আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আপনা হাত জগন্নাথ, করবে রে ভাই বাজিমাত

আমার খামার নেই নেই কোন শস্যকণা আমাদের অর্থ মন্ত্রণালয় জগন্নাথ সহ আরও তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থ বরাদ্দ দানে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এ্যাক্ট অনুযায়ীই তা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক সংস্থান সঙ্ক্রান্ত ২৭ তম ধারা তে এ ব্যয় যোগানে সরকারের অপারগতার কথা আগেই বলা ছিল। আমি পুরনো ঢাকার মানুষ , জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আরও অনেকের মত আমারও প্রাণের দাবি ছিল। নানা তুঘলকি কাণ্ডের পর একসময় সে স্বপ্ন হাসিল হল বটে কিন্তু একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে অবকাঠামো দরকার সেটি এ বিশ্ববিদ্যালয় অর্জন করতে পারে নি।

হল গুলো প্রভাবশালী চক্রে হাতে এখনো পড়ে আছে, কোন স্থায়ী আবাসন ব্যবস্থা নাই। অতি ছোট ক্যাম্পাস, একদিকে কোর্ট কাচারি বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক টেম্পো স্ট্যান্ড, আরেকদিকে ইসলাম পুর পাটুয়াটুলির মার্কেট নিকটে বাংলাবাজার শাঁখারিবাজার তাঁতিবাজার রায়সা'বাজার সদরঘাট নবাব বাড়ি নিয়ে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে পরিমণ্ডল কাঙ্ক্ষিত তা এর নেই। আমাদের হবু চন্দ্র রাজার দেশে শহরের মধ্যে সুগঠিত ক্যন্টন্মেন্ট থকে , কিন্তু শহরের যে মস্তিষ্ক বিশ্ববিদ্যালয় তা অবহেলিত। সে সব বিষয় নয়, বিষয় হল অর্থ মন্ত্রণালয়ের অপারগতা। শিক্ষা আমি মনে করিনা মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পরে, অন্ন বস্ত্র বাসস্থান চিকিৎসা মানুষের বেচে থাকার জন্য প্রয়োজন কিন্তু শিক্ষা তেমন নয়, শিক্ষা মানুষ তার উৎপাদন পদ্ধতি আর চাহিদা থেকেই অর্জন করে নেয়।

দিনাজপুরের আকালুর কোন প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, সে তার বাবার কাছ থেকে শিখেছে কোন মাসে কোন ধান রুইতে হবে, কোন পোকা ভাল বা খারাপ কবে আগাছা নিরাতে হবে। ব্রিটিশরা আমাদের দেশে তাদের শোষন সুগম করার জন্য শিক্ষা বিস্তার শুরু করে ; মেকলে তার রিপোর্টে বলেছিলেন যে তিনি এমন একটি শ্রেণী গঠন করতে চান যারা বাহ্যিক বাবে নেটিভ হলেও চিন্তায় মননে কর্মে ইংরেজ। অর্থাৎ শোষকেরই দেশি রূপ। সে শিক্ষিত সমাজ প্রতিষ্ঠানেরই স্বার্থ হাসিল করবে। করেও এসেছে, ব্রিটিশ গেছে, তাদের শিক্ষাব্যবস্থার হাত ধরে নতুন দেশি শোষক এসেছে।

কিন্তু এ নতুন শোষকের রাজনৈতিক অংশের ,যারা রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণ করে তাদের ব্রিটিশ সুলভ প্রজ্ঞা নেই। রাষ্ট্র রাজনৈতিক দল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এনজিও ইত্যাদির মাধ্যমে শোষণ জারি রাখতে হলে যে এসব প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের সাথে সন্নিহিত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে সে বোঝার ক্ষমতা এদের না থাকায় এরা শিক্ষাকেও পণ্যে পরিণত করেছে। আর বেনিয়া অংশ তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্যেই নিজেদের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করে নিয়েছে। এখন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এর মালিকেরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ণধারও বটেন, তাদের বণিক স্বার্থ রক্ষা ও গরীব চুষে মুনাফা করার জন্যেই কিছু মানুষ কে বিবিয়ে এম্বিয়ে করার দরকার তাদের আছে। প্রয়োজনীয়তাই তাদের এ দিকে "বিনিয়োগ" করতে বাধ্য করেছে।

শিক্ষাব্যবস্থা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গেছে, আইয়ে বিয়ের প্রতিপক্ষ বিবিয়ে এম্বিয়ে দাঁড়িতে গেছে। একদিকে এ-লেভেল ও-লেভেল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেনিয়া স্বার্থের শিক্ষা- আরেক দিকে মাদ্ধান্তার আমলের ব্রিটিশ পরিকল্পিত মেট্রিক ইন্টার আইয়ে বিয়ে এমে শিক্ষা যার সাথে জীবন ও জীবিকার উৎপাদন ও প্রগতির কোন সম্পর্ক নেই। এ ব্যবস্থা সরকারের জন্য গোদের উপর বিষফোড়াই বটে, নেহায়েত আমাদের সরকার এখনো সার্ভিস স্টেট থেকে সিকিউরিটি স্টেটে উন্নীত হয় নি, কিছু পাবলিক ওয়ার্কস করা তারা তাদের দায়িত্ব মনে করে, পাবলিক টয়লেট বানানো, সুইপার দের বেতন দেয়া, বিশ্ববিদ্যালয় চালানো তাদের মহানুভবতার পরিচয় রাখে। আমাদের স্টেটের এহেন দশা যখন তখন বাজেট ঘটতি হলে সর্বাগ্রে তারা যে শিক্ষা ব্যবস্থায় হাত দেবে সে তো বলার অপেক্ষা রাখে না। একজন ভিসি যখন বলে, গরীবের পড়ালেখা দরকার নাই‌, যদি না সে সেমিস্টার-ভর্তি ফি না দিতে পারে,তার পড়ার কি দরকার।

এসব কথা সরকারের এই নীতিরই বহিঃপ্রকাশ করে। তো দাঁড়াচ্ছে সরকার শিক্ষার ব্যয় বহনে আর ইচ্ছুক নয়, এতে তার লাভ তো কিছু হয়ই না বরং কিছু উপদ্রবকারী পয়দা হয় ;পান থেকে চুন খসলেই এরা মিছিল মিটিং সমাবেশ জ্বালাও পোড়াও করে। সর্বোপরি, আর্মি দেখতে পারেনা , যে আর্মি সরকার টিকিয়ে রাখে , যাদের হাতে অস্ত্র আছে , তাই ক্ষমতাও আছে। বাড়তি উৎপাত ছাড়া আর কি এসব। এদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নজির স্থাপন হয়েছে , তাদের নৈতিক বা আদর্শিক অবস্থান কি সেটা বিবেচনা নাকরেই সরকার মনে করছে কইয়ের তেলে যদি কৈ ভাজা যায় তবে মন্দ কি? আর বেনিয়া স্বার্থের সাথে সরকারের স্বার্থ সন্নিহিত বলেও পুরা শিক্ষা ব্যবস্থাটার বেনিয়া করণ করলে পণ্যে পরিণত করলে মন্দ কি।

সবার শিক্ষা দরকার নাই যাদের টাকা আছে তারা বেনিয়া স্বার্থ রক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। আর্থিক সংস্থান সঙ্ক্রান্ত ২৭ তম ধারা এ নীতির সাক্ষ্য দেয়, সরকার ক্রমান্বয়ে তার হাত সঙ্কুচিত করছেঃ ধারা ২৭ (১) এ বলা আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক পরিচালন ব্যয়ের (মূলধন ব্যয় ব্যতিরেকে) নিরিখে প্রতি বছর ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে আদায় যোগ্য বেতন ও ফিস নির্ধারিত হবে। এধারা মতে ছাত্রদের কাছ থেকেই অর্থ আদায় হবে তা নিশ্চিত করা হয়েছে। যে টাকা দিতে পারবে না তার কোন দরকার নেই। এবং ৪ তম ধারা মতে সরকার ভর্তুকি দেয়া বন্ধ করলে পুরোটাই ছাত্রের উপর বর্তাবে।

সে অর্থনৈতিক ভাবে সমর্থ না হলে বাতিলের খাতায় চলে যাবে। অর্থনৈতিক সামর্থ্য তার শ্রেণীগত অবস্থান এর মাপকাঠি, সে ওই মাপকাঠিতে সিদ্ধ না হলে বেনিয়াদের প্রোপারলি সার্ভ করতে পারবে না। একজন সর্বহারার কাছে আশা করা যায় না যে সে শোষক কে শোষণে সমর্থন দেবে। ধারা ২৭ (২) এ বলা আছে, সেমিস্টার অনুযায়ী নির্ধারিত বেতন ও ফিস সেমিস্টার শুরু হবার আগেই পরিশোধ করতে হবে। এধারা মতে সক্ষম ছাত্রদের কাছ থেকে আগেভাগেই অর্থ আদায় নিশ্চিত করা হয়েছে।

কেউ টাকা পরে দিতে পারবে না। তাকে অর্থনৈতিক ভাবে সক্ষম হয়েই পড়তে আসতে হবে। নাহলে এমন হতে পারে কোন গরীব ছাত্র পরীক্ষা দিয়ে অনেক কষ্ট করে হালের বলদ পালের গাই বেচে টাকা দিল। বা দিল না, না দিলে তো যেহেতু নেহায়েত সে পরীক্ষা দিয়েই ফেলেছে তাকে বাদ দেয়া যায় না, তাই আগে ভাগেই গরীব ছেঁটে ফেলা ভাল। গরীবের কোন প্রবেশাধিকার এখানে নাই, এটা বণিকের পারপাজ সার্ভ করার যায়গা।

ধারা ২৭ (৩) এ বলা আছে, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের লক্ষ্যে প্রণীত প্রকল্প ব্যয়ের অন্যূন ১৬ শতাংশ অর্থ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব তহবিল হতে যোগান দেওয়া হবে এবং অবশিষ্ট অর্থ সরকার কর্তৃক প্রদেয় হবে। এতে নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণ ভাবে একটি বেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হবার জন্য যা যা করা লাগে সরকার তা করবে। ২৭ (৪) ধারায় বলা আছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প বাস্তবায়িত হইবার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পুনঃপৌনিক ব্যয় যোগানে সরকার কর্তৃক প্রদেয় অর্থ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাইবে এবং পঞ্চম বছর হইতে উক্ত ব্যয়ের শতভাগ অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় ও উৎস হইতে বহন করিতে হইবে। কি আর বলব? এছাড়া ধারা ২৭ (৫) এ বলা আছে, সরকার বা অন্যান্য বৈধ উৎস হতে প্রাপ্ত অনুদান বা আয় হতে প্রয়োজনের নিরিখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি বা ক্ষেত্রমতে উপবৃত্তি প্রদান করতে পারবে। এখন প্রশ্ন হল এ পাবলিক শিক্ষাব্যবস্থার প্রাসঙ্গিকতা কি।

পাবলিক শিক্ষা ব্যবস্থার অবকাঠামো যাই হোক না কেন, এই আমাদের সবেধণ নীল মনি, কানা মামা। আমাদের বাঙ্গালীর যা কিছু অর্জন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে, তার প্রায় সবই এর হাত ধরে এসেছে, অনেক কিছু যদিও আসেনি তবে আগমন সম্ভব্য। কারণ আগেই বলেছি শিক্ষা মানুষ তার চাহিদা থেকে অর্জন করে । যখন এ প্রচলিত শিক্ষার অনুসাররিরা বুঝবেন যে তাদের শিক্ষার প্রাসঙ্গিকতা কমছে তারাই আন্দোলনে মুখর হবেন চাপ প্রয়োগ করবেন একে তাৎপর্যপূর্ণ করার জন্য সরকারকে তটস্থ রাখবেন। এতেই নিহিত আছে কল্যাণ।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যলয়ের ছাত্রদের একটা বিরাট অংশ এখনো পচে যায় নি, তারা এখনো মানুষের পক্ষে, আমাদের বাতিঘর। এরা বেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিক লভ্য নয়। শিবের গীত গাইলাম এতক্ষণ। এত কথার দরকার নাই। আমার ভাইয়েরা মানুষের বিকাশে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকাশে আন্দোলন করছেন।

আমি তাদের সাথে আছি। আপনি কি করতে পারেন? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.