আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিফিলিসের জীবানু কার কাছ থেকে আসলো/পর্ব চার

সভাপতি- বিক্রমপুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ, সম্পাদক ঢেউ, সভাপতি- জাতীয় সাহিত্য পরিষদ মুন্সীগঞ্জ শাখা

আগের পর্ব পড়ুন পর্ব চার অসীম সকাল ৯টার দিকে ঘুম থেকে উঠে বুঝে মাথা পরিস্কার। উঠে বসতেই দেখে অঞ্জলি, হাতে নতুন প্যাকিং করা ব্্রাস, পেস্ট আর তোয়ালে দাদা গোসল করে নেন। অসীম গোসল করে, নাস্তা খায়। অঞ্জলিকে বলে, আমার উপর আস্থা রাখো। আমি কাউকে বলবো না।

তুমি ব্রাহ্মণের মেয়ে আমি তোমাকে ছোঁবও না। অসীম ওখান থেকে বিক্রমপুর চলে আসে। পরীক্ষা ও অসুস্থতা মিলিয়ে সাত মাস পর বাড়ি আসলো। ওর একটা বিষয় ঢাকা গেলে বাড়ি আসতে মন চায় না, বাড়ি আসলে হলে ফিরতে মন চায় না। তার পরও এতোটা দিন বাড়ি না এসে থাকেনি।

ওর এবার ভিন্ন টার্গেট। ঠাকুর মশাইর সিফিলিস ছিল কিনা সেটা খুঁজতে হবে? ওনি কোথায় কোথায় যায় একটু নজর রাখা। কোন ডাক্টারের সাথে সম্পর্ক সেটা নিশ্চিত হওয়া। ঐ ডাক্তারের সাথে কোন বন্ধুর সম্পর্ক। বের করাটা সমস্যা নয় বলেই মনে হয়।

ভোরে বিছানায় থাকতেই ঠাকুরমশাইর বউ বিষ খেয়েছে শুনতে পায়। নয়টার দিকে পুলিশ চলে আসে। লাশ নিয়ে যায়। সাথে ধরে নিয়ে যায় ঠাকুর মশাইকে। এলাকার ঝামেলার সাথে কখনোই জড়ায়নি অসীম।

অঞ্জলির কথা মনে পড়ে। সে থানায় যায়। মেম্বার হামিদ চোকদারের সাথে দেখা হয়। নমস্কার দেয়। মেম্বার বলে তুমি আইছো ক্যা? অসীম বলে, দেখতে আসলাম।

দেখতে থাকো। বলে মেম্বার অসীমকে ভ্র“ক্ষেপ না করে চলে যায়। হাজত খানায় পায় ঠাকুর মশাইকে। ঠাকুর মশাই বলে, দেখ বাবা অঞ্জলির মায় ব্যথায় টিকতে না পেরে বিষ খাইছে। ওসি সাব কয় আমি নাকি আরেকটা বিয়ে করার জন্য মেরে মুখে বিষ ঢেলে দিছি।

এক লাখ টাকা চায়। কি করি। ভগবান কি ঝামেলায় ফেললো। অসীম ওসি সাহেবের কাছে গিয়ে বলে, ওসি সাহেব ঠাকুর মশাইর স্ত্রী দীর্ঘ দিন বাযৎই বিভিন্ন অসুখে ভোগছিল। গরীব মানুষ টাকা পাবে কোথায়? ওসি সাহেব বলে, তুই কই থিকা দালালী করতে আসলি।

আমার কাছে সব খবর আছে? ওর মেয়ে অনেক টাকা আয় করে। - আত্মহত্যার জন্য এক লাখ টাকা দিতে হবে? এটা কেমন কথা। - তুই পাঁচ মিনিটের মধ্যে ভাগবি। নইলে তরেও ডাকাতির মামলায় ফেলবো, তোর দুই লক্ষ টাকা দিতে হবে। - এতো সোজা নাকি? দেশে আইন কানুন নাই।

অসীম গজরাতে গজরাতে বাড়ি আসে? বিকেলেই শুনতে পায় শ্রীধরপুরের ডাকাতি মামলার এক নম্বর আসামী করা হয়েছে অসীমকে। অসীমের বাবা ও দাদা জোর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। আপাতত পালিয়ে বাঁচ। পালায় অসীম। ঢাকায় এসে হরগবিন্দকে সব খুলে বলে।

হরগোবিন্দ বলে, আমি সব শুনেছি। তোইতো ঝামেলা লাগিয়ে এসেছিস। আমি এমপিকে দিয়ে ওসিকে ফোন করিয়েছিলাম। ওসি হারামজাদা এমপিকে বলেছে, তুই নাকি তাকে ঘুসি মেরে পালিয়েছিস। হরগোবিন্দ মিডফোর্ডে দুই দিন আগের তারিখ দিয়ে ভর্তি করে দেয়।

থাক এখানে, ঠাকুর মশাইর ব্যবস্থা আমি করবো। তার আগে হারামী ঠাকুর জেল খাটুক। হরগোবিন্দ রিপোর্ট এনে বলে, আরে তোর তো সিফিলিস নাই। কোথা থেকে ডাক্টার দেখিয়েছিস? কি ঔষধ খেয়েছিল। প্রেসক্রিপসন আছে।

অসীম বলে, দাদা হাতুড়ে ডাক্তার। সেই বলেছে। ঔষধ সেই দিয়েছে। - ও প্রতারক। তোকে ভয় দেখিয়ে টাকা নিয়েছে।

অসীমের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে। হরগোবিন্দ বলে দুই এক দিন থাক হাসপাতালে। আমি তোর অসুখের পজিটিভ রিপোর্ট করিয়ে দিচ্ছি। চিকিৎসাধীন থাক। থানার মামলার কাজে লাগবে।

ওসি সাহেবকে ম্যানেজ করার ব্যবস্থা করছি। পর দিন পত্রিকায় নিউজ এসেছে। অসীম কুমার সাহা নামে ডাকাতির মামলার এক আসামী থানায় আসলে, পুলিশ তাকে চ্যালেঞ্জ করে। আসামী অসীম ওসি সাহেবের নাকে ঘুসি মেরে রক্তাক্ত করে পালিয়ে যায়। খবর পরে অসীমের শরীর ঠাণ্ডা হয়ে আসে।

ও হাসপাতাল থেকে পালায়। ও বুঝে নেয় দেশ ওকে ছাড়তে হবে? ও হোসনে আরার কাছে চলে যায়। দীর্ঘদিন যাবৎ ওদেও সম্পর্ক। হোসনে আরা বহুবার বলেছে, ইংল্যান্ড চলে যেতে। টাকা পয়সা ওই দিবে।

অসীম গেলে হোসনে আরাও চলে যাবে। হোসনে আরার প্রস্তাব প্রতিবারই প্রত্যাখ্যান করেছিল, এই দেশ ছাড়বে না বলে। জন্মভূমি ত্যাগ করবে না এটা ছিল একটা প্রতিজ্ঞা। হোসনে আরা অনেক বার বলেছে, এদেশে থেকে হিন্দু ছেলের সাথে মুসলমান মেয়ের বিয়ে সম্ভব নয়। সব টাকা আমি দেব তুমি ইংল্যান্ড চলে যাও আমি একমাসের মধ্যেই চলে আসবো।

অসীম ভেবেছে সব ছাড়তে পারবো তবু জন্মভূমি নয়। হোসনে আরাকে ভালবেসে অপদস্তও কম হয়নি। আটমাস আগে যে বার হোসনে আরার বারবার তাগাদায় গ্রামে আসে। পরিচয় করার আপা বলে, বিক্রমপুর দেখতে এসেছে, পদ্মানদী দেখতে এসেছে, আড়িয়ল বিল দেখতে এসেছে। কিন্তু কিছু উগ্রপন্থী ছেলে ঠিকই জেনে যায় এই মেয়ে অসীমের প্রেমিকা।

ওরা রাস্তায় অসীমকে ধরে, এই তুই নাকী মুসলমান মাইয়ার লগে পিরিত করস? - অসীম বলে, তোমরা ভুল করছো। ওকে আমি আপা বলি, বেড়াতে এসেছে? আসাদ এসে পড়াতে উগ্রপন্থীরা আগাতে পারে নি। হোসনে আরার কথা কখনো রাজি হয়নি। বলেছে ফেরদৌসী মজুমদারতো দেশেই থাকছে। হোসনে আরা বুঝাতে চেয়েছে ওরা তারকা।

ওদেও কেউ কিছু বলবে না। আমরা সাধারণ মানুষ। এদেশে থেকে কি হবে? সন্ত্রাস অরাজকতা, স্বাধীনতা নেই, মানবাধিকার নেই.. অসীম কিছুই শুনতে চায় নি। তাকে না পেলেও এদেশ ছাড়বে না। আজ বাঁচার আর কোন পথ পাচ্ছে না।

হোসনে আরার কাছে গিয়েই কি আত্মসমর্পন করবে। পুলিশের হাতে পরলে নিশ্চিত জেল হয়ে যাবে। জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। সবাই ভাববে আমি সত্যিই ডাকাত ছিলাম। অসীম গুলিস্তান এসে মিরপুর চলে যায়।

হোসনে আরাকে বলে আমি ইংল্যান্ড যাবো। তোমাদের মিরপুরের ঠিকানা থেকেই যাবো। যতদিন না যেতে পারবো ততদিন এখানেই থাকবো? হোসনে আরা সবাইকে বলে দেয়, অসীম মুসলমান হবে। সবাই খুশি। আসাদ যে ছাত্রীকে পড়ায় তার বাবা উকিল।

তাকে দিয়ে কোর্ট থেকে বিয়ের কাগজপত্র বের করে দেয়। উকিল সাহেব বিয়ের ব্যবস্থাও করে দেয়। অসীমের ইচ্ছায় কাজের সুবিধার কথা বিবেচনা করে বিয়ে হয় হিন্দু রীতিতে। সেখানে হোসনে আরাকে পরিচয় করানো হয় হিন্দু মেয়ে হিসাবে। নাম রাখা হয় অনুরাধা সাহা।

অসীম স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে ইংল্যান্ড চলে যায়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.