আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শীতের আগমনে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঐতিহ্য খেজুরের রস ও গুড় তৈরিতে ব্যস্ত গাছিরা

দূরে অাছি......তার্হ ফেরা সহজ....কাছের মানুষ কখনো ফেরে না......... দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে কয়েক দিন ধরে শীত পড়তে শুরু করেছে। আর শীতের মরসুম শুরু হতে না হতেই খেজুর রস আহরণে গাছিরা খেজুরগাছ প্রস্তুত করতে শুরু করেছেন। যারা খেজুরের রস সংগ্রহের উদ্দেশে বিশেষভাবে গাছ কাটায় পারদর্শী স্থানীয় ভাষায় তাদেরকে গাছি বলা হয়। গাছিরা হাতে দা নিয়ে ও কোমরে দড়ি বেঁধে নিপুণ হাতে গাছ চাঁছাছোলা ও নলি বসানোর কাজ করছেন। কয়েকদিন পরই গাছিদের মাঝে খেজুরগাছ কাটার ধুম পড়ে যাবে।

শীত মরসুম এলেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্বত্র শীতে নতুন আয়োজন শুরু হয়। খেজুরের রস আহরণ ও গুড় তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন এ অঞ্চলের গাছিরা। তাদের মুখে ফুটে ওঠে রসালো হাসি। শীতের দিন মানেই গ্রামাঞ্চলে খেজুর রস ও নলেন গুড়ের মৌ মৌ গন্ধ। শীতের সকালে খেজুরের রস যে কতোটা তৃপ্তিকর তা বলে শেষ করা যায় না।

আর খেজুর রসের পিঠা এবং পায়েসতো খুবই মজাদার। এ কারণে শীত মরসুমের শুরুতেই গ্রামাঞ্চলে খেজুর রসের ক্ষীর, পায়েস ও পিঠে খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। প্রতিদিনই কোনো না কোনো বাড়িতে খেজুর রসের তৈরি খাদ্যের আয়োজন চলে। শীতের সকালে বাড়ির উঠোনে বসে সূর্যের তাপ নিতে নিতে খেজুরের মিষ্টি রস যে পান করেছে, তার স্বাদ কোনোদিন সে ভুলতে পারবে না। শুধু খেজুরের রসই নয়, এর থেকে তৈরি হয় সুস্বাদু পাটালি, গুড় ও প্রাকৃতিক ভিনেগার।

নলেন গুড় ছাড়া আমাদের শীতকালীন উৎসব ভাবাই যায় না। এক সময় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ঈশ্বরদী, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা ও জীবননগর, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর, খালিশপুর ও কালীগঞ্জ এবং যশোর খেজুর রস ও গুড়ের জন্য বিখ্যাত ছিলো। খেজুরগাছের রস হতে উৎপাদিত গুড়ের দেশের বিভিন্ন স্থানে চাহিদাও ছিলো ব্যাপক। এসব হাট-বাজার থেকে প্রতিদিন ২/৩ শ ট্রাক ভর্তি গুড় দেশের বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানি হতো। এমন কী দেশ বিভাগের পূর্বে চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর বাজারের খেজুর গুড়ের বিশাল চাহিদা ছিলো নদীয়াসহ কোলকাতা অঞ্চলে।

ওই সময় দূর-দূরান্তের মোকামিরা এসে হাটে হাটে এতো গুড়ের ভাড় গস করতো যে পরপর দু-তিন দিন গরুর গাড়ির উচু খাঁচায় ভরে ভারতের মাজদিয়া বাজারের উদ্দেশে গাড়ির কাফেলা চলতো। গ্রামবাংলার সেই ঐতিহ্য দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের খেজুররস ও গুড় আজ বিলুপ্তির পথে। কারণ ১ কেজি গুড় বানাতে শ্রম ও জ্বালানিসহ গাছিদের খরচ হয় ৩০/৪০ টাকা। আর প্রতি কেজি গুড় বর্তমান বাজারে বিক্রি হয় ৪৫ টাকায়। এ কারণে গাছিরা গুড় বানাতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।

এছাড়া আগের মতো খেজুরগাছ আর নেই। প্রতিদিন ইটভাটায় জ্বালানির কাজে নিধন হচ্ছে এলাকার শ শ খেজুরগাছ। ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গ্রামীণ অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এরপরও গাছিরা তাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কেবল গুড়, সুস্বাদু খাবার ও রসনা তৃপ্তির সুমিষ্ট রসের জন্যই নয়, আমাদের জীবনের প্রয়োজনে, পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় আমাদেরকে খেজুরগাছ বাঁচিয়ে রাখতে হবে . . ............................... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।