আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুহাম্মাদ (সাঃ) ও খ্রীস্টান মিশনারীদের মধ্যে বিতর্ক

বলুনঃ সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল। [১৭:৮১-পবিত্র কুরআন] রাসূলুল্লাহ্ -র মৃত্যুর দু এক বছর আগে নবম হিজরীর ঘটনা। চারিদিকে তখন ইসলামের জয়জয়কার। আরবের গোত্রগুলো মূর্তিপূজা পরিত্যাগ করে দলে দলে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছে।

ঠিক এরকম সময়েই নাজারান থেকে ষাট সদস্যের খ্রীস্টান মিশনারীদের একটি প্রতিনিধি দল আসে মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য। তাদের নেতৃত্ব দেয় বিশপ আবুল হারিস। বিশপ আবুল হারিস ছাড়াও এ দলে ছিল আরো পয়তাল্লিশজন খ্রীস্টান পন্ডিত। অবশ্য এ ঘটনার পূর্বেই রাসূলুল্লাহ্ বিভিন্ন দেশের শাসক ও আরব গোত্রদের কাছে দূত মারফত চিঠি প্রেরণ করেন। এর মধ্যে দুবার খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) ও আলী (রাঃ) -র মাধ্যমে আমন্ত্রণ পত্র পাঠানো হয় নাজারানে।

নাজারানের বেশ কিছু অধিবাসী খ্রীস্ট ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করে। এখানে উল্লেখ্য যে নাজারান বর্তমান সৌদী আরবের দক্ষিণে অবস্থিত একটি প্রদেশ। খ্রীস্টান মিশনারীদের দল মদীনায় পৌছে মসজিদে নববীতে ( যা মুসলিমদের ২য় পবিত্রম স্থান) দু থেকে তিন দিন অবস্থান করে রাসূলুল্লাহ্ -র সাথে ধর্মীয় বিষয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয়। এ সময়ের মধ্যে তারা রাসূলুল্লাহ্ -র কাছে প্রার্থনা করার অনুমতি চাইলে রাসূলুল্লাহ্ তাদের মসজীদে নববীতেই প্রার্থনা করার অনুমতি দেন এবং ইতিহাসে প্রথমবারের মত খ্রীস্ট ধর্মাবলম্বীরা মসজীদে নববীতে বসেই প্রার্থনা করে। এখানে উল্লেখ্য যে সে সময় আরবের খ্রীস্টানরা যীশুর সাথে আল্লাহ্ -র সম্পর্কের বিষয় নিয়ে চারটি ভাগে বিভক্ত ছিল।

তাদের ধারণা ছিল নিম্নরূপঃ ১ম, যীশুই আল্লাহ্ ২য়, যীশু আল্লাহ্ -র পুত্র ৩য়, যীশু তিনের একজন যা ত্রিত্ববাদ (Trinity) নামে পরিচিত ৪র্থ, যীশুর উপর আরোপিত গুণাবলী থেকে আল্লাহ্ পবিত্র (একেশ্বরবাদী) খ্রীস্টান পুরোহিতরা রাসূলুল্লাহ্ -র কাছে যীশু ও স্রষ্টা সম্পর্কে একের পর এক প্রশ্ন করে। এ সময় পবিত্র কুরআনের একাধিক আয়াত অবতীর্ণ হয়। যেমন, স্রষ্টা সম্পর্কে খ্রীস্টান পুরোহিতদের প্রশ্নের উত্তরে অবতীর্ণ হয় পবিত্র কুরআনের বিখ্যাত সূরা ইখলাস, বলুন, তিনি আল্লাহ, এক, আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি এবং তার সমতুল্য কেউ নেই। [১১২ নং সূরা ইখলাস] : ১-৪ রাসূলুল্লাহ্ তাদের সকল প্রশ্নের উত্তর দেন ওহী ও তাঁর ঐশী জ্ঞানের আলোকে। যেমন, খ্রীস্টান পুরোহিতরা যীশুর আলৌকিক জন্মের কথা উল্লেখ করে তাকে সকল সৃষ্টি থেকে আলাদা করতে চাইলে রাসূলুল্লাহ্ -র উপর ওহী অবতীর্ণ হয় এইরূপ, নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত হচ্ছে আদমেরই মতো।

তাকে মাটি দিয়ে তৈরী করেছিলেন এবং তারপর তাকে বলেছিলেন হয়ে যাও, সঙ্গে সঙ্গে হয়ে গেলেন। যা তোমার পালকর্তা বলেন তাই হচ্ছে যথার্থ সত্য। কাজেই তোমরা সংশয়বাদী হয়ো না। [৩ নং সূরা আল ইমরান] : ৫৯-৬০ কোন প্রকার সমঝোতা ছাড়াই বিতর্ক চলতেই থাকলো। খ্রীস্টান প্রতিনিধি দল আল্লাহ্ -র বাণীকে অস্বীকার করলো।

আর ঠিক এমন সময়েই অবতীর্ণ হয় পবিত্র কুরআনের সে ঐতিহাসিক আয়াত যা আয়াতে মুবাহালা নামে পরিচিত। মুবাহালা অর্থ পরস্পর পরস্পরকে অভিশাপ দেয়া। আয়াতটি হলো, অতঃপর তোমার নিকট সত্য সংবাদ এসে যাওয়ার পর যদি এই কাহিনী সম্পর্কে তোমার সাথে কেউ বিবাদ করে, তাহলে বল-এসো, আমরা ডেকে নেই আমাদের পুত্রদের এবং তোমাদের পুত্রদের এবং আমাদের স্ত্রীদের ও তোমাদের স্ত্রীদের এবং আমাদের নিজেদের ও তোমাদের নিজেদের আর তারপর চল আমরা সবাই মিলে প্রার্থনা করি এবং তাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত করি যারা মিথ্যাবাদী। নিঃসন্দেহে এটাই হলো সত্য ভাষণ। আর এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই।

আর আল্লাহ; তিনিই হলেন পরাক্রমশালী মহাপ্রাজ্ঞ। তারপর যদি তারা গ্রহণ না করে, তাহলে ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারীদেরকে আল্লাহ জানেন। [৩ নং সূরা আল ইমরান] : ৬১-৬৩ এ আয়াত অবতীর্ণ হবার সাথে সাথেই রাসূলুল্লাহ্ খ্রীস্টান মিশনারীদের তা শুনিয়ে দেন এবং রাসূলুল্লাহ্ তাদের সাথে আলোচনা করে ঠিক পরের দিন সকাল বেলাকেই মুবাহালার জন্য বেছে নেন। কথামত পরের দিন ভোর হবার পূর্বেই রাসূলুল্লাহ্ তাঁর বাড়ি থেকে বের হোন হোসেন (রাঃ) কে কোলে নিয়ে আর এক হাতে হাসান (রাঃ) -র হাত ধরে। তিনি অগ্রসর হতে থাকেন মুবাহালার জন্য।

তাঁকে অনুসরণ করেন তাঁর আদরের কন্যা ফাতেমা (রাঃ) ও তাঁর জামাতা আলী (রাঃ), রাসূলুল্লাহ্ তাঁর পরিবার নিয়ে বিশপ আবুল হারিসের মুখোমুখি দাড়ান। খ্রীস্টান প্রতিনিধি দল রাসূলুল্লাহ্ -র আত্মবিশ্বাস ও তাঁর এ পরিবার দেখে ভড়কে যায় এবং পিছু হটে। বিশপ তার অনুসারীদের উপদেশ দেয় যে, এই পরিবারের সাথে মুবাহালায় যাওয়া ঠিক হবে না। সে (রাসূলুল্লাহ্) তাঁর দাবীর ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী বলেই তাঁর পরিবার নিয়ে এসেছে। এ পরিবার যদি আদেশ দেয় তাহলে পাহাড়ও বোধহয় তাদের কথা শুনবে।

এরপর পাদ্রী আব্দুল মাসীহ্ -র পরামর্শে খ্রীস্টান প্রতিনিধি দল মুবাহালা থেকে পিছু হটে রাসূলুল্লাহ্ -র সাথে শান্তি চুক্তি করে এবং জিযিয়া কর দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। তাদের অনুরোধে রাসূলুল্লাহ্ তাদের সাথে সাহাবী আবু ওবায়দা বিন জারাহ্ (রাঃ) কে যেতে বলেন তাদের মধ্যে বিবাদমান আর্থিক বিষয়ে নিষ্পত্তি করার জন্য। তথ্যসূত্রঃ (১) পবিত্র কুরআনের ৩ নং সূরা আল ইমরানের ৫৯-৬৩ পর্যন্ত আয়াত এই ঘটনার সময়েই অবতীর্ণ হয়। (২) পবিত্র কুরআনের ১১২ নং সূরা ইখলাস এই ঘটনার সময় একবার অবতীর্ণ হয়। অবশ্য সূরা ইখলাস এর পূর্বেও বেশ কয়েকবার অবতীর্ণ হয়েছিল।

Sahih Muslim - Book 31 Hadith 5915 Sahih Muslim - Book 31 Hadith 5955 en.wikipedia.org/wiki/Mubahala  ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.