আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চে গুয়েভারার চিঠি : ফিদেল কাস্ত্রোকে শেষ লেখা চিঠি

The revolution is not an applethat falls when it is ripe. You have to make it fall. আন্ডারলাইন অংশগুলো বিশেষ পঠ্য । প্রচন্ড মূল্যবান কিছু কথা । ১৯৬৫ সালের ৩ অক্টোবর সদ্যোজাত কিউবার কমিউনিস্ট পার্টির পরিচিতিমূলক এক গণসমাবেশে ফিদেল কাস্ত্রো এ চিঠিটি পড়ে শোনান। চের স্ত্রী ও সন্তানদের উপস্থতিতে কাস্ত্রো ঘোষণা করেন, ‘আমি এমন একটি চিঠি পাঠ করতে যাচ্ছি, যে হাতে লেখা চিঠিটি আমি পেয়েছি এর্নেস্তো গুয়েভারার কাছ থেকে এবং পরে এটিকে টাইপ করা হয়েছে এবং চিঠিটি স্বব্যাখ্যাত…চিঠিটিতে কোনো তারিখ নেই, কারণ চিঠিটি পড়ার কথা সবচেয়ে সুবিধাজনক কোনো সময়ে। চিঠিটি প্রকৃতপক্ষে প্রেরিত হয়েছিল এ বছরের পয়লা এপ্রিল।

’ এই পত্রপাঠই কিউবা থেকে গুয়েভারার অন্তর্ধান-রহস্যের প্রথম সরকারি ব্যাখ্যা। হাভানা ফিদেল, এ মুহুর্তে অনেক কিছুই মনে পড়ছে আমার−মারিয়া অ্যান্তোনিয়র বাসায় যেদিন প্রথম আপনার সঙ্গে দেখা হলো, যখন আপনি আহ্বান জানালেন বিপ্লবের প্রস্তুতির সঙ্গে জড়িত সকল উত্তেজনায় আমিও যেন অংশ নিই। একদিন কারা যেন জানতে চাইল আমাদের মৃত্যুর সংবাদ কাকে আগে অবহিত করতে হবে, এবং ঘটনাটার বাস্তবিক সম্ভাবনা আমাদের সবাইকে বিচলিত করে তুলল। পরে আমরা জেনেছি, বিপ্লবের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সত্য হলো কেউ হয় জিতবে অথবা মৃত্যুবরণ করবে (যদি তা হয় প্রকৃত বিপ্লব), এভাবেই বিজয়ের যাত্রাপথে শহিদ হন অগণিত কমরেড। সবকিছুতেই নাটকীয়তার সেই স্বর আজ অনেক হ্রস্ব, কারণ আমরা সবাই এখন অনেক বেশি পরিণত।

কিন্তু ঘটনাক্রম নিজেই নিজেকে পুনরাবৃত করে। কিউবার বিপ্লবের প্রতি যে কর্তব্যবোধ আমাকে এর সঙ্গে যুক্ত করেছিল, আমি অনুভব করছি, সে দায়িত্ব আমি সম্পন্ন করতে পেরেছি, এবং আমি বিদায় জানাচ্ছি আপনাকে, কমরেডদের, আপনার জনগণকে, যারা এখন আমারও। আমি আনুষ্ঠানিকভাবে পার্টির নেতৃত্ব, মন্ত্রীর পদ, কমান্ডারের পদমর্যাদা এবং কিউবার নাগরিকত্ব থেকে নিজেকে বিযুক্ত করছি। আইনগত কোনো কিছুই আর কিউবার সঙ্গে আমাকে সম্পর্কযুক্ত করবে না। অবশিষ্ট যে বন্ধনটুকু থাকবে তা ভিন্ন চরিত্রের−কোনোভাবেই তাকে ভেঙে ফেলা যায় না, যেকোনো নিয়োগচুক্তিকে খুব সহজেই যেভাবে ভাঙা যায়।

অতীতের দিকে তাকিয়ে আমি বিশ্বাস করি, বৈপ্লবিক বিজয়কে সংহত করার জন্য প্রয়োজনীয় সততা এবং যথাযথ নিষ্ঠা নিয়েই আমি কাজ করেছি। আমার একমাত্র ব্যর্থতা সিয়েরা মিস্ত্রার প্রথম সময়গুলোয় আপনার প্রতি আমার আস্থার অভাব, এবং নেতা ও বিপ্লবী হিসেবে আপনার যোগ্যতাকে দ্রুত উপলব্ধি করতে পারার অক্ষমতা। এখানে আমি দুর্দান্ত কিছু সময় কাটিয়েছি, যুগপৎ দীপ্ত ও ক্যারিবীয় সংকটের ঝাপটায় বিমর্ষ দিনগুলোয় জনগণের সঙ্গী হওয়ার গৌরবও অর্জন করতে পেরেছি। সেই সময়গুলোয় আপনার চেয়ে মনীষাপূর্ণ নেতৃত্ব দেওয়া খুব কম রাষ্ট্রনায়কের পক্ষেই সম্ভব হতো। কোনো রকম দ্বিধা ছাড়াই আমি যে আপনাকে অনুসরণ করেছি, আপনার ভাবার, দেখার এবং বিপদ ও নীতির মূল্যাবধানের প্রক্রিয়ার প্রতি যে একাত্ম হতে পেরেছি, এ জন্য আমি গর্ব বোধ করি।

পৃথিবীর অন্য জাতিগুলো আমার ঐকান্তিক সংগ্রামের পথ চেয়ে আছে। তাদের ডাকেই আমি সাড়া দিচ্ছি, যদিও কিউবার রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার কারণে এ কাজে অংশ নেওয়া আপনার পক্ষে এ মুহুর্তে সম্ভব নয়। আমাদের বিচ্ছিন্ন হওয়ার সময় তাই এসে গেছে। এ কথা আমি জানাতে চাই, এই বিচ্ছেদ আমার জন্য একই সঙ্গে আনন্দ ও বিষাদের। একজন নির্মাতা হিসেবে এই রাষ্ট্রের প্রতি আমি রেখে যাচ্ছি আমার বিশুদ্ধতম প্রত্যাশা এবং আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষদের কয়েকজনকে।

এবং এমন একজন মানুষকে যিনি আমাকে সন্তান হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। এটা আমার আত্মার একটা অংশকে বিক্ষত করছে। নতুন যুদ্ধক্ষেত্রে আমি সেই বিশ্বাসটুকুকেই সঙ্গী করে দাঁড়াব যা আপনি আমার ভেতর বুনে দিয়েছেন, সঙ্গে থাকবে আমার জনতার বৈপ্লবিক কাঙ্ক্ষা, পবিত্রতম কর্তব্যপালনের সুখানুভুতি: এই সবকিছু দিয়েই আমি লড়ব সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে, যেখানেই সে থাকুক না কেন। এ ব্যাপারটাই আমাকে স্বস্তি দিচ্ছে আর শুশ্রূষা করছে অন্তরের গভীরতম ক্ষতকে। আরেকবার বলতে চাই, সব রকমের দায়দায়িত্ব থেকে কিউবাকে মুক্ত করে দিচ্ছি আমি, তবে এই রাষ্ট্রের উদাহরণ তার কাঁধে যে দায়িত্ব চাপাবে তা থেকে নয়।

যদি আমার শেষ মুহুর্তগুলো আমাকে আবিষ্ককার করে অন্য কোনো আকাশের নিচে, তবু আমার শেষ ভাবনাগুলো এ দেশের মানুষদের ঘিরেই থাকবে, বিশেষত আপনাকে। আমি আপনার দেওয়া শিক্ষা এবং দৃষ্টান্তের জন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ, এবং আমি আমার সংগ্রামের চুড়ান্ত পরিণতি পর্যন্ত চেষ্টা করব আপনার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে। আমাদের বিপ্লবের বিদেশনীতির প্রতি আমি সব সময় একাত্ম ছিলাম, সামনেও থাকব। যেখানেই থাকি আমি, একজন কিউবান বিপ্লবীর কর্তব্যবোধ আমার মধ্যে থাকবে, এবং সে অনুসারেই আমি কাজ করে যাব। এ বিষয়ে আমার তিলমাত্র লজ্জা নেই যে আমার স্ত্রী এবং সন্তানদের জন্য বৈষয়িক কোনো কিছুই রেখে যেতে পারলাম না; আমি সুখী, এটাই সে রাস্তা।

তাদের জন্য অতিরিক্ত কিছুই আমি চাই না, কারণ জীবনধারণ আর শিক্ষাগ্রহণের জন্য রাষ্ট্রই যথেষ্ট দেবে তাদের। আপনাকে এবং আমাদের জনগণকে অনেক কিছুই আমি বলতে পারতাম, কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তার কোনো প্রয়োজন নেই। শব্দের কাছে আমি যা প্রত্যাশা করি তা প্রকাশের সামর্থ্য তার নেই, এবং এও আমার মনে হয় না যে লিখে, পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা ভরিয়ে তোলার কোনো মানে আছে। আমার সমস্ত বিপ্লবী স্পৃহা দিয়ে আপনাদের আলিঙ্গন করছি। চে [চে গুয়েভারা রিডার: রাইটিংস অন পলিটিক্স অ্যান্ড রেভ্যুলেশন, ওশেন প্রেস, চতুর্থ মুদ্রণ ২০০৭ থেকে ] ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।