আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্পিনোজার জীবন ও তাঁর সমসাময়িক জগৎ -৪

আমার ভুবন কান পেতে রয় ... ... দ্বীপ নিভে যায় সকলই ঘুমায় মোর আঁখি রহে জাগিয়া স্পিনোজার জীবন ও তাঁর সমসাময়িক জগৎ এএম হারুন অর রশিদ (পূর্ব প্রকাশের পর) কয়েকটি অনুলিপি আইনবহির্ভূতভাবে দেশে-বিদেশে পাঠাতেও তিনি পেরেছিলেন; যার ফলে ইউরোপের কিছু ব্যক্তিগত সংগ্রহশালায় এসব গ্রন্থ রক্ষা পেয়েছিল গির্জা ও কর্তৃপক্ষের ঘোষিত বিরোধিতা সত্ত্বেও। স্পিনোজার গ্রন্থের একটি তালিকা এখানে দেয়া যায় : (1) A Short Treatise on God, Man and his Well-being (2) Ethics (3) Treaties on the Emendation of the Intellect (4) Descartse’ Principles of Philosophy and Metaphysical Thoughts (5) Tractatus Theologico-Politicus (6) The Correspondence of Spinoza (7) Opera Posthuma (8) Calculation of Chances and the Rainbow স্পিনোজা মারা যান ১৬৭৭ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি এবং ওই বছরেই প্রকাশিত হয় তাঁর Oঅপেরা পসথুমাperaPosthumZu pera Post বা মরণোত্তর রচনাবলি যার কেন্দ্রস্থলে ছিল তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ দ্য এথিকস EthicsEthicsEthicsEthics Ethic। ডাচ কর্তৃপক্ষই প্রথমে গ্রন্থটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং পরে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোও একই কাজ করে। এসব দেশের কর্তৃপক্ষের লোকজন বইয়ের দোকানে ঢুকে এ বইটি পেলে তৎক্ষণাৎ বাজেয়াপ্ত করত। এই গ্রন্থ প্রকাশ করা বা বিক্রি করা ছিল এক অমার্জনীয় অপরাধ।

তবু এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই, স্পিনোজার রচনার সহজলভ্য অংশগুলো যেমন 'সুসংগঠিত ধর্মের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক' এসব আলোচনা মানুষের মনে গভীরভাবে দাগ কেটেছিল এবং তা প্রশংসিত হয়েছিল। বিশেষ করে ফ্রান্সে তাঁর লেখা ব্যাপকভাবে পঠিত ও আলোচিত হয়েছিল। কারও পক্ষে স্পিনোজার ধারণাকে ইতিবাচকভাবে প্রচার করা সম্ভব ছিল না। খুব কম দার্শনিক ও বিজ্ঞানী তাঁর লেখাকে সমর্থন করতে এগিয়ে আসতে সাহস করতেন কেননা তাঁর ফল হতো ভয়ঙ্কর। স্পিনোজা ছিলেন সবার কাছে এক 'অভিশাপ'_ বুঝে অথবা না বুঝে।

স্পিনোজার মৃত্যুর প্রায় এক শতাব্দী পর্যন্ত ইউরোপে ছিল এটাই সাধারণ চিত্র। অন্যদিকে নেতিবাচক উল্লেখ ছিল অসংখ্য এবং তা সাদরে গৃহীত হতো। পর্তুগালে স্পিনোজার নামের উল্লেখের সঙ্গে ঘৃণার সব বিশেষণ ব্যবহার করা প্রায় বাধ্যতামূলক ছিল; যেমন বিধর্মী, নির্বোধ, নির্লজ্জ ইত্যাদি। ১৭৪৮ সালে মন্টেস্কু যখন তাঁর বিখ্যাত 'লেসপ্রিট ডে লোয়া' লেখেন তখন তিনি ঈশ্বর, ধর্ম, রাজনীতি, নীতিশাস্ত্র ইত্যাদি বিষয় নিয়ে যা বলেছিলেন তা প্রকৃতপক্ষে স্পিনোজারই কথা। অথচ এসব লেখার পরে মন্টেসকুকে ঘোষণা করতে হয়েছিল যে, তিনি খ্রিস্টীয় ঈশ্বরেই বিশ্বাস করেন।

কিন্তু এই ঘোষণা ভ্যাটিকান বিশ্বাস করেছিল বলে মনে হয় না। এজন্যই স্পিনোজার সমাধিতে একটি কথাই উৎকীর্ণ আছে_ কাউটে _ সাবধান। ভলটেয়ার তাঁর একটি ক্ষুদ্র কবিতায় লিখেছেন_ এবং তারপর এক ছোটখাটো ইহুদি যার লম্বা নাক এবং হালকা গায়ের রং দরিদ্র কিন্তু সুখি, চিন্তামগ্ন কিন্তু আত্মসমাহিত ধীরে ধীরে পা ফেলে তিনি এলেন মহান অস্তিত্বের সম্মুখে; মৃদুস্বরে বললেন, মাফ করুন, এ কথা শুধু আমাদের দুজনের মধ্যেই, আমি মনে করি যে আপনি অস্তিত্বহীন। (সমাপ্ত) [লেখক : প্রাক্তন অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।