আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পৃথিবীবাসী রয়েছেন একেবারেই সৌভাগ্যের সুতোর ওপর, প্রতীকীভাবে বললে— সৃষ্টিকর্তার দয়ায়। এ নাকি অতিবড় অপ্রিয় সত্য।

পতন দিয়েই আমি পতন ফেরাবো আকাশ থেকে হঠাত্ই নেমে এলো সাক্ষাত্ মৃত্যুদূত। হাজার হাজার পারমাণবিক বোমা যেন এক সঙ্গে বিস্ফোরিত হলো। শুধু মানব সভ্যতা নয়, নিমেষে ধ্বংস হয়ে গেলো প্রাণকূলের প্রায় সবটুকু। এমন দুর্ভাগ্যের সাক্ষী আমাদের হতেই হতে পারে, কবে কখন— তা কেউ বলতে পারে না। এবং তা প্রতিহত করার সাধ্যও খুব সামান্যই আছে মানুষের।

কল্পবিজ্ঞানের রোমহর্ষক গল্পের মতো শোনালেও গত সপ্তাহে নাসা'র প্রধান ঠিক এই সুরেই কথা বলেছেন। আমাদের এ পৃথিবী ভাসছে অসীম শূন্যের ভেতর। প্রতিনিয়ত মহাজাগতিক টুকরো বস্তু আছড়ে পড়ছে পৃথিবীর ওপর। কিন্তু যেহেতু সেগুলো আকারে নগণ্য, তাই তা নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে বায়ুমণ্ডলেই। অথচ অসংখ্য ভাসমান বস্তু, উল্কা বা গ্রহাণু— যে নামেই ডাকি না কেন, প্রতিনিয়ত পৃথিবীর কান ঘেঁষে চলে যাচ্ছে।

তার কিছু কিছু বিনানোটিসে ঢুকেও পড়ছে পৃথিবীর অন্দরে। এই যেমন গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি বিপজ্জনক উল্কাবৃষ্টি হলো রাশিয়ায়। রাশিয়ার চেলিয়াবিন্সক শহরের আকাশ থেকে হঠাত্ই খসে পড়েছিলো ওই মহাজাগতিক পাথরের টুকরো। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ওই পাথরের টুকরো প্রায় ১৭ মিটার ব্যাসের। ওই দিনই সকলের অলক্ষ্যে পৃথিবীর কান ঘেঁ?ষে পার হয়ে যায় গ্রহাণু ২০১২ ডিএ১৪।

গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে স্পেনের লা সাগরা মানমন্দিরের নজরে আসে 'বিপজ্জনক'ওই গ্রহাণুটি। যদিও জ্যোতির্বিদরা হিসেব-নিকেশ করে জানিয়েছিলেন, পৃথিবীর সঙ্গে ধাক্কা লাগার কোনো সম্ভাবনাই ছিলো না ৫০ মিটার দীর্ঘ এই পাথরের টুকরোর। বিজ্ঞানীদের মতে, কয়েকশ' কোটি বছর আগে প্রাণসৃষ্টির পর পৃথিবীতে এ যাবত্ পাঁচবার প্রাণের মহাবিলোপ ঘটেছে। এসব বিলোপের পেছনে গ্রহাণুও দায়ী অনেক ক্ষেত্রে। ধাবমান গ্রহাণু থেকে পৃথিবীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিজ্ঞানীদের ভাবনার শেষ নেই।

অতিসম্প্রতি রং ছিটানোর পদ্ধতি ব্যবহারের কথাও চিন্তা করেছে নাসা। পৃথিবীর সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘর্ষ এড়াতে গ্রহাণুর ওপর রঙের পাতলা আস্তরণ দিয়ে ধ্বংসের সম্ভাবনা ভেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্রের এই মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র। বিজ্ঞানীদের মতে, উচ্চচাপে রঙের গুঁড়ো ছিটিয়ে হালকা আবরণ তৈরি করা হলে গ্রহাণুর সূর্যালোক প্রতিফলনের মাত্রা পরিবর্তিত হবে। এর ফলে তাপমাত্রার হেরফের হবে গ্রহাণুটির দুই পাশের, এবং এক পর্যায়ে এর গতিপথই পাল্টে যাবে। গ্রহাণুর আঘাতহানার ওপর হলিউডের সিনেমার সংখ্যা কম নয়।

সবক্ষেত্রেই আমরা দেখেছি, অল্পের জন্য শেষ মুহূর্তে বিজ্ঞানীরা প্রতিহত করেছেন গ্রহাণুর আঘাতকে। কিন্তু বাস্তবতা নাকি সম্পূর্ণ ভিন্ন। মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসা'র প্রধান চার্লস বোল্ডেন জানিয়েছেন, বড় গ্রহাণু আঘাত হানলে আমাদের বাঁচার কোনো উপায়ই নেই। কারণ অনেক ক্ষেত্রে তা অতি আকস্মিক হতে পারে। তা ছাড়া যেসব পদ্ধতিতে গ্রহাণুকে প্রতিহত করার কথা ভাবা হয়, সে সব ব্যবহারিক ক্ষেত্রে খুব বেশি কার্যকর নয়।

তার মতে, পৃথিবীবাসী রয়েছেন একেবারেই সৌভাগ্যের সুতোর ওপর, প্রতীকীভাবে বললে— সৃষ্টিকর্তার দয়ায়। এ নাকি অতিবড় অপ্রিয় সত্য। গত মাসে রাশিয়ায় উল্কাবৃষ্টির পর নাসা'র পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়েছে বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্য। পৃথিবীর চারপাশ দিয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে যত গ্রহাণু, তার ৯৫ শতাংশই এক কিলোমিটার বা তারও বড়! এমন কোনো গ্রহাণু যদি পৃথিবীর ওপর আছড়ে পড়ে, তা হলে সে দিনই হবে মানবসভ্যতার শেষ দিন। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, প্রায় সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে অন্তত ১০ কিলোমিটার ব্যাসের একটি বিশাল উল্কাখণ্ড মেক্সিকো উপদ্বীপের ওপর আছড়ে পড়েছিলো।

এর ফলেই পৃথিবী থেকে অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছিলো ডাইনোসরেরা। ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো সেই সময়কার প্রায় ৯০ শতাংশ জীব প্রজাতিই। নাসা'র বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, পৃথিবীর চারপাশে যে গ্রহাণুগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে, তার মাত্র ১০ শতাংশ-ই নাকি আকারে ১৬৫ মিটার বা তার চেয়ে বেশি। এমন গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর যদি সরাসরি ধাক্কা লাগে, তা হলে যে কোনো বড় শহর ধ্বংস হয়ে যেতে পারে মুহূর্তে। তবে আশার কথা হলো, এই মাপের গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা হাজার বছরে মোটে একবার।

তারপরও নিজেদের খুব একটা নিরাপদ বলে মনে করছেন না বিজ্ঞানীরা। তবে একটা বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা, এখনও পর্যন্ত এমন কোনো প্রযুক্তিই নেই মানুষের হাতে যার সাহায্যে এমন দুর্ঘটনা এড়ানো যেতে পারে। -দৈনিক ইওেফাক ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।