আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বুদ্ধিজীবীদের গল্প

মূল: রিফাত হাসান .......আমাদের বুদ্ধিজীবী সমাজ প্রথমবারের মতো বাঙালি মুসলমানদের সাথে ঈদ ‘উদযাপন’ করছেন। ............ইমাম কে ছিলেন নামাজে। ফোন করাও সহজ ছিল না। গ্রাম, তার উপর ঈদের সময়গুলোতে মোবাইল নেটওয়ার্কে কী যেন হয়। কোনো মতেই পৌঁছানো যায় না।

বন্ধু জানালো, ইমাম হলেন বর্ষিয়ান বুদ্ধিজীবী জনাব সৈয়দ আবুল মকসুদ। তবে নামাজ হয় নাই, অবস্থান এবং বক্তৃতা হয়েছে। মকসুদ সাহেবের ইমামতিতে। দুপুর থেকে বিকেল অবধি। শুনে আমার স্কুলবেলার শিক্ষক মহোদয় জানালেন, শুধু খোতবাতে ঈদ হয় না, নামাজও পড়তে হয়।

নামাজ না পড়লে তাদের ঈদ হবে না, কচু হবে। বন্ধুটি ফোনে জানালো, নামাজ না পড়েও এই ঈদে অংশগ্রহণকারীদের লোকজন বেশ খুশি। কেউ কেউ ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় জানিয়েছেন যে, তাদের এই ঈদ-উদযাপন জীবনের খুব স্মরণীয় ঘটনা। আমি ভাবতে বসলাম। এর আগে তারা কখনো ‘ঈদ’ করেছেন- এমন সংবাদ পাই নাই।

অন্তত মিডিয়ায় তাদের ঈদ-পালনের ঘটনা এর আগে কখনো আসে নাই। পহেলা বৈশাখ বা অন্যান্য অনুষ্ঠান পালনের ঘটনা আছে। পুজোতেও তারা গিয়েছেন বিভিন্ন সময়, সম্ভবত। কিন্তু অনেক ঘেঁটেও ঈদের খবর পাই নাই। এইবার বাধ্য হয়ে তারা ঈদ-‘উদযাপনে’ নেমেছেন।

স্মরণীয় ঘটনা তো বটেই। কারণ এটি তাদের জীবনে প্রথম ‘ঈদ’। বাঙালি মুসলমানের ঈদ-উদযাপনে এর কোনো প্রভাব থাক বা না থাক। .....বেহাত ধর্ম-ব্যবসায়ের রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান তৈরি করার চেষ্টাও নিলেন, হয়তো। এজন্যই ‘বর্জনে’র নাম হয়েছে ‘উদযাপন’এর ধুলো।

মুসলমানের ঈদ তারা আগেও বর্জন করতেন, ‘ঈদ’ নামের ঘটনায় সর্বতোভাবে অদৃশ্য থেকে। তাই আমার বার্তাতে একটু ঠাট্টা ছিল। ঠাট্টার কারণ, এই গোষ্ঠী নিজেদের ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। যা বাঙালি জাতীয়তাবাদের আলখেল্লায় মুসলমানি পরিচয়-চিহ্ন ও আচারগুলোকে হীনমন্যভাবে লুকায়। ..........জুলাই মাসেই শবে বরাতের রাতে রাজধানীতে ছয় তরুণকে প্রকাশ্য গণপিটুনির মাধ্যমে ও কুপিয়ে মারা হয়েছে।

‘অধিকার’ জানাচ্ছে, এ বছরেরই জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এমন গণপিটুনিতে মরেছে পঁচাত্তর জন। আর দুই হাজার দশ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মরেছে একশ ছাব্বিশ জন। গণপিটুনি গেল। মীরসরাইয়ের আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের হত্যাকাণ্ড বা দুর্ঘটনা কি মনে আছে আপনাদের? গত এগার জুলাই চট্টগ্রামের মিরসরাইতে আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধ-শত ছাত্রছাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছিল, সড়ক দুর্ঘটনায়। শেষোক্ত ঘটনাটি মিডিয়াতে কিছুটা গুরুত্বের সাথে এসেছিল।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং মাননীয় বিরোধী দলীয় নেত্রী ছুটে গেছেন মীরসরাই- ‘শোক’ ও ‘সমবেদনা’ জানাতে। এই সব খুব কাছের ঘটনা, তাও সব ঘটনাগুলোর বরাত আনা সম্ভব হলো না। আবু তোরাবের ঘটনা দিয়েই শুরু করি। আমাদের বুদ্ধিজীবীগণ সেসময় কোথায় ছিলেন? সম্ভবত ঘুমোচ্ছিলেন। প্রতিবাদ দূরের কথা, হয়তো তাদের ’শোক’-ধারণাও অত পোক্ত হয়ে ওঠে নাই তখন পর্যন্ত।

হয়তো ছোটলোকের ছেলেদের জন্য ‘শোক’ প্রকাশ শ্রেণী-আভিজাত্যের সাথে যায় না, তাই। মরে যাওয়া শিশুগুলো কোথাকার কোন পাড়াগাঁর, শহরের হলেও কথা ছিল। অজপাড়াগাঁর মীরসরাইয়ের প্রায় অর্ধশত ছাত্রের থেকে মরহুম বুদ্ধিজীবী তারেক মাসুদ বা মিশুক মুনির খুবই গুরুত্বপূর্ণ নিশ্চয়। হবেও বা। অথবা মহান জেমস এফ. মরিয়ার্টির তারবার্তা তখনো তাদের কাছে এসে পৌঁছায় নাই।

অথবা উইকিলিকস-এ প্রকাশিত হওয়ার আগেই ওরা হয়তো পেয়েছিলেন, কিন্তু মধ্যবিত্তের আরো গভীর ‘শোক’ নির্মাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, যেমন তারেক মাসুদ বা মিশুক মুনির। তাই অধীর হয়ে ছুটে যান নাই- বা যোগাযোগ মন্ত্রী বা শিক্ষামন্ত্রীর অপসারণও চান নাই। দৃশ্যত অজপাড়াগাঁয়ের একটি বিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধশত ছাত্রকে ট্রাকে করে ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টে’ যেতে বাধ্য করার বা তাদের হত্যার কৃতিত্ব শিক্ষামন্ত্রীর। অথবা খোদ প্রধানমন্ত্রীরই কিনা- এ বিষয়টি ভাবার ফুরসত বা সাহস তাদের হয়েছিল কিনা আমাদের জানা নেই। তবে শিক্ষামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকে দায়ী করে মিডিয়ায় তাদের এমন কোনো ভাবনা বা তৎপরতা প্রকাশ্য হয় নাই।

তবে লক্ষণীয়, তারেক-মিশুকের মৃত্যুর আগে বা পরের খুন ও দুর্ঘটনাগুলো নিয়ে আমাদের ‘সত্যাগ্রহী’ বুদ্ধিজীবীগণ মাসব্যাপি গান্ধিবাদি নিরবতা দেখিয়েছেন। ......বুদ্ধিজীবীগণের প্রগাঢ় নীরবতা ঘন হয়। সবশেষে বাবুল আহমদরা বিএসএফ’র গুলিতে মারা গেলে, মরার একটা প্রেসনোটও হয় না। না কোনো প্রতিবাদ, না কোনো ‘শোক’। না-প্রধানমন্ত্রী, না- বিরোধী দলীয় নেত্রী, না মহান বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়, যারা প্রতিবাদে সত্যাগ্রহ করেছেন শহীদ মিনারে।

.......ভেবে ভেবে মনে হলো, এই ‘বিরক্তি’র বিষয়গুলো ভুলে গিয়ে আমরা বরং আপাতত ‘শোক’ প্রকাশ করি। নাহ, বাবুলের জন্য নয়, স্রেফ বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর জন্য। এটা বেশ সুবিধাজনক। সুত্র: Click This Link ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.