আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈমান ও শির্ক সম্পর্কে দু'টি কথা

রাব্বিআল্লাহ্--আল্লাহ্ই আমার একমাত্র রব্ব-সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও নিরংকুশ কর্তৃত্বের একমাত্র মালিক। ঈমান সম্পর্কে বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে দেখা গিয়েছে যে, অধিকাংশ মানুষই ঈমানের কালেমা ও তার অর্থ সম্পর্কে অজ্ঞ। একমাত্র আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামীন যার প্রতি করুনা করেছেন, আর শির্ক থেকে রক্ষা করেছেন, সে ছাড়া অধিকাংশ লোকের মধ্যেই কতিপয় শির্ক লুক্কায়িত আছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। আর এ শির্ক সমূহের মধ্যে শির্কে আকবর তথা সবচেয়ে বড় শির্ক হচ্ছে- আল্লাহর সার্বভৌমত্বে অংশীদার সাব্যস্তের মাধ্যমে তাঁর রবুবিয়্যাতে শির্ক। মুসলিম সমাজে যারা মূর্তিপূঁজা, মাজার পূঁজা করাকে শির্কে আকবর বলে অভিহিত করে থাকেন, অথচ আল্লাহদ্রোহী শক্তির শাসন মান্য করাকে শির্ক বলে আখ্যায়িত করেন না এবং মূর্তি পূজারী, মাজার পূঁজারীকে মুশরিক মনে করেন, কিন্তু তাগুতী শক্তি তথা মানব রচিত আইনের রক্ষক ও অনুসারীদের মুশরিক মনে করেন না, তারা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কিতাব কুরআনের প্রকৃত জ্ঞান লাভ করতে পারেননি।

ফলে তারা প্রকৃত ইসলামকেও গ্রহণ করেননি। তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘটনাবহুল রাজনৈতিক জীবনকে পর্যবেক্ষণ করেন না। অথচ তাদের উচিত যেভাবে আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামীন কুরআন নাযিল করেছেন, সেই ভাবেই তা পড়া এবং মান্য করা। আমি বলতে চাচ্ছি- রাষ্ট্রীয় শির্ক হচ্ছে সবচেয়ে বড় শির্ক, মানুষের স্বার্বভৌমত্ব ও মানব রচিত মনগড়া রাষ্ট্রব্যবস্থা হচ্ছে সবচেয়ে বড় কুফুরী, রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র সহ সকল তন্ত্রই আল্লাহর কাছে পরিত্যাজ্য দ্বীন, আল্লাহর কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য দ্বীন হচ্ছে ইসলাম। যারা সামান্য পার্থিব স্বার্থ, স্বেচ্ছাচারিতা ও বিলাসিতার জন্য আল্লাহর দেয়া একমাত্র সংবিধান কুরআন এবং তার ব্যাখ্যা হাদীসের কাছে পূর্ণাঙ্গ আত্মসমর্পন না করে প্রয়োজনে কুরআন থেকে কিছু নেয়া আবার নিজেরাও কিছু আইন রচনা করা, রাজতন্ত্র কায়েম করা, গণতন্ত্র কায়েম করা, রাষ্ট্রের মধ্যে নিজেদের স্বার্বভৌমত্ব কায়েম করে রাখার জন্য দমন-পীড়ন অব্যাহত রাখা, রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী ব্যবহার করা, সমগ্র মুসলিম ভূখন্ডকে একটি ইসলামিক রাষ্ট্র তথা খিলাফতের অধীনে ঐক্যবদ্ধ করার পরিবর্তে নিজেরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র্র রাষ্ট্রের অধিপতি হিসেবে সন্তুষ্ট থাকা, কাফির-মুশরিকদের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করার মহান আল্লাহর সুস্পষ্ট ঘোষণাকে লংঘন করে তাদের সাথে বন্ধুত্ব কায়েম করা, তাদেরকে নিজেদের অভিভাবক সাব্যস্ত করা, প্রিয়নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মৃত্যু শয্যায় শায়িত শেষ ওয়াসিয়াত লংঘন করে জাজিরাতুল আরব-এ আমেরিকার মানবতার দুশমনদের আশ্রয় দেয়া প্রভৃতি ইসলাম বিরোধী প্রকাশ্য কুফরী কর্মে লিপ্ত গাদ্দার, মুনাফিক আর জালিম শাসকদের এমন কাজ কর্মের বিরোধীতা যারা করেন না উল্টো নিজেদেরকে মডারেট মুসলিম দাবী করেন তারা মূলতঃ আল্লাহর সার্বভৌমত্ব কী জিনিস তাই বোঝেন না।

বাস্তবতা এই যে, অধিকাংশ মানুষই আল্লাহ্র রবুবিয়্যাত কী? আল্লাহর সার্বভৌমত্ব-ই বা কী? এর গুরুত্ব, মর্যাদা ও দাবীই বা কী? এর ঘোষণা দানের মাধ্যমে কী তারা স্বীকার করে নিয়েছে, আর কী অস্বীকার করেছে সে সম্পর্কে কোন ধারণাই রাখে না। তারা দাবী করছে আমরা মুসলিম আমরা আল্লাহ্ ছাড়া আর করো ইবাদাত করি না অথচ তারা বাস্তবিকভাবে আল্লাহর পাশাপাশি অন্য অনেক কিছুর ইবাদাত করছে। আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামীন বলেন- “অনেক মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু সাথে সাথে শির্কও করে। ” (সূরা ইউসুফ ১২:১০৬) বর্তমানে এ আয়াতের বাস্তবতায় দেখছি অধিকাংশ মানুষ মুখে ঈমানের দাবী করা সত্বেও আল্লাহর সার্বভৌমত্ব এবং বাস্তব জীবনে কর্মের ক্ষেত্রে তারা আল্লাহর সাথে শির্ক করছে। বর্তমান সময়ের অধিকাংশ মুসলিমই এ ভুল ধারণা করে যে, ইসলামের সাক্ষ্য ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ কালেমাটি মুখে উচ্চারণ করলে অথবা মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করলে ও লালিত পালিত হলে এবং একটি মুসলিম নামধারণ করলেই ঈমানদার মুসলিম হওয়া যায়।

তার কাজকর্ম, জীবন-যাপন পদ্ধতি যাই হোক না কেন। অথচ এটি ইয়াহুদী-খ্রিষ্টানদের একটি আক্বীদা। কারণ তারা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত ধর্মীয় পরিচয় বহন করলেও জীবন-যাপনে স্রষ্টা প্রদত্ত গাইড বুক (আসমানী কিতাব) অনুসরণ না করে নিজস্ব মনগড়া আইন-বিধান, পদ্ধতি ও জীবন ব্যবস্থা অনুসরণ করে। তারা মানুষের ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে মানুষের সার্বভৌমত্ব, নিরংকুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষের রব্ব হয়ে বসে। আজকাল অনেক দাওয়া সেন্টার এবং ইসলামী দলের ভাইয়েরা ঈমানের দাওয়াতের ক্ষেত্রে তাওহীদের কথা বলেন, আল্লাহর একত্ববাদের কথা বলেন কিন্তু প্র্যাকটিক্যাল (বাস্তব) ক্ষেত্রে শুধুমাত্র তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ্ অর্থাৎ ইবাদাতের তথা নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত প্রভৃতি ক্ষেত্রে আল্লাহর একত্ববাদের উপরই প্রাধান্য দেন যদিও সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে মানব রচিত ব্যবস্থা ও মানুষের মনগড়া আইনের আনুগত্য করে চলছেন।

কারণ এতে আল্লাহদ্রোহী, আল্লাহর সীমালঙ্ঘণকারী গোষ্ঠী (তাগুত) নারাজ হয় না আর জান-মালের ক্ষতির আশংকা নেই বললেই চলে। যারা যুগ যুগ ধরে ইসলামের কালেমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ কে ঈমানের কালেমা বলে চালিয়ে দিচ্ছেন তারা আল্লাহর রবুবিয়্যাতে তাওহীদের ক্ষেত্রে আল্লাহ্-ই একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, রক্ষাকর্তা (জন্ম-মৃত্যুর মালিক), পালনকর্তা, শৃংখলাবিধানকারী, পূর্ণতাদানকারী ও রিযিকদাতা এটা প্রচার করলেও ‘আল্লাহর জমীনে সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহর, মানুষের নয়’ এ সম্পর্কে হয় মৌনতা অবলম্বন করেন নচেৎ খন্ডিত ব্যাখ্যা দেন। দেখুন আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, দ্বীনের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীরা যখন কালেমা এবং তাওহীদের দাওয়াত দিতেন, র্শিকের বিপক্ষে কথা বলতেন তখন পুরো সমাজ তাদের উপর ক্ষোভে ফেটে পড়তো। চরম জুলুম নির্যাতন শুরু হতো। ইট-পাথর তো সামান্য, এমনকি নির্যাতন করতে করতে অনেককে শহীদ করা দেওয়া হতো।

স্বয়ং রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পর্যন্ত রক্তাক্ত হতে হয়েছে। কিন্তু আজ যারা তাওহীদের কথা বলেন, কালেমার দাওয়াত দেন কিংবা র্শিকের বিরুদ্ধে কঠোর ভূমিকা পালন করছেন বলে প্রচার করেন তাদেরকে কেউ মারে না। তাদেরকে কেউ রক্তাক্ত করে না। তাদের উপর রাষ্ট্র কিংবা সমাজপতিদের ক্রোধ আসে না। বরং তাদের জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সাহায্য সহায়তার দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।

মাসে মাসে বেতনও দেয়া হয়। মোটা বোনাস আসে। আর উপহার উপঢৌকনের জোয়ার শুরু হয়। এর কারণ কী? স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগে- তারা কি আসলে সঠিক তাওহীদের পূর্ণাঙ্গ দাওয়াত দিচ্ছেন না আংশিক? তারা কি আসলে রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার সাহাবীদের দাওয়াতের থেকে উল্লেখযোগ্য কোন অংশ বাদ দিচ্ছেন? যার কারণে তাদের উপর কুফরী শক্তি সন্তুষ্ট হচ্ছে, তাগুতী রাষ্ট্রও সহায়তা করছে! আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কী দাওয়াত দিলেন মক্কার লোকদেরকে যার পরিণতিতে সহচরগণ সহকারে তাঁকে প্রিয় মাতৃভূমি মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করতে হয়েছিলো? কী দাওয়াত তিনি দিলেন আবু লাহাব, আবু জাহেল গংকে যে কারণে তারা রাসূলকে মারার পরিকল্পনা পর্যন্ত করেছিলো? দেখুন কুরআন কী বলে- “তোমাদের কী হলো যে, তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনছো না? অথচ রাসূল তোমাদেরকে রব্বের প্রতি ঈমান আনার জন্য দাওয়াত দিচ্ছেন; আর আল্লাহ্তো (রব্বের ব্যাপারে মানুষকে দুনিয়ায় পাঠানোর) পূর্বেই তোমাদের নিকট থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন; যদি তোমরা সত্যিই ঈমানদার হও (তবে আল্লাহ্কে একমাত্র রব্ব মেনে সেই প্রতিশ্রুতি পূর্ণ কর)। ’’ (সূরা আল হাদীদ ৫৭:৮) “যাদেরকে তাদের ঘর-বাড়ী থেকে অন্যায়ভাবে বহিস্কার করা হয়েছে শুধু এই কারণে যে, তারা বলেছিল- রাব্বুনাল্লাহ্ (আল্লাহ্ই আমাদের একমাত্র রব্ব)।

...। আল্লাহ্ নিশ্চয়ই তাদেরকে সাহায্য করবেন, যারা আল্লাহ্কে সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পরাক্রমশালী শক্তিধর। ” (সূরা আল-হাজ্জ ২২:৪০) অর্থাৎ তৎকালীন আবু লাহাব, আবু জাহেল গং নিয়ন্ত্রিত জাহেলিয়্যাতের ভিত্তিতে গঠিত সমাজ ব্যবস্থায় সকল মানুষকে মানুষের সার্বভৌমত্বের দাসত্ব থেকে বের হয়ে একমাত্র আল্লাহ্র সার্বভৌমত্বকে মেনে কেবলমাত্র তাঁরই দাসত্ব করার দাওয়াত দিয়েছিলেন রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যার পরিণতিতে উক্ত সমাজের আইন-বিধান প্রণয়ন ও নিরংকুশ কর্তৃত্বের ভিত্তিতে রব্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত আবু লাহাব, আবু জাহেল গং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সহচরদের প্রতি খর্গ হস্ত হয়ে জুলুম-নিপীড়ন ও হত্যার ষড়যন্ত্র শুরু করে দেয় এবং পরিণতিতে আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামীনের নির্দেশে সহচরগণ সহকারে রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রিয় মাতৃভূমি মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করেন।

কিন্তু দুনিয়াবী জান-মালের ক্ষতির ভয় না করে আল্লাহ্কে একমাত্র রব্ব মেনে ঈমানের উপর দৃঢ় থেকেছেন। মূলতঃ যারাই আল্লাহ্কে একমাত্র রব্ব বলে স্বীকার করে নিবে এবং এ দাবীর প্রতি দৃঢ়-অটল থাকবে তারাই প্রকৃত ঈমানদার এবং তাদেরকে সুসংবাদ দিয়েই আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামীনের পক্ষ থেকে ইরশাদ হচ্ছেÑ ‘‘নিশ্চয়ই যারা ঘোষণা করেছে- রাব্বুনাল্লাহ্ (আল্লাহ্ই আমাদের একমাত্র রব্ব-সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও নিরংকুশ কর্তৃত্বের একমাত্র মালিক), অতঃপর তার উপরে অবিচল থেকেছে, নিশ্চয়ই তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিত হবে না। তারাই জান্নাতের অধিকারী! তারা তথায় চিরকাল থাকবে। আর এটা হচ্ছে তাদের সেই কাজের বিনিময় যা তারা পৃথিবীতে করেছিলো। ’’ (সূরা আহক্বাফ ৪৬:১৩,১৪) আরও ইরশাদ হচ্ছে- ‘‘নিশ্চয়ই যারা ঘোষণা করেছে- রাব্বুনাল্লাহ্ (আল্লাহ্ই আমাদের একমাত্র রব্ব-সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও নিরংকুশ কর্তৃত্বের একমাত্র মালিক), অতঃপর এ ঘোষণার উপর অটল (দৃঢ় ও স্থির) থেকেছে, নিশ্চিত তাদের কাছে ফিরিশতারা আসে এবং বলে, তোমরা ভয় করো না, চিন্তিত হয়ো না এবং সেই জান্নাতের সুসংবাদ শোন, যার প্রতিশ্র“তি তোমাদেরকে দেয়া হয়েছে।

’’ (সূরা হা-মীম সেজদাহ ৪১: ৩০) আলহামদুলিল্লাহ্! সুব্হানাল্লাহ্! কিন্তু সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হলো, ইসলামের দরদী ভক্তদের কেউ কেউ প্রচলিত জাহিলিয়্যাত তথা তাগুতী রাষ্ট্র ব্যবস্থার কিছু কিছু আইন, পদক্ষেপ ও কথাবার্তা সম্পর্কে মাঝে মধ্যে খুঁত ধরেন যে, অমুক কাজ ইসলাম বিরোধী। কোথাও কোথাও কিছু ইসলাম বিরোধী আইন বা বিধি ব্যবস্থা দেখে তারা রেগে যান। তাদের ভাব দেখে মনে হয়, ইসলাম যেন পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়েই আছে, তাই অমুক অমুক ত্রুটি তার পূর্ণতার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে আছে। এই সকল দ্বীনদরদী (!) ব্যক্তি তাদের অজ্ঞতার কারণে অজান্তেই ইসলামের ক্ষতি সাধন করে থাকেন। তাদের সেই মূল্যবান শক্তিকে তারা এসব অহেতুক কাজে অপচয় করেন, অথচ তা ইসলামের মৌলিক আক্বীদা বিশ্বাস প্রতিষ্ঠায় ব্যয় করা যেতো।

এসব কাজ দ্বারা তারা আসলে জাহেলী সমাজ-রাষ্ট্রের পক্ষেই সাফাই গান। কেননা, এর দ্বারা বোঝা যায় যে, ইসলাম তো এখানে কায়েম আছেই, কেবল অমুক অমুক ত্রুটি শুধরালেই তা পূর্ণতা লাভ করবে। অথচ এখানে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় সার্বভৌম ক্ষমতা অর্থাৎ আইন প্রনয়ন, শাসন ও বিচার ফয়সালার সর্বময় চূড়ান্ত ক্ষমতা ও এখতিয়ার যতক্ষণ মানুষের হাত থেকে পরিপূর্ণভাবে ছিনিয়ে এনে আল্লাহর জন্যই ন্যাস্ত না হবে, ততক্ষণ ইসলামের অস্তিত্ব বলতেই এখানে কিছু নেই। কারণ সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে অন্যের সার্বভৌমত্ব মেনে নেয়ার অর্থই হলো আল্লাহ্র সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করা, আল্লাহ্র সাথে শির্ক করা। যা মূলতঃ আল্লাহকেই অস্বীকার করার শামিল।

আর যেখানে গোটা জাতি শির্কে নিমজ্জিত হয় সেখানে ইসলামের অস্তিত্ব কিভাবে থাকে? এটি কাফির-মুশরিকদের এমন এক সূক্ষ্ণ ষড়যন্ত্র, যার মাধ্যমে আল্লাহকে কার্যত অস্বীকার করা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষ তা বুঝতে পারে না। আপনি লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন, তারা বলে না তোমরা ইসলাম ছাড়ো, তারা বলে, গণতন্ত্র (জনগণের আইন) গ্রহণ কর, কেননা তারা ভালো করেই জানে, গণতন্ত্র গ্রহণ অর্থই হলো ইসলামকে বর্জন করা। মনে রাখতে হবে যে, সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব বহাল থাকলেই এবং আল্লাহকে সার্বভৌমত্বের একমাত্র মালিক স্বীকার করে একমাত্র নিরংকুশ আইনদাতা মানলেই ইসলামের অস্তিত্ব অক্ষুন্ন থাকে। আল্লাহ্র সার্বভৌমত্ব বজায় না থাকলে সেখানে ইসলামের অস্তিত্ব এক মুহুর্তও থাকতে পারে না। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, আজকের পৃথিবীতে সমাজ ও রাষ্ট্রে মানব জাতির জন্য কল্যাণকর সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত ব্যবস্থা ইসলাম প্রতিষ্ঠিত না থাকার কারণে, আল্লাহর যমীনে আল্লাহদ্রোহী তাগুতী শক্তি রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও প্রভুত্বের ওপর ভাগ বসাচ্ছে, তা ছিনতাই করার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে আর নামাযী, দাড়ী-টুপিওয়ালা, তাসবীহ্ ওয়ালা লোকরা তাদেরকে সমর্থন দেয়া থেকে শুরু করে সরকারের অধীনে বিভিন্ন পদ গ্রহণ করে তাদের সহায়তা করে বৈষয়িক ফায়দা লুটছে।

এই শাসক শ্রেণী তাদের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা নিশ্চিত করছে এবং স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, অর্থনীতি, সমাজ, পরিবার তথা সাধারণ মানুষের জীবন, সহায় সম্পদ ও তাদের মধ্যে বিবাদমান বিষয়ে নিজেদের খেয়ালখুশী মতো বিধি নিষেধ প্রয়োগ করছে। এটাই সেই সমস্যা যার সমাধান, সংশোধন ও মোকাবেলা করার জন্য কুরআন নাযিল হয়েছে এবং সে আইন ও বিধি নিষেধ প্রনয়ণ ও প্রয়োগের ক্ষমতাকে দাসত্ব ও প্রভুত্বের সাথে স¤পৃক্ত করেছে এবং স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছে যে, এর আলোকেই সিদ্ধান্ত আসবে কে মুসলিম কে অমুসলিম, কে মু’মিন ও কে কাফির। ইসলাম’এর অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রথম যে লড়াই হয়েছিলো, তা নাস্তিকতার বিরুদ্ধে পরিচালিত লড়াই ছিলনা। এ লড়াই সামাজিক ও নৈতিক উচ্ছৃংখলতার বিরুদ্ধেও ছিল না। কেননা এসব হচ্ছে ইসলাম প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের পরবর্তী লড়াই।

বস্তুতঃ ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য ঈমানদার মুসলিমগণ সর্বপ্রথম যা করেছে তা ছিলো- সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা সহ জীবনের সর্বক্ষেত্রে সার্বভৌমত্বের অধিকারী কে হবে সেটা স্থির করার জন্য দাওয়াতের মাধ্যমে চেতনার জগতে আন্দোলন সৃষ্টির লড়াই। আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কায় থাকা অবস্থাতে এ লড়াইয়ের সূচনা করেছিলেন। সেখানে তিনি মানুষের ঈমান ও আক্বীদা-বিশ্বাসের ভিত্তিতে ঈমানদার নারী-পুরুষদেরকে তাঁর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ রাখার কাজ করেছিলেন, সমাজ ও রাষ্ট্রে আইন প্রয়োগের চেষ্টা করেননি। তখন কেবল মানুষের মনে এই বিশ্বাস বদ্ধমূল করার চেষ্টা করেছেন যে, সার্বভৌমত্ব তথা প্রভুত্ব ও সর্বময় ক্ষমতা এবং আইন বা হুকুম জারির ক্ষমতা ও শর্তহীন আনুগত্য লাভের অধিকার একমাত্র আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামীনের, অন্য কারো নয়। কোন মানুষ এই সার্বভৌমত্বের দাবী করতে পারে না এবং অন্য কেউ দাবী করলে ঈমানদার মুসলিমরা জীবন গেলেও সেই দাবী মেনে নিবে না।

মক্কায় অবস্থান কালে মুসলিমদের মনে যখন এই আক্বিদা দৃঢ়ভাবে বদ্ধমূল হলো, তখন আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামীন ঈমানদার মুসলিমদেরকে তা বাস্তবে প্রয়োগের সুযোগ দিলেন মদিনায়। সুতরাং আজকালকার ইসলামের একনিষ্ঠ ও আবেগোদ্দীপ্ত ভক্তরা ভেবে দেখুন, তারা ইসলামের প্রকৃত মর্ম উপলব্ধি করেছেন কি না? যারা একমাত্র আল্লাহর গোলামী করে এবং মানুষকে রব্ব-এর আসনে তথা সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও নিরংকুশ কর্তৃত্বের মালিকের আসনে বসায় না তারাই মুসলিম। এই বৈশিষ্ট্যই তাদেরকে দুনিয়ার সকল জাতি ও গোষ্ঠির উর্ধ্বে স্বতন্ত্র মর্যাদা দান করে এবং দুনিয়ার সকল জাতির জীবন যাপন পদ্ধতির মধ্য থেকে তাদের জীবন পদ্ধতির স্বকীয়তার নির্দেশ করে। উপরোক্ত বৈশিষ্ট্য তাদের মধ্যে থাকলে তারা ঈমানদার মুসলিম, নচেৎ তারা কাফির, মুশরিক বা অমুসলিম, চাই তারা যতই নিজেদের মুসলিম বলে দাবী করুক না কেন। সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে মানবরচিত সকল ব্যবস্থায় মানুষ মানুষকেই সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক মেনে নেয়ার মাধ্যমে আল্লাহ্র আসনে বসায়।

কারণ সার্বভৌম ক্ষমতাকে কেন্দ্র করেই সকল তন্ত্রের উদ্ভব হয়েছে আর প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্ ব্যতীত কেউ সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক হতে পারে না। সকল মানুষই যেহেতু সৃষ্টিকর্তা, রক্ষাকর্তা (জন্ম-মৃত্যুর মালিক), পালনকর্তা, শৃংখলাবিধানকারী, পূর্ণতাদানকারী ও রিযিকদাতা হিসেবে আল্লাহ্কে রব্ব মানতে বাধ্য সেহেতু বিভিন্ন তন্ত্রের (গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র প্রভৃতি) ধারক-বাহকরা মানুষের ব্যক্তি জীবন, সমাজ ও রাষ্ট্রে মানুষের উপর মানুষের সার্বভৌমত্বের মিথ্যা শ্লোগান দিয়ে আল্লাহ্র আইন-বিধান প্রণয়নের নিরংকুশ ক্ষমতা কুক্ষিগত করার মাধ্যমে মিথ্যা রব্ব হয়ে বসে। কোন দেশে সর্বোচ্চমানের গণতন্ত্র, রাজতন্ত্র কিংবা সর্বনিম্ন মানের স্বৈরতন্ত্র- যা-ই থাকুক সর্বত্র সার্বভৌমত্বের এই একই অবস্থা। প্রভূত্বের সর্বপ্রথম বৈশিষ্ট্য হলো মানুষকে গোলাম বানানোর অধিকার এবং মানুষের জন্য আইন-কানুন, মূল্যবোধ ও মানদন্ড রচনার অধিকার দখল করা। ঘোষিত, অঘোষিত, লিখিত যেভাবেই হোক, মানবরচিত সকল ব্যবস্থায় একটি মানবগোষ্ঠী কোন না কোন আকারে এই সার্বভৌমত্বের অধিকারী হওয়ার দাবীদার।

এতে করে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর লোকেরা অবৈধভাবে সার্বভৌম ক্ষমতার আসনে আসীন হয়ে পড়ে। এই নির্দিষ্ট গোষ্ঠীটি বাদ বাকী দেশবাসীর দন্ডমূন্ডের কর্তা হয়ে তাদের জন্য আইন-কানুন, রীতি-নীতি, মূল্যবোধ ও মানদন্ড নির্ধারণ করে। কুরআনের আয়াতে একেই বলা হয়েছে মানুষকে মানুষের রব্ব বানিয়ে নেয়া। এভাবেই বর্তমান বিশ্বের সকল দেশের সাধারণ জনগণ তাদের শাসক শ্রেণীর ইবাদত-আনুগত্য-দাসত্ব করে, যদিও তারা তাদের উদ্দেশ্যে রুকু-সিজদা করে না। সার্বভৌমত্ব তথা প্রভুত্ব ও সর্বময় ক্ষমতা, আইন-বিধান বা হুকুম জারির ক্ষমতা এবং নিরংকুশ কর্তৃত্বের মালিক একমাত্র আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামীনকে মেনে নেয়া হলেই আল্লাহ্কে রব্ব মানা হয়।

মূলতঃ এটাই আল্লাহর প্রতি ঈমান এবং আল্লাহ্ প্রদত্ত একমাত্র জীবন ব্যবস্থা ইসলাম’এর মূল বিষয়। এ বিষয়টি বাদ দিলে ইসলাম’এর কোন অস্তিত্বই থাকে না। দুনিয়ার সকল নবী ও রাসূলগণ আল্লাহ্ প্রদত্ত একমাত্র জীবন ব্যবস্থা ইসলাম নিয়েই এসেছিলেন। আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামীন মানুষকে মানুষের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে তার নিজের দাসত্বের অধীন করার জন্য এবং মানুষকে যুলুম থেকে মুক্ত করে আল্লাহর ন্যায়বিচারের ছায়াতলে আশ্রয় দানের জন্যই নবীদেরকে যুগে যুগে ইসলামী বিধান সহকারে পাঠিয়েছেন। যারা তা অগ্রাহ্য করে, তারা মুসলিম নয়, তা সে যতই সাফাই গেয়ে নিজেকে মুসলিম প্রমাণ করার চেষ্টা করুক না কেন এবং তাদের নাম আব্দুর রহমান, আব্দুর রহিম যাই হোক না কেন।

আল্লাহ্ই আমাদের একমাত্র রব্ব-রাব্বুনাল্লাহ্! তিনিই সার্বভৌম ক্ষমতার একমাত্র মালিক, আইনদাতা-বিধানদাতা ও নিরংকুশ কর্তা, অন্য কেউ নয়। এখন আমরা যারা মুসলিম পরিচয় নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই, পরিপূর্ণ ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করতে চাই, মৃত্যুর সময় আল্লাহ্র প্রতিশ্রুত ফিরিশতাদের নিকট থেকে ভীত ও চিন্তিত না হওয়ার সান্তনা এবং জান্নাতের সুসংবাদ শুনতে চাই তাদের জন্য সর্বপ্রথম ফরয হচ্ছে আল্লাহ্কে একমাত্র রব্ব-জীবনের সর্বক্ষেত্রে সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও নিরংকুশ কর্তৃত্বের একমাত্র মালিক হিসেবে মেনে নিয়ে ‘রাব্বুনাল্লাহ্’ বলে ঈমানের ঘোষণা দিয়ে তার উপর দৃঢ়-অটল থাকা। সুতরাং আমরা যারা দুনিয়াতে দূর্ভোগ-অশান্তি এবং আখিরাতে জাহান্নামের ভয়াবহ অগ্নি থেকে মুক্তি চাই, সমাজ ও রাষ্ট্রে মানুষের উপর মানুষের সার্বভৌমত্বের মিথ্যা দাবীদারদের কবল থেকে বের হয়ে প্রকৃত ঈমান নিয়ে বাঁচতে চাই তাদের উদ্দেশ্যে শেষ দু’টি কথা- আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামীন মানব জাতির জন্য কল্যাণকর ও পরিপূর্ণ মনোনীত একমাত্র জীবন ব্যবস্থা (দ্বীন) ইসলাম’এর প্রথম ও প্রধান মৌলিক বিষয় হচ্ছে তাওহীদ। তাওহীদ হচ্ছে- আল্লাহকে একমাত্র রব্ব ও ইলাহ্ হিসেবে মান্য করা এবং তাঁরই ইবাদত করা। তাওহীদ ব্যতীত ঈমান কল্পনা করা যায় না।

রবুবিয়্যাতে তাওহীদ অর্থাৎ আল্লাহর জমীনে সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও নিরংকুশ কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহর মানুষের নয়। এটাই আল্লাহর প্রতি ঈমানের মূল বিষয় এবং আল্লাহর সাথে মানুষের সম্পর্ক গড়ার মূল ভিত্তি। আর আল্লাহর রবুবিয়্যাতের মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি ঈমানের ঘোষণা হচ্ছে- রাব্বুনাল্লাহ্ অর্থাৎ আল্লাহ্ই আমাদের একমাত্র রব্ব- সার্বভৌম ক্ষমতার একমাত্র মালিক, আইনদাতা, বিধানদাতা ও নিরংকুশ কর্তা, অন্য কেউ নয়। আল্লাহকে একমাত্র রব্ব হিসেবে মেনে নেওয়ার নামই ঈমান এবং এর ঘোষণা রাব্বুনাল্লাহ্-ই মূলতঃ ঈমানের মূল কালেমা। আর আল্লাহর রবুবিয়্যাতে তাওহীদের ফলশ্রুতি হচ্ছে আল্লাহর উলুহিয়্যাতে তাওহীদ অর্থাৎ দাসত্ব, আইনের আনুগত্য ও উপাসনা একমাত্র আল্লাহর, অন্য কারো নয়।

উলুহিয়্যাতে তাওহীদের অঙ্গীকার হচ্ছে- আশহাদু আল্লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ্- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নেই কোন ইলাহ্ (মা’বুদ)-দাসত্ব, আইনের আনুগত্য ও উপাসনা পাওয়ার অধিকারী সত্ত্বা একমাত্র আল্লাহ্ ব্যতীত। এটা মূলতঃ ইসলাম পালনের অঙ্গীকার। আর এটা হচ্ছে ইসলাম’এর কালিমা। হাদীসের ভাষায় এরই দাওয়াত হচ্ছে- ইয়া আইয়্যুহান্নাসু ক্বুলু লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু তুফলিহু। -হে লোকসকল! বলো- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ [নেই কোন ইলাহ্ (মা’বুদ)-দাসত্ব, আইনের আনুগত্য ও উপাসনা পাওয়ার অধিকারী সত্ত্বা একমাত্র আল্লাহ্ ব্যতীত] তবেই সফলকাম হবে।

আল্লাহর উলুহিয়্যাতে তাওহীদের বাস্তবায়ন হচ্ছে- আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামীনের মনোনীত সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নেতৃত্বের শর্তহীন আনুগত্য। যার অংগীকার হচ্ছে- আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্ অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্র রাসূল-শর্তহীন অনুকরণ-অনুসরণ অর্থাৎ আনুগত্য পাওয়ার অধিকারী একমাত্র নেতা, অন্য কেউ নয়। পরিপূর্ণ আন্তরিক উপলব্ধি, বিশ্বাস ও জ্ঞানের ভিত্তিতে ‘রাব্বুনাল্লাহ্’ ঘোষণা এবং ‘আশহাদু আল্লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ্ ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্’ জ্ঞানের ভিত্তিতে বুঝে উচ্চারণের মাধ্যমে ইসলাম পালন এবং বাস্তবায়নের অংগীকার করার নামই ঈমান ও ইসলাম। শুধুমাত্র এ বিষয়টিকে বিনা তর্কে এবং যুক্তিতে মেনে নিলেই একজন ব্যক্তির অবস্থান আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামীনের মনোনীত একমাত্র দ্বীন (জীবন ব্যবস্থা) ইসলাম-এ স্বীকৃত হবে। এর ব্যতিক্রম হলে ধরে নিতে হবে উক্ত ব্যক্তির অবস্থান ইসলামে নয় জাহিলিয়্যাতে তথা র্শিক ও কুফরীতে।

জন্মসূত্রে ঈমানদার মুসলিম হওয়া সম্ভব নয়। জ্ঞানের ভিত্তিতে বুঝে আল্লাহ্কে একমাত্র রব্ব-সাবৃভৌমত্ব, আইন-বিধান ও নিরংকুশ কর্তৃত্বের মালিক জেনে ও মেনে ঈমানের ঘোষণা দিয়ে ঈমান আনতে হবে। ঈমান না এনে ইসলামে প্রবেশ করা সম্ভব নয়। ইসলামে প্রবেশ না করলে মুসলিম হওয়া সম্ভব নয়। আর মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করার পরিণাম যে কী পরিমান ভয়াবহ তা কল্পনা করা অসম্ভব।

অতএব, হে আল্লাহ্! সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনাসহ জীবনের সকল ক্ষেত্রে আপনিই যে একমাত্র রব্ব এই মহাসত্য আমাদেরকে জানার, চেনার ও তা পালন করার তৌফিক দান করুন এবং বাতিলকে বাতিল হিসেবে চেনার ও তা থেকে দূরে থাকার তৌফিক দান করুন। হে আল্লাহ্! সমস্ত তাগুতী শক্তির ষড়যন্ত্রকে ধ্বংস করে দিন। মানব রচিত শির্কী ও কুফরী ব্যবস্থা তথা জাহেলিয়্যাতের ভিত্তিতে গঠিত অভিশপ্ত সমাজকে ইসলামী সমাজে রূপান্তরের তৌফিক দান করুন। আপনিই তো আমাদের একমাত্র রব্ব! দয়া করে আমাদেরকে আপনার হিদায়াত দান করুন। আর দুনিয়াতে দূর্ভোগ-অশান্তি ও আখিরাতে জাহান্নামের ভয়াবহ অগ্নি থেকে মুক্তি লাভের পথে চলার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান, সামর্থ্য ও শক্তি দান করুন! আমিন, ইয়া রাব্বুল আ’লামীন।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।