নিবেদন সমগ্র বিরহ সমগ্র
ভেবেছিলাম কবিতা সংকলন আর বের করব না। কেউ তো পড়ছে না। ব্লগার নিথর শ্রবণ শিহাবের উৎসাহের ফসল এই পোস্টটি। আক্রোশ বা ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখা কবিতা আমার অনেক। এর মাঝে কোন কোনটাতে হয়তবা একটু বাড়াবাড়িও রয়েছে।
তবে সে কবিতাগুলো অল্প বয়সের লেখা।
১. ভাতের হিসাব
ভাত দিলে শরীর পাওয়া যায়
আরো পাওয়া যায় সংসারের মোড়কে ঘেরা
হাসি মাখা সুখের উচ্ছাস,
বিবাহের এই নির্মম সত্যটুকু মানি আমি।
প্রার্থনা শুধু, হাসিটুকু আমায় অগ্রিম দিও
ভাত তুমি পাবেই র্নিঘাত।
তোমার হাসি
যা দিয়ে তো বিশ্বযুদ্ধ
অনায়াসে ঠেকানোই যেত,
সেই হাসিকে যদি আমি আরাধ্য করি
তবে বল দোষের কি?
বিনিময়ে দুবেলা দুমুঠো ভাত তো রইলই জমা।
জবান সাফ আমার
কথার বরখেলাপ আমি করিনি কোনদিন
সাক্ষী দেবে পাড়া পড়শি বৃদ্ধ বনিতা সবাই
আমার কথার কোন নড়চড় নাই।
তবুও যদি ভাত চাও আগে
কষ্ট নেব না মনে
বিনিময় শর্তে জানি তোমার পাওনাগুলোই অগ্রে।
শুধু প্রশ্ন জাগে মনের মাঝে,
না পাওয়ার কষ্টগুলো ভুলবে বলে
যাদের সাথে সকাল সন্ধ্যা মত্ত তুমি হাস্যরসে
বলতে পারো এতটা দিনে
কয় থালা ভাত পেয়েছ তুমি তাদের কাছে?
২২/১১/২০০৯ রাত ৭টা ৪৩ মিনিট
মিরপুর, ঢাকা
২. লোড শেডিং
লোড শেডিংএর ক্ষণগুলোতে
আমরা সবাই ক্ষিপ্ত থাকি।
মনের মাঝে ক্ষোভ জমে আর
নিপিড়িত জনতার ঠোঁটে থাকে গালির বহর।
মাথার উপর ফ্যানগুলো থাকে স্তব্ধ নিঝুম,
আর বাতিগুলোর ম্লান অসহায় মুখ
মনে করিয়ে দেয় বিদ্যুৎ বিভাগের অপারগতা-
সরবরাহের ঘাটতি।
মাঝে মাঝে তোমার ভালোবাসাতেও আসে
এমনই লোড শেডিং-
সরবরাহের ঘাটতি।
তখন জেনো,
আমার মনেও এমনই ক্ষোভ জমে
নিপিড়িত প্রেমিকের মত।
১০/৩/২০০৯ রাত ৮ টা ২০ মিনিট
মিরপুর, ঢাকা
৩. আপন
“আপন, তাই জগৎ সংসারের
সকল প্রথা আর রীতি-নীতি সমাপ্ত করে
যদি তোমার কাছে আসি
কিছু মনে করবে না জানি। ”
বলেছিলে তুমি।
তাই সদা সর্বদা তোমার
অপেক্ষায় থাকি আমি।
সুন্দর সময়গুলো সব পার করে
যখন কাছে আসো অবশেষে
তখন তুমি ক্লান্ত ভীষণ
সমগ্র দেহ এবং মনে।
আমি তখন তোমার বিশ্রামের
অপেক্ষায় থাকি।
তবে অপেক্ষার প্রয়োজন পড়ে না
যখন তুমি রাগে, ক্ষোভে উন্মত্ত হও,
গুঁড়িয়ে দিতে চাও এই বিশ্ব সংসার
টুকরো টুকরো করেÑ
খুব স্বাভাবিক ভাবেই যেহেতু আপন
আর অধিকারটাও গভীর যখন
আমাকে দিয়েই শুরু হয় তোমার
নিষ্ঠুরতম ধবংসের নাচন।
স্বীকার করতেই হয়
এই একটা জায়গায় বড় ভাগ্যবান আমি।
৭/৮/২০০৮ দুপুর ১টা ৩৩ মিনিট
মিরপুর, ঢাকা
৪. অকৃতজ্ঞতা
বনানী তোমার প্রিয় ছিল না কখনও
ঝোপঝাড় আর বন জঙ্গলের চেয়ে
অট্টালিকাই শ্রেয়।
তাই দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ বনানী কেটে
আকাশ ছোঁয়া ইমারত গড়লে তুমি-
চকচকে টাইলসের মেঝে আর
মার্বেল পাথরের অলংকরণে
বেশ জৌলুস ছড়ালো তোমার স্বপ্নের
অট্টালিকা।
দরজার পাশে একটু দূরে
হাঁটতে গিয়ে হোঁচট খেলে
মাটি ফুঁড়ে একটি শেকড়
আজও যেন সগৌরবে উঁকি মারে।
দেখে তোমার মায়া হল হঠাৎ করে
কি ভেবে সেই শেকড়টাতে
একটুখানি পানি দিলে আঁজলা ভরে।
সেই থেকে সে কৃতজ্ঞতায়
তোমার সুখে, তোমার দুঃখে
আজ অবধি ছায়া দিয়ে যায়।
আমি তো কোন বৃক্ষ নই-
তাই তোমার দেয়া আঘাতগুলোয়
যখন তুমি ব্যস্ত হয়ে মলম লাগাও
রাত্রি জেগে সেবা কর
আমার মনে কোন কৃতজ্ঞতাই আসে না।
৫/৯/২০০৭ দুপুর ১২টা ৫১মিনিট
মিরপুর, ঢাকা
৫. শর্ত
শর্ত দিও না সখি
ভালবাসো শুধু,
আমিও তো দিতে পারি শর্তের পাহাড়
অসম্ভব কিছু।
জীবনটা শুয়ে আছে সাধ্যের কারাগারে
তুমিও তো আজ ক্লান্ত,
যা কিছু জীবনে শ্রেষ্ঠতম ছিল
দিয়েছি তো আদ্যোপান্ত।
বেচে দেবে তাও শর্তের কাছে?
বেচে দেবে মন?
শ্রেষ্ঠতম সব?
গাছ পালা আকাশ
ঘর বাড়ি তরু মাঠ?
ভালবাসা কি এতো ঠুনকো?
১১/৯/১৯৯৭ সকাল ১০টা ৪৮মিনিট
দিনাজপুর
৬. চোরকাঁটা
বলছ তুমি যাওনি কোথা,
তবে জামায় কেন চোরকাঁটা?
চোখের মাঝে নকশা কাটা
স্বপ্ন সাজের আঁকাঝোঁকা
কোথায় আমি কোন গলিটায়Ñ
স্বপ্ন জুড়ে হাতড়ে দেখা।
বলছ তুমি যাওনি কোথা
তবে কাঁপছে কেন চোখের পাতা?
কাঁপছে কেন মনের ভুবন
দর দালান আর ব্যস্ত জীবন
ব্যস্ত সবাই নিজের কাজে
আছে কি কেউ এদের মাঝে?
নকশা কাটা স্বপ্ন সাজে-
নকশা আড়ে লুকিয়ে রাখা
গোপন তোমার প্রেমের গাঁথা?
বলছ তুমি যাওনি কোথা
তবে জামায় কেন চোরকাঁটা?
অগাস্ট ১৯৯৭ দিনাজপুর (সংশোধন-৯/৭/৯৯ ঢাকা)
৭. তনু যেন তার
তনু যেন তার কলমি লতা
তাল দীঘিতে দোলে
তনু যেন তার বৃষ্টির সাদা বোল
ময়ূর পেখম মেলে
তনু যেন তার ভারত নাট্যম
মনিপুরী কোন ভঙ্গি
তনু যেন তার রাখালিয়া মেঠো সুর
মিষ্টি মধুর সারেঙ্গী
তনু যেন তার অস্ত উদয়
সাগরের নোনা গর্জন
তনু যেন তার তটিনীর বাঁক
কেবলই ভাঙ্গার আয়োজন
তনু যেন তার সড়কের কোন ল্যাম্প পোস্ট
তাই অধিকার অনেকের,
তবে আর আমার থাকল কি বল?
এখন তো তুমি সকলের।
১৫/৬/১৯৯৭ রাত ১১টা ১২মিনিট
দিনাজপুর
৮. ঠোঁট যেন তার
ঠোঁট যেন তার রক্ত গোলাপ
অস্থির কোন জিজ্ঞাসা
ঠোঁট যেন তার পাগলা গায়েন
এলোমেলো বেশভুষা
ঠোঁট যেন তার কবিতার লাইন
ছান্দিক কোন ছড়া
ঠোঁট যেন তার সাহিত্য সভা কোন
আলোচনা মিঠে কড়া
ঠোঁট যেন তার সকাল দুপুর
উষ্ণতা ভরা রোদ্দুর
ঠোঁট যেন তার দূরের আকাশ
ঠিকানা কে জানে কত দূর
ঠোঁট যেন তার গ্রাম্য কোন হাট
প্রায় সস্তা কোন কিছু,
এক ঠোঁটে তুমি কত চুমু দাও
কত নাও চুমু পিছু?
৮/৬/১৯৯৭ রাত ৯টা ৯মিনিট
দিনাজপুর
৯. সুরেলা
ইট পাথরের রুক্ষ প্রান্তর ধরে
হাঁটছিলে তুমি,
নিশ্চিন্তে, সাবলীল পদক্ষেপে।
ধুধু নির্জন পথ,
দুপাশে আকাশ ছোঁয়া ইমারত,
বিষন্ন সূর্যটা দেখছে তোমায়
আক্ষেপে,
বুঝিবা তোমায় প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছে।
দেখেও দেখলে না তুমি আমাকে,
হয়ত পথের আবর্জনা ভাবলে।
তারপরই থেমে গেল পদক্ষেপ,
নিশ্চিন্ত সাবলীল পদক্ষেপ।
অঙ্গে তোমার বাঁশীর সুর,
সুরেলা যৌবন,
আঁচলে ছড়ানো মিষ্টি নিক্কন।
আঁচল টানলে তুমি ভাল করে-
আরো ভাল করে।
ভাবছ বুঝি হিসেব মেলাব?
আঘাতে আঘাতে ভাংব তোমার
বাঁশীর সুর?
নিশ্চিন্তে হেঁটে যাও সুরেলা।
তোমার ভালবাসা আমার
জীবন ভরাতে পারেনি,
তোমার দেহে আমার
মন ভরবে না।
২৭/৬/১৯৯৩
দিনাজপুর
১০. লাল পেড়ে শাড়ী
খসে পড়া তারার মত খসে পড়লে তুমি
আমার জীবন থেকে।
বিদ্যুৎ গতিতে ছুটলে আকাশের গায়ে দাগ রেখে,
মাত্র খানিকক্ষণ, তারপর মিলিয়ে গেলে আঁধারে।
ভর দুপুরে ব্যালকনিতে উড়ছে তোমার শাড়ী,
দমকা হাওয়ায় ভেসে গেল, পড়ে থাকল রাস্তার উপরে।
চলচ্চিত্রের নায়কদের মত আমার বোধহয় এখন বলা উচিৎ,
“যেখানেই থাক, সুখে থেকো।
”
কিন্তু আমি তো আর নায়ক নই,
সাধারণ এক পুরুষ মাত্র।
তাই এই রাত দুপুরে, তোমায় উপহার দেব বলে
লাল পেড়ে এই শাড়িটা বুনতে বসেছি,
ঘৃনার সুতো দিয়ে।
২২/৮/১৯৯২
দিনাজপুর
১১. স্বেচ্ছাচারী
তুমি সত্যিই চলে যাবে?
তবে যাও।
এই দেখ আমি মুছলাম চোখ।
কোথায় যাবে তুমি?
চল, তোমায় পেীঁছে দেই,
নিশ্চয়ই অনেক দূরের পথ।
আর যদি ঠিকানা জানা না থাকে
তবে এই নাও মানিব্যাগ।
আশা করি এ কটা টাকায় তোমার
চলে যাবে দিব্যি,
যতদিন ঠিকানা খুঁজে না পাও।
কি হল? অবাক চোখে
তাকিয়ে কেন?
ভেবেছিলে তোমার বিরহে
কেঁদে কেটে বুক ভাসাবো?
বড় ভুল ভেবেছিলে স্বর্ণময়ী,
তোমার সাথে থেকে থেকে
আমিও হয়ে গেছি তোমার মতই
স্বেচ্ছাচারী।
২১/৫/১৯৯২
দিনাজপুর
১২. নৃত্যশিল্পী
ঐ যে মেয়েটাকে দেখছেন, নাচছে,
ও এই শহরের নামকরা নৃত্যশিল্পী।
সব নাচেই সে সমান দক্ষ,
ভারত নাট্যম বলুন কিংবা কত্থক নৃত্য
সব নাচই সে সমান তালে নেচে যায়
শরীর দুলিয়ে সবলীল ভঙ্গিতে।
তার নাচের ভঙ্গিমাগুলো লক্ষ্য করুন,
বুকের মাঝে খচ করে কোথায় যেন বিঁধে
কখনও মনে হয় চৈত্র মাসের ঝরা পাতার
আর্তনাদ সুকরুণ।
আবার কখনও মনে হয় ও বোধ হয়
চঞ্চল এক প্রজাপতি,
ফুলের উপর এসে বসে গভীর আবেশে,
খানিক পরে উড়ে চলে যায়।
কি বললেন?
তার নাচ আপনার ভাল লাগছে না?
তাহলে আরেকটা খবর শোনাই আপনাকে
ঐ মেয়েটি হৃদয়কেও ভাল নাচাতে জানে,
যেমন নাচাচ্ছে এই আমাকে।
এবার নিশ্চয়ই অস্বীকার করবেন না যে,
ও খুব উঁচু দরের একজন নৃত্যশিল্পী।
১/৩/১৯৯২
দিনাজপুর
১৩. মিঠা
তুমি কেন পরের হইলা না?
তবে তোমায় লাগত বড় মিঠা।
পরের আম, পরের পিঠা
আহা অন্য রকম মিঠা।
চন্দ্র থাকে অনেক দূরে
তাই তো এত কাব্য কথা।
ঘরের ভিতর তেলের বাতি নিত্য জ্বলা
তার তরে নাই কোন কথা।
আহা, তুমি কেন পরের হইলা না?
তবে তোমায় লাগত বড়ই মিঠা।
২৯/৩/২০১০
মিরপুর, ঢাকা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।