আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ পাবে পুলিশ

পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা তাঁদের নিয়মিত কাজের পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরি করতে পারবেন। তাঁরা কোনো অপরাধ করলে সরকারের অনুমতি ছাড়া মামলা করা যাবে না। আবার অপরাধের পর ছয় মাস পেরিয়ে গেলেই তা নিয়ে আর কোনো অভিযোগই করা যাবে না। পুলিশ বাহিনীর জন্য থাকবে দুটি পৃথক তহবিল। যে কেউ সেই তহবিলে অনুদান দিতে পারবেন।

এসবসহ আরও অনেক নতুন বিষয় সংযুক্ত করে প্রস্তাবিত পুলিশ আইনের খসড়া করেছে পুলিশ সদর দপ্তর।
প্রস্তাবিত এ আইনটি গত ৮ এপ্রিল পুলিশ সদর দপ্তরের পরিকল্পনা ও গবেষণা শাখা থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
খসড়ার প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, পুলিশ বাহিনীকে যুগোপযোগী ও সেবার মান আরও উন্নত করার লক্ষ্য নিয়ে এ নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন, প্রস্তাবিত আইনটি কার্যকর হলে অনেক কিছুই মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকবে না। আর পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করেন, মন্ত্রণালয়ের বাধার কারণেই এ আইন হচ্ছে না।


পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এএসএম শাহজাহান এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে স্বচ্ছতা এবং পুলিশের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব বন্ধ করা না গেলে কোনো কিছু করে লাভ হবে না। এ জন্য পুলিশ আইন সংস্কার করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
তবে এ বিষয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান প্রথম আলোকে বলেন, মূলত দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ নিয়োজিত। যদি আইনে এ দায়িত্বের পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরির বিধান রাখা হয় তাহলে পুলিশের নৈতিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে কোনো অপরাধে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করার বিধান রাখা হলে ভুক্তভোগীরা ন্যায্য বিচার থেকে বঞ্চিত হবেন।


পুলিশ বাহিনীকে যুগোপযোগী করতে ২০০৭ সালে প্রথম পুলিশ আইনের খসড়া প্রস্তুত করা হয়। এরপর থেকে মন্ত্রণালয় ও পুলিশ দপ্তরের মধ্যে ফাইল চালাচালি ও অসংখ্য বৈঠক হয়। সভা-সেমিনার করে সাধারণ জনগণের মতামতও নেওয়া হয়। মন্ত্রণালয় থেকে বারবার অভিযোগ করা হয়, এ আইনে পুলিশকে বেশি করে ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। এসব জটিলতায় আইনটি আর এগোতে পারেনি।


এ বছরের প্রথম দিকে নতুন করে খসড়া তৈরির জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান মোখলেসুর রহমানকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করে পুলিশ সদর দপ্তর। কমিটির সদস্য ছাড়াও ২০ সদস্যের একটি পুলিশ দল প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
জানতে চাইলে পুলিশ আইন প্রণয়ন কমিটির প্রধান ও পুলিশ সংস্কার প্রকল্পের পরিচালক মোখলেসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ বাহিনীর দীর্ঘদিনের দাবি দেড় শ বছরের আইনটি সংস্কার হোক। আমরা চাই কোনো কিছু নিয়ে আপত্তি থাকলে তা বাদ দেওয়া হোক। কিন্তু আইনটি যেন করা হয়।


কেমন হবে পুলিশ প্রশাসন: খসড়ায় বলা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পুলিশ বিভাগ থাকবে। পুলিশ বাহিনীর প্রধান হবেন, চিফ অব পুলিশ। তাঁর অধীনে থাকবেন ইন্সপেক্টর জেনারেল, অতিরিক্ত ইন্সপেক্টর জেনারেল, ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল থেমে শুরু করে সব কর্মকর্তা। পুলিশের সার্বিক ব্যবস্থাপনা, প্রশাসন,পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা থাকবে চিফ অব পুলিশের হাতে। চিফ অব পুলিশ এবং ইন্সপেক্টর জেনারেলেরা ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পাবেন।

এই ক্ষমতা তাঁরা সহকারী পুলিশ সুপারদের পর্যন্ত অর্পণ করতে পারবেন। পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের দেশের ভেতরে বা বাইরে যেকোনো পদে কিংবা বিভাগে বদলি করা যাবে। তবে এই আইনের বিধানের সঙ্গে সংগতিহীনভাবে সরকার কোনো ব্যক্তি, কর্মকর্তা, কর্তৃপক্ষ বা আদালতকে কোনো পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা দিতে পারবে না। চিফ অব পুলিশ পদাধিকার বলে আইন বা বিধিমতো, সরকারের সিনিয়র সচিব বা সচিবকে দেওয়া আর্থিকসহ সব ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন।
নীতিনির্ধারণ: চিফ অব পুলিশ জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি নীতিনির্ধারিত গ্রুপ গঠন করবেন।

এই গ্রুপ পুলিশ গবেষণা ব্যুরোর সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় করবে। পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি, তদন্ত ও অপরাধ প্রতিরোধ কৌশল, প্রশিক্ষণ, পরিচালক, মানবসম্পদ উন্নয়ন, কৌশল পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সিদ্ধান্ত নেবে।
আর্থিক অপরাধ: ২৭ ধারায় বলা হয়, প্রচলিত অন্য কোনো আইনে যা কিছু থাকুক না কেন ন্যূনতম দ্বিতীয় শ্রেণীর একজন পুলিশ কর্মকর্তা সরকারের সাধারণ বা বিশেষ আদেশে অর্থ আত্মসাৎ, অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ এবং মানি লন্ডারিংসহ যেকোনো অর্থনৈতিক অপরাধের তদন্ত ও প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে পারবেন। বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশন ও আর্থিক নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান এ ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকে।
বেসরকারি চাকরি: দ্বিতীয় পেশা হিসেবে অন্য চাকরি করতে পারবেন পুলিশ সদস্য।

তবে এটা যেন পুলিশি কার্যক্রমের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয়।
বিশেষ পুলিশ নিয়োগ: চিফ অব পুলিশ বা অন্য ইউনিটের প্রধানকে সহায়তার জন্য চুক্তি ভিত্তিতে আইন কর্মকর্তা বা বিশেষজ্ঞ হিসেবে যে কাউকে নিয়োগ দেওয়া যাবে। আবার পুলিশ কমিশনার, জেলা পুলিশ প্রধান বা চিফ অব পুলিশ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে যেকোনো ব্যক্তিকে বিশেষ পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবেন। বিশেষ পুলিশ হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিরা সরকারি নিয়মে বেতন-ভাতা পাবেন। তিনি কীভাবে কাজ করবেন তা চিফ অব পুলিশ নির্ধারণ করে দেবেন।

তবে দুই বছরের বেশি কাউকে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। পুলিশের দায়িত্ব পালনে অস্বীকার দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য হবে।
তহবিল: পুলিশের জন্য দুটি তহবিল গঠন করার কথা বলা হয়েছে। এর একটি হলো জননিরাপত্তা তহবিল আর অপরটি কল্যাণ তহবিল। বিভিন্ন মানুষ ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অনুদানে এসব তহবিল তৈরি হবে।

৫৭ ধারায় বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি সংস্থা (এনজিও), সাধারণ জনগণের অনুদান ট্রাফিক পুলিশ থেকে পাওয়া জরিমানার টাকার অংশ এই তহবিলে জমা থাকবে। তহবিলটি কখনো খালি করা যাবে না। থানা পুলিশের উন্নয়ন, ট্রাফিক পুলিশের সেবার মান বাড়ানো, ভালো কাজের জন্য পুলিশকে পুরস্কার দিতে এ অর্থ ব্যয় করা হবে। কোনো খাতে সরকারি অর্থ না থাকলে এ টাকা সেই খাতে ব্যয় করা যাবে।
এ ছাড়া ৫৪ ধারায় বলা হয়েছে, পুলিশ সদস্যদের সার্বিক কল্যাণে পুলিশ কল্যাণ ব্যুরো গঠিত হবে।

এতে পুলিশ কল্যাণ তহবিল সৃষ্টি করা হবে। তহবিল গঠিত হবে সরকারি বরাদ্দ, পুলিশদের চাঁদা এবং পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট ও অন্যান্য সংস্থার অনুদান দিয়ে।
পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা: ৬২ ধারায় বলা হয়েছে, সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোনো পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ কোনো আদালত গ্রহণ করতে পারবে না। আবার ঘটনার ছয় মাস পার হয়ে গেলে সেই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা যাবে না। মামলা করতে হলে দেওয়ানি আইনের ৮০ ধারা অনুসারে আগে নোটিশ করতে হবে।

সেই নোটিশের জবাবের পরই মামলা করা যাবে।
বিদ্রোহ: এই প্রথমবারের মতো পুলিশ বাহিনীতে বিদ্রোহের ধারা সংযোজিত হচ্ছে। ৬৩ ধারায় বলা হয়েছে, সরকার বা পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে, উৎসাহ দিলে, সহায়তা করলে বা বিদ্রোহের কথা জেনে গোপন করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।