আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফিল্ড মার্শাল শ্যাম মানেকশ' কে মনে আছে ? - ফিল্ড মার্শাল সিরিজ : ১

The revolution is not an applethat falls when it is ripe. You have to make it fall. ফিল্ড মার্শাল মানেক শ' মানেক শ' ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রথম ফিল্ড মার্শাল। পুরো নাম শ্যাম হরমুসজী ফ্রামজী জামসেদজী মানেক শ',ধর্মীয় বিশ্বাসে তিনি ছিলেন জরথুন্ত্রবাদী। ভারতে যাদের পার্শি বলে অভিহিত করা হয়। ক্ষুদ্র এই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়টি ভারতের ব্যবসা-বাণিজ্য ও রাজনীতিতে সবসময়ই বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। ভারতীয় কংগ্রেসের অবিসংবাদিত নেতা দাদা ভাই নওরোজী ছিলেন পার্শি সম্প্রদায়ের লোক।

ভারতের শিল্প জগতের পথিকৃৎ জামসেদজী টাটাও এই সম্প্রদায়ের লোক। নেহেরুকন্যা ইন্দিরা গান্ধীর স্বামী ফিরোজ গান্ধীও ছিলেন পার্শি সম্প্রদায়ের। বিশ্ব পরিসরে অসাধারণ মেধাসম্পন্ন সামরিক কমান্ডার হিসেবে যাদের নাম বলা যায় মানেক শ' তাদেরই একজন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে তিনি গুরুতর আহত হন। তার পাকস্থলী গুলিবিদ্ধ হয়।

তারপরও তিনি বেঁচে যান প্রায় অলৌকিকভাবে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মাত্র ১৪ দিনে বহুসংখ্যক পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করার অসামান্য কৃতিত্ব দেখিয়েছেন তিনি। এ যুদ্ধে 'সাইকোলজিক্যাল ওয়াপন' বা 'মনস্তাত্তি্বক অস্ত্র' ব্যবহার করে মানেক শ' অবিশ্বাস্য সাফল্য দেখান। বলা যায়, অস্ত্র ছাড়াই পাকিস্তানি বাহিনীকে মনস্তাত্তি্বক দিক থেকে পরাজিত করে তাদের আত্দসমর্পণে বাধ্য করেন তিনি। দুনিয়ার সামরিক ইতিহাসে যা একটি নজিরবিহীন ঘটনা বলেই বিবেচিত।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে হেলিকপ্টার ও যুদ্ধ বিমান থেকে পাকিস্তানি সৈন্যদের উদ্দেশে লিফলেট ছেড়ে মানেক শ' এ মনস্তাত্তিক যুদ্ধ শুরু করেন। লিফলেটে বলা হয়, পাকিস্তানি বাহিনী চারদিক থেকে ঘেরাও হয়ে পড়েছে। তারা আত্দসমর্পণ না করলে চড়া মূল্য দিতে হবে। মানেক শ'র এ কৌশল পাকিস্তানিদের মনোবল ভেঙে দেয়। এক সময় তারা আত্মসর্পণে বাধ্য হয়।

ডাকসাইটে জেনারেল, সেনাপ্রধান এবং ফিল্ড মার্শাল পদে অধিষ্ঠিত হলেও মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন সোজা সরল এবং রসিক। একাত্তরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার কয়েকদিন আগে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী মানেক শ'কে জিজ্ঞেস করেন_ 'জেনারেল আপনি কি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত?' তিনি জবাব দিয়েছিলেন_ আমি সবসময় প্রস্তুত সোনামনি! ইন্দিরা গান্ধী এই রসিকতায় অসন্তুষ্ট হননি। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ তাকে হিরোতে পরিণত করে। এক সময় রটে যায় মানেক শ' ভারতের ক্ষমতা দখলের পাঁয়তারা করছেন। তার ঈর্ষাকাতর সহকর্মীরা হয়তো এমনটি রটিয়েছিলেন।

এক পর্যায়ে সেনাপ্রধানকে ডেকে পাঠান ইন্দিরা। তাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করেন, তিনি দেশের ক্ষমতা অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করছেন কিনা। এর জবাবে মানেক শ' নিজের উঁচু নাকের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে বলেন, অন্যের ব্যাপারে নাক গলাতে আমি এটাকে ব্যবহার করি না। রসিক অথচ স্পষ্টভাষী মানেক শ' ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে পারে না_ তা ইন্দিরা গান্ধী সহজেই বুঝে ফেলেছেন। একজন ভারতীয় এবং ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হলেও এই ফিল্ড মার্শাল বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে স্থান পাবেন যুগ যুগ ধরে।

মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর প্রধান হিসেবে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে তিনি যে অবদান রেখেছেন তা এ দেশের ইতিহাসে অনন্তকাল ধরে লেখা থাকবে। ফিল্ড মার্শাল শ্যাম মানেকশ'শ এবং জেনেরাল অরোরা, ৭১ এর যুদ্ধের সময় একটি ট্রেঞ্চে এ । বাংলাদেশের মানুষকে তিনি মনেপ্রাণে ভালোবাসতেন। অন্ততপক্ষে এ দেশের একজন অতি সাধারণ মানুষের কাছে তিনি ছিলেন আজীবন ঋণী। এ লোকটির নাম রওশন আলী।

স্বাধীনতার পর তিনি বঙ্গভবনে খানসামা পদে কাজ করতেন। ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির স্পেশাল অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন বিশিষ্ট কবি ও কথা-সাহিত্যিক মাহবুব তালুকদার। তিনি তার 'বঙ্গভবনে পাঁচ বছর' নামের স্মৃতিচারণমূলক বইতে এ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। ১৯৭২ সালের ২৭ নভেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ভারত সফরে যান। ওইদিন সন্ধ্যায় ভারতীয় রাষ্ট্রপতি ভিপিগিরি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সম্মানে রাষ্ট্রীয় ভোজের আয়োজন করেন।

প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং সিনিয়র মন্ত্রীরাও ভোজসভায় অংশ নেন। সেনাপ্রধান জেনারেল মানেক শ' এতে উপস্থিত ছিলেন। কালো স্যুট পরা দীর্ঘদেহী জেনারেল মানেক শ' ভোজসভার এক প্রান্তে একা দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি মানেক শ'র সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য তার কাছে যান ও নিজের পরিচয় দেন। কথা প্রসঙ্গে মানেক শ' জানতে পারেন মাহবুব তালুকদার বঙ্গভবনে কর্মরত।

তাকে জিজ্ঞেস করেন রওশন আলীকে চেনেন কিনা। মাহবুব তালুকদার বিস্ময়াভূত হয়ে ভারতীয় সেনাপ্রধানকে প্রশ্ন করেন, আপনি তার নাম জানেন কিভাবে? মানেক শ' বলেন, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় তিনি আসাম রাইফেলের ক্যাপ্টেন হিসেবে যুদ্ধ করেছেন। রওশন আলী ছিল তার সহযোদ্ধা, যুদ্ধে মানেক শ' গুরুতর আহত হন। সে সময় যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তাকে তুলে এনে রওশন আলী প্রাণে রক্ষা করেন। যে কারণে তাকে তিনি কোনোদিনই ভুলতে পারেন না।

ফিল্ড মার্শাল মানেক শ' মহৎপ্রাণ মানুষ ছিলেন বলেই একজন ব্যাটসম্যানের কথা আজীবন মনে রেখেছেন। বড় মাপের মানুষ হিসেবে উদারতা ও মহানুভবতা তার ভূষণে পরিণত হয়েছিল। সূত্র: বিডিপ্রতিদিন এবং উইকি  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.