আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হীনযানী ফকিরের আম্মা জাহানারা ইমাম

হিন্দু না ওরা মুসলিম ঐ জিজ্ঞাসে কোনজন, কান্ডারি বলো ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা'র “বিশ্বমাতার” ইবাদত ও বিল জেঙ্গোর লগে সাক্ষাৎঃ “Mother Earth, you are my life support system. As a soldier I will drink your blue water, live inside your red clay and eat your green skin. Help me to balance myself as you hold and balance the Earth, the sea and the space environments. Help me to open my heart knowing the universe will feed me. I pray my boots will always kiss your face and my footsteps match your heartbeat. Carry my body through space and time. You are my connection to the universe and all that comes after. I am yours and you are mine. I salute you”. বোধি বৃক্ষের তলে বইসা “যেই লুকেরা ছাগলের দিকে আড়চোক্ষে চাইয়া থাকে” ফিলমের হিপ্পি সৈনিক পুরোহিত ‘বিল জেঙ্গো’র লগে বিশ্বমাতার উদ্দেশ্যে ইবাদত বন্দেগি করতাছিল হীনযানী ফকির। কিন্তু “আমার এই দেহতরিখানা স্থান-কালের মইধ্যে দিয়া পার করে লয়ে যাও মাতা, তুমিই এই জগত আর জগতের অতীত ‘অধরার’ লগে আমার যোগাযোগ সম্বন্ধ” আয়াতখানায় তেলাওয়াত করতে করতে হঠাৎ কইরাই ইবাদতে বাও হাত ঢুকায় কতক জরুরি প্রশ্ন। তেলাওয়াত থামায়া ফকির গলা খাকারি দিয়া কইয়া উঠে “ জয় গুরু বিশ্বমাতার পুরোহিত বিল জেঙ্গো। গুস্তাখি মাফ করলে কয়ডা প্রশ্ন শুধাইতাম”। হাসি দিয়া বিল জেঙ্গো বুকের উপরে পইরা থাকা বেনিখান দুলাইয়া পেছনে নিয়া মাথা ঝাকায়া কয় “কহেন হীনযানী ফকির, আপনের সকল জিজ্ঞাসারে সেলুট”।

দেখাদেখি হীনযানী ফকির নিজের চুলির ঝুটি খুলিয়া মাথায় ঝাকানি দিয়া কইতে থাকে “ ইতিপূর্বে আমার উপরে ওহী নাজেল হইছে যে – "আকালের কালে জন্মা, ওহে হীনযানী ফকির, ওরে ওভাগা, নির্বাণ তোমার কপালে নাই। নিগৃহী হইয়া তুমি নিজের নির্বাণ খোঁজ়ো? কিন্তু তোমার মায়ের শরীর কেন শকুনে খাবলায়? ঘর ছাইড়া জগৎরে তোমার গৃহ বানাইবা? এই জগৎ তোমার গৃহ হইবো না যদি বাঘের লাইগা জঙ্গল না মেলে, না মেলে যদি বাছুরের লাইগা দুধ, গাই যদি না পায় ঘাসের সন্ধান আর চাষার মাঠ যদি নিয়া যায় কর্পোরেট পুরী, এই দুনিয়া তোমার গৃহ হইবো না"। এখন কাহিনী হইল যে এই ওহী মুতাবেক, দেশমাতৃকার কল্যান সাধন না কইরা বিশ্বমাতার ইবাদত আমার লাইগা বেসম্ভব। এই ওহী নাজিল হওয়ার পর থিকা আমি লেংটা ফকির বর্ম গায়ে দিয়া যুদ্ধযাত্রারে তীর্থযাত্রা গণ্য কইরা সেই তীর্থযাত্রায় সামিল আছি। কিন্তু ছোটকালে হযরত মার্ক্স রাসুলুল্লায় ভক্তিস্বরূপ “আন্তর্জাতিকতাবাদ” এখনো ছাড়তে পারলামনাগো।

আবার ওহীপ্রাপ্ত হওয়ায় আপনের লগে ঠিকমতো বিশ্বমাতার ইবাদতও করতে পারলাম না। এখন আমি না হইলাম ঘরের না হইলাম জঙ্গলের। আমার কপালে বুঝি নির্বান নাইগো গুরু। বিল জেঙ্গো জবাবে কয়, “দেখো ফকির, তুমি বড়ই আজিব ফকির। লেংটা ফকির তুমি বর্ম গায়ে ঘুড়িয়া বেরাইতেছো।

কখন কার লগে ধ্যানে বসো, কখন কার লগে বাহাস আর কখন কোন ডম্বির লগে পিরিতি করো তার কোন ঠিক ঠিকানা নাই। তোমারে আমি ডাইকা আমার সাথে বসাইলাম এর লেইগা যে দেখলাম তুমি ফকির বড়ই আজিব, বর্ম গায়ে দিয়া খঞ্জনি বাজায়া গান গাইতে গাইতে পথ চলতাছো। এখন ঘটনা হইছে যে, আমারে এগুলা জিগায়া লাভ নাই, কারন ‘বিল জেঙ্গো’ বইলা তো আসলে কেউ নাই, আমি হলিউডি তৈয়ার। আর যেই লুকের আদলে ডিরেক্টর আমারে বানাইছে সেই লুকেরে কয়দিন আগে টাইম ম্যাগাজিন টাইটেল দিছে ‘পরথম কর্পোরেট শামান’। ওহে হীনযানী ফকির, চিন্তা কইরা দেখোতো, বোধি বৃক্ষের তলে কি আমার বইসা থাকনের কথা? আমার তো বইসা থাকনের কথা পানির টাঙ্কির উপরে, আর পানিতে এলেসডি মিশানের কথা যেন মার্কিন সৈন্যেরা এলেসডি খায়া টাল হয়া ইরাকি বন্দিগোরে ছাইরা দেয়? এইসব এলেসডিখুড়ি কাহিনী কিরূপে সত্য হইত পারে কও”? এই কথা কইয়ায় জেঙ্গো দুই হাত দুই দিকে ছড়াইয়া চিৎ হয়া টাঙ্কির উপরে থিকা নিচে পইরা যায়।

ফকির দেখে কোন বোধি বৃক্ষের তলে বইসা না, সে আসলে খারায়া আছে এক পানির টাঙ্কির উপরে। টাঙ্কির উপরে থিকা নিচে তাকায়া আন্ধারে ফকির কিছু দেখেনা, খালি অন্ধকারের ভিতর থেইকা বিল জেঙ্গোর গলা ভাইসা আসে, “তুমি বড় আজিব ফকির গো, বর্ম গায়ে দিয়া খঞ্জনি হাতে লইয়া তুমি কোন তীর্থযাত্রায় যাও”? পানির টাংকির উপরে খারায়া খারায়া সেই মুহুর্তে হীনযানী ফকির নতুন ওহী প্রাপ্ত হয়। নতুন ওহীঃ ওহে হীনযানী ফকির, আমি অধরার লগে তোমার যোগাযোগ সম্বন্ধ যেমুন এই বিশ্বজগৎ, এই জগৎএর লগে তেমুন তোমার যোগাযোগ সম্বন্ধ হইল বিশ্বমাতা। আর মনে রাইখো বর্ম গায়ে খঞ্জনি হাতে লেংটা ফকির, বিশ্বমাতার লগে যোগাযোগ সম্বন্ধ হইল তোমার দেশমাতা। দেশমাতার লগে যোগাযোগ সম্বন্ধ তুমি কেমনে করবা ফকির ভাইবা দেখো।

‘বহু’র বন্দনা না কইরা ‘এক’রে তুমি কেমনে পাইবা ফকির? যেই হাতে খঞ্জনি বাজে সেই হাতে যদি না উঠে খঞ্জর, ফকির তুমি নির্বান পাইবানা। আলাদা কোন বেহেশত দোযখ তো আমি বানাইনাই। এক হাতে রক্ত বওয়াও ফকির, নরকের আগুনে জ্বালাও পোড়াও। কথা দিলাম, তোমার আরেক হাত থেইকা বইব বেহেশতী নহর। পবিত্র মাতা ও পবিত্র পুত্রঃ জাপান দেশে ভুমিকম্পের পরে ধ্বংসস্তুপের মইধ্যে পাওয়া গেলো এক ‘আম্মা’র লাশ।

সেই আম্মার বুকের ভিতরে নিরাপদে কাপড়ে জড়াইনা পুটলির ভিতর বাইচা ছিল ৩ মাসের সন্তান, লগে একটা চিরকুটে লেখা ‘যেইখানেই থাইকেন আব্বা মনে রাইখেন আপনেরে ভালবাসি’। এই ‘আম্মার’ ইবাদত ছাড়া এই সন্তানের নির্বান নাই। শহীদ আজাদ যখন পাকি মিলিটারির হাতে আটক হইছিল আর তারে সঙ্গী মুক্তিযোদ্ধাগো নামের লাইগা নির্যাতন করা হইতাছিল, তার আম্মা তারে কইছিলেন, “"বাবা রে, যখন মারবে, তুমি শক্ত হয়ে থাকো। সহ্য কোরো। কারো নাম যেন বলে দিও না”।

শহীদ রুমি যখন তার আম্মা জাহানারা ইমামের কাছে দেশমাতার মুক্তির লাইগা যুদ্ধে যাওয়ার অনুমুতি চাইতে গেলেন, তার আম্মা তারে কইল “যা তরে দেশের লাইগা কুরবানি দিলাম”। আজাদের আম্মা পোলারে শেষবারের মতন ভাত না খাওয়াইতে পাইরা জীবনের শেষ ১৪ বছর ভাত খায়নাই, রুমির আম্মা নিজের হাতেরে আল্লাহর হাত বানায়া রাজাকারের গলায় ফাসির দড়ি পরানের লড়াই লড়ছেন মরনের আগ পর্যন্ত। হীনযানী ফকির তেলাওয়াত করে, “ কসম মাতা আইসিস আর পুত্র হোরাসের, কসম মাতা মরিয়ম আর পুত্র ঈসা’র, যেই আম্মা দেশমাত্রিকার ধর্ষকের লগে সঙ্গমে রত হয়, যেই আম্মা নিজের পাপি পুত্রের লাইগা দেশমাত্রিকার অপমান করে, যেই মাতা জাহানারা ইমামের হাতে তৈরি ফাসির দড়িখানা হাতে লইয়া ভোটাভুটির রাজনীতি খেলে, যেই মাতা ভিনদেশী প্রভুর কাছে দেশমাতারে লেংটা কইরা বাজারে তুলে, কসম মাতা জাহানারা ইমাম ও পুত্র রুমি’র, সেই মাতা কোনদিন পবিত্র হইতে পারেনা। সেই মাতা ডাইনিমাতা, পিশাচমাতা এবং সেই মাতার পুত্ররা অপবিত্র যুবরাজ, দুনিয়ায় ইবলিশের অবতার”। পানির টাঙ্কির উপরে থেইকা এইবার নাইমা আসে হীনযানী ফকির।

তার পায়ের নিচে চুপকথা নগরীর রইদে ফাটা খটখটা মাটি। সেই মাটিতে বইসা আছে একটা বাঘের বাচ্চা, একটা বাছুর আর একটা মানুষ। এই বাঘের বাচ্চাটা প্রত্যেকদিন এক ডাইনি বুড়ির বানাইনা ফাসির দড়ির রিংএর ভিতর দিয়া লাফালাফি খেলে, বাছুরটা প্রত্যেকদিন এক পিশাচিনীর চোক্ষের পানি খাইয়া দুধের তৃষ্ণা মিটায়, আর মানুষটা সকাল থেইকা সন্ধ্যা পর্যন্ত দৌড়ের উপরে থাকে দানবের ছুড়ির হাতের থিকা বাচার লিগা। আর সন্ধ্যা হইলে এরা তিনজনে আইসা এই পানির টাঙ্কির সামনে বইসা থাকে। কে জানি তাগোরে কইছে ফাসির দড়িতে রিং লাফ খেললে, পিশাচিনীর চোক্ষের পানি খাইলে আর কোনরকমে দানবের ছুড়ির হাত থেইকা বাইচা থাকতে পারলেই হইল, একদিন না একদিন এই পানির টাঙ্কি ফাইটা এই খটখটা শুকনা মাটিতে বেহেশতি নহর বইবো।

হীনযানী ফকির তেলাওয়াত করে, "চুপকথা নগরীতে চুপ থাকা আইন বলে, চিৎকার, শিৎকার আর প্রার্থনায় থাকো বেঁচে, রক্ত বেচে, ইজ্জত, মায়ের গতর বেচে থাকো সুখে। চুপকথা নগরীতে কথা বলবে শুধু, বাচাল ডাইনি আর রক্তখোড় দানবেরা, শিকারী যুবরাজরা নামবে মানব শিকারে, বাঘ আর বাছুরেরা হয়ে গেলে শেষ। চুপকথা নগরীতে, বিষাক্ত বৃষ্টি নামবে পিশাচীর কান্নায়, ভুত আর দানবের তান্ডব নৃত্য হবে একমাত্র সুস্থ্য বিনোদন, শিকারী যুবরাজরা নামবে মানব শিকারে। চুপকথা নগরীতে, চুপ থাকা আইন বলে, লাঙল খুইয়ে তুমি খুঁজবেনা, কাধের জোয়াল আর পায়ের শেকল আশির্বাদ মেনে বেঁচে থাকো সুখে” তারপরে হীনযানী ফকির হাত থেইকা খঞ্জনিখানা ছুইড়া ফালায়। খটখটা শুকনা মাটিতে সেই খঞ্জনি পইড়া নতুন দিনের বাজনা বাজে।

ফকির এইবার বাঘের বাচ্চা, বাছুর আর মানুষটার সামনে মাটিতে গাইথা থাকা ঝকঝকা ধারওয়ালা একটা খঞ্জর হাতে তুইলা লয়। শহীদের রক্ত, বিরাঙ্গনার চোক্ষের পানি, সন্তান ফেরত না আসা মায়ের বুকের অমিয় সুধা, নিস্পাপ মরা শিশুর হাসিতে এক সাথে মিলামিশা এই খঞ্জরের জন্ম হয়িছে। নিজেগো চোক্ষের সামনে থাকা সত্ত্বেও বাঘের বাচ্চা, বাছুর আর মানুষটা এই খঞ্জরটা এতদিন দেখে নাই। খঞ্জর হাতে হীনযানী ফকির চিল্লান দিয়া ঘোষনা করে, “আমার আম্মা জাহানারা ইমাম”। সন্ধার সূর্য্য আরো লালে লাল হয়।

ফকির দেখে, সেই লাল কিরণের ভেতর রুমি, আজাদ আর বহু নাম না জানা শহীদএর ‘মিম’ শরীর বিকির্ণ হইতাছে। সেই বিকিরণে গোসল করে ফকির, নিজের শরীরএর জীন এর ভেতরে রুমির ‘মিম’ শরীর বিলিন হওয়া দেখতে দেখতে ফকির টের পায় দেশমাতা তার গায়ে হাত বুলায়া দিতাছে। দেশমাতার সেই হাতের পরশে ক্ষনিকের লাইগা হইলেও বিশ্বমাতার ডাক যেন শুনতে পায় হীনযানী ফকির, ক্ষনিকের লাইগা হইলেও জগৎ সংসার আর তার অতীত অধরার সাথে একাকার বোধ করে হীনযানী ফকির। ‘মিম’ কিরনে গোসল শেষে হীনযানী ফকির অতীব আনন্দে ঘোষনা করে, “আমার আম্মা জাহানারা ইমাম”। বর্ম গায়ে লেংটা ফকির এইবার ঝকঝকা ধারালো খঞ্জর হাতে সামনের দিকে হাটা শুরু করে।

রাজাকারের রক্তে যদি না হয় তৈরি নদী, এই খটখটা মাটিতে তাইলে বইবোনা বেহেশতি নহর। বাঘের বাচ্চা, বাছুর, আর মানুষটা চাইয়া চাইয়া হীনযানী ফকিরের তীর্থযাত্রা দেখে। রাজাকারের সংজ্ঞা নতুন কইরা না শিখা পর্যন্ত, মাতৃদেবীর ইবাদতে আত্মসমর্পন না করা পর্যন্ত তাগো তীর্থযাত্রা শুরু হইবোনা। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।