আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খণ্ডকালীন শিক্ষকের ছড়াছড়ি মালিকদের রয়েছে ভুয়া ডিগ্রি

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানের শিক্ষক চার গুণ বেতনে দুই বছরের শিক্ষাছুটি নিয়ে নর্দান ইউনিভার্সিটিতে ফুলটাইম পড়ান। ছুটি শেষ হলেই আবার ফিরবেন বুয়েটে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক পড়ান প্রাইম ইউনিভার্সিটিতে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক পড়ান প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটিতে। চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটির আরেক ইংরেজির শিক্ষক পড়ান আন্তর্জাতিক ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ধরনের অসংখ্য খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়েই চলছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা। তবে অভিযোগ রয়েছে, কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে জেঁকে বসেছেন ভুয়া ডিগ্রিধারী শিক্ষক। তারা আউটার ক্যাম্পাসের পরিচালক বা ক্যাম্পাস দখলে নিয়ে নামের আগে বসিয়েছেন অধ্যাপক ও ডক্টরেটের খেতাব। এসব ডিগ্রিধারীর শিক্ষাজীবনে তৃতীয় শ্রেণী পাওয়া বিএ পাসের সনদ থাকলেও অনেকে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জোগাড় করেছেন উচ্চ ডিগ্রির সনদ। তারা পেশায় 'শিক্ষা ব্যবসায়ী' হয়েও নামের আগে অধ্যাপক কিংবা ডক্টর লিখতে ভালোবাসেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার পাঠদান হচ্ছে প্রভাষক মর্যাদার শিক্ষক দিয়ে। প্রতিষ্ঠানগুলোয় বিভাগপ্রতি নেই উচ্চ ডিগ্রিধারী জ্যেষ্ঠ শিক্ষক।

নিয়মমতে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগে ন্যূনতম একজন অধ্যাপক কিংবা সহযোগী অধ্যাপক ও তিনজন প্রভাষক রাখা বাধ্যতামূলক। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। এসব প্রতিষ্ঠানে বিভাগ আছে তবে নেই অধ্যাপক কিংবা সহযোগী অধ্যাপক।

থাকলেও তা হাতে গোনা মাত্র দু-একটি প্রতিষ্ঠানে রয়েছে। এদিকে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ইংরেজি সাহিত্যের একজন শিক্ষার্থী জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের একাধিক শিক্ষক তাদের পড়ান। ক্লাস শেষেই শিক্ষকরা চলে যান। ইউনিভার্সিটির নিজস্ব শিক্ষক হলে যে কোনো সময় তাদের পাওয়া যায়। কিন্তু বিষয়ভিত্তিক কোনো সমস্যা হলে বাইরের শিক্ষকদের সাক্ষাৎ সহজে মেলে না।

কারণ একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্যই তারা পড়াতে আসেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ২০১২ সালের প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ৬০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্বক্ষণিক শিক্ষক ৮ হাজার ১৭৮ ও খণ্ডকালীন ৩ হাজার ৯৩৫ জন। জানা গেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকের সংখ্যা ৬২৩ ও খণ্ডকালীন ১ হাজার ৬৬ জন। এ ছাড়া সার্বক্ষণিক শিক্ষকের তালিকাজুড়েই রয়েছে প্রভাষকদের আধিপত্য। ইউজিসির প্রতিবেদনে উল্লেখিত সার্বক্ষণিক শিক্ষক ৮ হাজার ১৭৮ জনের মধ্যে ৫ হাজার ২৬৪ জনই প্রভাষক।

আর খণ্ডকালীন প্রভাষকের সংখ্যা মাত্র ১ হাজার ২৭৪ জন। ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী বলেন, বর্তমানে দেশে ৭৮টি বেসরকারি আর ৩২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খণ্ডকালীন শিক্ষক পার্টটাইম আনতেই হয়। কারণ এখন পর্যন্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত অভিজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগ করা সম্ভব হয়নি। তা ছাড়া এক দিনে একজন শিক্ষক অধ্যাপক হতে পারেন না।

তাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকের অভাব রয়েছেই। শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, পাবলিক ইউনিভার্সিটির বেতন দিয়ে একজন শিক্ষকের সংসার চলে না। সংসারটা একটু ভালোভাবে চালাতেই তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে যান। এটা দোষের কিছু নয়। তা ছাড়া প্রতিটি পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে বিভাগভিত্তিক কো-অর্ডিনেশন ডেভেলপমেন্ট কমিটি আছে।

কর্মস্থলে অর্পিত দায়িত্ব পালনের পর শিক্ষকরা অনুমতি নিয়ে পড়াতে যান। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, সার্বক্ষণিক একজন অধ্যাপক লাখ টাকার নিচে বেতন নিতে রাজি হন না। এর অর্ধেক খরচে একজন অধ্যাপককে অনায়াসে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে পাওয়া যায়। সে সুযোগটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কাজে লাগায়।

তিনি বলেন, গোটা দেশেই অধ্যাপকের অভাব রয়েছে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এ সংকট আছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পাবে কোথায়। তবে মঞ্জুরি কমিশন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে মঞ্জুরি কমিশনেরও আন্তরিকতা প্রয়োজন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে পুরনো নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়।

এখানে সার্বক্ষণিক অধ্যাপক ২৪, সহযোগী অধ্যাপক ২৪, সহকারী অধ্যাপক ৩৮ ও প্রভাষক ২১৫ জন। এ বিশ্ববিদ্যালয়েও খণ্ডকালীন অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকের সংখ্যা সার্বক্ষণিক শিক্ষকের চেয়ে বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে খণ্ডকালীন অধ্যাপক ৭৩ ও সহযোগী অধ্যাপক ৩২ জন।

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।