আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চকবাজারের ইফতারি

চকবাজারের পরিবেশই আলাদা। ঢাকার ৪শ’ বছরের সাক্ষী এই বাজার। মোস্তফা জাহাঙ্গীর আলম সম্পাদিত ‘স্থান নামের ইতিকথা’ বই থেকে জানা যায়-- নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁ ১৭০২ সালে এ বাজারকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আধুনিক বাজারে পরিণত করেন। পরে ওয়াল্টার নামের এক ব্রিটিশ এ জায়গাটি আরও আধুনিক করে গড়ে তোলেন। কোমর সমান দেয়াল দিয়ে ঘেরা চকবাজারে প্রবেশের জন্য তখন ১৬টি গেইট ছিল।


চকবাজারকে সে সময় চৌকবন্দর নামে ডাকা হত। সেই আমলেই চকবাজারে ইফতার বিক্রির প্রথা চালু হয়। এখন কোমর সমান দেয়াল আর ১৬টি গেইট না থাকলেও বাদশাহি আমলের ইফতারসহ আধুনিক সবধরনের খাবার পাওয়া যায়।       
সূর্য দক্ষিণ দিকে একটু হেলে পড়তেই চকবাজারের ইফতারির দোকানগুলোতে ভিড় জমতে থাকে। শুধুই ইফতার কেনার জন্য এত মানুষের আগমন।

রাস্তার দুপাশে সারিসারি ইফতারের দোকান।
বড় খাবারের দোকানগুলো তাদের বারান্দায় ইফতারের পসরা সজিয়ে বসেছে। কোনো কোনো দোকানে বিক্রেতাই ১০ থেকে ১৫ জন। পুরো বাজারে অসংখ্য ইফতারের দোকান।
যাদের খাবারের দোকান নেই তারা ছোট টেবিলে ইফতার সাজিয়ে বসেছে।

বেশিরভাগ দোকানেই ইফতার কিনতে হয় লাইনে দাঁড়িয়ে।
আর বাজার জুড়ে একটিই স্লোগান-- “বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙ্গা ভইরা লইয়া যায়। ”
একটি বিশেষ ইফতারের নাম। ৬৮ বছর আগে ১৯৪৫ সালে শাহী জামে মসজিদ চত্বরে বাণিজ্যকভাবে এ খাবার বিক্রি শুরু করেন কামেল মহাজন। বংশ পরম্পরায় তার ছেলে জানে আলম মিয়ার পর এখন তার ছেলে সালেহিন এই খাবার বিক্রি করছেন।


শুরুতে এর নাম ছিল ‘তার তারাবার ঘি কা বারে মাশালা’। তখন কাঁঠালপাতায় বিক্রি হত। দাম ছিল পাঁচ আনা। এখন প্রতি কেজি ৩শ’ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়।
পঞ্চাশোর্ধ এক ক্রেতা জীবন মিয়া।

তিনি বলেন, “প্রায় ত্রিশ বছর ধরে কিনছি। এতটাই মুখরোচক যে, কোনো খাবারের সঙ্গে এর তুলনা চলে না। ”
এ খাবারটি আসলে বিভিন্ন খাবার এবং মসলার মিশ্রণ। যেমন সুতিকাবাব, কাঠিকাবাব, ডাল, ডিম, কলিজা, গরুর মগজ, খাসির মাংস, আলুভাজি, মোরগের মাংস, কোয়েলের রোস্ট, গাওয়া ঘি, এলাচি, দারুচিনি, সাদা গোলমরিচ, কালো গোলমরিচ, কাবাব, চিনি, জায়ফল-জয়ত্রী, জিরা, জাফরান, আদা, পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচামরিচ, শুকনামরিচ, হলুদ।
এছাড়াও আছে আরও কিছু উপাদান।

সেগুলো কী? জানতে চাইলে সালেহিন বলেন, “আছে বেশকিছু স্বাস্থ্যসম্মত মুখরোচক জিনিস। তবে সেগুলোর নাম তো কমু না। অন্যরা জানবার পারলে তো, ব্যাকতে আমার মতো কইরাই বানাইব। স্বাদ কম-বেশি হইব ক্যামনে!”
বিভিন্ন ধরনের কাবারে মধ্যে সুতিকাবাব বেশ জনপ্রিয়। গরুর মাংস বা খাসির মাংস, আদা, রসুন, বিভিন্ন ধরনের মসলা ও মাংসের রোস্টের গুড়া দিয়ে এটি তৈরি করা হয়।

দাম দোকান ভেদে ৪শ’ থেকে ৪৫০ টাকা।
আরও আছে শামিকাবাব। তৈরি হয় বুট, আলু, মসলা, ডিম ইত্যাদি দিয়ে। দাম ২০ টাকা।
এছাড়াও নার্গিসকাবাব ২৫ টাকা, টিক্কাকাবাব ২০ টাকা।

মুঠিকাবাব ১০ টাকা ও শিককাবাব ৩০ টাকা। এছাড়াও যে কোনো দোকানে অর্ডার দিলে ইলিশকাবাবও বানিয়ে দেয় তারা।
খাসির রান ফ্রাই ৪শ’ টাকা। মুরগি ফ্রাই ৩শ’ টাকা। খাসি, মুরগির মাংসের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের মসলা দিয়ে তৈরি কাটলেটের দাম ১৫০ টাকা।

লাকুরা ১৮০ টাকা।
কবুতরের রোস্ট ১১০ টাকা থেকে ১৩০ টাকা। কোয়েল পাখির রোস্ট ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা। খাসি রানের রোস্ট ৪শ’ টাকা থেকে ৬শ’ টাকা। ভিজা রোস্ট ২৫০ টাকা এবং মুরগির রোস্ট ৩শ’ টাকা।


এটি তৈরি হয় দুধ ও লেবু দিয়ে। দাম ৫০ টাকা।
তৈরি হয় দই, মসলা ও পুদিনা পাতা দিয়ে। দাম ৬০ টাকা। পেস্তাবাদামের শরবত ৫০ টাকা।


মাষকলাই ও টক দই দিয়ে তৈরি। দাম ১শ’ টাকা থেকে ১৫০ টাকা। মাঠা ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা।
এক থেকে পাঁচ কেজি ওজনের বিভিন্ন ধরনের জিলাপি ১৬০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা।
চকবাজারে বিভিন্ন ধরনের খেজুরের মধ্যে আছে দাবাস খেজুর প্রতি কেজি ১৬০ টাকা।

মরিয়ম খেজুর ৬শ’ টাকা। বড়ই খেজুর ২শ’ টাকা ও লুলু খেজুর ১৮০ টাকা।
ঝাল পরটা ও মিষ্টি পরটা ২৫ টাকা। প্রতিটি চিকেন পরটা ৩০ টাকা। জালি টিক্কা ২০ টাকা।

ডিমচপ ২০ টাকা।
এছাড়াও ছোলা, বুট, বুন্দিয়া, বেগুনি, পিয়াজু যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যায়। ঘুঘনি প্রতি কেজি ৬০ টাকা।
চকবাজারে রোজার সময় বাড়িতে তৈরি বিভিন্ন প্রকার আচার বিক্রি হয়। টক-ঝাল আমের আচার ২শ’ টাকা থেকে ২৫০ টাকা।

টক-ঝাল বড়ইয়ের আচার ২শ’ টাকা থেকে ২৫০ টাকা। আমসত্ব কেজি প্রতি ২শ’ টাকা থেকে ২৫০ টাকা।
আস্ত খাসির রোস্ট দাম ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। এটি সাধারণত ফরমায়েশ ছাড়া বানানো হয় না। তবে রমজানের সময় শুধু শুক্রবারে বিক্রির জন্য তৈরি করা হয়।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।