আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘর ছেড়ে রাজকান্দি - হাম হাম ঝরনার খোঁজে (২য় পর্ব)

ফটোগ্রাফি, ভ্রমন, সিনেমা, ওয়ার্ডপ্রেস, এবং সব এলোমেলো ভাবনা ঘর ছেড়ে রাজকান্দি - হাম হাম ঝরনার খোঁজে (১ম পর্ব) আমাদের বাস ছাড়ার পরে আমি গাইড শুভ্রর সাথে কথা শেষ করে ফোন রাখার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সামনের সীটের একটা ছেলে জানতে চাইল আমরা শ্রীমঙ্গলে কোথায় যাচ্ছি। ওরাও চার বন্ধু সিলেট ঘুরতে যাওয়ার জন্য বের হয়েছে, কিন্তু কোথায় যাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। ওদেরকে হাম হাম সম্বন্ধে একটা ছোটখাট বক্তৃতা দিলাম। ওরা গেলে আমাদেরও ভালো হয়। একটা বড় টিম হয়।

কিন্তু সবগুলো 'হরিয়ার ভাঙ্গা বাওস'! হাঁটতে হবে শুনে কিছুতেই আর যেতে রাজি হলো না। সকালে যখন সিএনজি ঠিক করছি, দেখি ওরাও শেষ পর্যন্ত শ্রীমঙ্গলে নেমে পড়েছে, এবং কলাপাড়া যাওয়ার সিএনজিও ঠিক করে ফেলেছে! দুটো সিএনজিতে একসাথেই রওনা দিলাম। যাত্রা শুরু সিএনজি থেকে কলাপাড়ায় নেমে কাপড় পাল্টে লিটন ভাইকে বললাম, রেডি হন, আগে যাত্রা শুরুর ছবি তুলে নেই। লিটন ভাই পার্ক করা একটা জিপের সামনে দাঁড়িয়ে পোজ দেয়ার জন্য রেডি এই-জিপেই-তো-এলাম টাইপের একটা ভাব নিয়ে। জিপের ড্রাইভারকে বললাম, ভাই একটা ছবি তুলে দেন দু'জনের একসাথে।

ক্যামেরাটা ব্যাগ থেকে ইতিমধ্যে বের করে ফেলেছি। এক ডজন ব্যাটারী নিয়ে এসেছি ব্যাক-আপ হিসেবে, রিচার্জেবল চারটা ছাড়াও। ব্যাটারী ভরে ক্যামেরা অন করার সুইচ টিপলাম। নো সারাশব্দ। ব্যাটারী উল্টা ভরেছি কিনা দেখে নিয়ে আবার সুইচ টিপলাম।

নট নড়ন-চড়ন! দুঃসংবাদটা লিটন ভাইকে দিলাম। তারতো মাথায় হাত। বলে, আমও গেছে ছালাও গেছে। ছবিই তুলতে না পারলে এত কষ্ট করে এসে লাভটা হলো কি! অভয় দিয়ে বললাম, আম গেছে ঠিক আছে, ছালা সাথে আছে। নো টেনশন।

ব্যাগ থেকে মোবাইল ফোন বের করে শুরু করলাম ছবি তোলা। নেটোয়ার্ক না থাকায় ইতিমধ্যেই তা ব্যাগে চালান করেছিলাম। এই পোষ্টের ছবিগুলোর এত উচ্চ মানের হওয়ার এটাই হলো গোপন রহস্য। পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে গাইড মংড়া জঙ্গল থেকে বাঁশ কেটে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয়রা মংড়ার পেছন আমরা যখন বনে ঢুকছি, ওরা চারজনও আমাদের সাথে চলল। কিন্তু কিছুদূর গিয়ে আমরা যখন ডানে মোড় নিলাম, ওরা তখন অন্য একটা গ্রুপের পেছনে পেছনে সোজা চলে গেল (সেই গ্রুপে একটা মেয়ে ছিল)।

মংড়া বলল, যাক, বুঝব ঠেলা। আমরা শর্ট-কাট রাস্তায় অল্প সময়ে চলে যাব। কাদা-পানি কোন কিছু নাই, খালি অল্প কয়টা পাহাড় ডিঙাতে হবে। বললাম চলো, আমরা দ্রুত হাঁটবো, ওদের সবার আগে পৗঁছাতে হবে। শুরু হলো চড়াই ভেঙে চলা।

উঠছি তো উঠছিই। বেশ কিছু দূর উঠে সামান্য একটু নিচে নামা, ফের ওঠা। ১০ মিনিট উঠেই দম শেষ। পাহাড়ে চড়া এত কষ্ট কে জানতো। সেই একবার জিমে ভর্তি হওয়ার পরের কথা মনে পড়লো।

ইন্সট্রাকটর বলে, আগে স্ট্রেচিং, খালি হাতে ২ মিনিট লাফাও। কিন্তু আধা মিনিটও লাফানোর ক্ষমতা নেই। ওরই মধ্যে দরদর কমে ঘাম, আর শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। বলি, ইন্সট্রুমেন্ট দিয়ে আধাঘন্টা করতে পারবো, খালি হাতে আধা মিনিটও না, মাফ করো! বলে, হুঁম্, সিগারেট ছাড়ো, নয়ত দম পাবে না। ঠিক একই অবস্থা এখানে।

ঘাম বের হচ্ছে টেপের পানির মত। গাল গরম হয়ে লাল হয়ে গেছে। ১০ মিনিট ওঠার পর ৫ মিনিট রেস্ট। মংড়া দেখে আর মাথা নাড়ে। পাহাড়ের মধ্যে পুরোটা ট্রেইলের পাশেই এরকম অসংখ্য কাটা গাছ।

এগুলো বন বিভাগ কেটেছে না চোরাকারবারীরা কে জানে পাহাড়ি রাস্তায় শুধুই উপরে ওঠা এই করতে করতেও আমরা বেশ কয়েকটা গ্রুপকে পেছনে ফেলে এলাম। লিটন ভাইকে বললাম, যাই করেন, যাদের ফেলে এসেছি তারা যাতে আর আমাদের পেছনে ফেলতে না পারে। দু'জনে প্রানপনে হাঁটতে লাগলাম কষ্ট সহ্য করে। বিরতিগুলো একটু দেরীতে আর সংক্ষিপ্ত হতে লাগলো। ভাবলাম, ডেইলি একবার এই রকম পাহাড়ে উঠতে পারলে মধ্যদেশটা এতটা স্ফিত হতো না।

কিন্তু যেই শহরে থাকি, ফুটপাতেই হাঁটার জায়গা নেই, তা আবার পাহাড়! এই করতে করতে মংড়া জানাল, সামনেরটাই শেষ পাহাড়। এরপর আর উঠতে হবে না, শুধুই নামার পালা। ইচ্ছে হলো ওকে ধরে একটা চুমু দিতে। সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠে বিশ্রাম। এটাই শেষ টিলা।

এবার নামার পালা টিলাটার চুড়ায় উঠে যাত্রা বিরতি। পেছনের একটা টিমও আমাদের সাথে যোগ দিল। সবাই বুয়েটের শিক্ষক। তারা যখন সেখানে নাস্তা সেড়ে নেয়ার তোড়জোড় চালাচ্ছে, লিটন ভাইকে বললাম, চলেন ভাগি। এদের আগে যেতে হবে।

আমরা হাম হামে গিয়ে খাওয়া সারবো। যদিও ক্ষুধায় পেট জ্বলে যাচ্ছিল, শুরু করলাম নিচের দিকে নামা। নামতে নামতে যখন পাহাড় শেষ হলো, বাঁক ঘুরতেই দেখি একটা ঝিড়ি। আনন্দে লাফিয়ে উঠলাম। বরফের মত ঠাণ্ডা পানি।

মনে হচ্ছিল, এখানেই শুয়ে পড়ি। মংড়া বলল, আর বেশী দূরে নেই, ঝড়নার শব্দ শোনা যাচ্ছে। বিপুল উদ্যমে এবার শুরু করলাম চলা। বাঁক ঘুরতেই একটা ঝিরি! অসম্ভব ঠাণ্ডা পানি। ঝিরির পাড়।

মনে হচ্ছে গাছের শেকড়, কিন্তু সবাই বলল পাথর! দারুন মজা লাগছিল ঝিরি পথ দিয়ে হাঁটতে। এখন আর কোন ক্লান্তি বোধ হচ্ছিল না। হাঁটতে হাঁটতে টের পেলাম পায়ে থাকা জুতার মাহাত্ম। আসার দিন বেল্ট সহ প্লাস্টিকের জুতা কিনেছিলাম ভালো গ্রিপ দেখে। ঝিরির নিচের পাথরের উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মনে হলো, এই রাস্তায় খালি পায়ে হাঁটতে হলে বারোটা বাজতো পায়ের।

বৃষ্টি না হওয়ায় ঝিরিতে পানি ছিল না তেমন। গোড়ালি বা বড়জোর হাঁটু পানি। একটু বেশি পানি পেলাম শুধু দু-একটা জায়গায়। পাশ কেটে যাওয়া যেত, ইচ্ছে করেই পানি দিয়ে গেলাম। বাঁশ বাগানের মধ্য দিয়ে অসম্ভব সুন্দর একটা ট্রেইল ঝিরির মাঝে বড় বড় পাথর।

লিটন ভাইকে বললাম, যাওয়ার সময় একটা নিয়ে নিয়েন। বলল, ফরেস্ট অফিসার ঝামেলা করতে পারে। অগত্যা ছবি তোলার পোজ দিলাম, স্মৃতি থাকুক। ঝরনা আর বেশী দূরে ছিল না। প্রবল শব্দে সে নিকটেই তার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছিল।

অল্প দূর হেঁটে গিয়ে বাকঁ ঘুরতেই সেটি চোখে পড়ল। হৈ হৈ করতে করতে আমরা ছুটলাম ঝরনার দিকে। অবশেষে দেখা পাওয়া গেলো সেই কাঙ্খিত হাম হামের একি অবাক বিস্ময়! (ক্রমশ) ঘর ছেড়ে রাজকান্দি - হাম হাম ঝরনার খোঁজে (শেষ পর্ব) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।