আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যুদ্ধাপরাধীদরে পক্ষে প্রকাশ্যে সাফাই : এবার থলের বেড়াল বের করলনে খালদো জিয়া

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হঠাৎই সোচ্চার হয়ে ওঠা সচেতন মহলকে বিস্মিত করেছে। ক্ষোভ ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে। তারা বলছেন, যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার গাঁটছড়া নতুন নয়। তবে অতীতে এ নিয়ে কিছুটা রাখঢাক করলেও এবার প্রকাশ্যে অবস্থান নেয়ায় খালেদার থলের বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে। [/sb যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দল স্বাধীনতা বিরোধী জামাত-শিবিরের সঙ্গে বিএনপি তথা খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক মৈত্রী দীর্ঘদিনের।

তার স্বামী প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানই প্রথম এদেশে স্বাধীনতাবিরোধী জামাত-মুসলিম লীগকে রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসিত করেন। এমনকি কুখ্যাত স্বাধীনতাবিরোধী শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী করা ছাড়াও অনেক যুদ্ধাপরাধীকে মন্ত্রীও করেন জিয়াউর রহমান। খালেদা জিয়া বিএনপির নেতৃত্বে আসার পর এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। অনেক চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীকে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত করেন তিনি। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে স্বাধীনতাবিরোধী জামাতে ইসলামের সঙ্গে সমঝোতা করে প্রথমবার নির্বাচনী বৈতরণী পার হন খালেদা জিয়া।

সেবার তার মন্ত্রিসভায় স্থান পায় রাজাকার মতিনসহ একাধিক যুদ্ধাপরাধী। ২০০১ সালে স্বাধীনতাবিরোধী জামাতের সঙ্গে প্রকাশ্য নির্বাচনী জোট গড়ে আবারো ক্ষমতায় আসেন খালেদা জিয়া। মন্ত্রিসভায় স্থান দেন শীর্ষ দুই যুদ্ধাপরাধী জামাতের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদকে। আরেক শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে করেন সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা। ২০০৮ সালেও যুদ্ধাপরাধী জামাতকে জোটে নিয়ে নির্বাচন করে বিএনপি।

কিন্তু এবার ফল হয় বুমেরাং। নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবির অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে দলটির মিত্রতাকে। এতে অবশ্য শিক্ষা হয়নি বিএনপি নেতৃত্বের। আবারো বিএনপি-জামাত জোট সংহত করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন খালেদা জিয়া। এ নিয়ে দলের ভেতরে একটি অংশ নাখোশ বলে জানা গেছে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, দল হিসেবে অতিমাত্রায় জামাত নির্ভর হয়ে পড়েছে বিএনপি। মূলত যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতে জামাতের চাপেই তাড়াহুড়ো করে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করেছেন খালেদা জিয়া। এর প্রতিফলন দেখা যায় তার সাম্প্রতিক বক্তৃতা-বিবৃতিতেও। গত সোমবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ রোডমার্চের পথে বগুড়ায় এক জনসভায় যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, এটা বিচার নয়, প্রহসন। চার দলকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য সরকার এই বিচার করছে।

এজন্য নিজামী সাহেব, মুজাহিদ, সাঈদী ও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে বিভিন্ন সময় খালেদা জিয়াসহ বিএনপি নেতারা বলে এসেছেন, ‘আমরা যুদ্ধাপরাধ বিচারের বিপক্ষে নই। তবে বিচার প্রক্রিয়া হতে হবে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ। ’ কিন্তু এবার আর কোনো রাখঢাক করলেন না খালেদা জিয়া। যুদ্ধাপরাধ বিচারের সরাসরি বিরোধিতা করে তিনি বলেন, নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদী ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী যুদ্ধাপরাধী তো নয়ই; স্বাধীনতাবিরোধীও নয়।

অবিলম্বে তাদের মুক্তি দিতে হবে। তার এ বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ও সচেতন মহলে। তারা বলছেন, খালেদা জিয়া যে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতেই আন্দোলনে নেমেছেন তা স্পষ্ট হয়ে গেলো। মুক্তিযুদ্ধের উপ-প্রধান সেনাপতি সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের চেয়ারম্যান ও পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার বলেছেন, বিরোধীদলীয় নেত্রী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছেন। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন।

যে কারণে তার নামও যুদ্ধাপরাধীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে বিএনপি নতুন আরেকটি যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা নতুন প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে তাদের প্রতিহত করবো। এ কে খন্দকার বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সে লক্ষ্যে তরুণ প্রজন্মকে পাহারা বসাতে হবে। লাখ লাখ নিরীহ মানুষ হত্যাকারী সেই পাকিস্তানের দালালরা স্বাধীনতার ৪০ বছর পরেও মুক্তি পাবে এটা কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না।

যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে এ বিষয়ে সংযত হয়ে কথা বলার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পরামর্শ দিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তিনি একজন জনপ্রতিনিধি এবং সংসদ সদস্য। এ রকম দায়িত্বহীন বক্তব্য জনগণ বিরোধীদলীয় নেত্রীর কাছে আশা করে না। খালেদার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য সুরঞ্জিত বলেন, আপনি কী সার্টিফিকেট বিতরণ করছেন, কে যুদ্ধাপরাধী আর কে যুদ্ধাপরাধী নয়? ৩০ লাখ মানুষের মৃত্যু কি মিথ্যা? দুলাখ মা বোনের সম্ভ্রম হারানো কি মিথ্যা? আপনার যদি তাদের হয়ে সাফাই গাইতে হয়, তাহলে রোডমার্চে নয়, আদালতে যান। যুদ্ধাপরাধের বিচার একটি স্পর্শকাতর বিষয় উল্লেখ করে এক্ষেত্রে সত্য, আইন ও সংবিধানের ভিত্তিতে কথা বলার আহ্বান জানিয়ে সুরঞ্জিত বলেন, এগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া বেশি করলে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে যেতে পারে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ রোডমার্চে বিএনপির চেয়ারপারসন সরকারের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করেছেন উল্লেখ করে ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা বলেন, আপনি বলেছেন, যুদ্ধ করবেন। কাদের সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধ করবেন? এই রাজাকার, আলবদরদের সঙ্গে নিয়ে? তারা তো আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে। আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি, তারা পাকিস্তান হারিয়েছে। এদের নিয়ে যুদ্ধ করলে জয়ী হওয়া যাবে না, পরাজিতই হতে হবে। কারণ পরাজিত শক্তি কখনো জয়ী হতে পারে না।

খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধের বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন দেশের জনগণ তাতে বিস্মিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম। খালেদার উদ্দেশে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হয়ে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে প্রকাশ্যে কথা বলছেন, এতে দেশের জনগণ বিস্মিত হয়েছে। এমনকি বিএনপির মধ্যেও যারা মুক্তিযোদ্ধা আছে তারাও লজ্জিত হচ্ছেন। জামাতের পরামর্শেই খালেদা জিয়া আন্দোলনে নেমেছেনÑ এ মন্তব্য করে নাসিম বলেন, আন্দোলনের ভয় দেখিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক জামাত-বিএনপি নেতাদের মুক্তি দাবি করে খালেদার বক্তব্য প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বলেন, তিনি যা বলেন তা বুঝে বলেন কি না সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

খালেদা জিয়া নিজামী, সাঈদীসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের মুক্তি চান এটা স্বাভাবিক। কারণ এটা প্রমাণিত যে, কারা খুনিদের রক্ষা করে, খুনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে এবং জঙ্গীবাদকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়। টুকু দাবি করেন, খালেদা জিয়া পরিকল্পিতভাবে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিদের দ্বারা দেশ চালাতে চান। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জনকে মিথ্যায় পরিণত করতেই বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়েছেন। বিএনপি-জামাত জোটের আন্দোলন- রোডমার্চ জনগণের স্বার্থে নয়, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায়।

একাত্তরের ঘাতকদের বাঁচাতেই খালেদা জিয়া রোডমার্চ করছেন বলে মন্তব্য করেছেন আইন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, একাত্তরের ঘাতকদের বিচার হোক খালেদা জিয়া তা চান না। তাই আমরা যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছি তিনি তখন তাদের বাঁচানোর জন্য মাঠে নেমেছেন, রোডমার্চ করছেন। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার জন্য কাজ করছি। আর খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ধ্বংস করার চেষ্টা করছেন।

এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতে নয়, বরং দেশরক্ষার জন্যই তারা আন্দোলনে নেমেছেন। ফখরুল বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই- যুদ্ধাপরাধের বিচার বিএনপিও চায়। আমাদের অবস্থান যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে। তবে সেই বিচারের প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী হতে হবে। খালেদার বক্তব্যের পক্ষে সাফাই গেয়ে তিনি বলেন, ম্যাডামের পুরো বক্তব্যটি আপনাদের অনুধাবন করতে হবে।

নিজামী সাহেবদের গ্রেপ্তারের পদ্ধতি কি সঠিক ছিল? অন্য অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা মনে করি, জামাত নেতাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন- ইত্যাদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রমাণ থাকলে অবশ্যই তাদের বিচার হতে হবে। গত বছরের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকে এ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারী দল জামাতের আমির মতিউর রহমান নিজামীসহ দলটির ৫ শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া এ মামলায় কারাগারে আছেন সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ বিএনপির ২ নেতা। এদের অধিকাংশকেই প্রথমে অন্য মামলায় গ্রেপ্তার করে পরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় বলে উল্লেখ করেন মীর্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, পুরো বিচার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যাদের ট্রাইব্যুনালে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তাদের অতীত পরিচয় কী? আমরা মনে করি- যুদ্ধাপরাধের বিচার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক হলে বিচারের মূল বিষয় ব্যাহত হবে। যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনাল নিরপেক্ষ নয় বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব। জামায়াতের নেতারা যুদ্ধাপরাধী কি না- এ প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, আমি রাজনীতি করি। ইয়েস-নো কিছুই বলব না আমি।

Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।