আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমিই সমাবর্তনের দিনে সিনেট ভবনে গভর্ণরকে গুলি করেছি- বীণা দাস

মৃত্যু বলে কিছু নেই..তুমি যাকে মরণ বল..সে শুধু মারবে তোমাকেই.. এই সাহসী উচ্চারণটি বীণা দাসের। এবছর বীণা দাসের জন্মশতবার্ষিকী। অথচ আমরা কজনই বা মনে রেখেছি অগ্নিযুগের এই অগ্নিকন্যার কথা? এই রচনায় আমি বীণা দাসের রাজনৈতিক মানস, সমাজ-দর্শন নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করব না, বরং বীণা দাসের জীবনের গল্পটি সহজ-সরল ভাষায় তুলে ধরতে চাইব। আজ থেকে প্রায় দেড়শ বছর আগে ১৮৬৬ সালের ২২শে নভেম্বর চট্টগ্রামের শেওরাতলী গ্রামের কৃষ্ণ চন্দ্র দাস-এর ঘরে জন্ম নেয় একটি পুত্র সন্তান, যার নাম রাখা হয় বেণী মাধব দাস। বেণী মাধব দাস বেড়ে ওঠেন পরাধীন ভারতে, দর্শন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করেন, এবং যোগ দেন চট্টগ্রাম সরকারী কলেজে।

তিনি চট্টগ্রাম, ঢাকা, কলকাতা, কটক, কৃষ্ণনগরের বিভিন্ন স্কুল কলেজে শিক্ষকতার মহান ব্রত পালন করেন, কখনো কলেজের প্রভাষক, কখনো স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদে। শিক্ষক হিসেবে তিনি ছিলেন ঋষিতুল্য। নেতাজী সুভাস বোস স্কুলজীবনে বেণী মাধব দাসের ছাত্র ছিলেন। সুভাষ বোস তার ‘ভারত পথিক’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেছেন- বেণী মাধব দাসকে, যিনি কিশোর সুভাষের মনে একটি স্থায়ী আসন গড়ে নিতে পেরেছিলেন। এমনকী, ভারত ত্যাগ করার পূর্বে সুভাষ বোস, বেণী মাধবের আশীর্বাদ নিতে তার সঙ্গে দেখা করেন।

কেশব চন্দ্র সেনের অনুপ্রেরণায় বেণী মাধব ব্রাহ্ম সমাজের সদস্য হন। তিনি ১৯২৩ সালে অন্ধ্র প্রদেশের কাকিনাদায় ‘অল ইন্ডিয়া থিইস্টিক কনফারেন্স’-এ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সেই সমাবেশে তার বক্তব্য পরবর্তীতে ‘মডার্ণ থিইস্টিক মুভমেন্ট ইন ইন্ডিয়া’ নামে বুকলেট আকারে প্রকাশিত হয়। এছাড়া তার ‘পিলগ্রিমেজ থ্রু প্রেয়ারস’ বইাটও বেশ সমাদৃত হয়। বেণী মাধব বিয়ে করেন কলকাতার সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজের সাধারণ সম্পাদকের কন্যা সরলা দেবীকে।

সরলা দেবীও সমাজসেবায় নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। তিনি অসহায় ও দুস্থ নারীদের সহায়তায় ‘সরলা পুন্যাশ্রম’ প্রতিষ্ঠা করেন। বেনী মাধব এবং সরলা দেবীর ঘরে জন্ম নেন অগ্নিযুগের দুই বিপ্লবী কল্যানী দাস (১৯০৭-৮৩) ও বীণা দাস (১৯১১-১৯৮৬)। পরাধীন ভারতবর্ষে অগ্নিযুগের বিপ্লবী লড়াই-সংগ্রাম ও আন্দোলনের সূচনা থেকেই অসংখ্য নারী পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত হন। অগ্নিযুগের প্রথম পর্বে স্বর্ণ কুমারী দেবী, সরলা দেবী, আশালতা সেন, সরোজিনী নাইডু, ননী বালা, দুকড়ি বালাসহ আরো অনেকেই বিপ্লববাদী দল বা গ্রুপের সাথে যুক্ত থেকে দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য কাজ করেন।

পরবর্তীকালে ইন্দুমতি দেবী, (অনন্ত সিংহের দিদি) লীলা রায়, পটিয়া ধলঘাটের সাবিত্রী দেবী প্রমুখ দেশপ্রেমিক নারী সেই সংগ্রামের ধারাবাহিকতা রক্ষা করেন। অনুশীলন, যুগান্তর, বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স, ছাত্রী সংঘ প্রভৃতি বিপ্লবী দলের সঙ্গে বিভিন্ন ঘরের মা, বোন, মাসিমা, কাকিমা, দিদি, বৌদিরা যুক্ত ছিলেন। সেই উত্তাল সময়েই বেড়ে ওঠা প্রীতিলতা, কল্পনা দত্ত এবং বেণী মাধব-সরলা দেবীর দুই কন্যার মত বিপ্লবীদের। বীণা দাসের চার বছরের বড় কল্যানী দাস ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তিনি ছাত্রী সংঘের একজন সংগঠক ছিলেন এবং স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ছিলেন।

বিপ্লবীদের একটি গোপন মিটিং-এর নিষিদ্ধ লিফলেটকে প্রমাণ হিসেবে দঁাড় করিয়ে আদালত তাকে কারাভোগের শাস্তি দেয়। কল্যানী দাস অনার্স গ্রাজুয়েট হওয়া স্বত্ত্বেও তাকে কারাগারে তৃতীয় শ্রেণীর বন্দীর কাতারে রাখা হয়। এক স্বচ্ছল মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়ে সেই কারাবাসের অবর্ণনীয় কষ্ট খুব কাছ থেকে লক্ষ্য করেন কল্যানী দাসের ছোট বোন বীণা দাস। বোনের এই আত্মত্যাগ তাকে চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় শাণিত করে, অনুপ্রাণিত করে উপনিবেশিক শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করার সংগ্রামে ঝঁাপিয়ে পড়তে। তার কয়েক বছর পরে যখন আমরা বীণা দাসকে দেখি গভর্নরকে গুলি করার পর, আদালতে নির্ভীকচিত্তে তার জবানবন্দী দিতে-তখনও বীণা দাস উল্লেখ করেন বোনের আত্মত্যাগ থেকে তার অনুপ্রেরণা নেয়ার কথা- ‘I attended the Court proceedings during the trial of my sister Kalyani. She was punished to serve a term of rigorous imprisonment for having allegedly attended a meeting which could not be held and for being a member of an unlawful society only on the basis of the evidence of her having a proscribed leaflet in her possession. This was to my mind grossly unjust. Though she is an Honours Graduate who had earlier lived in all the comforts of a middle-class family, yet ignominy was hurled on her during her prison-life. What with the jail-dress and jail-diet of ordinary convicts classified as third class prisoners, and the sleepless nights amongst such criminals, militated against my whole being. I saw all these with my own eyes and also witnessed the bitter tears welling out of the eyes of my dearest parents.’ (STATEMENT BEFORE THE SPECIAL TRIBUNAL OF CALCUTTA HIGH COURT-Bina Das) বীণা দাস আজ থেকে ঠিক শতবর্ষ আগে, ১৯১১ সালের ২৪ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি যে তাঁর দেশপ্রেম, আদর্শবাদ, দৃঢ় সংকল্প, উদার চিন্তাভাবনা তার পরিবার থেকেই লাভ করেছিলেন-তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। ছোটবেলা থেকে তিনি ছিলেন শান্ত প্রকৃতির। কবি ও দার্শনিক মনের অধিকারী বীণা দাস সময়ের উত্তাল হাওয়ায় পরিনত হন অগ্নিকন্যায়। বেথুন ও ডায়সেশন কলেজে শিক্ষাগ্রহণ করা বীণা স্নাতক হন ১৯৩১ সালে। ১৯২৮ সালে সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে যখন বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়েছিল বীণা তখন বেথুন কলেজের ছাত্রী।

তিনি অন্যান্য কর্মীদের সঙ্গে কমিশন বয়কট ও বেথুন কলেজে পিকেটিং করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিলেন। ওই বছরই কলকাতা কংগ্রেসের অধিবেশনে তিনি স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেন এবং ধীরে ধীরে তিনি গান্ধীজির অহিংস আন্দোলনে আত্মনিয়োগ করেন। কিন্তু ব্রিটিশ শাসন-শোষণের উপর ক্রমশ জমে ওঠা প্রচন্ড ক্ষোভ ও বিপ্লবী আন্দোলনের অগ্নিচ্ছটার সংস্পর্শে গান্ধীজির অহিংস মতবাদের থেকে সরে এসে শেষ পর্যন্ত বৈপ্লবিক পন্থাকেই বেছে নেন তিনি। ১৯৩২ সালে বীণা দাস তঁার জীবনের সবচাইতে দু:সাহসিক কাজ করার জন্য মনস্থির করে ফেলেন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন বাংলার ব্রিটিশ গভর্ণর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে গুলি করে হত্যা করার।

স্ট্যানলি জ্যাকসন ছিলেন একসময়ের ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অধিনায়ক, যিনি ২০টি টেস্ট ম্যাচ খেলেন এবং ৫টিতে অধিনায়কত্ব করেন। পরবর্তীতে কনজারভেটিভ পার্টির হয়ে নির্বাচন করে ১৯১৫ সাল থেকে ১৯২৬সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য ছিলেন। জ্যাকসনকে হত্যার এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনের কারণ বীণা দাস তার জবানবন্দীতে এভাবে ব্যাখ্যা করেন- ‘I have no sort of personal feelings against Sir Stanley Jackson, the man and Lady Jackson, the woman. But the governor of Bengal represents the system of repression which has kept enslaved 300 millions of my countrymen and countrywomen.’ এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বীণা দাস সাহায্য নেন তার বোন কল্যাণীর বান্ধবী কমলা দাস গুপ্তের। কমলা দাসগুপ্ত ‘যুগান্তর’ দলের সাথে যুক্ত ছিলেন। বীণা দাস যুগান্তরের সদস্য না হলেও তার সংকল্প এবং দৃঢ় প্রতিজ্ঞায় মুগ্ধ হয়ে কমলা দাস গুপ্ত তাকে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দেন ।

২৮০ টাকা দামের একটি চোরাই রিভলবার সহযোদ্ধা সুধীর দত্তের কাছ থেকে জোগাড় করেন বীণা দাসের প্রিয় কমলা’দি। কমলা’দি শাড়ির ভেতর রিভলবারটি লুকিয়ে উত্তর কলকাতার ‘রামমোহন রায়’ গ্রন্থাগারে নিয়ে আসেন। সেখানে তিনি বীণাকে রিভলবার চালানোর কৌশল শেখান। কিন্তু স্থানাভাবে বীণা তখন আর টার্গেট প্র্যাকটিস করার সুযোগ পান নি। ইতিমধ্যে বীণা অবশ্য দিনেশ মজুমদারের কাছে শারীরিকশিক্ষার প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।

১৯৩২-এর ৬ ফেব্রুয়ারি, গভর্ণর স্ট্যানলি যথাসময়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে আসেন। গভর্নর যখন সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অভিভাষণ পাঠ শুরু করছেন তখন বীণা উঠে দাঁড়িয়ে তাঁকে গুলি করলেন। অল্পের জন্য বীণা দাসের লক্ষ্য ভ্রষ্ট হল। গভর্ণর ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা তৎক্ষণাৎ দৌড়ে নিরাপদ স্থাণে চলে গেলেও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পিতা কর্ণেল হাসান সোহরাওয়ার্দী লাফ দিয়ে ডায়াস থেকে নেমে বীণা দাসের হাত থেকে রিভলবারটি কেড়ে নেন। ততক্ষণে বীণার রিভলবার থেকে ৫টি গুলি বেরিয়ে গেছে।

বীণাকে গ্রেপ্তার করা হল। টানা ৪৮ ঘন্টা বিরতিহীনভাবে চলল জিজ্ঞাসাবাদ। রিভলবারের উৎস জানতে বীণার ওপর চালানো হল নির্যাতন। বীণা মুখ খুললেন না। আদালতে দঁাড়িয়ে নির্ভীকচিত্তে সকল দায়-দায়িত্ব নিজের কঁাধে নিয়ে জবানবন্দি দিলেন।

ইংরেজীর ছাত্রী বীণা স্পষ্ট ইংরেজীতে শুরু করলেন এভাবে-‘ I confess that I fired at the Governor on the last Convocation Day at the Senate House’ ( আমিই সমাবর্তনের দিনে সিনেট ভবনে গভর্ণরকে গুলি করেছি)। এরপর সংক্ষিপ্ত অথচ সম্পূর্ণ এক বক্তব্যে তিনি তুলে ধরেন ব্রিটিশ উপনিবেশিকদের অত্যাচারের কথা, কেন তিনি গভর্ণরকে হত্যা করতে সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি বললেন, আমার উদ্দেশ্য ছিল মৃত্যুবরণ করা, এবং যদি আমাকে মরতে হত, আমি চেয়েছিলাম মহান মৃত্যু ……..এই ভারতবর্ষে এই পরিমাণ অন্যায়, অত্যাচার এবং বিদেশি শোষণের মধ্যে গুমরে কঁাদার চাইতে সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে প্রতিবাদ করে জীবন বিসর্জন দেওয়া কী অধিকতর ভালো নয়?’ একতরফা বিচারে বীণা দাসের ৯ বছরের জেল হল। তঁাকে একেক সময় একেক কারাগারে, একেক স্থাণে নিয়ে যাওয়া হত। কুমিল্লার কিশোরী বিপ্লবী শান্তি সুনীতি’র সাথে তিনি এক কারাগারে অন্তরীণ ছিলেন।

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলে স্থানান্তরিত হয়ে থাকার পর গান্ধীজির প্রচেষ্টায় অন্যান্য রাজনৈতিক বন্দীর সঙ্গে বীণাও মুক্তি পান। সাত বছর জেলে কাটিয়ে ১৯৩৯-এ তিনি মুক্তি লাভ করেন। জেল থেকে মুক্তির পর বীণা থেমে থাকেন নি। সেসময় বিপ্লবীদের অনেকে,বিশেষত তরুণেরা, গোপন সশস্ত্র সংগ্রামের পথ ছেড়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পথ বেছে নেন্। আরো অনেকের মতা বীণা দাস ও কংগ্রেসে যোগ দেন এবং ট্রেড ইউনিয়নের কাজ আরম্ভ করেন।

তিনি দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেস কমিটির সম্পাদিকাও ছিলেন। টালিগঞ্জের চালকল বস্তিতে গিয়ে বস্তিবাসী দরিদ্র শ্রমিকদের সঙ্গে দিনের পর দিন মিশে তিনি তাদের চরম দুর্গতিতে পাশে দাঁড়িয়েছেন। এর পাশাপাশি সেসময় তার সাহিত্যপ্রতিভা ও দেশাত্মবোধক চিন্তার প্রকাশ পাওয়া যায় কমলা দাস গুপ্ত সম্পাদিত ‘মন্দিরা’ পত্রিকায়। এই সময়কালের কিছু আলোচনা এ প্রসঙ্গে করা প্রয়োজন। বীণা দাস সুভাস বোস দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন, একথা সত্য।

এম এন রায়ের মেধা, তখনকার বৈজ্ঞানিক রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে বীণা দাসের তার প্রতিও এক ধরণের মুগ্ধতা ছিল। কংগ্রেসে নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে এম এন রায় ও উৎসাহী ছিলেন। এম এন রায় ও সুভাস বোস দুজনেই গান্ধীর ‘অহিংস নীতি’র প্রতিবাদে স্বাধীনতার জন্য আরো কঠোর কর্মসূচির কথা ভাবছিলেন। এ সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। সুভাস বোস ফ্যাসিস্ট জার্মানীর সাথে হাত মিলিয়ে ভারতবর্ষ থেকে ব্রিটিশ খেদানোর পরিকল্পনা করছিলেন।

এম এন রায়ের বক্তব্য ছিল ভিন্ন। তিনি বলেছিলেন, হিটলারের পৃথিবী হবে পরাধীন পৃথিবী, পরাধীন পৃথিবীতে ভারতের স্বাধীনতা সম্ভব নয়। এদিকে ত্রিশ ও চল্লিশের দশকে ভারতবর্ষ, বিশেষত বাংলায় এক নতুন মতাদর্শিক ঢেউ এসে লাগে। আন্দামানে নির্বাসিত ও কারাবন্দী তরুণ কমিউনিস্ট বিপ্লবীরা দেশে ফিরে আসেন। কমিউনিস্টরা এই বিশ্বযুদ্ধকে প্রথমে ‘সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ’ বললেও হিটলার কর্তৃক সোভিয়েত আগ্রাসনের পর তারা ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে গণযুদ্ধের ডাক দেয়।

কংগ্রেস প্রথম থেকেই যুদ্ধের পক্ষে বিপক্ষে কোন অবস্থান নেয়া থেকে বিরত থাকে। তবে পরবর্তীতে ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলন কংগ্রেসকে দিশা দেখায়। একদিকে যখন ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠছিল, অন্যদিকে সুভাস বোস ব্রিটিশ রাজকে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে উৎখাত করার আহ্বান জানাচ্ছিলেন, আবার প্রগতিশীল বামপন্থীরা তখন ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে গণযুদ্ধ চালাতে উদ্বুদ্ধ করছিলেন। এ টালটামাল পরিস্থিতিতে সংবেদনশীল বীণা দাস খানিকটা বিভ্রান্ত ও দোদুল্যমান হয়ে পড়েন। ১৯৪২-এ ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলন শুরু হলে বীণা দাস দক্ষিণ কলকাতা কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সভা ডাকলেন হাজরা পার্কে।

সভা ছিল বেআইনি। সেখানে একজন সহকর্মীকে সার্জেন্ট ব্যাটন দিয়ে প্রহার শুরু করতেই বীণা তার তীব্র প্রতিবাদ করেন। পুলিশ আবারো বীণাকে গ্রেপ্তার করে। এবারে তিনি রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে প্রেন্সিডেন্সি জেলে তিন বছর আটক থাকেন। এ দফায় ১৯৪৫-এ তিনি মুক্তি লাভ করেন।

স্বাধীনতার পর তিনি কংগ্রেসের হয়ে নির্বাচন করে রাজ্যসভার সদস্য নির্বাচিত হন। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং তার প্রভাব বীণা দাসকে ধীরে ধীরে রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। বীণা দাসের স্বামী ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামে নিবেদিতপ্রাণ শ্রীযতীশ ভৌমিক। স্বামীর মৃত্যুর পর বীণা দেবী আরো বিচ্ছিন্ন হয়ে যান রাজনীতি থেকে। কখন যে তিনি হরিদ্বার চলে গিয়েছিলেন তা সঠিকভাবে কেউ বলতে পারেন না।

ঊনবিংশ শতকের নবম দশক। ১৯৮৬ সালের ২৬শে ডিসেম্বর। হরিদ্বারে গঙ্গার ঘাটে এক অজ্ঞাতপরিচয় বয়স্কা মহিলার দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। সংবাদপত্রেও খবরটি উঠেছিল। পরে অজ্ঞাতনামা মহিলার পরিচয় জানা গিয়েছিল।

সেই মহিলা ছিলেন বীণা দাস। কি মর্মান্তিক শেষ পরিণতি! অগ্নিকন্যার প্রস্থাণ হল অজ্ঞাতে-নিভৃতে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।