আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোটাবিরোধী আন্দোলনে শরীক হওয়া প্রত্যেক সচেতন নাগরিকের একান্ত কর্তব্য

দেশের তরুণ ছাত্র সমাজ বিসিএস পরীক্ষায় কোটা বিরোধী আন্দোলন করছে। আমি তাদের আন্দোলনের সাথে একমত। সময় ও সুযোগের অভাবে ব্যক্তিগতভাবে আমি তাদের আন্দোলনে শরীক হতে পারছি না, তাদের কোন সাহায্য করতে পারছি না, তবে আমি এই আন্দোলনের পরিপূর্ণ সফলতা কামনা করি। আমি মনে প্রাণে চাই বাংলাদেশে থেকে সকল প্রকার কোটা বিলুপ্ত হোক, মেধা ও যোগ্যতাই হোক সকল নিয়োগের মাপকাঠি। বাংলাদেশের সরকারি চাকুরিতে নিয়োগের জন্য যে কয় ধরনের কোট রয়েছে এত ধরণের কোটা এবং এত অধিক সংখ্যক কোটা পৃথিবীর কোন সুসভ্য দেশে আছে কিনা আমি জানি না।

আইনি প্রক্রিয়ায় যেসকল কোটা রয়েছে যেমন মুক্তিযোদ্ধা কোটা, নারী কোটা, উপজাতীয় কোটা, জেলা কোটা ইত্যাদি। এই কোটাগুলোকে আইন দ্বারা নির্ধারিত করা হয়েছে। এইগুলো ছাড়াও আরো যেসকল কোটা বেআইনিভাবে চাকুরিতে দেখা যায় সেগুলো হল ‘দলীয় কোটা’, ‘দুর্নিতি ও ঘুষ কোটা’, ‘আঞ্চলিকতা কোটা’, মন্ত্রী কোটা, উপদেষ্টা কোটা, বড়নেতা-পাতিনেতা কোটা ইত্যাদি। এতসব কোটা বাদ দিলে সত্যিকার মেধাবীদের ভাগ্যে শতকরা ৫ থেকে ১০ ভাগের বেশি জোটে না। কোটা থেকেই কোটারি স্বার্থ।

এটা নিঃসন্দেহ যে কোটারি স্বার্থ রক্ষার জন্য কোটার আবির্ভাব। নিয়োগপ্রাপ্তরাও নিয়োগপ্রাপ্তির পরপরই কোটারি স্বার্থ রক্ষার জন্য উঠে পড়ে লেগে যায়। কোটারি স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিতে এদের মন কাঁদেনা। সকল কোটার জন্যই এই কথা প্রযোজ্য। একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে প্রজাতন্ত্রের প্রশাসন যন্ত্রে সত্যিকারের মেধাবী, চৌকস, কর্মক্ষম, যোগ্য লোকের সংখ্যা শতকরা দশভাগের বেশি নয়।

কোটার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটাই সবচেয়ে বেশি। শতকরা তিরিশ ভাগ। মুক্তিযোদ্ধা কোটা আবার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নয়, তাঁদের সন্তান-সন্ততি, নাতী-নাতনিদের জন্যও তা প্রযোজ্য। মুক্তিযোদ্ধারা দেশের বীর, সূর্য সন্তান। আমরা তাঁদের শ্রদ্ধা করি।

মুক্তিযোদ্ধারা দেশকে স্বাধীন করার জন্য আন্দোলন করেছিলেন, যুদ্ধ করেছিলেন। এই যুদ্ধের মূল চেতনাই ছিল মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী সম্মান, কর্ম, পেশা, অর্থ প্রাপ্তির অধিকার। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতী-নাতনিদেও জন্য কোটা সংরক্ষনের মধ্য দিয়ে সরকার মূলত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি কাজ করেছে। মুক্তিযোদ্ধারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছিলেন বা দিতে চেয়েছিলেন। তাঁদের সম্মান তখনই হবে যখন তাঁদের চেতনার সঠিক বাস্তবায়ন হবে।

তাছাড়া বাবার অপরাধের শাস্তি যেমন সন্তান পেতে পারেনা, তেমনি বাবার যোগ্যতার পুরস্কার সন্তান পেতে পারে না। ইহা অনৈতিক, অন্যায়। দেশের প্রায় অর্ধেক জনগণ নারী। নারী জাতিকে পেছনে ফেলে কোন জাতি উন্নতি করতে পারে না। বর্তমানে দেশের সকল দিকেই নারীরা উন্নতি করছে।

বর্তমানে দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতৃ, স্পীকারসহ দেশের উল্লেখযোগ্য প্রায় সকল নেতাই নারী। সংসদের নারীনেতৃদে¡র যথেষ্ট সরব দেখা যা। বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য প্রায় সকল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার, পদস্ত কর্মকর্তা নারী। প্রায় সকল পেশায়ই নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। নারীর প্রতি সামাজিক বৈষম্যও এখন অনেক কমেছে।

যদিও ঝুঁকি এখনো আছে, বিশেষ করে ধর্মীয় ও উগ্রপন্থীদের কাছ থেকে। এই পরিস্থিতিতে নারীদেও জন্য সংরক্ষিত কোটা নারীদের মেধা অর্জনে অন্তরায় হিসেবে কাজ করবে। তাছাড়া নারী কোটা দীর্ঘদিন চালিয়ে গেলে নারীদের কর্মস্পৃহা অর্জনে শৈথিল্য আসবে। তাই নারী কোটার বিলোপ দরকার। বাংলাদেশ একটি অত্যন্ত ছোট দেশ সন্দেহ নেই।

সংস্কৃতিগত দিক থেকে বাংলাদেশকে একটি মনোগেমাসই বলা যায় তথ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে অঞ্চলভেদে বৈষম্য এখন অনেক কমে গেছে। এবং মানুষের আন্ত-জেলা যোগাযোগ ও সম্পর্কও অনেকে বেড়েছে। তাই জেলা কোটা নামের এই কোটা থাকতে দেওয়া উচিত নয়। উপজাতীয়রা নানা কারণে দেশের সরকার দ্বারা বঞ্চিত। সরকার এখনো উপজাতীয়দেও শিক্ষার জন্য করণীয় সবকিছু করতে পারেনি।

সরকার উপজাতীয়দের ভাষায় পাঠ্যপুস্তক রচনা করতে পারে নি। তাই তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে কিছুটা বঞ্চনার স্বীকার। এই কারণে তাদের ক্ষতিপূরণ বাবদ উপজাতীয়দের কোটা থাকতে পারে। তবে তা ৫% থেকে কমিয়ে ২% এ আনা প্রয়োজন। একমাত্র উপজাতীয়দের কোটা বাদে বাকী সবগুলোই একেবারেই অযৌক্তিক এবং অপ্রয়োজনীয়।

তাই উপজাতীয়দের জন্য ২% রেখে সকল কোটা বাতিল করা প্রয়োজন। সরকার কোটারি স্বার্থ রক্ষার জন্য হয়তো এই কোটার বিলোপ করতে চাইবে না। তাই এর জন্য আন্দোলন করতে হবে। যত কঠিন-কঠোর আন্দোলন দরকার তাই করতে হবে। এই আন্দোলনের সাথে শরীক হওয়া প্রত্যেকটি সচেতন নাগরিকেরই কর্তব্য।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.