নিপুণ লেখনীর শানিত গর্জন / লিখব আজ নিপুণ কথন সময়টা ছিল গতকাল রাত ১২ টা । রাতের ঢাবি ক্যাম্পাসে ঘুরতে বের হয়েছি আমরা দুজন ।
না, মেয়েবন্ধু না । সাথে ছিল এক বড়ভাই, যিনি অনেকদিন পর ঢাবি ঘুরতে এসেছেন । পড়েন ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ।
দেশের সেরা বিদ্যাপীঠে পড়ি বলে বরাবরই একটা গর্ব কাজ করে আমার মাঝে । তবে সেটা কখনই প্রশ্রয় পেয়ে অহংকারে রূপ নেয়না ।
তো হয়েছে কি, ভাই কে নিয়ে বের হলাম । হল থেকে বেরিয়ে কার্জন হল, টি এস সি হয়ে হাঁটছি । উদ্দেশ্য আমার প্রিয় ক্যাম্পাসটা ভাইয়াকে ঘুরে ঘুরে দেখানো ।
নিজেও ঈদ এর ছুটির পর এই প্রথম এত রাতে ক্যাম্পাসে বের হলাম । রাস্তায় খুব একটা ভীড় চোখে পরলনা ।
এভাবে হাঁটছি আমরা দুজন । হঠাৎ করেই আমাদের প্রায় গা ঘেঁষে দুইটা বাইক শো করে চলে গেলো । অল্পের জন্য জানে বাচলাম ।
পিছ থেকে তাকিয়ে দেখে বুঝলাম এরা বহিরাগত । ভাইয়াকে কোনোমতে বোঝালাম যে এটা ছিল একটা ব্যাতিক্রম , সহসা এরা ঢুকতে পারেনা । চেপে গেলাম নিরাপত্তার ব্যাপারটা । একটু পরেই আরও দুটি বহিরাগত বাস (ঢাকা টু নারায়ণগঞ্জ , খালি ) প্রায় একই দ্রুততায় আমাদের সামনে দিয়ে গেলো । এবার আমি কি জবাব দেব ? এবার যে আর শাঁক দিয়ে মাছ ঢাকার উপায় নেই ! বুদ্ধিমত্তার সাথে ভাইয়ার মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিলাম ।
বাস এর দিকে আর কথা এগুলো না । হাফ ছেঁড়ে বাঁচলাম ।
হাঁটতে হাঁটতে বাঁয়ে রোকেয়া হল রেখে এগুচ্ছি । প্রতিটি দেয়াল জুড়ে পোস্টার আর চিকা মারা । ভাইয়া শুনিয়ে দিলেন উনার ক্যাম্পাসে এটা অনেক কম ।
চুপ মেরে গেলাম । কি বলব ?
আরেকটু এগুতেই মান-ইজ্জতের পুড়া ১৪ টা বেজে গেলো । ভাইয়া বলে উঠলেন, “ওমা ! ঢাবির ক্যাম্পাস এতটা অপরিষ্কার !”
কাঁদ কাঁদ চোখে সামনে তাকিয়ে দেখি, একদম রাস্তার মাঝে বিশাল এলাকা জুড়ে ছরিয়ে ছিটিয়ে আছে আবর্জনার স্তূপ । রোকেয়া হল থেকে একটু এগিয়ে ,তাও কিনা ফুলার রোড যাওয়ার প্রধান সড়কটিতেই । আমি কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেললাম ।
ডাস্টবিনের বালাই নেই, খোলা রাস্তায়ই ময়লা ! নিজেকে খুব ছোট মনে হতে লাগলো । চুপসে গেলাম ।
কথা না বাড়িয়ে এগুতে থাকলাম । ফুলার রোডের চিরায়ত ওয়েস্টার্ন স্টাইলে ডেটিং-দৃশ্য নজরে এলনা । এত রাতে আসার জন্য নিজেকে নিজে বাহবা দিলাম ।
নইলে পুরাই বলাৎকার হয়ে যেতো ।
যাহোক, পলাশীর মোড়ের দিকে হাঁটলাম । উদ্দেশ্য মানিক ভাইর বিখ্যাত মসলা-চা খাইয়ে ভাইয়াকে সব ভুলিয়ে দেওয়া । এখানেও অসঙ্গতি নজরে এলো । নাকে প্রাকৃতিক ইউরিনের ঘ্রাণ এলো ।
মোড়ের দুদিকে বস্তির মতো ফুটপাথ জুড়ে উদ্বাস্তুদের সংসার নজর এরাল না । প্রক্টরিয়াল টিম এর দেখা পেলাম না । ঢাবি, বুয়েট এর মিলনস্থলে এগুলো নিতান্তই বেমানান – একমত হলাম ভাইয়ার সাথে ।
ওই রাতে আর বাইরে থাকলাম না । কোনোমতে চা খেয়ে হল এ ফিরলাম ।
নাহলে জানি আরও কতকি দেখতে হত !!
মাথাটা আর আগের মতো উঁচু রাখতে পারছিনা কেন ?
ক্যাম্পাসের এই দশা আর কতদিন থাকবে ??
কবে মাথা উঁচু করে বলতে পারব আমার ক্যাম্পাস সবদিক দিয়ে বেস্ট ???
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।