আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেনসর ছাড়া শফিক রেহমানের লেখা (২)

শফিক রেহমানের এই লেখাটিও সেনসর করে ছাপানো হয়েছিলো, আসলে তিনি এভাবেই লিখেছিলেন। শুধু ইংরেজী শব্দগুলো কপি করতে পারিনি। ডিয়ার ইনডিয়ান প্রাইম মিনিস্টার নেড়িকুকুরের ইমেইল শফিক রেহমান গত কয়েক সপ্তাহ যাবৎ, বিশেষত ঈদ-উল ফিতরের পর থেকে খবর বেরিয়েছে আপনি ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর ২০১১-তে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় আসবেন। এই সংবাদে শুধু আমি নই, রাজধানীর সব কুকুরই উদ্বিগড়ব হয়েছে। ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলাকায় একটি কুকুর দুশ্চিন্তায় পাগল হয়ে গিয়ে ঈদের দিনে সে বাইশজন পথচারীকে কামড়ে দিয়েছে।

ইনডিয়ান গোয়েন্দা ও কুটনৈতিক সূত্রে ইতিমধ্যে আপনি নিশ্চয়ই এটাও জেনেছেণ যে আপনার সফরের সংবাদে আরো বেশি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশের মনুষ্যকুল। তবে কুকুরকুল ও মনুষ্যকুলের উদ্বেগের কারণ সম্পূর্ণ ভিনড়ব। মনুষ্যকুলের উদ্বেগের কারণগুলো পরে আপনাকে বলবো। তার আগে আপনাকে বিনীতভাবে জানাতে চাচ্ছি, কেন রাজধানী ঢাকার কুকুরকুল আপনার আগমন সংবাদে বিচলিত হয়েছে। আহমেদাবাদে বিপদ ইনডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট আহমেদাবাদ, সংক্ষেপে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি আইআইএমএ (ওওগঅ) নামে পরিচিত সেটি বিশ্বের এগারোতম সেরা বি-স্কুল রূপে ল-নের ফিনানশিয়াল টাইমস গ্লোবাল এমবিএ র‌্যাংকিংয়ে চিহ্নিত হয়েছে।

আইআইএমএ কোনো ডিগ্রি দেয় না। এই প্রতিষ্ঠান ডিপ্লোমা দেয়। শাইনিং ইনডিয়াতে ব্যবসা-বাণিজ্য-শিল্পে শাইন করতে ইচ্ছুক তরুণরা এমবিএ কোর্সের জন্য এই ইন্সটিটিউটে পড়তে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী। মার্চ ২০১১-তে আইআইএমএ-র সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য ইন্সটিউটিউট কর্তৃপক্ষ আপনাকে আহমেদাবাদে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে গুজরাটের মুখ্য মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও অন্যান্য বিশিষ্টজনের সঙ্গে আপনি সেই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন।

কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না, আপনার আগমনের আগে আইআইএমএ ক্যাম্পাস কর্তৃপক্ষ একটি নিষ্ঠুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তারা একটি এনজিওকে অনুরোধ করেছিলেন আপনি যখন সেখানে যাবেন, তখন এমন ব্যবস্থা নিতে, যেন আপনার চৌহদ্দিতে একটি কুকুরও না থাকে। এই এনজিওটি পশুদের প্রতি সদয় মনোভাব পোষণ করায়, তারা একটি শর্তে ক্যাম্পাসকে কুকুরমুক্ত করার কাজটি নিয়েছিলেন। শর্তটি ছিল, আপনি চলে যাবার পরপরই ধৃত কুকুরগুলোকে আবার ক্যাম্পাসে ছেড়ে দেয়া হবে। তাই হয়েছিল।

আপনি আসার আগে আইআইএম-এর নতুন ও পুরনো, উভয় ক্যাম্পাস থেকে সকল কুকুর সরিয়ে নেয়া হয়েছিল এবং আপনি চলে যাবার পরে আবার তাদের স্বস্থানে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। সূত্র : আহমেদাবাদ মিরর, ৮ আগস্ট ২০১১। আপনি কুকুরমুক্ত পরিবেশে সেখানে গিয়েছিলেন। ওই অনুষ্ঠানের আয়োজকরা আপনাকে নিরাপদে রেখেছিলেন। এই সংবাদটি জানার পর থেকে ঢাকার কুকুরকুল গভীর দুশ্চিন্তায় পড়েছিল।

তারা ভাবছিল, আহমেদাবাদের কুকুরদের মতো ঢাকার কুকুরদের কোনো বিপাকে পড়তে হবে কিনা। সপ্তাহ খানেক আগে ইনডিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ উপদেষ্টা শিবশংকর মেনন ঢাকায় এসে আপনার ফুল প্রুফ সিকিউরিটির ব্যবস্থা করেন। কুকুরকুলের গভীর আশংকা ছিল, আহমেদাবাদের দৃষ্টান্ত অনুসরণে হয়তো ঢাকা থেকে সব কুকুরকে উচ্ছেদ করা হবে। কুকুরকুলের এই আশঙ্কা আরো গভীর হয় যখন ঈদের পরে প্রকাশিত প্রায় সব দৈনিক পত্রিকায় ঢাকা ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে পাগলা কুকুরের কামড় শীর্ষক সংবাদটি গুরুত্ব সহকারে ছাপা হয়। তবে কি কোনো ইনডিয়ান অথবা বাংলাদেশি গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশের অধিকাংশ দৈনিক পত্রিকা হাত করে কুকুরবিরোধী ক্যামপেইন শুরু করেছে? যেজন্য শিবশংকর মেনন অতি অপ্রত্যাশিতভাবে এক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বার ঢাকায় আসতে বাধ্য হলেন ৩ সেপ্টেম্বরে! কে জানে? তবে স্বস্তির বিষয় এই যে এখন পর্যন্ত ঢাকার কুকুরদের প্রতি কোনো নিরাপত্তা বাহিনী কোনো রকম অভিযান চালায়নি।

মানুষের উদ্বেগ কুকুরকুলের দুর্ভাবনা কমলেও বাংলাদেশের মনুষ্যকুলের উদ্বেগ μমেই আরো বেড়েছে। তারা জানে আপনি বাংলাদেশে আসছেন দুই দিনের সফরে। থাকবেন গভীর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে প্যানপ ্যাসিফিক সোনারগাও হোটেলে। একান্ত সাক্ষাৎ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। তারপর যে কি হবে সে বিষয়ে বিভিনড়ব পত্রিকায় বিভিনড়ব খবর প্রকাশিত হয়েছে।

কোনটা ঠিক, তা কেউ জানে না। তারা শুধু জানে জানুয়ারি ২০১০-এ শেখ হাসিনা দিল্লিতে গিয়ে ইনডিয়ার সঙ্গে যে চুক্তি করে এসেছিলেন সেটা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আপনি এখন ঢাকায় আসছেন। কিন্তু কি সেই চুক্তি তা বাংলাদেশের মানুষ আজো জানে না। শেখ হাসিনা দিল্লি যাওয়ার আগে বিরোধী নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, জাতীয় স্বার্থে হাসিনা ও তার মধ্যে সম্ভাব্য চুক্তি বিষয় একটা আলোচনা বৈঠক হোক। খালেদা জিয়ার সেই ইচ্ছা উপেক্ষিত হয়েছিল।

সেই চুক্তি করে দিল্লি থেকে শেখ হাসিনা স্বদেশে ফিরে আসার পরে খালেদা জিয়া বারবার দাবি তোলেন, এক. জনগণের সামনে স্বচ্ছ ও সম্পূর্নভাবে যেন চুক্তিটি প্রকাশ করা হয় এবং দুই. চুক্তি বিষয়ে যেন সংসদে অবাধ আলোচনা সম্ভব হয়। খালেদা জিয়ার এই ন্যায় সঙ্গত দাবি অবহেলিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার সেই চুক্তির কোনো বিস্তারিত বিবরণ জনগণের সামনে প্রকাশ করেনি এবং সংসদেও এ সম্পর্কে কোনো আলোচনা করেনি। সংবিধান এড়িয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪৫ (ক) ধারাটির প্রতি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। এখানে লেখা আছে, বিদেশের সহিত সম্পাদিত সকল চুক্তি রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করা হইবে এবং রাষ্ট্রপতি তাহা সংসদে পেশ করিবার ব্যবস্থা করিবেন।

এখন শোনা যাচ্ছে, সংবিধানের এই বাধ্যবাধকতা এড়িয়ে যাবার জন্য আওয়ামী লীগ আনীত সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে এই ধারাটি বাদ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ, সংবিধান সংশোধিত হবার ফলে কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তি বিষয়ে সংসদে আলোচনার কোনো দরকার আর নেই। ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও দলীয় ঋণ শোধ যেহেতু ইনডিয়ার সঙ্গে এই চুক্তিটি হয়েছিল এই সংশোধনীর আগে, সেহেতু রেট্রসপেকটিভ এফেক্ট (জবঃৎড়ংঢ়বপঃরাব বভভবপঃ) দিয়ে, এই চুক্তিকে সংসদে আলোচনার বাইরে রাখা সম্ভব কিনা সে বিষয়টি ব্যারিস্টার রফিক-উল হক এবং অন্যান্য আইন বিশেষজ্ঞরা ভেবে দেখতে পারেন। তাদের চূড়ান্ত মতামত যাই হোক না কেন, ইনডিয়ার সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির গোপনীয়তা রক্ষায় আওয়ামী সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মনে এই ধারণাই হয়েছে গত বছর শেখ হাসিনা দিল্লিতে গিয়ে তিনি ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও দলীয় যে ঋণ শোধ করে এসেছিলেন যেটা এখন কড়ায় গন্ডায় বুঝে নেয়ার জন্য আপনি সদলবলে আসছেন। সাধারণ মানুষের এই ধারণা বদ্ধমূল হয় ৩০ জুলাই ২০১১-তে লন্ডনের দি ইকনমিস্ট ম্যাগাজিনের “ইনডিয়া ও বাংলাদেশ : আলিঙ্গনে একাকার“ শীর্ষক রিপোর্টে যেখানে লেখা হয়, “ইনডিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বিকশিত হচ্ছে ২০০৮ থেকে যখন ব্যাগ ভর্তি ইনডিয়ান নগদ টাকা ও উপদেশের সাহায্যে বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

” (ঊাবৎ ংরহপব ২০০৮, যিবহ ঃযব অধিসর খবধমঁব, যবষঢ়বফ নু নধমং ড়ভ ওহফরধহ পধংয ধহফ ধফারপব, ঃৎরঁসঢ়যবফ রহ মবহবৎধষ বষবপঃরড়হং রহ ইধহমষধফবংয, ৎবষধঃরড়হং রিঃয ওহফরধ যধাব নষড়ংংড়সবফ-ওহফরধ-ইধহমষধফবংয, ঊসনৎধপবধনষব ুড়ঁ.) এর আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমেরিকার সেμেটারি অফ স্টেট (পররাষ্ট্র মন্ত্রী) হিলারি ক্লিনটনের ১৫ জানুয়ারি ২০১১-র টেলি সংলাপের যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয় তাতেও ২০০৮-র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় সম্পর্কে হিলারি ক্লিনটন একই ধরনের মন্তব্য করেছিলেন। ওই টেলিফোন সংলাপের এক পর্যায়ে হিলারি ক্লিনটন বলেছিলেন, “মাদাম প্রধানমন্ত্রী আমি ভেবেছিলাম আমাকে এত দূর যেতে হবে না। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য, আমি ভুল ভেবেছিলাম। আপনি জানেন এবং আমরাও জানি কিভাবে আপনার সরকার ক্ষমতায় এসেছে। ভুলে যাবেন না, নির্বাচনের পর আমরা বলেছিলাম, সেটা অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে এবং আপনাকে সাহায্য করেছিলাম।

প্রধানমন্ত্রী, আপনি জানেন দিল্লিতে আমাদের বন্ধুদের নির্দেশে কিভাবে ফলাফল আগেই ঠিক করা হয়েছিল। তারা যেভাবে চেয়েছিল, সেভাবেই আমরা চলেছিলাম। ” (গধফধসব চৎরসব গরহরংঃবৎ, ও ঃযড়ঁমযঃ ও ড়িঁষফ হড়ঃ যধাব ঃড় মড় ঃযধঃ ভধৎ. ইঁঃ, ঁহভড়ৎঃঁহধঃবষু, ও ধিং ৎিড়হম. ও যড়ঢ়ব ুড়ঁ শহড়ি ধং সঁপয বি শহড়,ি যড়ি ুড়ঁৎ মড়াবৎহসবহঃ পধসব ঃড় ঢ়ড়বিৎ. উড়হ’ঃ ভড়ৎমবঃ ঃযধঃ বি যবষঢ়বফ ুড়ঁ পড়হমৎধঃঁষধঃরহম ুড়ঁ ধভঃবৎ ঃযব বষবপঃরড়হ ঃবৎসরহম রঃ ধং ধ ভৎবব ধহফ ভধরৎ, ণড়ঁ শহড়ি চৎরসব গরহরংঃবৎ, যড়ি ঃযরং বষবপঃরড়হ ৎবংঁষঃ ধিং ঢ়ৎব-ধৎৎধহমবফ ধঃ ঃযব নবযবংঃ ড়ভ ড়ঁৎ মড়ড়ফ ভৎরবহফং রহ ঘবি উবষযর. ডব ধপঃবফ ঃযব ধিু ঃযবু ংঁমমবংঃবফ ঁং.) হাসিনার প্রতারণা আশা করি এসব উদ্ধৃতি পড়ে আপনিও বুঝতে পারছেন আপনার দেশের প্রতি শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের কৃতজ্ঞতা ও দায়বদ্ধতা যে কতো বিশাল সেটা বাংলাদেশে এবং বিদেশে বহুল আলোচিত। সুতরাং শেখ হাসিনা নিজেকে যতোই সেরা দেশপ্রেমিক রূপে দাবি করুন না কেন, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ মনে করে আসলে তিনি প্রতারণা করছেন। অস্টৃয়ান রাজনৈতিক দার্শনিক নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি (১৪৬৯-১৫২৭) বলেছিলেন, যদি কথা দিয়ে কখনো সত্যটাকে ঢাকতে আপনার দরকার হয় তাহলে এমনভাবে করবেন যেন কখনোই সেটা জানা না যায় অথবা যদি জানা যায় তাহলে আপনার সমর্থনে যেন কিছু যুক্তি হাতের কাছেই থাকে।

(অহফ রভ, ঃড় নব ংঁৎব, ংড়সবঃরসবং ুড়ঁ হববফ ঃড় পড়হপবধষ ধ ভধপঃ রিঃয ড়িৎফং, ফড় রঃ রহ ংঁপয ধ ধিু ঃযধঃ রঃ ফড়বং হড়ঃ নবপড়সব শহড়হি, ড়ৎ, রভ রঃ ফড়বং নবপড়সব শহড়হি, ঃযধঃ ুড়ঁ যধাব ধ ৎবধফু ধহফ য়ঁরপশ ফবভবহপব.) হিলারি ক্লিনটনের কথা ও দি ইকনমিস্টে প্রকাশিত রিপোর্ট বাংলাদেশের মানুষ সত্য বলে ধরে নিয়েছে। এসব সত্য এলোমেলো কথা দিয়ে ঢাকবার চেষ্টা আওয়ামী সরকার করেছে। কিন্তু মানুষের কাছে সেসব বিশ্বাসযোগ্য হয়নি। অশ্লীল দ্রুততা জানুয়ারি ২০১০-এর পর থেকে ওই অপ্রকাশিত চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইনডিয়ান সরকার যেভাবে গিয়েছে তাকে বলা যায় একটি অশ্লীল দ্রুততা বা অ্যান ইনডিসেন্ট হেইস্ট (অহ রহফবপবহঃ যধংঃব)। জানুয়ারি ২০১০-এরপর ইনডিয়ান মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তাদের দৌড়ঝাপ দ্রুত বেড়ে যায়।

ইনডিয়ান বিমানমন্ত্রী ভায়ালার রাভি ঢাকায় সচিবালয়ের লিফটে বেশ কিছুক্ষণ আটকে গেলেও অন্যন্যরা পূর্ণ উদ্যমেই তাদের টুর প্রোগ্রাম চালিয়ে যান। এসব অ্যাডভান্স পার্সন ও টিমের পরিণতিতেই আপনি ৬ সেপ্টেম্বরে ঢাকায় আসছেন। ট্রানজিট বিষয়ে অস্বচ্ছতা কিন্তু আপনার এই আগমন যে ইনডিয়া শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের স্বার্থে হচ্ছে সেই ধারণা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এই চুক্তি, বিশেষত পানি বন্টন ও ট্রানজিট বিষয়ে গত কয়েক সপ্তাহে বিভিনড়ব পত্রপত্রিকায় বহু লেখালেখি হয়েছে। বিশিষ্ট চিন্তাবিদদের লেখা নিবন্ধ বেরিয়েছে।

বহু সেমিনার ও মানববন্ধন হয়েছে। এমনকি আওয়ামী লীগ সমর্থক পত্রিকাগুলোতে এই অশ্লীল দ্রুততার বিরুদ্ধে সমালোচনা করে বলা হয়েছে ট্রানজিট বিষয়টি বিলম্বিত করতে এবং ভবিষ্যতে একটা প্যাকেজ ডিলের আওতায় আনতে। মনে হচ্ছে এখন আপনিও বিষয়টি বুঝেই আপনার সফরে কর্মকা-ের পরিধি কমিয়ে আনা হয়েছে। ট্রানজিট বিষয়ে অস্বচ্ছতা আরো গভীর হয়েছে। দৈনিক নয়া দিগন্ত জানিয়েছে ‘দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সংশোধন করে দুই বন্দরে ট্রানজিট দেয়া হচ্ছে ভারতকে।

’ দৈনিক প্রম আলো জানিয়েছে ‘ট্রানজিট নিয়ে চুক্তি নয়, সম্মতিপত্র সই হবে। ’ দুর্বল আওয়ামী সরকার বিভিনড়ব কূটনৈতিক সূত্রে আমি জানতে পেরেছি, আপনার সরকার এখন এই সিদ্ধান্তে আসতে বাধ্য হয়েছে যে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিশেষত ঈদের আগে বাংলাদেশের বিভিনড়ব রাস্তার বেহাল অবস্থা টিভি চ্যানেগুলোতে দেখানোর পরে ইনডিয়াকে ট্রানজিট দেয়ার বিষয়ে আওয়ামী সরকারের অবস্থান আরো দুর্বল হয়েছে। কূটনৈতিক মহল এটাও মনে করছে যে, পরবর্তী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হবে এটা বুঝেই পঞ্চদশ সংশোধনী করা হয়েছে যেন আওয়ামী লীগ আবার নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আরো এক মেয়াদে ক্ষমতাসীন থাকতে পারে। আওয়ামী লীগের এই দুর্বল অবস্থান আপনার সহকর্মীরা টের পেয়েই সম্ভবত এখন আপনাকে উপদেশ দিয়েছেন, ইনডিসেন্ট হেইস্ট (ওহফবপবহঃ ঐধংঃব)-এ নয়, গো সেøা (এড় ঝষড়)ি বা ধীরে চলতে।

বলতেই হবে এটা ভালো উপদেশ। আপনি আরো সময় নিন। আপনার নিজের মনেও যে ব্লকেজ আছে সেটা দূরীকরণের জন্য সচেষ্ট হোন। আপনার মেন্টাল ব্লকেজ ৩০ জুন ২০১১-তে ইনডিয়ান সংবাদপত্রের সিনিয়র সম্পাদকদের সঙ্গে একটি বৈঠকে বাংলাদেশ বিষয়ে তাদের একটি প্রশেড়বর উত্তরে আপনি বলেন “আমাদের এটা স্বীকার করতেই হবে যে, বাংলাদেশের কমপক্ষে ২৫ শতাংশ মানুষ জামায়াতে ইসলামীর ঘোর সমর্থক, তারা খুবই ইনডিয়া বিদ্বেষী এবং অনেক সময়েই তারা আইএসআই (পাকিস্তানি সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী, ইন্টার সার্ভিসেস এজেন্সিস) দ্বারা পরিচালিত হয়। সুতরাং বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট যে কোনো সময়ে বদলে যেতে পারে।

” (ইঁঃ বি সঁংঃ ৎবপশড়হ ঃযধঃ ধঃ ষবধংঃ ২৫ ঢ়বৎবপবহঃ ড়ভ ঃযব ঢ়ড়ঢ়ঁষধঃরড়হ ড়ভ ইধহমষধফবংয ংবিধৎ নু ঃযব ঔধসরধঃ-ঁষ-ওংষধসর ধহফ ঃযবু ধৎব াবৎু ধহঃর-ওহফরধহ, ধহফ ঃযবু ধৎব রহ ঃযব পষঁঃপযবং, সধহু ঃরসবং, ড়ভ ঃযব ওঝও. ঝড়, ধ ঢ়ড়ষরঃরপধষ ষধহফংপধঢ়ব রহ ইধহমষধফবংয পধহ পযধহমব ধঃ ধহু ঃসব.) এই বক্তব্যে আপনার মেন্টাল ব্লকেজ প্রকাশিত হয়েছে। এক. বাংলাদেশের ২৫ শতাংশ মানুষ জামায়াতে ইসলামীর ঘোর সমর্থক নয়। গত কয়েকটি সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল বিবেচনা করলে দেখা যাবে জামায়াতের ঘোর সমর্থক, যারা ভোট দিয়ে জামায়াতকে বিজয়ী করতে চায়, তাদের সর্বোচ্চ সংখ্যা হবে আট শতাংশ। আপনি সেই সংখ্যাকে তিনগুনেরও বেশি বানিয়ে বলেছেন ২৫ শতাংশ। সংখ্যাটি আপনার এরাথমেটিকাল ভুলের ফসল নয়Ñ আপনার বিশ্বাসেরই ফসল।

আপনি যা বিশ্বাস করেন সেটাই বলেছেন। দুই. আপনি এটাও বলেছেন তারা ঘোর ইনডিয়া বিরোধী। আসলে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই ঘোর দেশপ্রেমিক এবং তাদের এই পরিচয় মুদ্রাটির অপর পিঠ হলো তারা ইনডিয়ার সদিচ্ছা বিষয়ে সন্দিহান কিন্তু ইনডিয়া বিরোধী নয়। কেন তারা ইনডিয়া সম্পর্কে সন্দেহ প্রবণ হলো সে বিষয়ে একটু পরেই আপনাকে বলছি। তিন. আইএসআইয়ের মারফতে বাংলাদেশিরা পাকিস্তানের টাকা পায় কিনা সেটা আপনাদের গোয়েন্দা বিভাগ ‘র’ (জঅড) ভালো বলতে পারবে।

তবে আপনি জেনে রাখতে পারেন বাংলাদেশের মানুষ মনে করে এই মুহূর্তে যতো মুসলিম আইএসআইয়ের বেতনভোগী আছেন, তার চাইতে অনেক বেশি র’য়ের মুসলিম ও হিন্দু বেতনভোগী বাংলাদেশে আছেন। গরিব ও ছোট রাষ্ট্র যে বিদেশী সামরিক গোয়েন্দাদের লীলাভূমি হতে পারে সেটা নতুন কোনো তথ্য নয়। আপনার এসব কথায় বাংলাদেশের মানুষ দুঃখ পেয়েছে। বিষয়টা যদি আমি অন্যভাবে বলি তাহলে হয়তো আপনি কষ্ট পাবেন। তবুও বলছি বিনীতভাবে।

সাম্প্রদায়িক মানচিত্র ১৯৪৭-এ এই উপমহাদেশের হিন্দু প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত হয়েছিল ইনডিয়া, যাকে কেউ কেউ হিন্দুস্তানও বলেন। একই সাথে মুসলিম প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত হয়েছিল পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান। সুতরাং ১৯৪৭-এর মানচিত্রটি গঠিত হয়েছিল সাম্প্রদায়িক বিবেচনার ভিত্তিতে। আরো সোজাভাবে বলা যায় ১৯৪৭-এর মানচিত্রটি ছিল সাম্প্রদায়িক এবং এটি ইনডিয়া পাকিস্তান ও বাংলাদেশ (যা অতীতে ছিল পূর্ব পাকিস্তান) এই তিনটি দেশের বেলায়ই প্রযোজ্য। সুতরাং পূর্ব পাকিস্তানের বদলে আজকের যে বাংলাদেশ হয়েছে তাকে ঘোর ইসলামপন্থী মনে করা হলে বাংলাদেশিরাও ইনডিয়ানদের ঘোর হিন্দুপন্থী মনে করতে পারেন।

এটা অস্বাভাবিক নয়। বরং ইনডিয়াকে সাম্প্রদায়িক মনে করাটাই বেশি যৌক্তিক। এক. ইনডিয়াতে তিনটি বড় হত্যাকান্ডের মধ্যে দুটি হয়েছে সাম্প্রদায়িক কারণে। মহাত্মা গান্ধী নিহত হয়েছিলেন হিন্দুর হাতে। ইন্দিরা গান্ধী নিহত হয়েছিলেন শিখের হাতে।

পক্ষান্তরে বাংলাদেশের দুটি বড় হত্যাকান্ড (শেখ মুজিব ও জিয়া) হয়েছিল রাজনৈতিক কারনে। দুই. বাবরি মসজিদ ধ্বংস করার মতো কোনো ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেনি। তিন. গুজরাটে মুসলিম হত্যার মতো কোনো ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেনি। চার. গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মতো কোনো শক্তিশালী ঘোর সাম্প্রদায়িক নেতা বাংলাদেশে নেই। আপনি কি? আপনাকেও তো কেউ কেউ সাম্প্রদায়িক বলতে পারেন।

বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম সংগঠিত ধর্ম হলো শিখিজম বা শিখ ধর্ম। পাচশ বছরেরও বেশি পুরনো এই ধর্মের দুই কোটি ষাট লক্ষ অনুসারীরা শিখ নামে পরিচিত। তারা একেশ্বরবাদী। তাদের মূলমন্ত্র হলো এক ওংকার বা কেবল একটাই ঈশ্বর আছেন। পাচটি জিনিস শিখদের সবসময় বহন করতে হয়।

এক. অকর্তিত চুল বা কেশ। সে জন্য শিখ পুরুষরা পাগড়ি পরেন। এই পাগড়ি যে কোনো রংয়ের হতে পারে। তবে শিখরা তাদের পোশাকের সঙ্গে ম্যাচিং কালারের পাগড়ি পরেন। দুই. একটি চিরুনী।

তিন. একটি লোহা অথবা ইস্পাতের বালা। চার. কাছেড়া বা কাছা বা বক্সার শর্ট বা হাফপ্যান্ট জাতীয় আন্ডারওয়্যার। এবং পাচ. একটি কৃপাণ বা ছোরা। এই পাচটিকে শিখরা বলেন পঞ্চ কাকর। সাম্প্রতিক কালে এয়ার ট্রাভেলে বিভিনড়ব নিরাপত্তার কারণে শিখরা ভ্রমণের সময়ে কৃপাণ সঙ্গে রাখতে পারছেন না।

আপনি প্রধানমন্ত্রী হলেও হয়তো কোনো কৃপাণ সঙ্গে আনেননি। কিন্তু আপনার পাগড়ি থেকে অনুমিত হতে পারে আপনি চিরুনি রেখেছেন, বালা ও কাছা পরেছেন। কিন্তু তারপরেও কোনো বাংলাদেশি আপনাকে সাম্প্রদায়িক ভাবছে না। এবার চিন্তা করুন, আপনার বর্তমান কাউন্টারপার্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অথবা বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়া যদি ইসলামি রীতি অনুযায়ী বোরখা অথবা হিজাব পরে আপনার সঙ্গে আলোচনায় বসেন, তাহলে ইনডিয়ান রিপোর্টাররা কি লিখবে? তারা তো অসাম্প্রদায়িকতা গেল গেল রব তুলবে। তাই না? তাহলে বুঝতেই পারছেন সাম্প্রদায়িকতার দোষে আপনারাই দুষ্ট- বস্তুত গভীরভাবে দুষ্ট, যে কারণে বলিউডের তিন নায়ক (এবং মাঝে মধ্যে ইনডিয়ার রাষ্ট্রপতি) বাদে ইনডিয়ার প্রায় সব মুসলিমই ইনডিয়াতে মার্জিনালাইজড বা অস্তিত্ব বিহীন হয়ে পড়েছে।

সব দেশেই মিক্সড মানুষ থাকে সে যাই হোক। আমি ধর্ম বিষয়ে যাবো না। কুকুররা ধর্মীয় যন্ত্রণা ও উৎপাত থেকে মুক্ত। আমাদের কোনো ধর্ম নেই। আমাদের কোনো ধর্মীয় পোশাকও নেই।

পাগড়ি-চিরুনি, বোরখা-হিজাব, ধুতি-পৈতা প্রভৃতি বিড়ম্বনা আমাদের নেই। তবে মনুষ্যকুলের মধ্যে যখন তাদের নিজ নিজ ধর্ম বিশ্বাস আছে, তখন সেটাকে মেনে নিয়ে পারস্পরিক শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থানের কথাই চিন্তা করা উচিত। কোনো মুসলিম ব্যক্তিকে কোনো শিখের অযৌক্তিক মন্তব্য করা উচিত নয়- তেমনি কোনো শিখ সম্পর্কে কোনো মুসলিমেরও অযৌক্তিক মন্তব্য করা উচিত নয়। আসল কথা, এই উপমহাদেশের পলিটিশিয়ানদের মেনে নিতে হবে সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে রচিত পাকিস্তান, ইনডিয়া ও বাংলাদেশের তিনটি মানচিত্র রচিত হয়েছিল এবং এই তিনটি দেশে, যথাμমে, মুসলিম, হিন্দু ও মুসলিমরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। তার মানে, এই সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যে কেউ কেউ সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপনড়ব হলেও, অধিকাংশই নয়।

সবদেশেই এরকম মিক্সড মানুষ থাকে। বাংলাদেশিদের রাজনৈতিক চরিত্র বরং, বাংলাদেশের মানুষ পাকিস্তানি ও ইনডিয়ানদের তুলনায় অনেক বেশি রাজনৈতিকভাবে সচেতন হওয়ায়, তারা কম সাম্প্রদায়িক। তাই বাংলাদেশের সঙ্গে যে কোনো আলোচনা ও চুক্তিতে বাংলাদেশিদের রাজনৈতিক চরিত্র গভীর বিবেচনায় রাখতে হবে। আদিকাল থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত এই ভূখ-ের অবহেলিত ও উপেক্ষিত কৃষিজীবী ও মৎস্যজীবী মানুষরা এখন জানে স্বাধীন হবার সুফলগুলো। চাষী ও জেলে থেকে তারা আজ হতে পেরেছে শ্রমিক ও চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি।

পৃথিবীর সেরা পাট উৎপাদনকারী এই ভূখ-ে ১৯৪৭ পর্যন্ত একটিও জুট মিল ছিল না। সব জুট মিল ছিল পশ্চিম বাংলায় হুগলি নদীর তীরে অথবা বৃটেনে ন্ডান্ডিতে। খুব সম্ভবত ১৯৪৮-এ পূর্ব পাকিস্তানের প্রম জুট মিল চালু হয় খুলনায় দৌলতপুরে। তারপর বিশ্বের বৃহত্তম জুট মিল স্থাপিত হয় নারায়ণগঞ্জে আদমজিনগরে। সেই জমজমাট পাট শিল্প পড়ে গেলেও নতুন পেশা ও শিল্পে আগ্রহী বাংলাদেশিরা সৃষ্টি করেছে গার্মেন্টস ইনড্রাস্টৃ।

আরো অ্যাডভেঞ্চারাস বাংলাদেশিরা বিদেশে গিয়েছে কাজের খোজে। গার্মেন্টস ইন্ডাস্টৃতে বাংলাদেশি শ্রমিক ও এন্টারপ্রেনিউয়ারদের প্রভূত সুনাম হয়েছে। প্রবাসেও বাংলাদেশি শ্রমিকরা সুনাম করেছে এবং এন্টারপ্রেনিউয়াররা বিভিনড়ব ক্ষেত্রে সফল হয়েছে। এদের সবচেয়ে বড় সাফল্য হয়েছে ইনডিয়ান ফুড খেতে বিশ্ববাসীকে আগ্রহী ও অভ্যস্ত করাতে। চিকেন টিক্কা মসালা, বিফ ভিনডালু, টিক্কা, কাবাব, তরকা ডাল, নান এসব কোনোটাই মাছে-ভাতে বাংলাদেশিদের খাবার নয়।

অথচ, বিদেশের মাটিতে এসব ইনডিয়ান ফুডে বহু বিলিয়ন ডলার শিল্প ও ব্যবসা সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশেরই মানুষ। ইনডিয়া বিদেশে পরিচিত হতে পারে বলিউড মুভি আর কৃকেটের বদৌলতে। কিন্তু খাদ্যে ইনডিয়াকে বিদেশে পরিচিত করেছে বাংলাদেশিরা। আর এজন্য বাংলাদেশিদের দরকার হয়নি টাটা, বিড়লা, আমবানি, মিত্তাল ও হিন্দুজাদের। এমনকি চায়নিজ, থাই, ইটালিয়ান ও আমেরিকান ফুডেও বাংলাদেশিরা সাফল্য অর্জন করেছে।

আমি জানি ওয়াশিংটনে অবস্থানকারী জনৈক বাংলাদেশি এন্টারপ্রেনিউয়ার মি. ফারুক আহমেদ এখন সেই শহরে তিনি ও তার নিকটাত্মীয়রা মিলে ত্রিশটি সাবওয়ে (ঝঁনধিু) হেলথ ফুডের দোকানের মালিক হয়েছেন। প্রবাসে বিভিনড়ব ক্ষেত্রে এসব অপ্রত্যাশিত সাফল্য ও সুনামের জের টেনে এখন অস্টৃয়া থেকে অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি থেকে জাপান, সউদি আরব থেকে সাউথ আফৃকা, ইউএই থেকে ইউকে এবং ইউএসএ থেকে কানাডা পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিনড়ব দেশে প্রায এক কোটি বাংলাদেশি কাজ করছে। বাংলাদেশের নতুন ইনডাস্টৃ ও ইকনমি কিন্তু তারা যেখানেই থাকুক না কেন, বাংলাদেশের মাটি তাদের টানে। তারা ভুলে যায়নি তাদের পেছনে ফেলে আসা আত্মীয় স্বজনদের। তাই তারা নিয়মিতভাবে বাংলাদেশে টাকা পাঠায়।

ফলে বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে একটি রেমিটান্স ইকনমি। আর রেমিটান্স ইকনমি ও গার্মেন্টস ইনডাস্টৃর পেছনে গড়ে উঠেছে হাউজ বিলডিং ইনডাস্টৃ, ফুড ও কেটারিং, সিরামিকস ও টাইলস, কসমেটিকস ও টয়লেটৃজ, শাড়ি ও লুংগি, শিপ ব্রেকিং ও শিপ বিলডিংসহ বহু ধরনের শিল্প ও ব্যবসা। পূর্ব পাকিস্তান আমলে সূচিত ওষুধ, টেক্সটাইল ও লেদার ইনডাস্টৃ পেয়েছে নতুন গতিবেগ। যে বাংলাদেশে ছিল সাধনা ঔষধালয়, শক্তি ঔষধালয়, কেরু ডিসটিলারি, হরদেও গ্লাস ওয়ার্কস, ঢাকেশ্বরী, মোহিনী, লক্ষ্মীনারায়ন প্রভৃতি টেক্সটাইল মিলসহ মাত্র কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান সেই বাংলাদেশে এখন আছে অভিজ্ঞ এনটারপ্রেনিউয়ার পরিচালিত কয়েক শ শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আপনি ঢাকায় এসে দেখবেন বসুন্ধরা সিটি, ইউনুস টাওয়ার, টিকে টাওয়ার, নূর টাওয়ারসহ বহু হাইরাইজ অফিস ও শপিং মল।

এসবই তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরে। বাংলাদেশে যদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকতো এবং রাজনেতিক নেতৃত্ব যদি আরো দক্ষ ও দূরদর্শী হতো তাহলে বাংলাদেশ নিশ্চয়ই আরো উনড়বতি করতো। সে যাই হোক। আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার রক্ষায় সচেতন দেশে এবং বিদেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশিরা মনে করেন তাদের এই কষ্টার্জিত অবস্থান ধরে রাখতেই হবে। আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ১৯৪৭-এ এই ভূখ-ের মানুষরা পাকিস্তান আন্দোলন করে বিজয়ী হয়েছিল।

পূর্ব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তারপর ১৯৭১-এ এই বাংলাদেশেরই মানুষ একটি পূর্ণ স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করেছিল এবং বিজয়ী হয়েছিল। এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতে এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে বাংলাদেশের মানুষ কিছুতেই তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার হারাতে রাজি হবে না। অন্য ভাষায় বলা যায়, বাংলাদেশের মানুষ তাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সবসময়ই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকবে। এসব কথা আপনাকে জানালাম এই জন্য যে বাংলাদেশের এই উনড়বতিতে ইনডিয়ান শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা আকৃষ্ট হয়েছে।

আজকেই খবর বেরিয়েছে টাটা আবার বাংলাদেশে ফিরে আসার তোড়জোর করছে। তাই বাংলাদেশিরা উদ্বিগড়ব যে আওয়ামী লীগ সরকারকে বশীভূত করে ইনডিয়ান সরকার ইনডিয়ানদের স্বার্থ রক্ষার জন্য সদাব্যস্ত থাকবে। আপনার এই সফর তারই পূর্ব প্রস্তুতি মাত্র। তাহলে এখনই বিভিনড়ব চুক্তি সম্পাদন নয়, বরং দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সন্দেহ ও অবিশ্বাস নিরসনের জন্য উভয় দেশকে সμিয় হতে হবে। আপনি জানেন ইওরোপে শত শত বছর যাবৎ যুদ্ধমান দেশগুলো দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর, চিরস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার দিকে মনোযোগী হয়।

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শেষের পনের বছর পরে ফ্রেঞ্চ স্টেটসম্যান জ মনে-র (ঔবধহ গড়হহবঃ, ১৮৮৮-১৯৭৯) ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও গভীর দূরদর্শিতার ফলে ১৯৬০-এ প্রমে ছয়টি দেশ মিলে ইওরোপিয়ান কমন মার্কেট প্রতিষ্ঠা করে। সেই কমন মার্কেট এখন হয়েছে সাতাশটি দেশের ইওরোপিয়ান ইউনিয়ন বা সংক্ষেপে ইইউ। কিন্তু এই পর্যায়ে পৌছাতে ইওরোপিয়ানদের লেগেছে পঞ্চাশ বছর। সার্ক কার্যμম অনুসরণ করলেই ... ইনডিয়া-বাংলাদেশ মিলে ইওরোপিয়ান দৃষ্টান্ত অনুসরন করতে পারে। প্রেসিডেন্ট জিয়া সেই লক্ষ্যে সার্ক-এর বুনিয়াদ প্রতিষ্ঠা করে যান।

এখন ইনডিয়া-বাংলাদেশ তথা সার্কভুক্ত দেশগুলো যদি সার্ককে একটি কার্যকর ও সফল জোট রূপ প্রতিষ্ঠা করতে পারে তাহলে পানি বন্টন, ট্রানজিট এসব ইসু গৌন হয়ে যাবে। এই উপমহাদেশের মানুষ নিজেদের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব বজায় রেখেও ইওরোপ মহাদেশের মানুষের মতো মিলেমিশে উনড়বতি করতে পারবে। কিন্তু তার জন্য ইওরোপিয়ানদের মতোই সময় লাগবে। অর্থাৎ গো সেøা করতে হবে। আর এই প্রচেষ্টায় উদ্যোগী হতে হবে বড় রাষ্ট্র হিসেবে ইনডিয়াকেই যেমন ইওরোপিয়ান ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি উদ্যোগী হয়েছিল দুটি বড় রাষ্ট্র, ফ্রান্স ও জার্মানি।

নৈপুণ্য ম্লান হলো আপনাকে এই ইমেইল লেখার সময়ে জানলাম তিস্তা নদীর পানি বন্টন সম্পর্কিত চুক্তিটি ভেস্তে গিয়েছে। সেক্ষেত্রে আপনার সফরে আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে এখন হয়তো থাকবে ট্রানজিট বিষয়ে একটি সম্মতিপত্র, ফেনীর পানি বন্টন চুক্তি, সহযোগিতার সমন্বিত রূপরেখার চুক্তি, দুটি প্রটোকল ও ছয়টি সমঝোতা স্মারকপত্রে সই দেয়া। কিন্তু তিস্তার পানি বন্টনেই ছিল বাংলাদেশের স্বার্থ। ফেনীতে ছিল ইনডিয়ান স্বার্থ। এখন দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের স্বার্থ অরক্ষিতই থেকে যাবে।

তাহলে এত ড্রাম পিটিয়ে আপনার যে সফরটি হচ্ছে সেটি বাংলাদেশিদের কাছে অনাকর্ষনীয় হয়ে গেল না কি? পলিটিশিয়ান মনমোহনের চাইতে, প্রায় একই সময়ে আগন্তুক ফুটবলার মেসি’র প্রতিই কি মানুষ বেশি আগ্রহী হবে না? মেসি বাংলাদেশে এসে তার ফুটবল নৈপুণ্য দেখাবেন। তিনি নিয়ে যাবেন কিছু ডলার। আর আপনি? আপনি এসে আপনার রাজনৈতিক নৈপুণ্য দেখাতে সচেষ্টা থাকবেন। যে নৈপুণ্য তিস্তা চুক্তি ভেস্তে যাবার পর ম্লান হয়ে গিয়েছে। আপনি নিয়ে যাবেন কি? সে প্রশেড়বর উত্তর পাওয়া যাবে পরে।

তবে সেটা যাই হোক না কেন, বাংলাদেশের মানুষ আশা করছে আপনার দেয়া এবং নেয়ার মধ্যে যেন একটা ভারসাম্য বজায় থাকে। বাংলাদেশের মানুষ যেন বঞ্চিত না হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১১-তে ঢাকার একটি দৈনিক পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছিল ঢাকাস্থ কানাডার বিদায়ী হাই কমিশনারের স্ত্রী ক্যাথরিন লোথার বলেছেন, বাংলাদেশের কুকুর অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও চৌকস। ম্যাডাম ক্যাথরিন লোথার ঠিকই বলেছেন। থ্যাংক ইউ ম্যাডাম লোথার।

আসলেই বাংলাদেশের কুকুর অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও চৌকস। তিনি যেটা বলেননি সেটা হচ্ছে আমাদের চাইতেও বাংলাদেশের মানুষ বেশি বুদ্ধিমান ও বেশি চৌকস। তা নাহলে এই দেশে কুকুরকুলের বদলে মনুষ্যকুল কিভাবে তাদের আধিপত্য বজায় রাখছে? বাংলাদেশের এই বুদ্ধিমান ও চৌকস মানুষকে প্রতারিত করা কারো পক্ষেই সম্ভব হবে না। বাংলাদেশের মানুষ হৃদয়বান ও অতিথি পরায়নও বটে। তাই ইনডিয়ানরা যেটা পারেনি সেটা বাংলাদেশিরা পেরেছে।

রেস্টুরেন্ট বিজনেসে বাংলাদেশিরা সফল হয়েছে তাদের মধ্যে নিহিত অতিথি পরায়নতার ফলে। আপনি বাংলাদেশের আতিথ্য গ্রহণ করেছেন। সেজন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। আপনার সেবা ও যতেড়ব যেন কোনো ত্রুটি না হয় সেজন্য বাংলাদেশের অতিথি পরায়ণ মানুষ তৎপর থাকবে। আপনার শুভ কামনা করছি।

ঢাকা ৫ সেপ্টেম্বর ২০১১ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।