার দিকে তাকাল কি হয়েছে ছোটভাই খেলতে চাও? লীগ শেষ হলে মাঠে এস। জ্বী না, খেলতে চায়না ও দলের কোচ আপনাকে কুত্তার বাচ্চা বলে গালি দিয়েছে আরো বলেছে আপনার ফুটবল কোচ থেকে ইস্তফা দিয়ে ডাংগুলি খেলার কোচ হওয়া উচিত। কোচ বেচারা রেগে আগুন। দাড়াও ফুটবল খেলা আজ ও শালাকে শেখাচ্ছি । হনহন করে তিনি ঐ দলের কর্মকর্তারা যেখানে বসে আছেন সেদিকে যেতে উদ্বক্ত হতেই বাবু পথ আগলে দাড়াল, ভাই আপনি একটু পরে আসেন।

ওদের কথা আমি শুনেছি এবং এদিকে আসতেও ওরা আমাকে দেখেছে। আপনাদের রোষানলে পড়ে শেষে আমা..... ঠিক আছে তুমি যাও আমি শেখাচ্ছি শালাকে ফুটবল খেলা। বাবু সেখান থেকে বের হয়ে একই কথাগুলো দিগন্ত প্রসারির এক কর্মকর্তাকে গিয়ে বলল। তারপর সে দৌড়ে বন্ধু দের নিয়ে এক কর্ণারে গিয়ে লুকালো। কিছুক্ষন পর দর্শকরা দেখলো দুইটিমের কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রচন্ড কথা কাটাকাটি চলছে।

কিছুক্ষনের মধ্যে তা হাতাহাতি এবং চেয়ার ভাংচুরে রুপ নিল। সাথে সাথে দর্শকরাও যোগ দিল লড়াইয়ে, যে যার দলের পক্ষে। বাবু ও তার বন্ধুরা এই সুযোগে চম্পট। ৪ বাড়িতে গিয়ে বাবু তার দুঃসম্পর্কের এক ভায়ের মুখো মুখি হলো। স্লামালেকুম ভাইয়া।

ওয়ালাইকুম সালাম, ভালো আছো ? ভাল কোন ক্লাসে এবার ? দশম শ্রেণীতে। রোল কত ? সাধারনত যারা রোল জিজ্ঞাসা করে বাবু তাদের দুচোখে দেখতে পারে না। তবুও টেনে অনেক কষ্টে বলল, দশ । আসলে বাবুর রোল নং বিশ। বাবুর মা একগাদা খাবার নিয়ে ঘরে আসলেন ।

মিষ্টি, ডিমপোচ, হালুয়া, চানাচুর ইত্যাদি। এতসব খাবার দেখে বাবুর জ্বীভে পানি চলে এলো। তার মাও এটি খেয়াল করলেন। এই বাবু ভিতরে যা। থাক না।

নাও তুমিও খাও বাবু। বাবুর দ্বিতীয়বার বলার অপেক্ষা না করে খেতে শুরু করল। সে সমানে খেয়ে চলেছে। একবার শুধু মার দিকে তাকালো, দেখলো তিনি চোখ রাঙাচ্ছেন। তবুও এতে মাথা না ঘামিয়ে তার কার্য বহাল রাখল।

হঠাৎ খাওয়া থামিয়ে প্রশ্ন করল কি খবর ভাইয়া এতদিন পরে ? একটা অনুষ্ঠান আছে তার কার্ড দিতে এলাম। রেবা আপুর বিয়ে তাই না। হ্যাঁ ঠিক ধরেছো। কবে ? আগামী সোমবার। বাবু হিসেব করতে লাগল, আজ মঙ্গলবার আর পাঁচদিন বাকী আছে।

কিছুক্ষন পর বিদায় নিয়ে রকি চলে গেল। বাবু সারাক্ষন শুধু কি যেন হিসাব করছে। বাবুর মা নাজনা বেগম বললেন, সারাক্ষন আঙ্গুল ¸ গুনে কি করছিস ? ঘন্টা হিসাব করছি মা। পাঁচদিন মানে ১২০ ঘন্টা, তারপর ১১৯, ১১৮,............ চুপ শুধু পাগলের মত কাজ করিস সারাক্ষন। আচ্ছা আম্মা আমরা কিসে করে যাব ? কি জানি তোর বাবা ফিরুক।

টেম্পু বা বাসে হবে হয়ত। বিয়ের এইসব কথা ভাবতে ভাবতে বাবুর চোখ দুটি উজ্জল হয়ে গেল। কারন অনেকদিন দুরে কোথাও যাওয়া হয়না| দুই বছর আগে একবার গিয়েছিল। অনেকদিন থেকে যাওয়া হয়ে উঠেনি। হঠাৎ বাবুর নীলুর কথা মনে পড়লো, অনেকদিন দেখা হয়না তার সাথে।

আসলে তাকে দেখার জন্যই সে সুন্দরপুর যেতে বেশী আগ্রহী। কি হবে দেখে ? বাবু নিজে নিজেকে প্রশ্ন করল। তারা কত ধনী, বিরাট তিনতলা বাড়ি বেশ কয়েকটা গাড়িও আছে। আমরা তো খুব একটা ধনী নই। বাবা যা বেতন পান তাতে ভাল ভাবেই চলে যায়।

কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য কিছু একটা করতে হবে, কিন্তু তাতো হচ্ছে না। ধুর কিসব চিন্তা করছি এসব, পাগল হয়ে গেলাম নাকি ? বাবু বিয়ে বাড়ির কথা চিন্তা করতে লাগলো। দেখতে পাচ্ছে নীলু একটা গোলাপী জামা পরে খুব মুড মেরে বসে আছে। কি সব চিন্তা করছি ? বাবু নিজেই লজ্জা পেল। চলবে______________________________________ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.