আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিফিলিসের জীবাণু কোথা থেকে আসলো? /পর্ব সাত

সভাপতি- বিক্রমপুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ, সম্পাদক ঢেউ, সভাপতি- জাতীয় সাহিত্য পরিষদ মুন্সীগঞ্জ শাখা পূর্ববর্তী সংখ্যা পর্ব ৭ আলমের সাথে আসাদ মাদ্রাসায় ঢুকেই বুঝে আসলে এটি সেই মাদ্রাসা নয়। নামে নামে মিল ছিল বলেই বিভ্রান্ত হয়েছিল আসাদ। নাম দেখেই বুঝে নেয় আলিয়া মাদ্রাসা। ওটি ছিল কওমি মাদ্রাসা। এখানে প্রধান শিক্ষক মানে সুপার।

সুপার হুজুরের সাথে দেখা করে। রুটিন দেখে ক্লাশ নিতে থাকে। আসাদের বিস্ময়কর মনে হয়, তিন দিনের মধ্যেই টের পায় সুপার হুজুর বাদে সকলেই ওকে সমীহ করে এবং পছন্দ করে। শিক্ষকদের কক্ষে সবসময় গল্প গুজব এবং ওয়াজ অনুশিলনে সরগরম থাকে। ক্লাশগুলোও সরগরম থাকে ছাত্রদের হইচইয়ে।

ছাত্রদের অবস্থা বুঝতে সময় লাগে না আসাদের। ক্লাশ টেনের বা দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরাও ইংরেজি পড়তে পারে না। সবচেয়ে অসুবিধায় পড়ে অস্টম শ্রেণীর গণিত খাতা দিতে গিয়ে। আগের দিন এক ছাত্র বলেছে, স্যার প্রথম সাময়িকী পরিক্ষায় স্যারে ৯৯ দিছে আপনি কিন্তু কম দিতে পারবেন না। আসাদ আকাশ থেকে পড়ে।

সর্বোচ্চ পেয়েছে সাতাশ! ছেলে বলে ৯৯ দিতে পারবো না। আসাদ সিদ্ধান্ত নেয়, সবাইকে বুঝাবে কেন এবং কোথায় তারা ভুল করেছে। সবাই উত্তর মুখস্ত করেছে। যে প্রশ্ন ঘুরিয়ে এসেছে সেগুলোর উত্তর ভুল। তারা এক প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে অন্য প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে।

জ্যামিতির ক্ষেত্রেও তাই। আলম ভাই এদের ম্যানেজ করতো বেশি নম্বর দিয়ে খুশি করে। ওরা ওদের ভুল বুঝতে পারে। খুশি সবাই ফেল করেও। পরদিন থেকে শুরু হয় নতুন উপদ্রুপ।

বশির হুজুর বলল, আসাদ সাহেব আপনারতো এইটের ক্লাস আর সেভেনটাও একটু দেখবেন। সাথেসাথে অলিউল্লাহ হুজুর বলল আমার ফোরে একটু ঢু মাইরেন। একই সময়ে জব্বার হুজুর বলল, তাহলে আমার একাদশ শ্রেণীটার পড়া ছিল একটু নিয়েন। একসাথে ৪টি ক্লাস নিতে হল। দৌড়াদৌড়ি সার।

আর হুজুররা ওয়াজ রেওয়াজ করতে লাগলেন। দুদিন পড়ে তাদের একমাত্র ছাত্রী সখিনাকে নিয়ে গুঞ্জন শোনা গেল। সখিনা ক্লাস ফোরে পড়ে। পরদিন শোনা গেল জব্বার হুজুর মেয়েটিকে বিয়ে করে ফেলেছে। বোরকা পড়ে আসতো বলে বুঝা যায়নি মেয়েটিকে।

তারপরেওতো ক্লাশ ফোরে পড়তো। পরদিন বশির হুজুর বললেন, আসাদ সাহেব , আপনার কাছে দেবদাসটা আছে? - বুঝিনি। - আরে শরৎচন্দ্রের দেবদাস। শরৎ চন্দ্রের দেবদাসের কথা বশির হুজুর বলবে এটা আসাদের ভাবনার বাইরে ছিল। তাই সে মুচকি হেসে জানতে চায়, কি ব্যাপার হুজুর? হুজুর বলেন, আরে আমার জন্য নয়।

এইসব ছাইপাশ আমি পড়িনি। আমার এক ছাত্র হঠাৎ করে চাইল। আমি আপনার কথা বলেছি, ওনি বইটই পড়ে ওনার কাছে থাকতে পারে। আসাদ কৌতুহলী হয়ে জানতে চায়, তা আপনার ছাত্রেরই বা হঠাৎ দরকার হল কেন? - আরে ও এক বাসায় লজিং থাকতো। ঐ বাড়ির মেয়ের সাথে একটু সম্পর্ক হয়েছিল।

বাড়ির লোকজন জানতে পেরে ওকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেছে। মনের কষ্টে দেবদাস পড়তে চায়। আসাদ বুঝতে পারে আলিয়া মাদ্রাসা মৌলবাদী তৈরির উপযোগী হলেও এখানে কিছুটা আধুনিকতার ছোঁয়া আছে। এখানে অন্তত সিভিলিসের জীবাণুর উৎপাত কম। আসাদ বশির হুজুরের সাথে সম্পর্ক বাড়ায়।

একদিন পদ্মার তীরে ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। হুজুর খুব খুশি হয়। নির্জন এক স্থান পেয়ে আসাদ জানতে চায়, হুজুর শুনেছি কওমী মাদ্রাসার ছাত্রদের সাথে ছাত্রদের বা কোন হুজুরের সাথে ছাত্রদের যৌন সম্পর্ক আছে। আপনার ধারণা কি? বশির হুজুর না আউজুবিল্লাহ না আউজুবিল্লাহ বলে চেচিয়ে উঠলেন। শুনেন আসাদ সাহেব আপনাকে একটা কথা বলি, আউট বই কম পড়বেন।

এই সব উল্টাপাল্টা বই পড়ে আপনার মস্তিষ্কে কিছু বাজে জিনিস ঢুকে গেছে। এগুলো ঝেড়ে ফেলেন। মসজিদ মাদ্রাসা হল আল্লাহর ঘর। আর হুমায়ুন আজাদের সাথে শুনেছি আপনার সম্পর্ক আছে। দূরে থাকবেন, ওইসব শয়তানদের সাথে থাকলে, আপনার মধ্যে ইমান থাকবে না।

এইসব বাজে কথা মনে আসবে। এই মাদ্রাসায় দুইমাস কাটানোর কোন মানেই হয় না। বাড়িতে ফিরতেই কামরুলকে দেখে। কামরুল ওকে একটি নিয়োগপত্র দেয়। একমাসের চাকুরি।

বরিশাল ও ভোলায় নারীনেত্রীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা। একমাসে ২০ হাজার টাকা আয় খারাপ নয়। রোড-ম্যাপ অনুযায়ী মেহেন্দীগঞ্জে কাজ করে পাতার হাট হতে লঞ্চে উঠে বরিশালের উদ্দেশ্যে। লক্ষ্য ছিল বরিশালের মাদ্রাসাগুলোতে সিভিলিস আছে কিনা কিংবা ছাত্ররা কতটা যৌন হয়রাণীর শিকার হয় জানার চেষ্টা করা। লঞ্চের আপার শ্রেণীতে একজন প্যাসেঞ্জারও নেই।

আসাদ সামনের বেঞ্চে পা তুলে দিয়ে আরাম করে বসে। এক ভদ্রলোক একটি হালকা ব্যাগ তার পায়ের কাছে রেখে চলে যায়। ব্যাগ থেকে হুমায়ুন আজাদের আমার অবিশ্বাস বইটি খুলে পড়তে শুরু করে। একসময় হঠাৎ করেই দেখে হুড়মুড় করে লঞ্চটি ভরে যায় মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকে। একটু পরে বুঝতে পারে এরা তসলিমা নাসরিনের ফাসির দাবী নিয়ে মিছিল করতে তারা বরিশাল যাচ্ছে।

আসাদের পাশে এক হুজুর বসে। আসাদের গা ঘিনঘিন করে উঠে। মনে মনে ভাবে এর শরীরে সিফিলিসের জীবাণু নেই তো। আবারো পড়ায় মনোযোগী হয়। হুজুর প্যাচাল শুরু করে, তিনি ক্লাশ টু পাশ কিন্তু আজকালকার এমে পাশ তার কাছে কিছু না।

আমি একবার এই লঞ্চে করে বরিশাল যাচ্ছিলাম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হেড যাচ্ছিলেন আমার পাশে বসে। মন সম্পর্কে একটা কথা বলাতে তিনি আমার হাত ধরে বললেন, ভাইজান আপনি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ছাত্রদের কয়দিন পড়াবেন। আমার ওখানে বিদেশ থেকে মাস্টাররা এসেও এতো সুন্দর কথা বলতে পারে নাই। আমাকে কার্ড দিয়ে গিয়েছিলেন কিন্তু যাইনি।

হুজুর আসাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য হাত স্পর্শ করে। আসাদ হাতের দিকে তাকালে তিনি হাত ছেড়ে দেয়। আসাদ আবারো পড়ার চেষ্টা করে। হুজুর বলতে থাকে, আরে জ্ঞান হইলো সব। কোরআনের মধ্যে যে জ্ঞান আছে আজো কেউ তা পরিবর্তন করতে পেরেছে।

আর এরিস্টটল দুই হাজার বছর আগে যে কথা বলে গেছেন আজও তার হেরফের হয় নাই। আমি ক্লাশ টু পাশ হতে পারি, কিন্তু এমে পাশ আমার কাছে কিছু না। হুজুর আবারো আসাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আসাদ বই বন্ধ করে বলে, হুজুর আমি ম্যানেজমেন্টএ এমএ পাশ আপনি ম্যানেজমেন্টে আমার চেয়ে বেশি কি করে জানবেন? এটা কোনভাবেই সম্ভব নয়। এরিস্টটল অবশ্যই জ্ঞানী ছিলেন।

কিন্তু আপনি যা বললেন, তাতে মনে হয় তাঁর সম্পর্কে আপনি সামান্যই জানেন। আর মন সম্পর্কে কি বলেছিলেন শুনি? হুজুর খেপে উঠলেন, আমি আগেই বুঝেছিলাম তুই একটা বেয়াদপ। পা নামা। কত বড় বেয়াদপ এতোগুলো আলেমের সামনে পা উঠিয়ে বসেছে। কয়দিন আগে আরেক বেয়াদপকে লঞ্চ থেকে নদীতে ফেলেছি।

তরে দেখাচ্ছি মজা। আসাদ ভয় পেয়ে যায়। তারাতারী বই ব্যাগের মধ্যে ঢুকায়। ছাত্রদের বলে, ছাত্র ভাইরা আপনারা বলেন, ওনাকে কি খারাপ কথা বলেছি। হুজুর লাফ দিয়ে উঠে দাড়ালো।

তগো মতো পোলাপাইনের টুপি দাঁড়ি দেখলেই মাথা খারাপ হয়ে যায়। হুজুর আরো কয়েকজনকে ডাকতে গেল, এই আনিস কই, এই রহমত কই। আসাদ হুজুরের পেছনে পেছনে বের হয়ে লঞ্চের পাশে দাঁড়ায়। দেখে বরিশালে লঞ্চটি ভিরতে যাচ্ছে, আর আরেকটি লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে। এক লাফে এই লঞ্চ থেকে ঐ লঞ্চে উঠে যায়।

লঞ্চটি যাচ্ছিল ভোলা। আসাদ ভোলা চলে যায়। সমস্যা নেই কাজ বরিশাল থেকে শুরু করার কথা ছিল, মাঝখানে ভোলায় কাজ করে পরে বরিশালে আসবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.